"এই অন্ধকারেও অবজার্ভ করেছিলাম, ক্যাটার্যাক্ট অপারেশনটা খাপে খাপ বসেছে, তাই না"?। বৃদ্ধের খিটখিট হাওয়া। হিমভেজা হলুদফুলের সামনে গজগজ বেমানান, তাই বৃদ্ধার চুপচাপ " তুমি আস্ত পাগল"য়ে সারেন্ডার। ড্রাইভার ছোকরার স্যালুট-মেজাজের 'ওয়াহ আঙ্কলজী"।
Sunday, December 30, 2018
যেমনটা হয়
"এই অন্ধকারেও অবজার্ভ করেছিলাম, ক্যাটার্যাক্ট অপারেশনটা খাপে খাপ বসেছে, তাই না"?। বৃদ্ধের খিটখিট হাওয়া। হিমভেজা হলুদফুলের সামনে গজগজ বেমানান, তাই বৃদ্ধার চুপচাপ " তুমি আস্ত পাগল"য়ে সারেন্ডার। ড্রাইভার ছোকরার স্যালুট-মেজাজের 'ওয়াহ আঙ্কলজী"।
কলকাতা আর উলের বোঝা
ভালোবাসা
স্টীমার, পর্দা ও জিলিপি।
অ্যাসিস্ট্যান্ট
বকুলকথা
Tuesday, December 25, 2018
ডানপিটে লোকটাকে
- আপনি? আপনিই?
- আজ্ঞে।
- বিশ্বাস হয় না...আপনি আদতে...এত ম্যাড়ম্যাড়ে?
- ওই। দূর থেকে যে চকমক দেখা যায়, তা কি কাছে এলে থাকে।
- তার চেয়েও বড় কথা, আপনার সঙ্গে যে সত্যিই দেখা হবে..তা ভাবাই যায় না। আপনি তিনিই তো?
- আজ্ঞে, বাঁ হাতে চটের ব্যাগটা তো দেখতেই পাচ্ছে। ভারি আর বেঢপ চেহারা। আর এই আমার ডান-পা খানা হঠাৎ লাফিয়ে উঠে ফুটবোর্ডে।
- বিলক্ষণ! বিলক্ষণ। ডেসক্রিপশন একদম মিলে যাচ্ছে। বাস যত জোরে ছুটছিল..।
- আমিও তত জোরে..। ডান হাত দিয়ে আছি পিছনের হাতলটা ধরে।
- কিন্তু সব থেমে আছে কেন? বাস, লোকজন। সব স্ট্যান্ড স্টিল কেন?
- আপনি ভাবছেন, হাত বাড়াবেন কিনা। সেই মুহূর্তের ভগ্নাংশে আমরা আটকে আছি।
- সর্বনাশ, এক পা ফুটবোর্ডে রেখে ভাবছেন কেউ হাত ধরবে কিনা? আপনি তো খতরনাক লোক মশাই।
- উপায় নেই স্যার। মরার সময় কি আছে যে অত সুবিধে অসুবিধে নিয়ে ভাবব? আপনি হাত বাড়ালে ভালো, নয়ত অন্য কারুর হাত। মোট কথা আমার থলিটা দূরে দূরে পৌঁছতে হবেই। যা করবেন তাড়াতাড়ি করুন, বাসের গতি এ'বারে বাড়বে।
- ডানপিটেই বটে আপনি। এই যে বাড়িয়ে দিলাম, কষে ধরুন দেখি হাতখানা।
***
তন্দ্রা যখন ভাঙলো তখন ডানপিটে ভদ্রলোক আর তার ঢাউস থলে হাওয়া, বাস কন্ডাক্টর মুখ ঝামটা দিচ্ছেন দরজায় দাঁড়িয়ে ঝিমোনোর জন্য। হাতের মুঠোয় চিরকুটটা পেয়ে দিবাকর মিত্র অবাক;
"দিবাকরবাবু, হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ'বার পিছু হঠলে চলবে না। অম্লান দাস নামে একজনের ঠিকানা দিলাম। অম্লানবাবুর তেমন কেউ নেই, চায়ের দোকানে বাসন মেজে চলে যায়। তিন নম্বর মতিলাল ঘোষ লেন ঘেঁষা সে দোকান। সে'খানেই তাঁর বাস। দাসবাবুর বড় পেস্ট্রি খাওয়ার শখ৷ এক বাক্স ভালো পেস্ট্রি তাঁকে পৌঁছে দেবেন? প্লীজ? চুপিচুপি? আমার বোধ হয় থলি হাতে ও পাড়ায় যাওয়া হবে না এ'বার। প্লীজ, এ কাজটা করে দেবেন? অম্লানবাবু খুব খুশি হবেন, বছর দশেকের খোকারা যেমন খুশি আর কী; বেনামি কেক-প্যাস্ট্রির বাক্স পেলে। প্লীজ, কেমন?
