-
এক্সক্যিউজ মী। আপনার
টেবিলে বসতে পারি? নাকি কাউকে এক্সপেক্ট করছেন?
-
বসুন।
-
আপনিই অরূপ সান্যাল তো?
ফেমাস ঘোস্ট স্টোরি রাইটার।
-
ফেমাস বলাটা বাড়াবাড়ি হবে।
তবে, ভূতের গল্প কিছু লিখেছি বটে।
-
দাঁড়ান, আমার পরিচয়টা
দেওয়ার আগে একটা কফি বলে নিই। ওয়েটার! এইদিকে। দু’টো কফি বলি? আপনার পেয়ালাটা তো
প্রায় শেষের দিকে...।
-
ব্ল্যাক।
-
দু’টো ব্ল্যাক কফি। যাক। এ’বারে
আমার পরিচয়টা দিয়ে নি, আমি বৃকোদর মল্লিক।
-
বৃকোদর মল্লিক? নামটা
যেন...।
-
চেনা চেনা ঠেকাটা
অস্বাভাবিক নয়। বিশেষত আপনার পুরনো কলকাতার ব্যাপারে আগ্রহ আছে যখন, নামটা চেনা
ঠেকাই উচিৎ।
-
চেনা চেনা ঠেকছে কিন্তু
ঠিক...।
-
পেটে আসছে কিন্তু মনে পড়ছে
না। বুঝেছি। চার্নক সাহেবের কথা মনে করুন।
-
ওহ্। মনে পড়েছে। চার্নক সুতনুটিতে
এসে কিছু মাটির বাড়ি তৈরি করেন সাময়িক বসবাসের জন্য এবং ফিরে যান হুগলীতে। পরে
নবাবের হুকুমকে কাঁচকলা দেখিয়ে যখন হুগলী চন্দননগর জ্বালিয়ে পালিয়ে আসেন এ’খানে
তখন দেখেন যে কেউ সেই মাটির বাড়িগুলো ভেঙে ফেলেছে। জানা যায় সে’টা বৃকোদর মল্লিক
নামে কেউ ভেঙেছে।
-
করেক্ট। শুধু ভাঙেনি, মাটির
সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছিল।
-
তবে সে’টা ভুল তথ্য। ঘটনাটা
বরখুরদার মালিক পদের কোনও মোগল কর্মচারীর কাজ। ইতিহাসে সে’সব গুলিয়ে ফেলে বৃকোদর
মল্লিক তৈরি করেছে। আপনার বাপমা যদি সেই বৃকোদর মল্লিকের কথা ভেবে আপনার নাম রেখে
থাকেন, তাহলে ভুল করেছেন।
-
আসুন। কফি।
-
থ্যাঙ্কস ফর দ্য কফি।
-
কফিটা খাওয়াচ্ছেন কিন্তু
আপনি। আমি সেধে এসে টেবিলে বসলাম বটে, তবে আমার দাম দেওয়ার উপায় নেই।
-
আই সী।
-
অভদ্র ভাববেন না প্লীজ।
একান্তই উপায় নেই।
-
ঠিক আছে।
-
তবে আপনার সঙ্গে আলাপ করাটা
দরকার ছিল জানেন। কারণটা ওই, আপনি ভূতের গল্প লেখেন বলে।
-
কারণটা শুনি।
-
সরি টু ডিস্যাপয়েন্ট ইউ
স্যার। বরখুরদার মল্লিকের থিওরিটা সঠিক নয়। সব কিছু ধান কাল কাটা থেকে ক্যালক্যাটা
হয় না।
-
আপনি নিশ্চিত হয়ে জানলেন কী
করে?
-
সুতানুটি তখন জলাজঙ্গল। সে’খানের
এক দু’টো মাটির বাড়ি ধসিয়ে নবাবের কি মোক্ষলাভ হবে বলুন! আর ওই কুটীর বানিয়ে
নেওয়াই বা এমন কী আর চ্যালেঞ্জ। মনে রাখবেন তখন কোম্পানি টপাটপ ফ্যাক্টরি, দুর্গ
বা জেটি বানিয়ে চলেছে। জনশ্রুতি যে আতশকাচের তাপে জাহাজ থেকে চন্দননগরের বাজার
জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন চার্নক। তেমন তোপ মানুষের দু’একটা মাটির বাড়ি রইল না গেল, তা’তে
কী এসে যায়?
-
বেশ। তা’তে কী হল? আপনার
বক্তব্যটা কী?
