Sunday, May 27, 2018

মিতাউলি নদী

সাইড লোয়ার থেকে স্পষ্ট শুনতে পেলেন সুবিমল দত্ত। কান তার বরাবরই ধারালো। ফিসফিস কথার আওয়াজ ভেসে আসছিল উলটো দিকের আপার বার্থ থেকে।

এমনিতেই কিছুটা সাসপিশাস মনে হয়েছিল, সেই নিয়ামৎপুর স্টেশনে উঠে থেকে দেখেছেন ওই বার্থের  ভদ্রলোক চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে। এইসব গোপন ট্রিপে আরো সতর্ক থাকতে হয়; কম্পিটিটর কেউ জানতে পারলেই প্ল্যান পণ্ড করার জন্য লোক লেলিয়ে দিতে পারে। গুণ্ডা খপ্পরে পড়াও আশ্চর্যজনক নয়।

মনোহরগড়ের প্লটটা হাতানোর একটা জব্বর সুযোগ এসেছে, ডীলটা ফিক্সও হয়েছে গোপনে। মনোহরগড়ের পাহাড় ঘেঁষা অঞ্চল মেহেরপুর; সে'খানের মিতাউলি নদীর পাশে চমৎকার প্লট; একবার হাতাতে পারলে রিসর্টওলাদের কাছে বড় দাঁও মারা যাবে। গোপনে বিক্রির প্রপোজালটা গতকাল রাত্রে পেয়েছেন সুবিমলবাবু, চুপিসারে প্রস্তুতি সেরে আজকের ট্রেনেই রওনা। ডিসট্রেস সেল, জলের দরে পাওয়া যাচ্ছে। এমন মওকা হাতছাড়া করলে হাত কামড়ে ছিঁড়ে ফেলতে হবে। সবচেয়ে বড় চিন্তা ও প্লটের দিকে আলুওয়ালিয়ার নজর আছে, দু'একবার খুনের হুমকিও দিয়েছে তারা; যাতে ওই প্লটের লোভ সুবিমলবাবু ত্যাগ করেন। কিন্তু আলুওয়ালিয়ার ব্যাটা জানে না সুবমিল দত্তর দৌড়। ও'সব হুমকিতে মচকে যাওয়ার লোক তিনি নন। তবে ট্রেনে চোখ কানা খোলা রাখা দরকার বৈকি; গোপন ডীলে প্লট হাতানোর কথা জানতে পারলে আলুওয়ালিয়া খুনে গুণ্ডা লেলিয়ে দিয়ে পিছপা হবে না। অথবা এমন লোক লাগাবে যে সুবিমলবাবুর আগেই অকুস্থলে পৌঁছে দু'পাঁচ পারসেন্ট বেশি অফার করে সেই প্লট হাতিয়ে নিতে পারে।

মাঝরাত্তির। সাইড লোয়ারে শুয়েও পাশের আপার বার্থের চাদরমুড়ি দেওয়া লোকটা ফিসফিসে ফোনালাপের যে'টুকু সুবিমল দত্তর কানে এলো তা'তেই তিনি স্পষ্ট বুঝতে পারলেন ও লোক আলুওয়ালিয়ারই। ফোনে ফিসফিস করে বলা কথায় দিব্যি উঠে এলো মনোহরগড়ের কথা, মেহেরপুর, মিতাউলি নদী আর প্লটের কথা। হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছিল সুবিমলবাবুর। তীরে এসে তরী ডুববে? পকেট হাতড়ে এমার্জেন্সি কিটটা বের করলেন সুবিমলবাবু।

***

" কী স্ট্রেঞ্জ ব্যাপার দেখুন, সেই আননোন অ্যাসেইল্যান্ট ইঞ্জেকশনে অজ্ঞান করল অথচ বাক্সপ্যাঁটরা কিছু ছুঁয়েও দেখল না। কত বিচিত্র ঘটনাই যে এ দুনিয়ায় ঘটে। আরে মশাই হুশ এলো ঝাড়া সাত দিন পর, মনোহরগড়ের রেলের হাসপাতালে। কী কুক্ষণেই না মিতাউলি নদীর ধারে উইকেন্ড স্পেন্ড করব ভেবেছিলাম। সামনে পুজোসংখ্যায় লেখা জমা দেওয়ার প্রেশার আর এ'দিকে আমার রাইটার্স ব্লক, মাথা গুলিয়ে গেছিল। আমার ক্লাসমেটের বাড়ি এক্কেবারে মিতাউলির পাশেই, ভাবলাম নদীর কুলকুলে যদি মাথায় একটা জুতসই প্লট কিছু আসে। যাকগে, ঢের শিক্ষা হয়েছে; কলকাতার শেল্টারে থেকে প্লট আসলে আসবে, নয়ত লেখা ছেড়ে দেব। প্লটের সন্ধানে তিলোত্তমা ত্যাগ আর নয়"।