ইতি ডানপিটে"।
ফ্লুরিস থেকে একবাক্স প্যাস্ট্রি কিনে যখন মিত্রবাবু বেরিয়ে এলেন, ততক্ষণে পার্ক স্ট্রিটে সন্ধ্যে নেমেছে। চারদিকে আলো; টুনি বাল্বের স্যান্টা ক্লজ ঝলমল করছে। আলোর স্যান্টার দিকে তাকিয়ে মিচকি হাসলেন মিত্রবাবু;
"স্যান্টাদা, আপনাকে সাক্ষাতে দেখতে পেলে টুনি দিয়ে আপনার এমন এলেবেলে ছবি কেউ আঁকত না"।
Thursday, December 20, 2018
অপটিমিজম
- অপ্টিমিজিমের চেয়ে বিরক্তিকর কিছু আর আছে কি?
- টেস্ট ম্যাচের সকালে বৃষ্টি, লুচির পাশে স্যালাড, ঘুমের মাঝে কলিংবেল; এ'গুলো বিরক্তিকর বটে। তবে অপ্টিমিজম বড় বালাই, এ আপনি সঠিক বলেছেন গুরুদেব।
- গুরুদেব হয়েই ভুল করলাম রে ভাই, সারাক্ষণ ভক্তদের বাড়াবাড়ি বায়নাক্কা সামাল দেওয়া। হাজার রকম দাবী। এর মনে অশান্তি, ওর পেটে টিউমার। এ চায় মেডিটেট করতে, ও চায় পরোপকারের নিজেকে ভাসিয়ে দিয়ে। আদেখলামির বহর দেখলে গা-পিত্তি জ্বলে যায়।
- তা তো বটেই। আপনাকে তো কম সামাল দিতে হয়না। আপনার অ্যাসিস্ট্যান্ট হয়ে তো এই ক'বছরে কত দেখলাম। সেই ভোর ছ'টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত গেরুয়া জোব্বা পরে আপনাকে লোকজনের হাউমাউ শুনতে হয়। রাত গভীর হলে তবে একটু লুঙ্গি পরে রিল্যাক্স করতে পারেন।
- তবেই বলো। কাহাতক লোকের ইন্সপিরেশনের খিদে মেটানো যায়। আরে এ জীবনে মরতেই হবে, রাস্তায় নামলে কুকুরের ইয়েতে পা ফেলতে হবেই। বন্ধুরা যে আদতে ধান্দাবাজ আর নিজেকেও ধান্দাবাজি করেই কাটাতে হবে; সে'টাও না বুঝে উপায় নেই। তবু একগাদা গদগদে 'তুমি নির্মল কর, মঙ্গল কর' মার্কা কাতুকুতু দেওয়া কথা না শুনলে লোকজনের ভাত হজম হয় না।
- সত্যি। সত্যিই তো। যত অকালকুষ্মাণ্ডের দল।
- এই যেমন উত্তরপাড়ার অনন্ত হালদার। আমায় বলে কিনা 'গুরুদেব, ব্যবসায় অনেক পাপ করেছি। এ'বার মনকে শুদ্ধ করতে চাই'। আরে বাবা চব্বিশঘণ্টা নিউজ চ্যানেলে মুখ গুঁজে গাঁজখোর গল্প না শুনলে সে ব্যাটার কন্সটিপেশন শুরু হয়ে যায়, তার মনশুদ্ধি? তার চেয়ে হাতির শুঁড়কে মাফলার হিসেবে ব্যবহার করা সহজ। আর এ যুগে পাপ ছাড়া ব্যবসা করবে? ইচ্ছে করছিল 'নেকু' বলে জুতোপেটা করি। কিন্তু ওই, গীতা থেকে আলতুফালতু দু'লাইন আউড়ে ব্যাটাকে শান্ত করতে হল।
- জুতোপেটাই তো অ্যালোপ্যাথি। গীতা তো মনভোলানো হোমিওপ্যাথি।
- আমিও তাই বলি। কিন্তু লোকে চায় মিছিরি মাখানো সুড়সুড়ি। যেমন কুকুর তেমনি মুগুর। যেমন ডিমান্ড তেমন সাপ্লাই। এই যেমন কুদঘাটের উমা হালদার, পাঁচবার চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সিতে ফেল করেও সিএ হওয়া সাধ যায়নি। বলে আমার আশীর্বাদ থাকলে নাকি সে অসাধ্য সাধন করতে পারবে। যোগবলে নিজের মনসংযোগ বাড়িয়ে তুলে পরের বার পাশ করতে চায়। ফেলটু স্টুডেন্ট, তার আবার কত রঙিন শখ। নিজে ব্রিলিয়ান্ট নয়, সে'টা বুঝেও না বোঝার জন্য কী আপ্রাণ টালবাহানা।
- সব অখাদ্য। ছ্যাহ্। সবাই এক! এই যেমন ধরুন, রোজ যে বৃদ্ধা ঘরের কোণে পড়ে থাকেন। রোজ, গোটাদিন।ওই যে, যার মুখ দিয়ে সচরাচর বাক্যি সরে না! উফ, গোটাদিন শুধু ফ্যাঁচফোঁচ কান্না। বহুদিন আগে তার ছেলে নাকি প্রেমে লেঙ্গি খেয়ে ঘরসংসার ছেড়ে হাওয়া...খোয়া ছেলেকে ফিরে পাওয়ার সে কী আকুতি। এত বছরেও বুড়ির অপটিমিজম গেল না। বিরক্তিকর তো বটেই, তাই না গুরুদেব?