-
বক্তব্য এই যে আমি যে সে
বৃকোদর মল্লিক নই স্যার। আমি সেই বৃকোদর মল্লিক।
-
আচ্ছা।
আপনার কফি শেষ হলে উঠতে পারেন।
-
বড়
আশা করে আপনার কাছে এসেছি।
-
অদ্ভুতুড়ে
গল্প ফাঁদতে?
-
ভূতের
গল্পের লেখক আপনি। আমি বড় আশা করে এসেছি যে আপনি অবিশ্বাস দিয়ে শুরু করবেন না।
-
আপনার
পোশাক ভাষা, এগুলো কোনওটাই কি ১৬৮০ সালকে মনে করিয়ে দিচ্ছে?
-
ভূত
বলে কি মূর্খ হয়ে থাকব স্যার? ক্রমাগত শিখেছি। নিজেকে আপডেট করেছি।
-
আমার
কপালেই যত জোটে।
-
প্লীজ
শুনুন। একবার আমায় অন্তত বলতে সুযোগ দিন। তারপর না হয়...। আর কিছু না হোক, গল্পের
জব্বর প্লট পাবেন।
-
বলে
যান বৃকোদরবাবু। সে নামেই ডাকব তো আপনাকে?
-
হেহ্।
থ্যাঙ্ক ইউ। আর এক কাপ কফি বলি? এই ওয়েটার! অউর দো কাপ। ব্ল্যাক।
-
এ’বার
বলুন।
-
কিছু
পর্তুগীজ তখনও রয়ে গেছিল ব্যান্ডেল চার্চের আশেপাশে। অল্প সংখ্যক সৈন্যসামন্তও
ছিল, সে ছোট্ট সেনাদলেই আমি ছিলাম। কিন্তু তারপর তাঁদের অবস্থা আরও পড়ে যাওয়ায়
ইংরেজদের কুঠিতে চলে যাই। পর্তুগীজদের সঙ্গে থাকার সময় দুধ কেটে ছানা করে মেঠাই
বানানোর কিছু প্রক্রিয়া আমি শিখেছিলাম ফিরিঙ্গি রাঁধুনির থেকে। রান্নাবান্নার দিকে
আমার বিশেষ ইন্টারেস্ট ছিল বরাবরই।
-
প্লীজ
বলবেন না এ’বার যে আপনিই রসগোল্লা আবিষ্কার করেছিলেন।
-
আপনি
ভীষণ শার্প স্যার।
-
খুব
প্রেডিক্টেবল গাঁজা হয়ে যাচ্ছে।
-
আমার
কাছে প্রমাণ আছে স্যার। কথাগুলো মিথ্যে যে নয় তার প্রমাণ।
-
বেশ।
কফি যখন আসছেই, বলে যান।
-
তবে
আবিষ্কারটা ঠিক ব্যান্ডেলে থাকার সময় হয়নি। সে’খান থেকে হুগলীর ইংরেজ কুঠিতে যাই।
সে’খানে কিছুদিন কাজ করার পর আমায় বদলি করে দেওয়া হয় বালেশ্বরে। সে’খানে সাহেবদের
রান্নার ঠাকুর অখাদ্য সব রান্না করত, বাধ্য হয়ে নিজেকেই মাঝে মধ্যে ঢুঁ মারতে হত হেঁসেলে।
তখনই এক্সপেরিমেন্ট শুরু। আধুনিক ভাষায় যাকে বলে স্যুইট টুথ, সে’টা আমার গত সাড়ে
তিনশো বছর ধরে আছে। কাজেই পড়ে রইলাম মেঠাই নিয়েই। বালেশ্বরে কিছুদিন বেশি হাত পা
ছড়িয়ে ছিলাম। সময়ও ছিল অঢেল। তখনই রসগোল্লা আবিষ্কারটা করে ফেলি। তবে স্পঞ্জ নয়।
সে’টা পরে কলকাতাতেই...।
-
আপনার
কথা অনুযায়ী রসগোল্লার আবিষ্কার উড়িষ্যাতেই হয়েছে।
-
কিন্তু
করেছে একজন বাঙালি।
-
রাইট।
বেশ। সো ফার সো গুড। এরপর? সমস্যাটা কোথায়? আপনার আমাকে দরকার হল কেন!
-
এইটার
জন্য।
-
এ’টা
কী ।
-
কী
মনে হচ্ছে?