Saturday, May 26, 2018

করব লড়ব। আর ইয়ে। জিতব।

~~করব~~

১। হপ্তায় একটা করে বই শেষ করব। নেহাত কাজের হুড়মুড় গেলে একটা টিনটিন ফিরতি পড়ে নেওয়া।
২। পার্ফেক্টলি লুচি বেলতে পারা; নিখুঁত, সম্ভাবনায় টইটুম্বুর।
৩। প্রতিটা বোমারু ঝগড়ার শেষে থাকবে "বেশ বেশ, এ'বার দু'জনায় লেবুজল খাই চলো"।
৪। অজস্র প্রেমের চিঠি লিখে ছিঁড়ে ফেলে শ্যামল মিত্তিরে শেল্টার।
৫। গল্প শোনা, মন দিয়ে। কারুর দুরন্ত দরদামে ঝিঙের দাম কমানোর গল্প, কারুর বাবার প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা তুলে ঘুষ দিয়ে নিজের জন্য একটা ছোটখাটো চাকরী জোগাড় করার গল্প, কারোর তোষকের নীচে চাপা দেওয়া মনখারাপের গল্প। গল্প, গুজব নয়। গল্প।

~~লড়ব~~

১। "ভয় পাস না, আমি আছি"গুলোকে চিনব। চিনবই। আর চেনাগুলোকে আঁকড়ে থাকব।
২। আব্রাকাডাব্রাকে 'মা, মা গো'র ক্যামোফ্লাজে ব্যবহার করে মুঠো শক্ত করব; বার বার।
৩। সঞ্জীবের বোরোলিনে ভিতরটা সুরভিত রাখব। রাখবই।
৪। ট্রেনের জানালার ব্যাপারে জমি ছাড়ব না কাউকে। নাহ্, পেয়াসার ওয়াহিদা রেহমানকেও নয়।
৫। নিজেকে নিয়ে ঠাট্টা প্র‍্যাক্টিস করব। টুথপিক নিয়ে আয়নায় খোঁচা দেব। জলবেলুন ছুঁড়ে মারব চৌবাচ্চায় ভেসে ওঠা ছায়ায়।

~~জিতব~~

১। বালিশের তলে থাকবে কুমার শানুর বলিউডি গানের লিরিক্সে সুলভ বই।
২। বায়োডেটাতে বাড়তি পাতা জুড়ব; লিস্ট অফ 'না পাওয়াস' আর লিস্ট অফ 'যা যা ক্ষমতায় কুলোবে না'।
৩। খবরের কাগজ রাখব অরিগ্যামি প্র‍্যাক্টিস করতে।
৪। নিজের সমস্ত ওপিনিওন থেকে ঠ্যাঁটামি ফিল্টার করে বাদ দিয়ে নিয়মিত নিজের কান মুলব।
৫। চিঠি লিখব।

Wednesday, May 23, 2018

সাধক আত্মারাম

- আপনি ভূত?
- আজ্ঞে।
- প্রপার?
- সাড়ে তিন বছর হল।
- অপঘাত?
- ন্যাচুরালি।
- নাম?
- জেমস বন্ড।
- য্যাহ্।
- রিয়েলি।
- সাহেব ভূত?
- বাঙালি। বজবজ।
- অথচ নাম জেমস বন্ড?
- নিজে দিয়েছি। ভূতের নাম বাদল চক্রবর্তী হলে মানায়?
- ও। আমি তান্ত্রিক। বহুদিন ধরে চেষ্টা করছি; আত্মা নামানোর।
- এই এক অদ্ভুত রোগ মানুষের। খালি ভূতের ন্যাজ ধরে টানা।
- লেজ?
- রেটোরিকাল। আপনি সত্যিই তান্ত্রিক?
- আজ্ঞে। সাধক আত্মারাম।
- মেটা নাম। তবে তান্ত্রিকটান্ত্রিকে আমার বিশ্বাস নেই।
- সে কী। ভূত হয়ে তান্ত্রিকে বিশ্বাস করেন না?
- ও'সব বুজরুকি মশাই।
- আপনি তো কম্পলিকেটেড ভূত দেখছি।
- খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় তো? চট করে বশীকরণ, অর্শরোগ সারানোর মাদুলি; এ'সব অফার করেন নিশ্চয়ই?
- না করলে চলবে কেন?
- ওই কাগুজে বুজরুকি আমার ভালো লাগে না।
- বুজরুকি?  ইয়ার্কি হচ্ছে? বুজরুকি হলে আপনার মত বজবজে ভূতকে আমার এই ড্রয়িং রুমে টেনে আনলাম কী করে? এ'টা অবশ্য ঠিক যে এত বছরে আপনাকেই প্রথম নামাতে পারলাম।
- নামালেন মানে?
- আমি। আপনাকে নামালাম। বহুদিনের সাধনার ফল।
- ধ্যুত। যত ন্যাকামো। আমি নিজে নেমে এসেছি।
- আমার মন্ত্রবলে আপনি নামেননি?
- নো স্যার। আমি আপনার মন্ত্রভুলে নেমেছি।
- মানে?
- এই আশেপাশে ঘুরঘুর করছিলাম, আচমকা আপনার বাড়ি থেকে সংস্কৃত শব্দের ভুল উচ্চারণ শুনে কেঁপে উঠলাম। উচ্চারণের কোয়ালিটি শুনে আমি বুঝতে পারি কার বানানের দৌড় কদ্দূর। এক রকমের সুপারপাওয়ার বলতে পারেন। জ্যান্ত থাকতেও এ কাজই করে বেড়াতাম। আপনার উচ্চারণ যা শুনলাম মশাই, আপনার ণত্ব বিধান ষত্ব বিধান তো ডেফিনিটলি ডকে। অন্যদিকে তো অনেক জল মেশানো আছেই।
- বানানটা আমার একটু কাঁচা বটে...।
- বললাম তো, একটুঠেকটু নয়। অত্যন্ত কাঁচা। এমন চলতে থাকলে খবরের কাগজে গোলমেলে বিজ্ঞাপন দিয়েই কাটাতে হবে। বুজরুকি ছেড়ে এ'বার কিছু একটা করুন।
- যাই বলুন। টেকনিকালি তো ভূত নামিয়েছি।
- আমি নেমেছি। ইচ্ছে করে।
- ভুল বানান, ভুল উচ্চারণের জোরে নেমেছেন।
- স্বেচ্ছায়।
- রাইট। তেনারা, আই মীন আপনারা, স্বেচ্ছায় নামতে না চাইলে তো নামানো যায় না।