- আমার বিড়ি প্যাকেটটা কই হে?
- গুরুদেব? সে বৃদ্ধাকে আপনার কাছে কোনো সদুপদেশ কোনোদিন চাইতে দেখিনি। গোটাদিন শুধু আপনি খাওয়াদাওয়া করেছেন কিনা, সেই খোঁজ নিয়েই দিন কাবার করেন তিনি। কী অদ্ভুত, তাই না গুরুদেব?
- অপ্টিমিজমের চেয়েও বিরক্তিকর একটা ব্যাপার আছে দেখছি৷ তোমার বাজে বকা। চটপট বিড়ির প্যাকেটটা দিয়ে কেটে পড়ো দেখি বাছাধন। এ'বার একটু জিরিয়ে নেব।
Monday, December 17, 2018
মিঠে পান সাদা পান
- একটা মিঠে পান দেবেন।
- বরফ পান না প্লেন মিষ্টি?
- বরফ নয় দাদা। বরফ নয়৷ নরমে গরমে চাই। মিঠে কিন্তু গুলকন্দ কম।
- বেশ। সুপুরি?
- মিষ্টি ভাজা সুপুরি একটু। আর কুচনো সুপুরি দু'চার টুকরো।
- আসুন। পনেরো টাকা।
- আহা। বড় ভালো বানিয়েছেন। চমনবাহার আর মশলার এই পরিমিত ব্যবহার...। উপযুক্ত মিঠে পান একেই বলে।
- সিগারেট দিই?
- রাবড়ির পরে আবার মুলোচচ্চড়ি কেন? এই ভালো। তার চেয়ে বরং আর একটা পান দিন। এ'টা সাদা পান । খয়ের ছাড়া, অল্প চুন। চমনবাহার, বাড়তি এলাচ, মৌরি। ডুমো ডুমো করে কাটা সুপুরি বেশি করে। আর দেখবেন ভাই, বাংলা পাতা দেবেন না। মিঠে পাতা। এই পানটা একটু সেনসিটিভলি বানানো দরকার। আর সাদা কাগজে মুড়ে দেবেন, কেমন? এ'বার বানান। একটু সেনসিটিভলি বানাবেন। কেমন? একেবারে জানপ্রাণ লড়িয়ে। পানটাকে ক্যানভ্যাসের মত দেখবেন, প্লীজ।
- সেনসিটিভলি বানাবো? পান?
- যত্ন করে। চুন সময় নিয়ে পানের গায়ে মাখান, যেমন ভাবে প্রবলে যত্নে গোলাপচাষের মাটি তৈরি করতে হয়। এলাচ মৌরি চমনবাহার সুপুরি দিন, কিন্তু সার্জেনের মত হিসেব করে। নরম ভাবে ভাজ করুম। মন দিয়ে, কেমন?
- তা এত যত্ন করে বানাতে হবে কেন?
- বাহ, এ পান আমার পিসেমশাইয়ের জন্য যে।
- ওহ, উনি পানের খুব ভক্ত?
- উনি পানের পিকাসো। প্রাণ উজাড় করে পান বানান, খান ও খাওয়ান। নিজে অন্তত বত্রিশ রকম ভাবে পান খিলি করতে পারেন। পানের প্রতি অযত্ন ওঁকে দুঃখ দেয়। তাছাড়া আজকের দিনটা ডবল স্পেশাল, তাই ডাবল যত্ন করে।
- আজকের দিনটা স্পেশাল কেন?
- পিসেমশাইয়ের কাছেই আমরা দু'জনে মানুষ। ও ছাড়া কোনো গার্জেন আমাদের। কোনোদিন ছিল না। পিসেমশাইয়ের অপারেশনটা খুব জরুরি ছিল। সে জন্য দু'জনেই লোনের অ্যাপ্লাই করেছিলাম। আজ দু'জনেরই লোনটা রিজেক্ট হয়ে গেল, জানেন? পিসেমশাই অবিশ্যি অভিযোগ করা মানুষ নন, এদ্দিন যতই মুখচোপা করে থাকুন; ভদ্রলোক আদ্যোপান্ত ভালোবাসার। পানদাদা, আমরা দু'জন এ'বার সত্যিই অনাথ হব।
- আপনারা দু'জন? দু'জন কারা? আর আপনাকে চেনা চেনা ঠেকছে কেন?
- আমরা? আমি ভোঁদা। আর সে হাঁদা।
Sunday, November 18, 2018
সঠিক দিকে
- এই যে, অ্যাস্ট্রনট দত্ত! কন্ট্রোলরুম থেকে বলছি৷ কদ্দূর পৌঁছলেন?
