- জাহাঁপনা!
- উঁ...।
- জাহাঁপনা!
- ধ্যার। আবার কী হল? শান্তিতে একটু দেশলাই কাঠি দিয়ে কান খোঁচাব তারও উপায় নেই। থেকে থেকে জ্যাঁহ্যাঁপঁন জ্যাঁহ্যাঁপঁন। কী চাই?
- আসলে হয়েছে কী জাহাঁপনা...।
- বুঝলে মন্ত্রী, তোমায় নিয়ে এই এক সমস্যা। ধানাইপানাই ছাড়া কোনও কথা বলতে পারবে না। ঢেঁকুরের কথা বলতে এসে আগে বলবে বাসি লুচির গল্প। ধেত্তেরি। আমি এখন ব্যস্ত। তুমি পরে এসো'খন।
- জাহাঁপনা, ব্যাপারটা অত্যন্ত জরুরী।
- বটে?
- আজ্ঞে।
- জরুরী?
- রীতিমত। জাহাঁপনা।
- আমার যে পা মালিশের তেল গরম হয়ে গেছে। আর যে সময় নেই হাতে।
- কয়েকটা ব্যাপারে আপনার হুকুম বড় দরকারি...।
- তোমার মাইনেটা এ'বার থেকে আমাকেই দিও। আমাকেই যখন সব সামাল দিতে হবে তখন...।
- হুকুম দিন। আমিই তবে সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে ফেলি...।
- সিদ্ধান্ত? তুমি কি রাজা?
- আজ্ঞে না।
- তবে তুমি সিদ্ধান্ত নেওয়ার কে? তুমি কি চক্রান্ত করছ আমার বিরুদ্ধে? ব্যাটাচ্ছেলে! দুধ কলা মদ দিয়ে আমি কালসাপ পুষছি?
- আমি ও'ভাবে বলতে চাইনি জাহাঁপনা।
- পিঠে ছুরি ঢোকাবে তার আবার ও'ভাবে এ'ভাবে কী?
- একটু শুনুন আমার কথাটা মহারাজ! সেনাবাহিনী বড় বিপদে রয়েছে।
- সেনাবাহিনী বিপদে? কে বলেছে?
- আজ্ঞে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পত্রবাহক এসেছে যে।
- মহা-মুশকিল। ওদের অমুকপুর জয় করতে পাঠিয়েছি না ওখানে গিয়ে বুকে বালিশ নিয়ে চিঠি লিখতে বলেছি? অমুকপুরের সেনা আর প্রজাদের খুনটুন না করে ওরা চিঠি লিখছে কেন? আমি কি মেঘবালিকা?
- তারা খুব বিপদে পড়েছে?
- বিপদ? কচুকাটা করার লোকের অভাব পড়েছে? অনুশীলনে ব্যাঘাত? ওদের চিন্তা করতে বারণ করো। অমুকপুরে চন্দন কাঠের জঙ্গল বগলদাবা করে তাঁদের যেতে হবে তমুকপুরে। সে'খানে রয়েছে অঢেল লোহা। আর অঢেল বোকাপাঁঠা মানুষজন যাদের কুচিকুচি না করতে পারলে শান্তি নেই। যা হোক। কথাবার্তা যখন হয়েই গেল তখন আমি যাইগে, পা মালিশ আর কানে পালকের সুড়সুড়ি। এক জাতের পাহাড়ি শকুনের পালক আনিয়েছি বুঝলে মন্ত্রী। কানে ছোঁয়ালেই.....জাদু!
- আজ্ঞে জাহাঁপনা, কথাটা বলা হয়নি।
- আবার কোন কথা? বলে দিলাম তো। অমুকপুর ঘ্যাচাংফু করে সিধে তমুকপুর। তমুকপুর যাওয়ার আগে সেনাবাহিনীকে আমি তিন রাত ধরে মদ মাংস খাওয়াবো। তুমি আবার তখন বাঁধাকপি বাঁধাকপি করে আসর মাটি কোরো না যেন মন্ত্রী। কেমন?
