- মোমবাতিটা কোথায় রেখেছ পটাদা?
- ড্রয়ারে। পড়ার টেবিলের।
- নেই। ভালো করে মনে করো দেখি।
- তোমার সেই চার ব্যাটারির টর্চটা কী হল?
- ফেলে এসেছি। তাসের আড্ডায়।
- ভেবে কী হবে আর ভাই রবি। বাথরুমের রাস্তাটুকু মাপা। আর খানিক পরেই ভোর হল বলে। লোডশেডিংকে লাই দিয়ে মাথায় তুলতে নেই। শুয়ে পড়।
- আলোর সোর্স হাতের কাছে নেই ভাবলে বড় অস্বস্তি হয় পটাদা। ঘুম আসতে চায়না।
- মেসে নতুন তো, আর দু'চারমাসে আলোর বদ অভ্যাস কেটে যাবে।
- মোমবাতিটা নিশ্চয়ই কোথাও..।
- খুব ভয় লাগলে বোলো, সিগারেট ধরিয়ে নেব। লাইটার আমার বালিশের নীচেই আছে। লাইটারের ফস আর তারপর বেশ একদানা আলো বিউটি স্পটের মত ঘরের অন্ধকারে মিনিট তিনেক জ্বলবে। শুয়ে পড়ো, নতুন চাকরী; উঠতে দেরী হলে কেলেঙ্কারি হবে। সকালের বাথরুমের লাইন কেমন পড়ে তা তো দেখেইছ। আর চ্যাটার্জী মশাই একবার ঢুকলে হয়ে গেল। দশটার আগে শেয়ালদা পৌঁছতে পারবে না।
- তোমার এই মেসে অনেকদিন হল, তাই না?
- থার্ড ইয়ার থেকে। তারপর মাস্টার্স। তিন বছর চাকরী। মেস ছেড়ে লম্বা ছুটিতে বের হলে বেশ হোমসিক ফীল করি।
- পটাদা, লাইটারটা দেবে একবার?
- আলোর জন্য? ভয়টয় পেলে নাকি হে?
- না। এমনি। আচ্ছা থাক।
- এই নাও, লাইটার।
- না না, থাক।
- রাখো রাখো।
- থ্যাঙ্ক ইউ। আমি বারান্দা থেকে আসছি। কেমন?
- গোপনে সিগারেট খেতে চাইছ? সে কী!
- না না। এমনি।
- মাঝরাতের বারান্দাটা দেখছি তোমার এক বাতিক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
**
- আমি ভাবলাম আজ আর আসবে না...।
- আরে ধুস, ব্রীজের আড্ডায় টর্চটা ফেলে এসেছি। এ'দিকে মোমবাতিগুলো খুঁজে পাচ্ছি না। লাইটার দিয়ে ইন্টার গ্যালাক্টিক সিগনাল তৈরি করা কি চাট্টিখানি কথা?
- এই পাগলামি আর কদ্দিন রবি?
- যদ্দিন। তদ্দিন। ইলেয়া, এমন ভাবে জিজ্ঞেস করছ কেন?
- আমাদের গ্রহে টেকনোলজি আছে তাই তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করে চলেছি। তোমায় শেখাতে পেরেছি আলোর ব্যবহারে সিগনাল ট্রান্সমিশন। তবুও, ব্যাপারটা আমার জন্য বেআইনি। আর, তাছাড়া...।
- সবই জানি, তবু...। ইলেয়া, প্লীজ।
- আমার আর তোমার সময় সম্পূর্ণ আলাদা। এক অন্য সময়ের আমার সঙ্গে এক অন্য সময়ের তোমার এই যোগাযোগ। প্রেম। ভালোবাসা। স্নেহ। সমস্তই আলোর যাত্রাপথের ভাঁওতা।
- কিন্তু ইলেয়া...।
- সময়ের একই বিন্দুতে দাঁড়ালে তোমার জগতে আমি মৃত। আমার জগতে তুমি সুদূর ভবিষ্যৎ।
- যোগাযোগ বন্ধ কোরো না ইলেয়া, প্লীজ।
- যোগাযোগ? এ'টা একধরনের প্ল্যানচেট রবি! প্ল্যানচেট।
- যেওনা। প্লীজ।
- যেতে যে আমায় হবেই। সে'টা বলতেই তোমায় ডাকা।
**
খানিক হলেও অপরাধবোধ কিছুটা লাঘব হল পটা ওরফে পটলকুমার দত্তর। ডিস্ট্যান্ট ভেন্ট্রলোকুইজমের আর্ট এ দেশে প্রায় মরতে বসেছে। নিয়ার-ভেন্ট্রলোকুইজমের মত পুতুলের ডামিকে কথা বলানো নয়, ডিস্ট্যান্ট ভেন্ট্রোলোকুইজমে মনে হয় শব্দের উৎস দূরে কোথাও; পটলবাবুর নিজেরই নিজের পালটানো কণ্ঠস্বর দূর থেকে ভেসে আসছে ভাবলে গায়ে কাঁটা দেয়। সত্যি কথা বলতে পটলবাবুর মত ডিস্ট্যান্ট ভেন্ট্রোলোকুইস্ট ভূভারতে আর দু'টো নেই। তবে এই শিল্পকে অবশ্য বাণিজ্যিক ভাবে কোনোদিনও ব্যবহার করতে চাননি তিনি, শুধু মেসের নতুন বান্দাদের গোপনে একটু হয়রান করেই সামান্য তৃপ্তি লাভ হয়।
তবে এই রবি ছোকরা একটু সহজেই ভেসে যাওয়ার উপক্রম করেছিল। কাজেই মানেমানে ইলেয়াকে বিদেয় দেওয়া ছাড়া পটল দত্তর আর কোনো উপায় ছিল না।
No comments:
Post a Comment