- আর ভায়া কন্ট্রোলরুম, মহাকাশে সেঁধিয়ে তারপর টের পেলাম তালমিছরির ডিবেটা নিয়ে আসতে ভুলে গেছি। কী কাণ্ড বলুন দেখি...।
- আরে ধ্যার, যত অকাজের কথা। বলি যন্ত্রপাতি সব স্টেবল?
- দিব্যি। কোনো অসুবিধে নেই৷ এই বেলা একটু গা এলিয়ে নেব ভাবছি।
- সে কী! কাজ শুরু হয়নি?
- কাজ?
- উফফ! দত্তদা! ছবি তোলেননি? ফ্রম স্পেস? যে কাজের জন্য প্রাইমারি ভাবে আপনার যাওয়া!
- আলবাত! আর এ'বারে যা পাওয়ারফুল ক্যামেরা দিয়েছেন৷ তা দিয়ে এখান থেকেই সব যা ছবি তুলছি না; আইফোনও হার মেনে যাবে।
- আসল ছবিগুলো চটপট দিন। "মহাকাশ থেকে দেখা গেল ভারতের এই মেগা-আশ্চর্য" গোছের হেডলাইন তৈয়ার। এ'বার আপনি ছবি দিলেই..।
- তা অনেক ছবিই তো তুললাম, কোনটা দেব...।
- আরে যে কোনো...দিন না মশাই...ক্যুইক।
- এইটে দিই? সরকারি হাসপাতালের উঠোনে রুগীরা দলে দলে বেওয়ারিশ শুয়ে আছে? অনেকের হাতে স্যালাইনের বোতল? এই প্রথম মহাকাশ থেকে তোলা ছবিতে তাদের দেখা যাচ্ছে! ইন্ট্রিগিং।
- সে কী! সে'সব কে চায়! এই আপনার মাথাটা গেছে...আসল ছবি কই?
- আসল ছবি! ওহ হো! ভাঙা ব্রিজট্রিজের ছবি দেব? তাও তুলেছি৷ স্পষ্ট৷ দারুণ রেজোলিউশনে। ফর দ্য ফার্স্ট টাইম ফ্রম স্পেস!
- আরে ধুর্ছাই কাঁচকলা! সব মাটি করলেন দেখছি। আরে এত খরচ করে আপনাকে স্পেসে পাঠালো হল কেন? স্পেস থেকে আমাদের দেশের এই মেগা-সাইজের মূর্তির ছবি তুলতে। আর আপনি রুগী আর ভাঙা ব্রীজের ছবি তুলে সমস্ত গুবলেট পাকাচ্ছেন?
- ওহ হো! তাই তো, তাই তো! এই তালমিছরির শর্টেজ হলেই না; আমার মাথাটা যায় গুলিয়ে। ক্যামেরা ঘুরিয়ে এখুনি সঠিক দিকে তাক করছি। এখুনি।
Tuesday, November 13, 2018
সুইসাইড পয়েন্ট
- সুইসাইডটা কি ঠিকঠাক হয়নি? - আজ্ঞে? - না মানে, স্পষ্ট ঝাঁপ দিলাম। ওভার ব্রীজ থেকে ডায়রেক্ট লাইনের ওপর। ট্রেন দেখেই ঝাঁপিয়েছি। টাইমিংয়েও ভুলচুক করিনি বলেই মনে হয়। অথচ...। - কচুকাটা হয়ে পড়ে থাকার বদলে এই অদ্ভুত এলাকায় কী করে এসে পড়লেন...সে'টাই ভাবছেন তো? - আজ্ঞে। ঠিক তাই। মানে, এতটা ভেবড়ে গেছি না..। আপনাকে দেখতে পেয়ে ভাবলাম জিজ্ঞেস করেই ফেলি। - মরেও মরেননি। - সর্বনাশ! মরেছি? কিন্তু মরিনি? - বাহ্। বেশ চট করে বুঝে গেলেন দেখছি। - ও মা! না! এ কী! কিস্যু বুঝিনি। আর এই জায়গাটাই বা কোথায়..মাটি নীল, আকাশ নীল...এক্কেবারে বিতিকিচ্ছিরি। - প্রাহ্যাজামস্ক্বহ। - প্রাহ্যা...? - জামস্ক্বহ। - নরকটরক নাকি? - ধুর। সে'সব থ্রিলিং কিস্যু নয়। পাতি একটা গ্রহ। তাও পৃথিবীর চেয়ে বহু দূরের একটা গ্যালাক্সিতে। ভীষণ মোনোটনাস ব্যাপার। - এ'খানে কারা থাকে? - যারা থাকে তারা নিজেদের ভারি গালভরা নামে ডাকে। বশ্রুজ্বক্বজ। - বশ্রু? - জ্বক্বজ। তবে নাম শুনে ঘাবড়াবেন না। ব্যাটারা আদতে বেঢপ বিটকেল সব বেড়াল। এক্কেবারে গায়েপড়ার দল। - বেড়াল! যাহশ্লা! বেড়াল? - বেড়াল। ল্যাজ গোঁফ মিউ সব আছে। অথচ বিটকেল। ভোট দেয়, সফটওয়্যার প্রগ্র্যামিং করে, রান্নায় নুন বেশি দেয়, কেউ না দেখলে রাস্তায় থুতু ফেলে, কথায় কথায় বানান ভুল করে। অখাদ্য, প্রায় মানুষের মতই। - কী কাণ্ড। কী কাণ্ড। আচ্ছা, মরেও মরিনি কেসটা কী? - পৃথিবীর ওই সুইসাইড পয়েন্ট, যে'খান থেকে আপনি টুক করে ঝাঁপ দিলেন। ও'টা একটা এই-আছে-এই-নেই-ওয়ার্মহোল। ঠিকঠাক মোমেন্টামে ঝাঁপ দিলে রেললাইনের ওপরে না পড়ে সোজা এই...। - প্রাহ্যাজামস্ক্বহে? - প্রাহ্যাজামস্ক্বহে। কাজেই পৃথিবীর লোকে আপনাকে গায়েব ভাবলেও, এ'খানে আপনি বহাল তবিয়তেই থাকবেন। - থাকব? খাবো কী?