Monday, September 4, 2017

কমিশন

- আচ্ছা, ব্যাপারটা কী বলুন তো মিস্টার দত্ত!
- কীসে কী?
- আমাদের পর পর পাঁচটা কোটেশন মুখ থুবড়ে পড়ল।
- ইরেসপন্সিবলি কোট করলে এর চেয়ে বেটার আর কী হবে বলুন সান্যালবাবু।
- ইরেস্পন্সিবল? রিয়েলি? এত লো মার্জিনে কোট করছি তবুও বলছেন...? আর আপনি আছেন কী করতে?
- আমি আছি। থাকবও। কিন্তু তাই বলে তো আর রাতকে দিন করে দিতে পারব না। ওপরওলার কাছে আমায় জবাবদিহি করতে হয়।
- ঝেড়ে কাশুন তো মশাই, গুপ্তা বেশি কিছু অফার করেছে নাকি আপনাকে? পাঁচটায় তিনটে কোটেশন তো গুপ্তাই ঝেড়ে দিলো।
- পরের চিন্তা ছাড়ুন দেখি। সামনে বড় দাঁও আসছে। মিনিমাম আড়াই কোটির কন্ট্র‍্যাক্ট।
- টু পয়েন্ট ফাইভ?
- থার্টি পার্সেন্ট মার্জিন।
- বলেন কী! এ'বার গুপ্তাফুপ্তা বললে শুনব না দত্তবাবু। লোয়েস্ট কোট যেন আমাদেরই হয়।
- হুঁ। দেখুন আমি চাকরী করে খাওয়া মানুষ...।
- এ'সব বললে আর শুনছি না। আপনার কমিশন আমি দুই পারসেন্ট বাড়িয়ে দেব।
- দুই?
- গুপ্তা আরও বেশি দিচ্ছে? চলুন পাঁচ বেশি দেব, বাট দ্যাট ইজ ম্যাক্সিমাম।
- অকারণ বিচলিত হচ্ছেন সান্যালবাবু।
- আড়াই কোটি আমার চাই।
- কমিশন ডাবল করুন। এই দুই পাঁচ বাড়িয়ে কোনও লাভ হচ্ছে না।
- ডাবল মানে পনেরো পারসেন্ট? হাফ দ্য প্রফিট?
- আমায় স্লীপিং পার্টনার হিসেবে ধরে নিন।
- টূ হাই।
- গুপ্তাজি বেশ অমায়িক এ'সব সাবজেক্টে।
- বেশ। ফিফটিন পার্সেন্ট ফর ইউ। কিন্তু কন্ট্র‍্যাক্ট আমার চাই।
- কফি চলবে সান্যালবাবু? না লাইম সোডা?
- না, আজ সে'সব থাক। উঠি বরং।

**

- সান্যাল আপনাকে ফিফটিন অফার করেছে? রিয়েলি?
- হোয়াই শুড আই লাই গুপ্তাজি?
- আমি টুয়েন্টি দিব।
- এই কন্ট্র‍্যাক্টটা গেছে। পরেরটা।
- নো, আই নীড দিস ওয়ান।

**

- কী রে! খোকা, ক্লান্ত দেখাচ্ছে কেন এত তোকে?
- এক সান্যাল আর এক গুপ্তা মিলে আমায় এমন নাচিয়ে চলেছে...কী বলব।
- ধুস, কিছুই বুঝি না কী বলিস।
- আচ্ছা মা, তোমার শরীর কেমন আছে?

**

মা,

বছর দুই আপ্রাণ চেষ্টা করলাম। হলো না।

আর আমার দ্বারা হবেও না বোধ হয়। বাবার রেখে যাওয়া ধার শোধ করার মত টাকা জোগাড় হয়ে গেছিল। তবে ঠিক সৎপথে নয়।

অতএব পাপের আয়ে টাকাটা শোধ না করে ব্যাঙ্ক থেকে পুরো টাকাটা তুলে একটা থলিতে ভরে গঙ্গায় ফেললাম। এ সময় বিকেল বেলায় হাওড়া ব্রীজের রেলিঙ ধরে দাঁড়ালে মুখে কী ফুরফুরে হাওয়া ঠেকে, জানো?

গতকাল জিজ্ঞেস করলে আমায় অমন ক্লান্ত দেখাচ্ছে কেন। ভূতকে অমন একটু শ্রান্ত দেখায়। কিছু মনে কোর না।  তোমায় আর ঠকাতে মন চাইছিল না। তাই লিখে ফেললাম এই চিঠিটা।  মধুপুরের বাড়িটা বিক্রি করে দিয়েছি বাবার ধার শোধ করতে। পারলে ক্ষমা কোরো।

তবে অদ্ভুত নেশাটা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। কমিশন বাড়ানোর নেশা। টাকার দরকার নেই আর, বডিও হুগলীর নীচে পচছে। তবু, কমিশন বাড়ানোর নেশাটা কাটিয়ে উঠতে পারছি না। পনেরো পার্সেন্ট পর্যন্ত টেনে তুলেছি, আরও কতটা তোলা যায় দেখি।

আর তোমায় মিথ্যে জ্বালাব না।

আসি,

খোকা।

No comments: