- যদুবাবু! বিষের ইঞ্জেকশন চলবে?
- বিষের ইঞ্জেকশন?
- পিঁপড়ের কামড়ের মত অল্প খোঁচা! তার খানিক পর গোটা দেহ বিকল হয়ে চিত্তির।
- কী জানো হে তুলসী, আমার দাদু রঞ্জি খেলেছেন, ডাক্তারি পাস করেছেন, দুর্দান্ত ছবি আঁকতেন। আর আসর মাতাতেন বিভিন্ন ম্যাজিক দেখিয়ে। এহেন ট্যালেন্টেড পারসোনালিটি মাত্র পঞ্চাশ বছর বয়সে সন্ন্যাস নিয়ে গোমুখ যাত্রা করেন। তখন তাঁর দেহে দিব্যতেজ। তারপর ধরো আমার বাবা, থিয়েটার, কবিতা, রান্না; সর্বত্র তার রাজকীয় বিচরণ। এমন সব পূর্বপুরুষের রক্তকে বিষিয়ে দিয়ে মারা যাব ভাবতেই কেমন মন খারাপ করছে। আর মন খারাপ নিয়ে মরতে চাইছি না হে।
- মারা যাবেন, তার আবার মন খারাপ আর ফুর্তি কীসের?
- আমি কি আর দুঃখের চোটে মরতে এসেছি রে ভাই? গ্ল্যামারাস এগজিট চাইছি। রোগ ভোগ নয়, ট্রাকচাপা নয়। সাজানো গোছানো ছিমছাম। তাছাড়া আর কতদিন! সামনের আষাঢ়ে বিরানব্বুইয়ে পড়ব। এই বেলা ব্যবস্থা না করে ফেললে কবে খবর পাবে আমি বাথরুমে পা ফসকে কমোডে মাথা ঠুকে অক্কা পেয়েছি। কী শেমফুল হবে ব্যাপারটা ভেবেছ?
- তা সাজানো গোছানো মৃত্যুবরণের জন্য কলকাতা কী দোষ করেছিল? দিব্যি নাকতলার সিলিং থেকে ঝুলে পড়তেন। খামোখা এই পাহাড়ি জঙ্গলে আসার কী দরকার? শুধু শুধু নিজেও এদ্দূর ঠেঙিয়ে এলেন আর আমাকেও বগলদাবা করে নিয়ে এলেন।
- সে কী তুলসী! তুমি আমার উকিল কাম চীফ কনসাল্ট্যান্ট, তোমায় না আনলে চলবে কেন? তাছাড়া কলকাতার ওই ফার্নেসে এমনিতেই তো আধমরা হয় থাকা! সে'খানে আত্মহত্যা করলে সে'টা হাফ-সুইসাইড হত। লোকে ভীতুর ডিম বলে মুখে আগুন দিত।
- এ'দিকে লোকে সব কথা জানলে কী বলবে বলুন তো? আপনার উকিল হয়ে আমি আপনাকে আত্মহত্যার টেকনিক বাতলে দিচ্ছি?
- সে জন্যে আমি তোমায় মোটা টাকা ফীজ দিচ্ছি। এ'টা তোমার ফাইনাল কাজ। যাক গে। বিষের ইঞ্জেকশন বাদ। অন্য আইডিয়া দাও।
- খাদটাদ দেখে ঝাঁপ দেবেন নাকি? চারদকেই তো পাহাড়!
- আমার ডেডবডি যখন খুঁজে পাবে তখন দেখবে সমস্ত দাঁত উপড়ে এসেছে, নাক ভাঙা। শ্মশানে নেওয়ার আগে দাঁত বাঁধাতে হবে, প্লাস্টিক সার্জারি করাতে হবে; নয়তো বুড়িদের সামনে ইম্প্রেশন নষ্ট হবে। সে বিশ্রী ব্যাপার! তাছাড়া চোট আঘাতও কম নয়! আমার স্কিনটা আবার একটু সেনসিটিভ। নেক্সট অপশন শুনি।
- ঘুমের ওষুধ?