বেঁচে থাকব কী করে? - সে চিন্তা এ'খানকার মাতব্বর বেড়ালদের। এই কেউ একটা এলো বলে। আপনাকে রাস্তায় ফেউফেউ করে ঘুরে বেড়াতে দেখলেই তুলে নিয়ে যাবে। তারপর আপনার থাকা খাওয়া মৌরুসিপাট্টা সমস্ত কিছুর দায় সে বেড়ালের। - যত্নআত্তি করবে তা'হলে? - আদরযত্নের চোটে প্রাণ আইঢাই করবে মশাই। খতরনাক আদেখলামো। গায়ে গা ঘষবে, কাতুকুতু দেবে আর গাণ্ডেপিণ্ডে গেলাবে। সে'সব তাও ঠিক আছে; মাঝেমধ্যেই রকমারি ছবি তুলবে। দিনে বারো হাজার বাইশটা ছবি গড়ে। গা জ্বলে ছারখার হয়ে যায় মাইরি। আমি তো ব্যাটাগুলোকে তেড়ে খিস্তি করি। - খিস্তি করেন? সর্বনাশ! - আরে ওরা বোঝেটোঝে না। ভাবে খুব মিষ্টি কোনো শব্দ করেছি বোধ হয়। আদর আরো এক ডিগ্রি বেড়ে যায়। তবে কী জানেন মশায়, পৃথিবীর চেয়ে এই প্রাহ্যাজামস্ক্বহই ভালো। বেড়ালরা দিব্যি জামাই আদরে রেখেছে। ওরা ভাবে ওরা আমাদের চালাচ্ছে এ'দিকে জানেনা যে তলেতলে ওদের আমরা চালাচ্ছি। কবি তো বলেই গেছেন; শখের প্রাণ, গড়ের মাঠ। - তা'হলে ভালোই থাকব, তাই তো? - আলবাত্। আরে মশাই আপনার ইয়ে পেলেও বেড়ালেরা আপনাকে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে 'বসতে আজ্ঞা হোক, করতে আজ্ঞা হোক' বলে কাকুতিমিনতি করবে। - টেরিফিক। - তা নতুন এসেছেন যখন, আমার সঙ্গেই যাবেন নাকি? আমি যে বশ্রুজ্বক্বজদের সঙ্গে আছি তারা আরো খান কয়েক মানুষ পেলে মিউমিউ করে আত্মহারা হয়ে যাবে। - তাই চলন। তবে দাদা, একটা প্রশ্ন মাথায় এলো। এই গ্রহেও কি বেড়ালদের জন্য কোনো গোলমেলে সুইসাইড পয়েন্ট আছে? |
Monday, November 12, 2018
গব্বরের কাঁপুনি
- ওহে গব্বর, একবার এ'দিকে এসো ভাইটি। - আ...আমি? - নাদুসনুদুস ভুঁড়ি। নোংরা চুলদাড়ি। কালচে দাঁত। বিটকেল হাসি। তোমায় তো আর প্রসেনজিত বলে ভুল করা চলে না ভাই। এ'দিকে একটু এসো দেখি। - ইয়, স্যার। আমি কিছু..ভ...ভুল করে ফেলেছি নাকি? - সর্দার মানুষ, তুমি কি আর ভুলচুক করতে পারো। তা শুনলাম নাকি তুমি কালিয়া আর আরো দু'জনকে উড়িয়ে দিয়েছ? - না মানে...কাজটা বোধ হয় ঠিক হয়নি। না? আসলে মাত্র দু'জন কচি ছোকরার হাতে ওরা এমন হেনস্থা হল...। - তা'তে তোমার ইজ্জতে চোট লাগল। বুঝি বুঝি। সর্দার মানুষ, অমন রাগধাপ তোমায় দিব্যি মানায়। - আপনি রেগে থাকবেন না স্যার। এই নাকে খত দিচ্ছি। আগামী সাতদিন আমি রামগড়ের রাস্তা থেকে পানের পিক আর ঘোড়ার ইয়ে সাফ করে প্রায়শ্চিত্ত করব। রেগে থাকবেন না প্লীজ। - তুমি কালিয়াকে মারো, সাম্ভার কানে সুড়সুড়ি দাও, ঠাকুরকে গীতাঞ্জলি পাঠাও; যা খুশি করো! আমার বয়ে গেছে। কিন্তু তাই বলে আমার নামের ডায়লগ নিজের নামে চালাবে? - আজ্ঞে? স্যার? - ন্যাকা! সো জা নহি তো গব্বর আ জায়েগা! এ'সব বলে ইয়ার্কি হচ্ছে? - কান মলছি স্যার। ভুলে বলে