-
নস্যির
কৌটো।
-
খাঁটি
সোনার।
-
সোনারই
তো মনে হচ্ছে। পুরনোও বটে। যাক। এর ভিতরে নস্যি রয়েছে?
-
নস্যি
নেই। তবে যে’টা আছে সে’টাই প্রমাণ স্যার। সে’টাই তো প্রমাণ। যে আমিই বৃকোদর
মল্লিক। আমিই ভূত।
-
বলে
যান। শুনছি।
-
একবার
বালেশ্বরের কুঠিতে এসে চার্নক সাহেব আমার হাতের তৈরি রসগোল্লা খেয়ে মুগ্ধ হন। এবং
এতটাই আহ্লাদিত বোধ করেন যে আমায় বালেশ্বর থেকে উঠিয়ে ওয়াপিস নিয়ে যান হুগলী। এরপর
প্রথমবার সুতানুটিতে আসেন সম্পূর্ণ অন্য এক বদ ফিকির নিয়ে। উনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে
ফাঁকি দিয়ে নতুন কারখানা গড়তে চেয়েছিলেন। নতুন সাম্রাজ্য। রসগোল্লার কারখানা। ওনার
ধারণা ছিল রসগোল্লার ফর্মুলা হাতিয়ে গোটা পৃথিবীর মেঠাই মার্কেট তিনি কব্জা করবেন।
সুতানুটি হবে রসগোল্লা ক্যাপিটাল। জাহাজে করে হাজারে হাজারে লোক হুগলীতে তরী
ভেড়াবে রসগোল্লা আস্বাদন করতে। শুধু...শুধু তাঁর বুদ্ধিতে একটাই ফাঁক ছিল...।
-
কী’রকম?
-
তিনি
আমার সঙ্গে রসগোল্লা সাম্রাজ্যের মুনাফা ভাগ করতে অস্বীকার করেন। কালা আদমি বলে খিস্তি
করতেও ছাড়েননি। অথচ ভদ্রলোকের পুরো বিজনেস আইডিয়াটাই আমার আবিষ্কারকে ঘিরে। কী
খলিফা আদমি ভাবুন। হাড় বজ্জাত।
-
তারপর?
-
জোবের
একটা মস্ত অসুবিধে ছিল। আমায় জনসমক্ষে কড়কাতে পারত না কারণ ওঁর ফন্দীর কথা কোম্পানি বাহাদুরের কানে
পৌঁছলেই ওর চাকরী নট হত, বন্দী হওয়ার আশ্চর্য ছিল না। অথচ আমার থেকে ফর্মুলা হাতাতেও
পারছিল না। আমার মুশকিল হয়েছিল অন্য জায়গায়। বালেশ্বরে শুরুর দিকে একবার বলে
ফেলেছিলাম আমার রোজনামচার কথা। অর্থাৎ ডায়েরি। এও বলেছিলাম রসগোল্লার রেসীপি সে’খানেই
আমি লিখে রেখেছি। হুগলীতে ফিরে জোব সাহেব ঘ্যানঘ্যান আরম্ভ করল ওই ডায়েরী আমায়
দাও। আমিও স্পীকটি নট। অবশেষে ব্যাটাচ্ছেলে উপায়ন্তর না দেখে বাজে অছিলায় কিছু
সৈন্য নিয়ে সুতানুটিতে এসে হাজির হলে। সঙ্গে আমিও, সমস্ত মালপত্তর সমেত। সুতানুটিতে
ল্যান্ড করে বাবাজীর আসল মূর্তি প্রকাশ পেল। মাটির ছ’টা বাড়ি তৈরি হয়েছিল, একটায়
সে নিজে থাকত। চারটেয় বাকি সৈন্যরা, আর অন্যটায় আমাকে সে বন্দী করলে। আর সে কী
অকথ্য অত্যাচার! আমিও গোঁ ধরে রইলাম, জান কবুল কিন্তু রসগোল্লার রেসীপি আমি ওই
সাহেবদের হাতে তুলে দেব না। এর মধ্যে ফরমান আসায় তাঁকে সুতানুটি ত্যাগ করতে হয়।
ব্যাটাচ্ছেলে আমায় সুতানুটির সেই শিকলে বেঁধে রেখে চলে চায়। যাওয়ার আগে বলে যায় “তুই
মর ব্যাটা কালা আদমি। কিন্তু তোর মালপত্তরের মধ্যেই কোথাও তোর ডায়েরি আছে তা আমি
বেশ জানি। এখানে যখন পেলাম না, তখন নিশ্চয়ই হুগলী বা বালেশ্বরে আছে। আমি চললাম,
তুই মর”।
-
আরিব্বাস। ড্রামাটিক।
তারপর?
