Monday, May 8, 2017

ঝন্টুমামার শিক্ষা

দূর সম্পর্কের মামা কাম ছেলেবেলার পার্সোনাল কন্সলাট্যান্ট ঝন্টুমামার মত হচ্ছে "যত পারবি এডুকেট করবি। যেটুকু জানিস, সে'টুকু বিলিয়ে দে"। আর ঝন্টুমামা এই "এডুকেট" করা ব্যাপারটা মন দিয়ে প্র‍্যাক্টিস করে থাকে।

যথা ১
"সুনিয়ে ফুচকা দাদা। আলুঠো ভালো করে মাখনেকা থা। অভি ভি থোড়া ড্যালা ড্যালা মুখে ঠেকতা হ্যায়। আর ইয়াদ রখিয়ে জনাব, তেঁতুলকা টক হি আখরি বাত নহি হ্যায়। গন্ধরাজ ইঞ্জেক্ট কিয়া কিজিয়ে, নহি তো অপটিমাইজেশন নহি হোগা"।

যথা ২
"সই প্লীজ। তবে ইয়ে, অটোগ্রাফটা আমার জন্যে নয়। আমার ভাগ্নের জন্য। ব্যাটার ক্রিকেট নিয়ে একটু বাড়তি মাতামাতি আছে। আর ইয়ে বলছিলাম কী, আপনার ফ্রন্টফুট মুভমেন্টে প্রবলেম আছে স্যার। বাউন্সি ট্র‍্যাকে অমন দমাদম কমিট করে দেবেন না প্লীজ। ইজ দ্যাট ওকে? থ্যাঙ্কস ফর দ্য সই বাই দি ওয়ে"।

যথা ৩
"তুই শেষ পর্যন্ত পকেট কাটতে গিয়ে ধরা পড়লি মন্টে? পাড়ার নাম ডোবাবি যে তুই। নিশ্চই সস্তার ব্লেড ব্যবহার করেছিস! ওরে আর্টে অত ওয়ান পাইস ফাদার মাদার দেখলে হয় না। সেভেনওক্লক্ ছাড়া ব্লেড ইউজ করা মানেই গুস্তাখি"।

যথা ৪
প্রেমট্রেম মামা কোনওদিনই ম্যানেজ করতে পারেনি। শেষ প্রেমিকার সঙ্গে বিচ্ছেদ সেই কলেজের থার্ড ইয়ারে। তাঁকে মামা এগরোল ধরার সঠিক গ্রিপ শেখাতে দু'টো  সন্ধ্যে নষ্ট করেছিল বলে শোনা যায়।

যথা ৫
মামার চাকরী গেছিল বসকে 'এডুকেট' করতে গিয়ে।
"আপনার জুতোর রঙ দেখে বুঝতে পারি যে আপনি অত্যন্ত কেয়ারলেস ভাবে শুপালিশ ব্যবহার করেন। সমস্ত এলোপাথাড়ি স্ট্রোকস। দামী ওয়াইন গিলে এলিট হতে গিয়েই আপনি মরলেন। আপনার জুতো জোড়া আমারটার চেয়ে দামী অথচ আপনারটা বেয়াড়া পালিশের খপ্পরে পড়ে কেমন ম্যাদা মেরে থাকে দেখুন। আর এদিকে আমার জুতোর ঝলকানিটা নোটিস করুন। মিয়ানো জুতো ইম্পলাইজ মিয়ানো কনফিডেন্স স্যার। ডু সামথিং"।

এহেন বহুবিধ এডুকেশনের ঠ্যালায় মামার চাকরী নট হয়েছিল, বসবাবুর সে ক্ষেত্রে অন্তত কনফিডেন্সের অভাব ঘটেনি।

যথা ৬
ঝন্টুমামার সঙ্গে শেষ দেখা পার্ক স্ট্রিটে হট কাটিরোলের সামনে। বছর সাতেক আগে। মামার সঙ্গে সুতপার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিলাম সে'দিন।
অদ্ভুত ভাবে তারপর থেকে ঝন্টুমামা বেমালুম বেপাত্তা হয়ে গেল।
আমিও ওর কথা ভুলতে বসেছিলাম প্রায়। এমন সময় আচমকা ওর পোস্টকার্ড, সুতপার সঙ্গে আমায় বিয়ের ঠিক দেড় মাসের মাথায়। পোস্টকার্ড এসেছে দেওঘর থেকে।

"বিট্টা,

তোর বিয়ের খবর পেয়েছি। সুতপা বড় ভালো মেয়ে। আগে বলার সুযোগ হয়নি। এখন জানিয়ে দিই। তোর বর্তে যাওয়া উচিৎ।  ভালো রাখিস ওকে।

একটা মাইনর ব্যাপার। ওর এগরোল ধরার গ্রিপটা প্রায় মুগুর ধরার মত। ওই বেমক্কা বাজে গ্রিপ দেখেই ধরতে পেরেছিলাম ব্যাপারটার জেনেটিক সোর্স কোথায়। সে যাক্। ওই দোষটুকু বাদ দিলে মেয়েটা হিরের টুকরো।
তোরা ভালো থাকিস,

ঝন্টুমামা।

*পুনশ্চ - দেওঘর ছেড়ে আজই বেরিয়ে যাচ্ছি। খোঁজটোঁজ করে লাভ নেই।"

মামার খোঁজ আর করিনি। তবে অন্যদিকে সামান্য খোঁজ নিয়ে এটুকু জানতে পেরেছি যে সুতপার মা ঝন্টুমামার ব্যাচমেট ছিল গ্র‍্যাজুয়েশনে। আর এ'টাও দিব্যি টের পেয়েছি যে ঝন্টুমামার কথা উঠলে শাশুড়িমায়ের গালে সামান্য বেমক্কা লাল ছুঁয়ে যায়।

1 comment:

Anonymous said...

A beauty....