- কী চাই?
- দু'মিনিট সময় হবে স্যার?
- কলিংবেল ঠুসে আমার রবিবারের প্রি-স্নান ঘুম ভাঙিয়েছেন। আপনাকে দু'মিনিট সময় দেওয়া সমীচীন হবে কিনা ভাবছি।
- দু'মিনিট। স্রেফ দু'মিনিটে আপনার থেকে চেয়ে নেব।
- আপনি কি সেলসম্যান? ওয়াশিং পাউডার বিক্রি করতে এসেছেন? বা ম্যাজিক ক্লীনার? ননস্টিক কড়াই? লটারি?
- না না! সে'সব কিছুই না। একটা সার্ভের জন্য এসেছি।
- সার্ভে? কী ব্যাপারে?
- আমি সুমিত ঘোষ। লাইফ বিয়ন্ড ডেথ ফাউন্ডেশন থেকে এসেছি।
- লাইফ বিয়ন্ড ডেথ! মড়াদের সার্ভে?
- না না। ঠিক তা নয়। মরে যাওয়ার তো বহুবিধ টাইপ রয়েছে স্যার। বায়োলজিক্যাল ডেথ ইজ ওনলি ওয়ান অফ দ্য দেম। আমাদের ফাউন্ডেশন রকমারি মৃত্যু নিয়ে রিসার্চ করে যাচ্ছে। আমি নিজেও গবেষণারত।
- ও। জলের মত সহজ।
- সার্ভে শুরু করি?
- একটা প্রশ্ন। কত রকমের মৃত্যুর লেভেল রয়েছে ঘোষবাবু?
- আড়াই হাজারেরও বেশি।
- বলেন কী?
- প্রমাণিত সত্য। অন্তত দেড়শো রিসার্চ পেপার ইতিমধ্যে প্রকাশিত। এই তো, গত সপ্তাহে গুটেনবার্গে প্রকাশিত জিমারম্যানের পেপার রীতিমত প্রমাণ কতে ছেড়েছে যে দুনিয়ার আশি শতাংশ মানুষই অন্তত বাইশ বার মারা গিয়েছে ইতিমধ্যে।
- কাগজে তো কিছু...।
- মেনস্ট্রিম মিডিয়ার পেটে ঘি সইবে কেন বলুন?
- আপনি বলছেন আমরা সবাই অল্পবিস্তর মারা গেছি?
- মরার আবার অল্প বেশি কী? সবাই পুরোপুরি মারা গেছি বেশ কয়েকবার। এমন মানুষও আছেন যারা একশো বার মরেও দিব্যি মেজাজে ঘুরঘুর করে বেড়াচ্ছেন
- রবিবারের ঘুম ভাঙিয়ে গুল দিচ্ছেন দাদা?
- আই সী। স্কেপ্টিসিজম। অবিশ্বাস।
- তা'তে কী?
- মৃত্যুর কালো ছায়া।
- এ'তে মৃত্যু কোথায়?
- আপনি বিশ্বাসের দিক থেকে খুন হয়েছেন। বহু আগেই। লেট মি সী। বাপ মার প্রতি বিশ্বাস আছে?
- আলবাত।
- শিওর?
- শুধু...।
- শুধু?
- ছেলেবেলায় মা বলত গোবরার সঙ্গে না মিশতে। ক্লাস এইটে ফেল তিন বার ফেল করেছিল। নাইন থেকে গুটখা চিবুতো। আমিও সাধ্যমত এড়িয়ে চলতাম গোবরাকে। আমি মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট করলাম। ফেলের ফুলঝুরি ছুটিয়ে গোবরা পড়াশোনা ছেড়ে ক্যাটারিংয়ের দলে সার্ভিসবয় হিসেবে ঢুকে গেল। আজ তার নিজের ক্যাটারিংয়ের ব্যবসা। কোটিপতি। আমি রেলের ক্লার্ক। গত মাসে মায়ের অপারেশনের জন্য গোবরাই আমায় দেড় লাখ টাকা ধার দিয়েছে। নো ইন্টারেস্ট।
- ওহ হো। কচুকাটা। কুপিয়ে হত্যা।
- চা খাবেন?
- না। সময় কম। চট করে প্রশ্নগুলো সেরে নিই। নেমপ্লেটে দেখলাম নামটা বিমল সান্যাল। আপনিই বিমলবাবু তো?