-
তারপর আবার কী! অত্যাচারে
আধমরা হয়েই ছিলাম। দু’হপ্তার মধ্যেই মারা গেলাম। মারা গিয়ে সুবিধে এই হলো যে শিকলে
আরা বাঁধা পড়ে থাকতে হল না। সোজা সাপটা বেরিয়ে এসে ছ’টা কুটির জ্বালিয়ে খাক করে
দিলাম।
-
আপনার রসগোল্লার রেসীপি
লেখা ডায়েরি?
-
সে জিনিসের খোঁজ চার্নক
সাহেব বালেশ্বর আর হুগলীর কুঠিতে আমার ঘর তন্নতন্ন করে খুঁজেও পান নি। বেশ কিছুদিন
পর সাহেবের খেয়াল হয় একটা ছোট ব্যাপারে ভুল করে ফেলেছেন তিনি। আমি সবে নস্যি
নেওয়ার অভ্যাস ধরেছিলাম। নস্যি নেওয়ার চলটাই তখন এ দেশে নতুন। এত খোঁজ করেও,
চার্নক সাহেবের কোনোদিন আমার নস্যির ডিবেটার প্রতি সন্দেহ যায়নি। অথচ বন্দীদশায় এ
ডিবে থেকে নস্যি না নিলেও এ ডিবে আমার কোমরে বাঁধা ছিল। দুয়ে দুয়ে চার করতে
সামান্য সময় লেগেছিল সাহেবের।
-
নস্যির ডিবের মধ্যে ডায়েরি?
গুলের সীমা থাকবে না একটা?
-
টানা এক বছরের রোজ নামচা
রয়েছে এই নস্যির ডিবের ভিতরে স্যার। কী ভাবে, সে প্রসঙ্গে আসছি। চার্নক সাহেবের যখন
টনক নড়ল তখন তিনি হুগলী ছাড়ার অছিলা খুঁজতে লাগলেন। অকারণ যুদ্ধবাজি করে
সৈন্যসামন্ত সমেত রওনা দিলেন ‘বালেশ্বর চললুম’ বলে। কিন্তু ব্যাটার প্রাথমিক
টার্গেট ছিল সুতানুটি। সে’খানে পৌঁছে আমার লাশ থেকে নস্যির ডিবেটা নিতে পারলেই
রসগোল্লার রেসীপি তাঁর হাতের মুঠোয়, এ বিষয়ে তিনি নিশ্চিত। আর একবার সেই রেসীপি
হাতে এলে কোম্পানিকে কাঁচকলা দেখিয়ে নিশ্চিন্তে নিজের রসগোল্লা সাম্রাজ্য স্থাপন
করতে কোনও অসুবিধেই হবে না। কিন্তু যাবতীয় উত্তেজনা নিয়ে সাহেব সুতানুটিতে নেমে
দেখেন কোথায় কী? সমস্ত ঘরদোর মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। স্থানীয় লোকেরাই বললে যে
বৃকোদর মল্লিকের ভূতই এ’সব করেছে। চার্নকের ব্যাটার সে কী মন খারাপ।
-
তা এই সেই নস্যির দিবে?
-
আজ্ঞে।
-
তা এ’টা এদ্দিন কোথায় রাখছিল?
-
মাইরি, বিশ্বাস করবেন? ওই
অভিশপ্ত নস্যির দিবে আমি কারুর হাতে দিতে চাইনি। গভীর জঙ্গল দেখে একটা জায়গার মাটির
অনেক নীচে পুঁতে এসেছিলাম। অবিশ্যি
রেসীপিটা হারিয়ে যেতে দিইনি। সোজা গিয়ে কয়েকজন ময়রার স্বপ্নে সে রেসীপি বলে দিয়ে
এসেছিলাম। ভূত হওয়ার অ্যাডভান্টেজ তো কম নয় বলুন।
-
তা
বটে।
-
কিন্তু
কী কাণ্ড ভাবুন। নস্টালজিয়ার ঠেলায় অনেকদিন পর খেয়াল হল নস্যির ডিবেটা খুঁজে বার
করি কিন্তু কিছুতেই সে জায়গা খুঁজে পাই না। সাড়ে তিনশো বছর আগের ঘটনা তো, তার
মধ্যে গ্রামটা এত পালটে গেল। অবশেষে বছর খানেক খুঁজে জায়গাটা চিনতে পেরে আমার
মাথায় হাত। ভাবতে পারেন, নস্যির ডিবে যে’খানে পুঁতে এসেছিলাম, জোব চার্নককে সে’খানেই
গোঁড় দেওয়া হয়েছে? অ্যামেজিং না?