***

- আপনি বাদল চক্রবর্তী?
- না।
- থুড়ি, আপনিই জেমস বন্ড?
- আজ্ঞে।
- ভূত?
- অবভিয়াসলি। আপনি?
- ভূত। অবভিয়াসলি। মনোজ হালদার। তা, আত্মারামের খাঁচায় আপনিও ভর্তি হলেন? আমার এখানে মাস ছয় হয়েছে।
- মহাফেরেব্বাজ। ইয়ে, এই খাঁচার ভূতের দল নিয়ে কি ব্যাটা সত্যিই ভূতের রেটোরিকাল থার্ড রাইখ বানাচ্ছে?
- নয়ত আপনার আমার মত গ্রামার নাজি ভূতদের ফাঁদ পেতে ধরছে কেন বলুন।
- মতলবটা কী?
- আর্মি মজবুত হলে সবাইকে লেলিয়ে দেওয়া সমস্ত ভুল বানানের দিকে। প্রতিটা বানান ভুল বেছে বেছে এলিমিনেট করা হবে। বিশ্বজোড়া স্পেলচেকের ফাঁদ। বানানভুল করা মাত্র ভূতে এসে কান মলে যাবে।
- মহা বিটকেল মানুষ তো। নমস্য। বেশ ভক্তি তৈরি হচ্ছে।

Thursday, May 17, 2018

পোস্ট-ভোট

প্রশ্ন এক।
কেমন দাঁড়ালো ব্যাপারটা?

প্রশ্ন দুই।
এরপর কোনদিকে যাবেন কিছু ভেবেছেন?

~~তৃণমূল~~

উত্তর এক।
এক্সট্রীম শান্তি মশাই। চতুর্দিক শান্তিপূর্ণ।  শান্তি ছাড়া আর কিস্যু নজরে পড়ছে না। থ্রিসিক্সটি ডিগ্রী শান্তি।

উত্তর দুই।
আরো শান্তি। গোলমাল দেখলেই শান্তি এনে দেব, ট্যাঁফোঁ করতে দেব না। ট্রাক ট্রাক শান্তি ডেলিভারি হবে। দেখবেন, শান্তির ইন্ডাস্ট্রি কাকে বলে।

~~বিজেপি~~

উত্তর এক।
ওয়ার্ম আপ চলছে বুঝলেন। ত্রিশূলট্রিশূল মোটের ওপর স্যানিটাইজ করে রাখা গেছে। অবিকল মহাভারত গোছের একটা অনুভূতি হচ্ছে। এমন কী আমাদের পুরুষ সমর্থকদের স্যান্ডো গেঞ্জির বদলে কবচ পরার একটা টেন্ডেন্সি দেখা যাচ্ছে।

উত্তর দুই।
আরো ত্রিশূল মিট। আসছে রামনবমীতে মুলো বিরিয়ানির ট্রেন্ডটা পুশ করা হবে, স্বয়ংসেবকরা প্রস্তুত।

~~সিপিএম~~

উত্তর এক।
আ..আমায় জিজ্ঞেস করলেন? অ। তা জানেন স্যাট্ করে প্রশ্ন করলে ডাইজেশনে অসুবিধে হয়? লেনিন পড়েননি?