ফেলেছি। আর হবে না। ও ডায়লগ দিয়ে আমার মা আমায় ঘুম পাড়াত। আমি মুহূর্তের ভুলে নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছি। - বটে? - তখন খোকা বয়স। স্বভাবে অত্যন্ত দুরন্ত ও বদখত। কিন্তু যতই লাফঝাঁপ করি, যেই মা বলত "খোকা, এ'বার ঘুমো! নয়ত এখুনি সোমবার চলে আসবে"; অমনি আমি চোখ বুঝে ঢিপ করে খাটের উপর টানটান। সোমদা গো! এ'বারের মত ছোটভাইটিকে ক্ষমা করে দাও। পায়ে পড়ি! - একবার ভয় পেয়েছ কী মরেছ। জেনে রেখো গবুচন্দ্র; যার যত ভয়, সোমবারে তার কপালে তত বেশি ট্র্যাফিক জ্যাম, বসের মেজাজ ততোধিক তিরিক্ষি আর ফাইলের স্তুপ ততটাই উঁচু। আমার ডায়লগ নিজের নামে ঝাড়ার বেয়াদবী? ইসকি সজা মিলেগি ভায়া গব্বর, বরাবর মিলেগি। |
লাইসেন্স
- কী নাম? - আজ্ঞে হরিসাধন দত্ত। - বয়স? - চুয়ান্ন। - পেশা? - বিজনেস। স্ক্র্যাপ কেনাবেচা, বুঝলেন..ওই শিপইয়ার্ড থেকে এজেন্সি নিয়ে...। - আহ, রামকাহিনী ফাঁদতে বলিনি। ব্যবসা বললেই হবে। - বেশ। ব্যবসা। - ঠিকানা? - সত্তরের এ, কালীকৃষ্ণ লাহিড়ী স্ট্রীট। কলকাতা সাতাশ। - এ'বার বলুন। কী চাই..। - আজ্ঞে ওই, বাজিপোড়ানোর লাইসেন্স। - বাজিপোড়ানোর লাইসেন্স করানোর অফিসে কি আপনি জলভরা কিনতে আসবেন? বলি কী কী বাজি পোড়ানোর লাইসেন্স চাই? চটপট বলুন। - আজ্ঞে, এক বাক্স লারেলাপ্পা চকোলেট বোমা, হাফ ডজন জুবানকেশরি তুবড়ি, বাইশটা চুটকি চরকি আর সতেরোটা পিসেমশাই মার্কা মাল্টিকালার রংমশাল। - এই যুগে দাঁড়িয়ে এক বাক্স চকোলেট, ছটা তুবড়ি, বাইশটা চরকি, সতেরোটা রংমশাল। স্ক্র্যাপের ব্যবসা তো ভালোই দাঁড়িয়েছে মশাই। - হে হে। ওই, খেটে খাচ্ছি কোনোক্রমে। এ'বার ওই লাইসেন্সটা স্যার। - এক বাক্স চকোলেট, ছটা তুবড়ি, বাইশটা চড়কি সতেরোটা রংমশাল। তিন মানুষ বাতাস। মানুষ এনেছেন? - তিন মানুষ? বলেন কী! - এতগুলো বাজি! কতটা বাতাস খেয়ে নেবে, বাপ রে বাপ! কম্পিউটারের হিসেবে তিন মানুষ ফিজ আর এমন কী। - আজ্ঞে আমি ভেবেছিলাম দু'মানুষ। তেমনই ব্যবস্থা করে এনেছিলাম। এখন তিন নম্বর মানুষ পাই কোথায়...। - তুবড়িগুলো বাদ দিন, দু'মানুষে হয়ে যাবে। - না না, খোকাকে আমি কথা দিয়েছিলাম যে। তুবড়ি বাদ দেওয়া যাবে না স্যার। আপনি বিল কেটে দিন, আমি তিন নম্বর মানুষ জোগাড় করব। আমার একটা অকাজের চাকর আছে; অকালকুষ্মাণ্ড। তিরিশ বছরের বন্ডে কেনা তাই ওগড়াতেও পারছিলাম না। ভাবছি বাকি দু'জনের সঙ্গে ওকে জুড়ে দেব। ও ব্যাটা বাজির বস্তা নিয়ে বাইরেই অপেক্ষা করছে। লাইসেন্স কেটেই দিন। - বাকি দু'জন কোথায়? - তারাও বাইরেই আছে৷ আপনি বললেই নিয়ে আসব। - রিলেশন? - আমার বাবা মা। এমনিতেও বয়স হয়েছে। অক্সিজেন কন্সাম্পশনের দিক দিয়ে রীতিমত সোশ্যাল লায়াবিলিটি। ও'রা ইলেক্ট্রিক চেয়ারে বসলে এ বছর একটু বাড়তি ট্যাক্স রিবেটও পেতে পারি। হেহ্...। - বেশ। নিয়ে আসুন তিনজনকে। ইলেক্ট্রিক চেয়ারে পনেরো মিনিট লাগবে। তারপর লাইসেন্সের পেপারওয়ার্কে আরো দশ মিনিট। কেমন? - এক বাক্স চকোলেট, ছটা তুবড়ি, বাইশটা চরকি সতেরোটা রংমশাল; সব কটাই থাকছে তো স্যার লাইসেন্সে? ছেলেটার বড্ড শখ! |
হ্যাপা
- দারোগাবাবু, রসগোল্লা খাবেন?