- আজ্ঞে।
- বিমল সান্যাল, রেলের ক্লার্ক। বেশ। বাড়িতে কে কে আছেন?
- বিধবা মা। আর আমি।
- বয়স অন্তত চল্লিশ তো হবেই। বিয়েথা?
- আসলে ঠিক...।
- ওরেব্বাবা। নিজের মধ্যে তো আস্ত শ্মশান পুষে রেখেছেন মশাই।
- কেন? কেন? বিয়ে না করাটা অপরাধ নাকি? সে'টাও মৃত্যু?
- নট অ্যাট অল। তবে বিয়ে না করার জন্য অমন অ্যাপোলোজেটিক হওয়াটা বেশ গভীর মৃত্যুর সিম্পটম। আপনার কনফিডেন্স তো মশাই ডাইনোসরের ফসিলের চেয়েও বেশি ধসে গেছে। যাক গে, টিভি দেখেন?
- ওই। খবরের চ্যানেল, দিনে ঘণ্টাখানেকের বেশি নয়।
- মাই মাই মাই! আপনি তো দেখছি নিজের ভিতর কবর খুঁড়ে শুয়ে আছেন। নিউজ চ্যানেল? গ্যাস চেম্বারে বসে সোয়াবিনের কীমার খিচুড়ি খাওয়াও যে তার চেয়ে ভালো মশাই। আজ লাঞ্চে কী খাবেন?
- ভাত আর কাঁকরোলের তরকারি। আসলে বাজার যেতে ইচ্ছে করছিল না তাই...।
- বিমলবাবু! সার্ভেটা বরং বন্ধ রাখি। আমার ক্রমশ মনে হচ্ছে আমি একটা কফিনের ভিতর দাঁড়িয়ে আছি।
- বুকের ভিতরটা কেমন ঠাণ্ডা করে দিলেন। দিব্যি ঘুমোচ্ছিলাম নাক ডেকে।
- শুনুন, এ মৃত্যু উপত্যকা থেকে বেরোবার একটা সুযোগ আপনাকে অফার করতে পারি আমরা। লাইফ বিয়ন্ড ডেথ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে।
- সে'টা কী?
- আকাশের দিকে দেখুন!
- উম...আর...এই রে...বাপ রে!
- আঁতকে উঠবেন না প্লীজ!
- আকাশে অতগুলো মুখ...মা, ডাক্তার দত্ত বোধ হয় ও'টা, পাশে আমার সহকর্মী সাহাবাবু...ওরা আকাশ থেকে ও'ভাবে দেখছে কেন?
- এই সার্ভেটা শুধু কোমায় থাকা মানুষদের জন্য। গতকাল রোববার ছিল। আপনি প্রিলাঞ্চ ঘুমের মধ্যেই কোমায় চলে যান। সন্ধ্যে থেকে হসপিটালে। এ'রা এখন আপনাকে দেখতে এসেছেন।
- কো...কোমা...আমি কোমায়?
- লাইফ অ্যান্ড ডেথ ফাউন্ডেশন থেকে আমরা বিভিন্ন ডেটা ক্যাপচার করর যাই অনবরত। কেউ দেড়শো মৃত্যু পেরোলেই আমরা রিমোট কন্ট্রোলে তাকে কোমায় ঠেলে দিতে পারি। গতকাল খবরের কাগজে কুড়ি মিনিট ধরে বিজ্ঞাপন পড়াটাই আপনার একশো একান্নতম মৃত্যু। অমনি আমাদের জার্মানির কন্ট্রোল রুম থেকে আমরা আপনাকে কোমায় ঠেলে দিয়েছি।
- আমার গা গুলোচ্ছে।
- এ'বারে সার্ভের মূল প্রশ্নটা। আপনি মৃত্যু উপত্যকায় ফেরত যেতে চান? নাকি আমাদের লাইফ বিয়ন্ড ডেথের নতুন সদস্য হতে আপনি প্রস্তুত?
**
- আরে বিমল, এই অসময়ে তুই?
- গোবরা, টাকাটার এখনও কোনও ব্যবস্থা করে উঠতে পারিনি রে।
- আরে সে চিন্তা করিস না। মাসীমা এখন কেমন আছেন?
- ভালো। বেশ ভালো।
- কী দরকার বল...।
- আসলে...।
- টাকার দরকার?
- না তা নয়। আসলে আমি এসেছিলাম একটা সার্ভের ব্যাপারে। তোর দু'মিনিট সময় হবে রে?
No comments:
Post a Comment