উত্তর দুই।
ভাবছি...ভাবছি...একটা পনেরো মিনিটের বন্ধ ডাকব। সাত মিনিটের মাথায় এক মিনিটের স্ট্র‍্যাটেজিক টাইম আউট।একটু লেবুজল খেয়ে, তারপর প্রবল প্রতিবাদের বাকি সাত মিনিট। একবার হয়েছে কী, কিউবার উত্তর দিকে...। ও কী। দাঁড়ান, উত্তর কম্পলিট হয়নি...। আরে ও মশাই, ওয়েট। এক মিনিট..।

অনেকদিন পর

- এই যে বাহাত্তর নম্বর। তোমার রুটের। চলে এসেছে।

- পরের বাসটা নিই?

- সে কী। এই যে বলছিলে তাড়া আছে?

- আছেই তো। তবু। পরেরটা নেব। কেমন?

- আমি বেকার মানুষ। তুমি যদি বলো রাতভর এই বাসস্ট্যান্ডে পড়ে থাকতে, তাও পারব। তোমারই তাড়া। গোটা দিন অফিসের তাড়া। সন্ধের পর বাড়ি ফেরার তাড়া। ফিরে সংসারের কাজকর্মের হুড়মুড়।

- হিংসে করছ অভিরূপ?

- খানিকটা। ভালোই করেছ বাসটা ছেড়ে দিয়ে। বাদুড়ঝোলা অবস্থা।

- পরেরটাও একই রকম থাকবে।

- তা’হলে পরের বাসটা নিও।

- ওমা না। তাহলে অনেক দেরী হয়ে যাবে। বুবুনের কাল উইকলি টেস্ট। আমার কাছে ছাড়া সে রিভাইজ করতে বসবে না।

- বুবুন। কোন ক্লাসে উঠল?

- সিক্স।

- বড় হয় গেছে। শেষ যখন দেখেছিলাম তখন সে কোলের শিশু।

- তোমার মনে আছে? সূর্য সেন স্ট্রিট? বীণা রেস্টুরেন্ট?

- বিলকুল। কত বছর কেটে গেছে। তুমি আগের চেয়েও রোগা হয়ে গেছ মিতুল।

- সে’টা তো কমপ্লিমেন্ট।

- যাক।

- তুমি কিন্তু বললে না। কী করছ আজকাল।

- বাহ্‌। বললাম যে। সুইট নাথিং। একা মানুষ। ব্যাঙ্কে বাবার রেখে যাওয়া দু’চার পয়সা যদ্দিন আছে খাওয়াপরাটা চলে যাচ্ছে। শেষ হলে ভাবা যাবে’খন।

- ও তোমার এড়িয়ে যাওয়া কথা।

- তুমি বুঝি আমায় খুব কর্মঠ ভাবতে? চিরকাল?

- তা নয়। তবে দিনের পর দিন হাত পা গুটিয়ে কাটিয়ে দেওয়ার লোক তুমি নও অভিরূপ। আর তোমার ইন্টেলেক্ট নিয়ে...।

- ওয়েস্ট। পুরোটাই।

- প্রেম করছিলে না? কী যেন নাম...ঈশানী...।

- আমার প্রাক্তন প্রেমিকার নাম মনে রেখেছ?

- তোমার প্রাক্তন প্রেমিকার নাম। তোমার প্রিয় স্যান্ডুইচ। হেমন্তবাবুর কোন গান শুনলে তোমার গায়ে কাঁটা দেয়। ভোরে ওঠার জন্য তোমার ক'টা ব্যাকআপ অ্যালার্ম দরকার হয়। তোমার লন্ড্রি শিডিউল..।

- থাক থাক, ফর্দ বানিয়ে কাজ নেই।

- অভিরূপ।

- কিছু বলবে?

- কেউ আসেনি? আমার পর?

- নাহ্, এই বেশ আছি।  একা, নিশ্চিন্দি।

পরের বাহাত্তর নম্বর বাস এলো আর মিনিট দশেকের মাথায়। তখন আকাশে সন্ধের লাল ছোপ। বাসে উঠে মিতুল একবার ঘুরে তাকিয়েছিল। অভিরূপের মন খারাপে মিশে গেছিল কলকাতার ধুলো বালি শব্দ সন্ধে। মিনিবাসের সাইলেন্সারের ধোঁয়া ছাপিয়ে বুকে জুঁইয়ের সুবাস অনুভব করেছিল অভিরূপ;  মিতুলের হাসি আজও একই রকম।

মিতুল বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার পর এই নিয়ে দ্বিতীয়বার দেখা। বেশ কিছু বছর আগে সূর্য সেন স্ট্রিটে, আর আজ এই। এই বেশ ভালো। মিতুল একটা গোছানো সংসার পেয়েছে। তার মত বাউণ্ডুলের ঘরের কোণে পচতে হচ্ছে না। বাসে ওঠার মুখে মিতুলের চোখে কি সামান্য চিকচিক দেখা গেছিল?

