দিদা মাঝে মধ্যে গাইত;
"বাপ রে নিমাই আমার
যাইয়ো না যাইয়ো না
বৈরাগী না হইয়ো নিমাই
বিবাগী না হইয়ো..."।
পরের কথাগুলো দিব্যি ভুলে গেছি। শুরুটা মোটামুটি এ'রকমই ছিল। বড় আর্তি ছিল সেই সুরে। সামান্য ছমছম। শুনলেই মনে হত নিমাই অত একগুঁয়ে না হলেই ভালো হত; অত করে কেউ বলছে যখন, থেকে গেলেই হয়। দু'চার দিন পর না হয় সময় সুযোগ বুঝে আবার বিবাগী হওয়ার ইচ্ছেটা নিয়ে আলোচনা করা যাবে। তদ্দিন একটু কাজকর্ম বাজারঘাট করে কাটালে কী এমন ক্ষতি! আহা রে। গানের শুরুতে "বাপরে"টা এমন ককিয়ে বলত দিদা যেন প'য়ের নীচে বাহাত্তর খানা হসন্ত বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই ডাক অগ্রাহ্য করে ছাতে যাওয়াটাও অন্যায়।
সন্ধ্যে দিয়ে আসার পর বারান্দায় একটা বেতের চেয়ারে দিদা বসে গুনগুন করে যেত। আমি মেঝেতে বসে; দাদুর দেওয়া কোনও গল্পের বই সামনে মেলা, পাশে দুধমুড়ির বাটি। মধুমামা দুধ দিতে আসত রোজ দুপুরে, একটা সুবিশাল অ্যালুমিনিয়ামের বাটিতে স্টিলের ছোট কাপে মেপে মেপে দশ কাপ দুধ। মধুমামার থেকে দুধ নিতে যে কী ভালো লাগত। সেই দুধের মোটা হলদে সর দু'চামচ জুটতো বিকেলে, শুধু শুধু। আর সরের বাকিটুকু মিশে থাকতে বিকেলের দুধমুড়িতে।
দিদার গুনগুনের সঙ্গে মিশে যেত রাস্তা থেকে ভেসে আসা সাইকেল বেলের টুংটাং, আইসক্রিমওলার "এইস্কিরিম" হাঁক বা রিক্সাওলার প্যাডেলের মচরমচর।
দিদার গায়ে লেপ্টে পরা ছাপার শাড়ির মত নরম ছিল সে সব মফস্বলি সন্ধে। দিদার গায়ের সুবাস লেগে আছে সে'সব স্মৃতিতে।
পুজোবার্ষিকীর ওপর হুমড়ে পড়ার ভালোবাসাটুকু দিদা নিয়ে চলে গেছে।
No comments:
Post a Comment