১
অশোকবাবুর আঙুলের ডগার তিরতিরে কাঁপুনিটা অনুভব করতে পারছিলেন। পিঠের নিচে কাঠের খরখরে ভাবটাও দিব্যি টের পাচ্ছিলেন। কিন্তু চোখ খোলার সাহস হচ্ছিল না। চারিদকে হাউমাউ চলছে উত্তাল সুরে। এ সময় দুম করে চোখ মেললে ঢিঢি পড়ে যেতে পারে।
ইলেক্ট্রিক চুল্লিতে ঢোকার আগে এমন বদখত ভাবে বাঁশের ওপর শোয়ায় কেন? অসোয়াস্তি। অবিশ্যি মড়ার তো অসোয়াস্তি বোধ থাকতে নেই। মুশকিল হল অশোকবাবু দিব্যি টের পাচ্ছিলেন যে তাঁর জ্ঞান ফিরছে। অর্থাৎ তিনি মারা যাননি।
তবুও। স্যাট করে চোখ মেলতে সাহস হচ্ছিল না।
২
- বাবা!
- উঁউঁউঁ!
- ও বাবা!
- ধ্যাত্তেরি। সকাল থেকে একটানা বাবা বাবা বাবা। দেখছিস না আমি কাঁদছি? বাপ মারা যাওয়ায় দু'দণ্ড প্রাণ খুলে কাঁদব তারও উপায় নেই। তখন থেকে ব্যাবা ব্যাবা ব্যাবা। কী ব্যাপার?
- দা...দাদুর আঙুল নড়ল এই মাত্র। বাঁ হাতের!
- কী?
- দাদুর আঙুল নড়ে উঠল।
- চুপ কর স্টুপিড। যত্তসব বাজে কথা।
- ওই দ্যাখো, আবার নড়লো।
- কই!
- ওই যে। আবার!
- ও সামান্য হয়, মড়া মাঝেমাঝে নড়াচড়া করে। বাজে কথা না বলে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদ দেখি। কাজের বেলার লবডঙ্কা, এ'দিকে যত আজেবাজে কথা।
- বাবা! দাদুর চোখের পাতা নড়ছে। হুই দ্যাখো।
- চোপ হারামজাদা ছেলে! উইল জাল করার হ্যাপা জানিস?
- উইল?
- ফের বাজে প্রশ্ন? এক চড়ে চোয়াল উড়িয়ে দেব। কাঁদ, দাদু মরেছে তোর! কাঁদ!
৩
- এই যে! এ'দিকে শুনুন।
- বলুন।
- আমাদের মড়া চুল্লিতে কখন ঢুকবে?
- একটা পোড়ানো প্রায় শেষ হয়ে এলো বলে। আপনার বাবার বডির আগে আরও দু'টো মড়া আছে। আপনার বাবারটা তারপরে।
- ভাইটি। এরপরেই আমার বাবার বডিটা চুল্লিতে দিতে হবে যে।
- লাইনে আসতে হবে স্যার। নিয়ম!
- পাঁচশো দেব।
- শ্মশানে ঘুষফুষ চলেনা।
- ঘুষ না। উপঢৌকন। পাঁচ হাজার।
- টাকা?
- ডলার দিলে ভাঙাবে কোথায়?
- বডি রেডি করুন।
৪
- বাবা! দেখেছ?
- আবার কী!
- দাদুর ঠোঁটে বাঁকা হাসি।
- হাসি?
- হাসি! চুল্লির মুখে। তোমায় অপদার্থ বলার সময় যে হাসি দাদু হাসত, অবিকল সে'রকম।
- আজ তোকেই কোতল করব রাস্কেল!
No comments:
Post a Comment