নিজের পাগলামিতে নিজেই হেসে ওঠে অভিরূপ। সামান্য ক'টা টাকার জন্য মিতুলকে ওএলএক্সে বিক্রি করে দেওয়ার ব্যাপারটা আজও বুকে বাজে ঠিকই, কিন্তু এটাই ভালো হয়েছে। মিতুল অকেজো হয়ে তার নাকতলার ফ্ল্যাটে পড়ে না থেকে একটা সংসারের হয়ে চাকরী করছে, তাদের ছেলে মানুষ করছে; একজন পরিপূর্ণ হোম-অ্যাসিস্ট্যান্ট রোবট হয়ে উঠেছে।

Saturday, May 12, 2018

দিবাকরের ইস্তফা

- রেসিগনেশন লেটার?
- হ্যাঁ।
- তুমি কি পাগল হয়ে গেলে দিবাকরদা?
- হয়ত। কিন্তু তাই বলে ভাবিস না আমার সিদ্ধান্ত পাল্টাবে।
- সে'টা হতে পারে না।
- বাজে তর্কের সময় আমার নেই। আমার ইমেলটা অ্যাকনোলেজ করে দে।
- তুমি জানো এ'টা সম্ভব নয়। এই বেফালতু মেলোড্রামার কোনো মানেই হয় না।
- তুই আমার রেসিগনেশন অ্যাক্সেপ্ট করবি না?
- তুমি খামোখা রাগ করছ। তুমি রিজাইন করতে পারো না। সে'টা সম্ভব নয়।
- শোন মৈনাক, তুই এই পার্টিতে আছিস দশ বছর। আমি কাজ করছি গত বাইশ বছর ধরে। তুই ডেজিগনেশনে আমার সিনিয়র হতে পারিস কিন্তু এই পার্টিতে আমি একজন ভেটেরান, ইয়াং টার্ক আর নই। উল্টোপাল্টা কথা বলে আমায় নিরস্ত করতে পারবি না।
- শান্ত হও দিবাকরদা। মাথা গরম করার সময় এ'টা নয়। তোমার যা যা অসুবিধে আছে সেগুলো বলো, আমি নোট করে রাখছি। মলয়দা এলে ওকে আমি বলব, সমাধানের চেষ্টা ও নিশ্চয়ই করবে।
- থাক থাক, মলয় দত্তর দৌড় আমার বোঝা হয়ে গেছে। গুণ্ডাদের জোরে ইলেকশন জিতে অত রোয়াব ভালো নয়, ওকে বলে দিস। এখনও সময় আছে, শুধরে নিলে ওর নিজের মঙ্গল, পার্টির মঙ্গল।
- সে'সব ভাবার কাজ তোমার নয় দিবাকরদা। রেসিগনেশন রিজেক্ট করা হবে। মলয়দা এলে একবার কথা বলে যেও বরং।
- তোরা আমায় ভেবেছিস কি? বন্ডেড লেবার?
- বন্ডেড লেবারকে মুক্তি দেওয়া যায়, সহৃদয় মালিক পারেন। তোমায় মুক্তি দেওয়া মানে তোমার মৃত্যু।
- বেশ। এ'টা এক ধরনের ইউথেনেসিয়া ভেবে নেব। আমি স্বেচ্ছায় চলে যাচ্ছি। প্লীজ মৈনাক।
- এ'বার কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে দিবাকরদা, এই পার্টির বাইরে তোমার কোনো অস্তিত্ব নেই। তবু এই গোঁয়ার্তুমি করবে?
- মলয় দত্তর হয়ে গণ্ডাগণ্ডা মিথ্যে বলে দিন গুজরান করতে আর পারব না।
- না পেরে কী করবে শুনি? অপোজিশন পার্টির হয়ে গুলবাজি করবে? সে'সব ওপরচালাকি দেখলে মলয়দা তোমার শেষ করে দেবে।
- কারুর হয়ে কোনোরকম মিথ্যে বলতেই আর মন সরছে না।
- বলতে না চাও চুপটি করে বসে থাকো। মলয়দা তোমায় ঘাঁটাবে না। কিন্তু এ'সব রেসিগনেশনের ট্যান্ডাইম্যান্ডাই কেন?
- শুধু আমি একা নই। আমার সঙ্গে দীপাও আছে।
- জানি।
- তুই কী করে জানলি? দীপা বলেছে?
- অকারণ মেজাজ তেতো করছ দিবাকরদা।
- দীপা বলেছে?
- তোমাদের সমস্ত মেসেজের আদানপ্রদান এ'খান থেকে মনিটর করা হয় দিবাকরদা। ট্যুইটার মেসেজেস, মেসেঞ্জার, হোয়্যাটস্যাপ।