- জাহাঁপনা। আমাদের সেনাবাহিনী বড় বিপদে পড়েছে। অমুকপুরের রাজধানী চন্দনপুর আমাদের হাতছাড়া হতে চলেছে যে।
- কী?
- তমুকপুর অমুকপুরে সৈন্য পাঠিয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে। অমুকপুরের সেনাদের সঙ্গে মিলে তারা যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। তমুকপুরের সেনাদের সঙ্গে এসেছে অত্যাধুনিক কামান, বিষ মাখানো তরবারি...।
- চোপরাও! তোমায় ফর্দ করতে কে বলেছে আহাম্মক?
- গোস্তাখি মাফ জাহাঁপনা।
- সেনার কী অবস্থা?
- তিন দিক থেকে তাঁদের ঘিরে ফেলা হয়েছে। ইতিমধ্যে আশি হাজার সেনার মধ্যে তিরিশ হাজার নিহত। অপর দিকে কয়েক লাখ সৈন্য। আমাদের রসদ শেষ...টিকে থাকার কোনও সুযোগই নেই। এ'বার আপনি হুকুম দিলে সেনাপতি সৈন্যদল নিয়ে পশ্চাদপসরণ শুরু করতে পারে।
- পশ্চাদপসরণ?
- যুদ্ধের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ জাহাঁপনা।
- তোমার মাথা।
- আজ্ঞে?
- কেউ পিছু হটবে না। তোমরা শোনোনি জননী জন্মভূমিশ্চ ওই কী একটা যেন?
- জাহাঁপনা, আমরা অন্যদের ভূমি দখল করেছি। আমাদের জন্মভূমি ঠিক ও'টা নয়। কাছেই এ'তে কোনও অসম্মান নেই। বরং এখনই রণভঙ্গ দিলে সেনাবাহিনীর কচিকাঁচা ছেলে ছোকরাগুলোকে বেঘোরে প্রাণ দিতে হবে না।
- এই বুদ্ধি নিয়ে তুমি আমার মন্ত্রী হয়েছ? ওরে মূর্খ, অমুকপুর এখন আমার। আলবাত ও'টা এখন আমাদের দেশ। আমাদের রক্তের শেষ বিন্দু পর্যন্ত দেশের মাটি ছাড়া চলবে না। শেষ সৈন্য বেঁচে থাকতে আমি সেনাবাহিনীকে পশ্চাদপসরণ করার অনুমতি দেব না, বুঝলে?
- কিন্তু মহারাজ এ যে তাঁদের নিশ্চিত মৃত্যু...।
- তোমার চামড়া তুলে তা দিয়ে পাশবালিশের ওয়াড় দিলে যদি শান্তি পাই। সৈন্য মরবে না তো কি মরবে আমার বাগানের মালী? ওদের মাইনে দিয়েছি কী করতে? ওরা যুদ্ধ হেরে না মরে ফিরে এলে আমার নাক আস্ত থাকবে ভেবেছ?
- যে আজ্ঞে মহারাজ।
- ও চিঠির উত্তর দাও। পিছু হঠার উপায় নেই। সবাইকে আমি মরণোত্তর মহাবীর উপাধি দেব। আর পিতলের শংসাপত্র।
- যে আজ্ঞে।
- আর শোন।
- জাহাঁপনা?
- জল্লাদকে ডেকে আন।
- কেন?
- কেন? ন্যাকা! ভাজা মাছ উল্টোতে গিয়ে থালা পালটি করে ফেলেছে। তোমা শূলে বসতে হবে।
- জাহাঁপনা! আমি কী করলাম?
- আমার পা মালিশের তেল যে ঠাণ্ডা হয়েছে তোমার জন্য। দেশের ক্ষতি করে দশের ক্ষতি করে সটকে যাবে ভেবেছ? আমি কি অতটাই বোকা?
No comments:
Post a Comment