- স্পঞ্জ?
- না না, অর্থোডক্স টেক্সচারের। মাঝারি মিষ্টি।
- উঁ, খান চারেক আনাও তা'হলে। টেস্ট করে দেখি। যা বুঝছি, হাতে বেশ কিছুটা সময় আছে।
- তা আছে। গোডাউনের চাবি রাখা থাকে আমার বাড়ির দেরাজে। দিবাকর সাইকেল নিয়ে গেছে বটে, তবে তার হাঁটুতে যা ব্যথা। দু'মাইল যেতে অন্তত কুড়ি-পঁচিশ মিনিট। তারপর গিন্নীর থেকে চাবি নিতে পাঁচ দশ মিনিট। সব মিলে প্রায় ধরুন গিয়ে এক ঘণ্টা। বরং এক কাজ করি। সঙ্গে দু'টো নিমকি বলে দিই। বেশ খাস্তা করে। এই পাশেই দোকান।
- আনাবে?
- চট করে। আপনি আর আপনার দুই হাবিলদার, সক্কলের চোখ মুখ বসে গেছে এক্কেবারে। বড্ড কাজের চাপ, তাই না দারোগাবাবু?
- কী আর বলব মিত্তির। সর্ষের তেলের ব্যবসা নিয়ে থাকো, পুলিশের ঝামেলা আর কী বুঝবে। গোটা সকাল কাটলো জোড়াচোর বিধু নিধুকে ধাওয়া করে। জান কয়লা করে দিলো ছোকরা দু'টো। তারপর থানায় ফিরে কাতলার ঝোল, পোস্তর বড়া আর জলপাইয়ের চাটনি দিয়ে দু'মুঠো ভাত খেয়েছি কি খাইনি; সদর থেকে ইন্সট্রাকশন এলো তোমার গোডাউন রেড করার। এ'খানে তুমি নাকি গোলমেলে কিছু শুরু করেছে।
- আমি? গোলমেলে? আমি? হরিহর মিত্র? প্রতি বছর কালীপুজোয় কত টাকা চাঁদা দিই জানেন? আর দুর্গামণ্ডপের চাতালটা গত বছর কত টাকা খরচ করে বাঁধিয়ে দিয়েছি সে খবর জানেন?
- আরে আমি তো বড়সাহেবকে তাই বললাম। মিত্তির অতি সজ্জন মানুষ। একটু জুয়ার নেশা ছিল এক কালে। তা অনেকটা এখন কমে গিয়েছে। আর গোপন তেজারতির কারবার নিয়ে আমাদের মাথা না ঘামালেও চলবে। তাছাড়া আজ গা'টাও একটু ম্যাজম্যাজ করছিল। গোডাউন রেডে বড় ঝক্কি। কিন্তু কী আর করি বলো। তুমি বরং এক কাজ করো। রসগোল্লা নিমকির সঙ্গে দু'টো পানতো জুড়ে দিও। গরম দিলে ভালো হয়। গা ম্যাজম্যাজে গরম পানতো খুব হেল্প করে।
- বেশ বেশ। তা'হলে চারটে করে রসগোল্লা, দু'টো পান্তুয়া, দু'টো নিমকি আর একটা জলভরা। পার প্লেট। আনতে বলি?
- মিষ্টির প্রপোরশন বড্ড বেশি হে মিত্তির।
- শিঙাড়া জুড়ে দিই তা'হলে। বাজারে ফুলকপিও এসে গেছে।
- তাই বলে দাও। বেশি বাড়াবাড়ির দরকার নেই। দিবাকর চাবি নিয়ে আসার আগে একটু জিরিয়ে নেওয়া আর কী।
- আর চা?