- পাতা ছিঁড়ে ওষুধ খাওয়ায় কী গ্ল্যামার খুঁজে পেলে বাবা তুলসী? এ তো অলিভ অয়েলে ইলিশ ভাজার কেস।
- আচ্ছা যদুবাবু! এই ধরুন যদি আপনি কোনও তান্ত্রিক টান্ত্রিক ধরেন? মানে, তারা তুকতাক করে যদি আপনার মুখে রক্ত তুলে আপনাকে ধরাশায়ী করতে পারে।
- মরার আগে সায়েন্সের পিঠে ছুরি মেরে মরব হে তুলসী? ধর্মে সইবে?
- আমার মেজপিসে এক বার প্রচুর পরিমাণে কাঁঠাল খেয়ে গোল পাকিয়েছিলেন। বুকে গ্যাস আটকে মরো মরো অবস্থা। ট্রাই করবেন নাকি? আনাবো কাঁঠাল?
- এই বুদ্ধি নিয়ে মক্কেল সামাল দাও কী করে হে?
- উফ! আপনার মত দু'এক পিস মক্কেল থাকলেই উকিলের আক্কেল গুড়ুম। এ'বার বুঝলাম আপনার আগের উকিল আপনাকে ত্যাগ করেছিলেন কেন। এ'মন উদ্ভট হাড়াজ্বালানো কাজের কোনও মানে হয়? সুইসাইড কন্সালটেন্সি? গলা বেয়ে চোঁয়াঢেঁকুর উঠছে মশাই এ'বারে।
- করেকশন। কন্সাল্টেন্সি ফর আ গ্ল্যামারাস সুইসাইড।
- মাইরি।
- অ্যান্ড ইফ ইউ মাস্ট নো এর আগে অন্তত চারজন উকিল আমায় ত্যাগ করেছে। যাক গে, পরের আইডিয়া শুনি...।
- গায়ে কেরোসিন ঢেলে...।
- তার চেয়ে গাভাস্কারের ষাট ওভারে ছত্রিশ রানের ইনিংস দেখতে দেখতে বুক ব্যথা বাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়া ভালো।
- তাহলে আপনিই বলুন!
- বললাম তো! গ্ল্যামার! থ্রিল! তোমার বুদ্ধির দৌড় বোঝা গেছে। ভাগ্যিস নিজের ব্যবস্থা নিজেই করেছিলাম।
- কী ব্যবস্থা? কী ব্যবস্থা করেছেন?
- এই যে। এই খালি প্যাকেটে ছিল। ব্যবস্থা।
- এই বাদামের ছেঁড়া প্যাকেটে? এই প্যাকেটের বাদামে কি বিষ ছিল যদুবাবু? কী বলছেন আপনি? আমরা দু'জনেই এই বাদাম খেয়েছি তো! আপনি কী...।
- আহা! কী মুশকিল। সব বাদামে বিষ থাকবে কেন? গোটা প্যাকেটে একটা বাদামে সে বিষ মাখানো। কোন বাদাম? কেউ জানে না। কেমন বিষ? সে বড় কাজের দাওয়াই হে তুলসী। যন্ত্রণাহীন মৃত্যু, সাইড এফেক্ট বলতে শুধু সামান্য অম্বল, একটু চোঁয়াঢেঁকুর। এ'ছাড়া আর রক্তে কোনও চিহ্নও থাকবে না। ম্যাজিক অফ জড়িবুটি। এ'বার প্রশ্ন হচ্ছে, বাদামটা কার মুখে পড়বে। আমার না উকিলের? এই যে রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা, আমি খুন করছি না আত্মহত্যা করছি, এই টানাপোড়েন, এ'টাই আলটিমেট থ্রিল হে তুলসী। এই থ্রিল বুকে নিয়েই আমি একদিন সরে পড়ব। কিন্তু আজ যে আমায় আবার থেকে যেতে হচ্ছে ভাই, তোমার চোঁয়াঢেকুর অন্তত সে'রকমই বলছে।
No comments:
Post a Comment