-
বটে!
কিন্তু এই নস্যির কৌটের মধ্যে রেসিপি...!
-
রান্না
ছাড়াও আমার একটা বিশেষ গুণ ছিল লেখক মহাশয়। আমি মসলিনের ওপর আঁকতে এবং লিখতে
পারতাম।
-
মসলিন?
-
সে’সময়ে
বাংলার মসলিনের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। দাম আকাশ ছোঁয়া। আর সে মসলিন যে কী জিনিস মশাই। কেউ
চার হাজার টাকা দিয়ে এক খণ্ড মসলিন কিনেছে সে সময়, এমন গল্পও শোনা যেত। পাশাপাশি
ভাবুন ফরাসীরা গোটা চন্দননগর কিনেছিল চল্লিশ হাজার টাকায়। আরবিরা সে মসলিনকে বলত
আর-ই-রওয়ান, অর্থাৎ চলন্ত জলধারা। সেই চলন্ত জলধারার ওপর আমি আমার রোজনামচা
লিখতাম। এই নস্যির ডিবেতে প্রায় ষাট গজ মসলিন রয়েছে, আর সেই ষাট গজের ওজন বারো
আউন্সের বেশি নয়। সেই কাপড়ের ওপর আমার বালেশ্বরের একবছরের ডায়েরী। এই নস্যির
ডিবেটা কাকে দেব ভেবে পাচ্ছিলাম না। সবাই তো ধান্দাবাজ। আপনি সজ্জন মানুষ। আপনাকে
দিয়ে যেতে চাই। ডিবেটা খুলে দেখারও সাহস হয়নি। আর পুরনো কাসুন্দি ঘেঁটে কী হবে
বলুন। থ্যাঙ্ক ইউ ফর দ্য কফি। আসি।
ভদ্রলোক ভূত হোক বা না হোক,
আশ্চর্যজনক ভাবে কফি হাউসের ভিড়ে মিশে গিয়ে অবাক করে দিলে অরূপ সান্যালকে। নস্যির
ডিবেটা অবশ্য বাড়ি ফেরার আগে খুলতে ইচ্ছে হয়নি তাঁর, তবে ডিবেটা যে খাঁটি সোনার সে’টা
স্পষ্ট। বাড়ি ফেরার পথে মিনিবাসে খবরের কাগজের পাতা ওলটানোর সময় একটা ছোট্ট খবর
দেখতে পেয়ে অল্প বিষম খেলেন সান্যালবাবু; কে বা কারা যেন গত রাত্রে চার্নকের সমাধি
খুঁড়েছে, কিন্তু বিশেষ কিছু ক্ষতি করেনি। কড়া পাহারা থাকা সত্যেও এমন ঘটনাকে প্রায়
ভৌতিক মনে করছেন কর্তৃপক্ষ।
বাড়ি ফিরেই হুড়মুড়িয়ে
শোওয়ার ঘরে গিয়ে দরজায় খিল এঁটে সামান্য নিঃশ্বাস নিলেন অরূপ সান্যাল। নস্যির
ডিবেটা খুলে আরও ঘাবড়ে যেতে হল। মসলিনের কোনও চিহ্ন নেই। আদ্যি কালের ইংরেজিতে
লেখা ছোট্ট চিরকুট। কাগজটাও বহু পুরনো। যার তর্জমা করলে এই দাঁড়ায়;
“কালা গবেটটার মনে এই ছিল?
যাক! আমি যখন বেঁচে থাকতে অমৃতের রেসীপি পাইনি তখন আর কাউকে পেতে দেব না। এই মসলিন
আমি আমার বৌয়ের মড়ার গায়ে জড়িয়ে দিলাম। এ দেশে দু’টো ভালোবাসাই খুঁজে পেয়েছিলাম,
সে দু’জন একে অপরকে জড়িয়ে থাকুক”।
1 comment:
Excellent...History+Kolkata+Bhoot+Rosogolla = mohot uponnasher ingredients
Post a Comment