- সামান্য কফি হলে দিও বরং। বাতাসে অল্প শীত শীত ভাব।
- বেশ বেশ। হারাধন, শুনে নিয়েছিস। এ'বার চট করে সব নিয়ে আয় দেখি। আর শোন, এক কিলো রাবড়ি আলাদা করে নিয়ে এসে দারোগাবাবুর জীপে রাখিয়ে দিস্। যা যা, চট করে।
- আবার রাবড়ি কেন।
- ওই আমার এক রোগ দারোগাবাবু। মাঝেমধ্যে গুণী মানুষজনকে ভালো রাবড়ি না খাওয়ালে আমার ভালো লাগে না। অ্যাই হারু, দাঁড়িয়ে আছিস কেন। জলদি জলদি।
- তা হ্যাঁ হে মিত্তির, বলি গোডাউনে কিছু গোলমাল করেছ নাকি?
- গোডাউনে গোলমাল? আমার গোডাউনে? জানেন বছরে অন্তত তিনবার তীর্থে যাই আমি? তাও সপরিবারে। তারপর ধরুন হপ্তায় তিন দিন নিরামিষ। আর শনিবার হাফবেলা উপোস, একদম নির্জলা। আমার তেলের গোডাউনে গোলমাল? এ'টা যে দত্তদের কারবার তা কি আমি জানি না? ওদের চোখ টাটায়। চোরাকারবার ওরা করে। এ'দিকে আমার গোডাউনে স্রেফ ঝাঁজালো খাঁটি সর্ষের তেল। আঙুলের ডগায় নিয়ে নাকের কাছে নিয়ে যান, অমনি চোখের জলে নাকের জলে একাকার হয়ে যাবে।
- খাঁটি তেলে বুঝলে মিত্তির, মাছ ভাজার স্বাদই আলাদা হয় যায়।
- বটেই তো। বটেই তো। আমি বরং প্রতি মাসে আপনাকে দু'টিন করে তেল পাঠিয়ে দেব।
- ও মা! না না, তা আমি নিই কী করে।
- এ'তো স্যাম্পেল টেস্টিংয়ের জন্য দারোগাবাবু। নিয়মিত আমার তেলে মাছ ভাজলেই বুঝবেন পিউরিটি কাকে বলে। স্যাম্পেল টেস্টিং মাত্র।
- তা বটে। পাঠিও মাসে তিন টিন করে তেল। তবে গোপনে পাঠিও হে। ঢাকঢোল পিটিয়ে স্যাম্পেল টেস্ট করা যায়না।
- আলবাত। তিন টিন মাসে। হিংসেয় কত লোকে কত কিছু রটায়। মাঝখান থেকে আপনাদের যত ছোটাছুটি আর হেনস্থা।
- আর বলো কেন। যাকগে, তোমার গোডাউনে তেমন কিছু গোলমেলে নেই বলছ?
- ওই দেওয়ালে যে মাকালীর ক্যালেন্ডার ঝুলছে, সে'টা ছুঁয়ে বলব? আমার গোডাউনে যদি এক ফোঁটাও ভেজাল তেল পাওয়া যায় তা'হলে আমার জিভে এমন ঘা হবে যা সতেরো বছরেও সারবে না।
- আহ্, আমি সন্দেহ করিনি। তবে ডিউটির ব্যাপার তো। বুঝতেই পারছ।
- কর্মই ধর্ম দারোগাবাবু। আপনাকে দেখলে কি সাধে ভক্তি ভাব জাগে।
- তা ইয়ে, তোমার নামে কে যেন বদনাম ছড়াচ্ছে বললে?
- আজ্ঞে ওই দত্তর ব্যাটা। মাছের পাইকারি ব্যবসা।
- ওই বিনোদ মল্লিক লেনে যাদের অফিস? সরোজ দত্ত?
- মহাধুরন্ধর। তার পেটে পেটে যে কত। আমি নিজের মুখে বলতে চাই না। তবে তার গুদামে যে স্রেফ বরফচাপা মাছই নেই, সে'টা সবাই জানে।
- কী সর্বনাশ!
- রীতিমত। তবে আমি আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে চাইনা। আমি সাদামাটা মানুষ দারোগাবাবু। সামান্য তেল বেচে দু'পয়সা আয়। ওই, হারু মিষ্টি নিয়ে এসে গেছে।
- আর দিবাকর? সে এলো চাবি নিয়ে?
- তার আসতে যে দেরী আছে...।
- তবে আজ তোমার গোডাউন রেডটা থাক। সে'সব পরে হবে'খন। তুমি তো আর পালিয়ে যাচ্ছ না। মিষ্টি খেয়ে আমি বরং বিনোদ মল্লিক লেন থেকে একটু ঘুরে আসব।
- আজ্ঞে? যাবেন?
দারোগাবাবু বিষন্ন ভাবে হেসে মাথা নাড়লেন। জীবনে হ্যাপা কি কম? মাসে মাসে তিন'টিন খাঁটি সর্ষের তেল আসবে বাড়িতে। কড়াই ভর্তি তেলে নিয়ম করে ছাড়ার মত মাছের ব্যবস্থাও তো করতে হবে। ব্যস্ত হয়ে মিষ্টি শিঙাড়ার প্লেটটা নিজের দিকে টেনে নিলেন দারোগাবাবু।