গোটা পিঠ রামথাপ্পড়ে ভাইব্রেট করে উঠল। পিছনে ঘুরতেই দেখি দীপুদা। সেই একগাল হাসি। সেই উষ্কখুষ্ক চুল। ফতুয়াটার বোতামগুলো আগের মতই খোলা। এক গাল খোঁচাখোঁচা দাড়ি। ময়লা পাজামা।
মণ্ডপের পিছনের দিকটা অন্ধকার। কামিনী ফুলের গাছটা নুয়ে পড়েছে সুবাসে। সিগারেট ধরাতে হলে এ'দিকে আসে ছেলেছোকরারা।
- দীপুদা! তুমি?
- ভুলিসনি তা'হলে!
- কবে ফিরলে?
- ফিরিনি।
- তবে?
- বুড়ি ছুঁয়েই কেটে পড়ব। কিছু কাগজপত্রে সই করার জন্য দাদারা ডেকেছিল। বাবার সম্পত্তির ভাগ কোনওদিন চাইব না সে'টা আগেই জানিয়ে ছিলাম। তবে লিগাল ভ্যালিডেশন ছাড়া দাদারা নিশ্চিন্ত হতে পারছিল না। অবলাইজ করতে চলে এলাম।
- কখন নামলে?
- আট সতেরোর কাটোয়া লোকালে নেমেছি। সাড়ে এগারোটাত ব্যান্ডেলে ফিরছি। হাতে এখনও দেড় ঘণ্টা সময় আছে। ভাবলাম তোর হালহকিকতের খবর নিয়ে যাই।
- দীপুদা, মণ্ডপে চলো!
- পাগল? সিগারেট দে।
- এই যে।
- থ্যাঙ্কস।
- কোথায় ছিলে এদ্দিন?
- হুঁ?
- এই পাঁচ বছর, কোথায় ছিলে?
- পরিব্রাজক। দিল্লী টু বলরামপুরম...ট্রেনে, বাসে, জাহাজে, পদব্রজে।
- বলরামপুর?
- পুরম। কেরলের একটা গাঁ। স্প্যানটা বোঝতে বললাম। গুজরাত, মহারাষ্ট্র, ছত্তিসগড় ; কিছুই বাদ যায়নি।
- কাজকর্ম?
- যখন যেমন।
- দীপুদা...।
- স্টেশন যাবি? সী অফ করতে?
- যাব তো।
- গুডবয়। শান্টুদার দোকান থেকে রুটি তড়কা প্যাক করিয়ে নেব।
- দীপুদা। থাকবে না?
- এলাহাবাদ যাচ্ছি রে। একটা কাপড়ের মিলে অ্যাকাউন্টান্টের চাকরী পেয়েছি। আপাতত মাসখানেক সে'খানেই।
- ভোগ বিতরণ শুরু হবে দীপুদা।
- ওহ, ঠিক হ্যায়। আয়। আমি ওয়েট করছি।
- দীপুদা, একবারের জন্য আসবে না?
- না।
- বাবানদা, শঙ্কর জ্যেঠু; আরও কত লোকজন আছে। তোমায় দেখলে সবাই কী খুশি হবে দীপুদা। ভোগ বিতরণ তুমিই সুপারভাইজ করতে তো। তোমার অ্যাসিস্ট্যান্টরা সবাই আছে। একবারে জন্য প্লীজ...।
- কদ্দিন পর পুজোয় বাড়ি ফিরলাম রে...।
- কেমন আছ দীপুদা?
- যেমন। তেমন।
- এ'ভাবে কদ্দিন?
- যদ্দিন। তদ্দিন।
- দিদিভাই এসেছে। মণ্ডপেই আছে এখন।
- ভোগ বিতরণ শুরু হবে। মাইকে বোধ হয় স্বদেশ জ্যেঠু, তাই না রে? আয় এ'বার।
- তুমি বোধ হয় বেরোবে...।
- দশটায় একটা ব্যান্ডেল আছে।
- দীপুদা...।
- আসি রে।
- এলাহাবাদের কোন মিল?
- ভাবছি চাকরীটা আপাতত থাক। ঝাড়খণ্ডের একটা গ্রামের স্কুলে ভলেন্টিয়ার দরকার। মাইনে নেই কিন্তু থাকা খাওয়া ফ্রী। পিকচারেস্ক ল্যান্ডস্কেপ রে।
- কোন গ্রাম?
- তারপর তোর দিদিভাই তোর আর্মট্যুইস্ট করে লোকেট করে নিক? নাকি? আসি!
- দীপুদা!
- হ্যাঁ রে, এখনও ভোগ শালপাতার দোনায় দেওয়া হয় না থার্মোকলের বাটি এসে পড়েছে?
No comments:
Post a Comment