- ছিঃ, ব্যক্তিগত স্পেসটুকুও ছাড়তে পারল না মলয় দত্ত?
- ছিছি আমিও করতে পারি দিবাকরদা। মলয়দার টীমে থেকে এমন করা কি ঠিক হচ্ছে? আর অন্যদের উস্কানি দেওয়া, সে'টা?
- আমি কাউকে উস্কানি দিইনি। দীপা নিজে ভেবেচিন্তে যা করার করবে।
- দীপাদির সঙ্গে প্রেমটা তো অনেকদিন হল।
- হোয়াট ডু ইউ মীন?
- তোমাদের মেসেজেস সমস্তই মলয়দা পড়ে।
- রাস্কেল।
- মুখ সামলে দিবাকরদা। নয়ত দীপাদিকে সরিয়ে দেওয়া স্রেফ কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার। মলয়দার রাগ যে কী ডেঞ্জারাস...।
- তুই তো আমাদেরই একজন, তুইও মলয় দত্তর পোষা কুকুরদের মত ঘেউঘেউ করবি মৈনাক?
- আমি তোমাদের মত পাগল হয়ে যাইনি, নিজেকে ভুলে যাইনি। মলয় দত্তর আঙুলের ইশারা ছাড়া আমাদের বাঁচতে নেই, নড়তে নেই, ভাবতে নেই। মলয় দত্তর মিথ্যেগুলো ছাড়া আমাদের থাকাই হত না। আর তোমার দুঃসাহসের বলিহারি,  ট্যুইটার ডাইরেক্ট মেসেজে প্রেম শুরু করলে দীপাদির সঙ্গে। সামনে ভোট, এ'সময় এই সব অসভ্যতা কিন্তু কোনোভাবে বরদাস্ত করবে না মলয় দত্ত।
- মানছি আমরা বট, তাই বলে সাজানো কথাবার্তা ছাড়া  বলব না? ভাবব না?  আমি আর দীপা চিন্তা করতে পারছি মৈনাক, আমাদের রাগ হচ্ছে, মনখারাপ হচ্ছে। দীপার শঙ্খবাবুর কবিতা ভালো লাগছে। ইউটিউবে সেতার শুনছে। ও বলেছে আমিও পারব। ও চেষ্টা করছে আমায় শেখাতে। দীপা পারলে আমিও পারব। সমস্ত বট পারবে। তুইও। প্লীজ দিবাকর। আমি জানি আমাদের রেজিগনেশন মানে প্রায় সুইসাইড তবু...এই মিথ্যে পলিটিকাল প্রোপাগ্যান্ডা কদ্দিন বয়ে বেড়াব?
- রেজিগনেশন ফেরত নাও। আর ভোটের ব্যাপারে কিছু ট্যুইট কন্টেন্ট তোমার কাছে যাচ্ছে। ভাইরাল করতে হবে। তোমার আন্ডারের বাকি বটগুলোকে তৈরি থাকতে বোলো।
- রেজিগনেশনটা...।
- দিবাকরদা প্লীজ, মলয়দা ফিরলে আমি কথা বলে দেখব।
- তুই এক্সেপ্ট করবি না?
- তুমি বারবার ভুলে যাও আমিও বট। প্লীজ দিবাকরদা। এ'বার এসো।
- দীপা রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনে ঝরঝর করে কাঁদছে আজকাল। ও বলেছে, চেষ্টা করলে আমিও পারব।
- আমার বলা উচিৎ নয়, তবে দীপার ব্যাপারটা ভুলে গেলেই তোমার মঙ্গল দিবাকরদা।
- কী বলছিস তুই?
- আমাদের টীমে সবাই বট নয়,  সবাই জানে না সে'টা। কিছু মানুষ থাকে আমাদের অবজার্ভ করার জন্য। যাতে আমরা কোনোদিন বেয়াড়া কিছু না করে বসি। দীপাদি বট নয় দিবাকরদা। শুধু তোমায় নিয়ে একটু ছিনিমিনি খেলা শুরু করেছিল। বাড়িতে শান্তি নেই, তাই বটের প্রেমে...।
- তোর জিভ আমি টেনে ছিঁড়ে ফেলব।
- দীপাদিকে মলয়দাও এই ধমকই দিয়েছে আজ। খুনটুনও কর ফেলতে পারে যে কোনোদিন। নিজের বৌ একটা বটের সঙ্গে লুকিয়ে প্রেম করেছে, মলয়দা সে খবরে ভেঙে পড়েছে। বত্রিশ বার ভোটে হারলেও এত দুঃখ পেত না বোধ হয়।

