Wednesday, August 30, 2017

বরিশাল

বরিশাল।

স্বাধীনতার খানিক আগেই হবে হয়ত। দাদু তখন স্কুলে, আন্দাজ করতে পারি ক্লাস সেভেন কী এইট। শহরজুড়ে উত্তেজনা।
হিন্দু মুসলিম। মার দাঙ্গা।
তার ওপর শুরু হল ভয়াবহ কলেরার প্রকোপ।

মোদ্দা কথা হল মরে যাওয়াটা খুব একটা তাবড় ব্যাপার নয় সেই সময়। মাঝেমধ্যেই খবর আসে। খুব সুপরিচিত কেউ; গতকাল হয়ত ছিলেন- আজ নেই।

ওই মৃত্যুর পরিবেশে দাদু অঙ্ককে আঁকড়ে ধরতে শিখেছিলেন। পরিচিত কেউ মারা যাওয়ার রাতগুলো দাদু রাতভর অঙ্ক প্র‍্যাক্টিস করে কাটিয়ে দিতেন।

অঙ্ক। রাতভোর হওয়া পর্যন্ত। যতক্ষণ না মগজ নুয়ে পড়ে অবশ হয়ে। ভয়বাহ ব্যাপার হল অনুশীলনী কম পড়তে শুরু করেছিল।

"দাদা, যাস না। যাস না। নতুন ক্লাসের নতুন বই আসুক, তখন না হয় অন্য বাহানা খুঁজে নিস"।
একান্নবর্তী পরিবার, মানুষজন বড় কম ছিল না।

অঙ্ক দাদুকে বিট্রে করেনি কখনও। দাদু অঙ্কের মধ্যে বাড়ির গন্ধ পেত হয়ত।

চন্দননগরের প্রাইভেট নার্সিংহোমে শুয়ে দাদুর শেষ দিনের গল্পের বেশ কিছুটা জুড়ে ছিল ক্রিকেট, বরিশাল, অঙ্ক আর সলিচিউড অফ আলেক্স্যান্ডার সেলকার্ক।

"অঙ্ক বইয়ের অনুশীলনী শেষ হয়ে আসছে, সে যে কী ভয় ভাই। অঙ্কের বাইরে কোথায় যাব? বরিশাল। জ্যাঠাইমা।  জ্যাঠতুতো খুড়তুতো ভাইবোনে মিলে গোটা বাড়ি সরগরম; সমস্ত শান্ত হয়ে আসে। সমস্তটা অন্ধকারে। নীচের একটা ঘরের একটা টেবিলে রাতের পর রাত কেটেছে। অনুশীলনীর পর অনুশীলনী। আমার ফেলে আসা দেশ বলতে ওই টেবিল চেয়ারটুকুই"।

দাদু অঙ্কের প্রতি আনুগত্য আমায় দিয়ে যেতে পারেননি। সেলকার্কের গল্প বলেছিলেন;

I am monarch of all I survey; 
My right there is none to dispute; 
From the centre all round to the sea 
I am lord of the fowl and the brute 
O Solitude! where are the charms        
That sages have seen in thy face? 
Better dwell in the midst of alarms, 
Than reign in this horrible place.

1 comment:

Anonymous said...

bhari bhalo