*১*
টুথপিককে ছুরির মত ব্যবহার করে একটা আস্ত মোমবাতি খুন করল দিবাকর। হাতের পত্রিকাটা ছুঁড়ে ফেলল আলনার ও'দিকে। অফিসের ফেলে রাখা কাজগুলোর কথা মনে করে মনকে অন্য রাস্তায় ঘুরিয়ে দেওয়ার প্রবল চেষ্টা করেও লাভ হল না। অজন্তার সস্তা ইলেক্ট্রনিক দেওয়াল ঘড়ির খটখটখটখট শব্দ যেন দিবাকরের মাথা খামচে ধরছিল।
রাত একটা বেজে দশ।
ঘরের মধ্যে দ্রুত কুড়ি রাউন্ড পায়চারি সেরে নিল সে। ধুস। কিস্যুতে কিস্যু হওয়ার নয়। মিনুর কথাগুলো কিছুতেই মাথা থেকে বেরোচ্ছে না। অবিশ্বাসের পাত্র দিবাকর নয়, কিছুতেই নয়। শুধু মিনু যদি একবার বোঝার চেষ্টা করত। একবার।
*২*
ব্যাপারটা ক্রমশ অস্বস্তিকর হয়ে উঠছে। যেদিনই দিবাকরের কথা মনে পড়বে সে'দিনই তার প্রিয় মোমবাতিটার গায়ে নতুন নতুন খোঁচা দেখতে পাবে মিনু। নাকি উল্টোটা? গোটারাত ঘুম আসবে না। ছটফট।
ভুলতে চেয়েও সব গুলিয়ে যায় এই সব রাতগুলোয়। মিনুর বড় প্রিয় এই মোমবাতিটা। অসমের ডিগবই থেকে মেজমামা পাঠিয়েছিলেন দেড় বছর আগে। সে'খানকার বিশেষ রাইনো ব্র্যান্ডের ওয়্যাক্স থেকে তৈরি, সুগন্ধি সুবিশাল মোমবাতি। নিজের শোওয়ার ঘরে সাজিয়ে রেখেছে মিনু। শুধু মোমিবাতিটার গায়ে কী'ভাবে যেন কেউ ক্রমাগত খুঁচিয়ে যায়।
*০*
ঘুম আসছিল না, বাধ্য হয়েই পুরনো পত্রিকার পাতা ওল্টাচ্ছিল দিবাকর। তখনই লোডশেডিং। এই অসময়ে। দিবাকরের মেজাজ গেল রীতিমত বিগড়ে। অথচ হাতের কাছে একটা মোমবাতিও নেই যে জ্বালবে।
রাগের চোট ছোটমামার দেওয়া টুথপিকের বাক্স থেকে একটা টুথপিক বের করে দাঁতনের মত চেবাতে লাগল দিবাকর।
*-২*
- এই যে দত্ত, তোমার ভাগনেকে সামলাও বলে দিলাম।
- দিবাকর? সে আবার কী দোষ করল?
- সে আমার ভাগ্নি মিনুর মাথাটা খাচ্ছে।
- রিল্যাক্স চ্যাটার্জি। ওরা একে অপরকে ভালোবাসে।
- রাবিশ। ওই ক্লার্কের সঙ্গে আমার ভাগ্নির আমি বিয়ে দেব ভেবেছ?
- যব মিয়াঁ বিবি রাজী তব...।
- কাজী কী করবে দেখতে চাও? পেরুতে গিয়ে ডার্ক ম্যাজিক শিখে এসেছি আমি দত্ত। তুমি ও ছেলেকে নিরস্ত করলে ভালো, নয়তো আমার ব্যবস্থা করা আছে। আমি মিনুকে এমন তুকতাক করা উপহার দিয়ে এসেছি যে সে নিজে থেকেই ওই ইডিয়টের থেকে সরে আসবে।
- ভুলে যেওনা চ্যাটার্জি আমার জ্যেঠু ছিলেন তান্ত্রিক। ও'সবের টোটকা আমারও জানা আছে। ওদের মিল হবেই।
- রাবিশ।
*-১*
দিবাকর এখনও ঠাহর করতে পারে না যে ছোটমামা তাকে গত জন্মদিনে ছয় ডিবে হোমমেড টুথপিক কেন উপহার দিয়েছিল। মামা মাত্রই বোধ হয় সামান্য ছিঁটগ্রস্ত হয়।
2 comments:
পড়ে ভালো লাগলো
ভালো লাগলো পড়ে
Post a Comment