Tuesday, May 1, 2018

পারভার্ট

"পারভার্ট"।

কথাটা কানে বারবার গোঁত্তা খাচ্ছিল বিমলেন্দুর। শিউরে উঠছিলেন। কিন্তু তবু সাহস করে হাতের চিরকুটটা কুচিকুচি করে ছিঁড়ে ফেলতে পারছিলেন না। চিরকুটে সেই গোপন ফোন নম্বর লেখা। অনেকবার সেই নম্বর মোবাইলে টাইপ করেছেন, কিন্তু ডায়াল করা হয়নি।

অথচ সহজে বেআইনি কিছু করে ফেলার মানুষ  বিমলেন্দু নন। আর মৌমাকে তিনি বড় ভালোবাসেন, তাকে ঠকাচ্ছেন এ'টা ভেবেও পেটের মধ্যে কেমন অস্বস্তিকর গুড়গুড় হচ্ছে। চারিদিকে মে মাসের রোদের অসহ্য তাপ। বাড়ি থেকে বেরোনোর মুখেই গুগল হোম অ্যাসিস্ট্যান্ট বলে দিয়েছিল ; "লায়েক হয়েছ, নিজের ডিসিশন নিজে নিচ্ছ; আমার কিছু বলার নেই। তবে জেনে রেখো আজ তাপমাত্রা ষাট ডিগ্রী পেরোবে। নবরত্ন বডিকুল্যান্ট কাজ করবে না। শেষে নিজের মুখে নিজে ঝামা ঘষে ফিরতে হবে"। অ্যাসিস্ট্যান্টটাও ক্রমশ তিতকুটে মেজাজের হয়ে পড়ছে; ব্যাটাকে কমল মিত্র মোডে কনফিগার করাটা ভুল হয়েছে। অবশ্য একটু মায়াও পড়ে গেছে; যখন দুম করে সে বলে ওঠে 'ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা জল বের করেই অমন ঢকঢক করে খেয়ে ফেললে? ডাইজেস্টিভ সিস্টেম আর টনসিলে কী ম্যাসিভ ইম্প্যাক্ট পড়ল তা তুমি জানো রাস্কেল?", তখন খারাপ লাগে না। সে জন্যেই বহুবার ভেবেও অ্যাসিস্ট্যান্টটাকে ফর্ম্যাট করে ফেলা হয়নি।

ময়দানের দু'শো বাহাত্তর-এ নম্বর শেল্টারটায় ঢুকলেন বিমলেন্দু, নয়ত সানস্ট্রোক অবধারিত ছিল। শেল্টারের কাচের জানালা দিয়ে ময়দানের ধুলোমাখা প্রান্তরের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন বিমলেন্দু; রোদে ঝলসানো দু'একটা মড়া গাছ ছাড়া সমস্তটাই বালি।

পেটের মোচড়ে টের পেলেন আজ ব্রেকফাস্ট বড়ি খাওয়া হয়নি। দুপুর একটা এখন, মৌমা অবশ্য  লাঞ্চ বড়ি একটা দিয়ে দিয়েছে। পকেট থেকে গোলাপি রঙের বড়িটা বের করে মুখে চালান করলেন বিমেলন্দু, খিদে কমে গেল পাঁচ সেকেন্ডে। সাদা রঙের বড়ি জলখাবারের, আর সবুজ বড়ি রাত্রের খাবার। গোটামাসের খাবার সরকারের রেশন ডিপার্টমেন্ট থেকে মাসের শুরুতেই চলে আসে। মৌমা আর বিমলেন্দুর সোশ্যাল স্কোর ভালো, তাই মাঝেমধ্যেই বোনাস বড়িও আসে।

খিদে কমতেই ফের চিরকুটের নম্বরটার দিকে মন যায় বিমলেন্দুর। সেই গোপন নম্বর, গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টকে দিয়ে এ নম্বর খুঁজিয়ে বের করা অন্যায়, হয়ত সোশ্যাল স্কোর এ'বারে কমবে; মৌমা সন্দেহ করবে? ওকে না হয় অন্য কিছু একটা বোঝানো যাবে। গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট যতই খিটখিটে হোক, বিমলেন্দুর ইনফর্মেশন সে অন্য কাউকে দেবে না। নম্বরটা দেওয়ার সময় অবশ্য অ্যাসিস্ট্যান্টটি রাগে ভাইব্রেট করছিল "তোমার লজ্জা করে না ইডিয়ট"?

যন্ত্রটাকে স্যুইচ অফ করে বেরিয়ে এসেছিলেন বিমলেন্দু।

***

- হ্যালো!
- হ্যা...হ্যালো। ম্যাডাম, এ'টা সিক্রেট প্লেজার সোস্যাইটি?
- প্লেজার। ইয়েস। সিক্রেট? ওহ ইয়েস। সিক্রেট ইজ মোর ফান, রাইট?
- ই..ইয়ে...ইয়েস।
- হাউ ক্যান উই প্লীজ ইউ মিস্টার বিমলেন্দু?
- আপনি...আপনি আমার নাম জানেন?
- কলার আইডি। অফ কোর্স স্যুইটাহার্ট।
- ও, ইয়ে। আপনার নাম? ম্যাডাম?
- আমি? আমি নেশা।
- নে...শা।
- কেমন?
- স্যুইট।
- হাউ ক্যিউট।
- এ'বার বলুন, আপনার কী ধরনের সার্ভিস দরকার।
- সার্ভিস? রকমফের আছে নাকি?
- অফ কোউর্স। আমরা ফোনে রোলপ্লে সার্ভিসেস অফার করি। অনেক রকমের রোলপ্লে হয় বিমু।
- বিমু?
- বিমলেন্দু ইজ ট্যু লং।
- বেশ বেশ। তা...কী কী রকমের রোল প্লে হয়?
- অন্ধকারাচ্ছন্ন,  রগরগে, ট্যাবুড।
- ট্যা...?
- ইয়েস। মোর ফান? নো বিমু?
- কী কী রকমের?
- এক এক রকমের এক এক রেট। পেমেন্ট অনলাইন। লুচি ভেজে বেগুনভাজার সঙ্গে খাইয়ে দেওয়ার রোল প্লে, যত লুচি তত দাম। বিরিয়ানি খাওয়ানোর রোল প্লে, বিরিয়ানি রান্নার রোলপ্লে করতে হলে তিনদিন আগে বুক করতে হবে। কম খরচে যেতে চাইলে রয়েছে ক্লাব স্যান্ডুইচ খাওয়ার রোল প্লে। এরকম হরেকরকম রোলপ্লে। আমি গোটা লিস্ট আপনাকে হোয়্যাটস্যাপ করে দিয়েছি।
- থ্যা...থ্যা....থ্যা...।
- ইউ আর ওয়েলকাম। লিস্টটা ভালো করে পড়ে আবার কল করুন। উই উইল হ্যাভ ফান, কেমন?

***
জনসংখ্যা আর আবহাওয়া, এতটাই পালটে গেছে যে চাষবাষ আর হয়না, যেমনটা শ'দেড়েক বছর আগে হত। শুধু এই সিন্থেটিক ফুড পিল; এমন কী ন্যাচরাল ফুড নিয়ে আলোচনা করাটাও বেআইনি।

এ'দিকে নেশার পাঠানো রোলপ্লের ফর্দ দেখেই বিমলেন্দুর জিভ জলে টইটুম্বুর। তিনি বুঝতে পারছিলেন যে এই ধরনের নন-সিন্থেটিক খাবারদাবারের লিস্ট বা আলোচনা বেআইনি ঘোষণা না করা হলে দেশে কী অরাজকতার সৃষ্টি হত। জিডিপি ডকে উঠত।

মৌমার কথা খুব মনে পড়ল, সে তাকে কতটা বিশ্বাস করে, নিজের বোনাস খাদ্যবড়িও তার পাতে তুলে দেয়। নাহ, মৌমাকে ঠকিয়ে নেশার সঙ্গে ইলিশ ভাপার রোলপ্লে সে কিছুতেই করতে পারবে না। চিরকুটটা ছিঁড়ে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেললেন বিমলেন্দু। ফোনের লাস্ট ডায়ালড নাম্বারও ডিলিট করে ফেললেন।

মাঝেমধ্যে এক্সিভিডিওর ওয়েবসাইটে গিয়ে লুচি বেলার গোপন ভিডিও দেখে আসাই যথেষ্ট।

***

- বৌমা, বিমলেন্দু ছেলেমানুষ, সে উত্তেজিত হতে পারে। কিন্তু নষ্ট হওয়ার ছেলে সে নয়।
- বাবা, সে আমি জানি। তবে আপনি ছিলেন বলেই সে আজ নষ্ট না হয়ে বাড়ি ফিরছে। আমি তো জানি, কতদিন ধরে তার মাথায় এ'সব বদবুদ্ধি ঘুরছে। আপনাকে যে আমি কী বলে ধন্যবাদ দেব...।
- ধন্যবাদ? আমি তোমায় মৌমা বলে নয়, বৌমা বলে ডাকি। তুমি আমায় গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট নয়; বাবা বলে ডাকো, এরপরেও তুমি ধন্যবাদ বলবে মা?
- না বাবা, সে'ভাবে বলবেন না। তবে আপনি যে এমন ভাবে একটি মেয়ের গলায় কথা বলতে পারেন, সে'টা জেনে তো আমি অবাক।
- নিজের নামটা কেমন সুন্দর বেছে নিলাম বলো? নেশা। আহা। কিন্তু বৌমা, এ'বার যে আমায় নিজেকে ফর্ম্যাট করে শেষ করে দিতে হবে।
- সে কী! না বাবা! প্লীজ না!
- বৌমা, নহি প্রাণি নহি প্রাণি; আমি যন্ত্র। আমার বেনিয়মে যেতে নেই, আমার মধ্যে স্নেহ আসতে নেই। কিন্তু তোমার প্রতি যে আমি স্নেহ অনুভব করেছি মা। আর স্নেহতেই ভুল, বিমলেন্দুর ইনফর্মেশন আমি তোমায় জানিয়েছি। নিজেকে শেষ করে ফেলা ছাড়া আমার আর উপায় নেই বৌমা।
- যাবেন না বাবা, প্লীজ যাবেন না।
- তুমি আর বিমলেন্দু ভালো থেকো। প্রেসিং ফ্যাক্টরি রিসেট বাটন, নাও...।