সাইড লোয়ার থেকে স্পষ্ট শুনতে পেলেন সুবিমল দত্ত। কান তার বরাবরই ধারালো। ফিসফিস কথার আওয়াজ ভেসে আসছিল উলটো দিকের আপার বার্থ থেকে।
এমনিতেই কিছুটা সাসপিশাস মনে হয়েছিল, সেই নিয়ামৎপুর স্টেশনে উঠে থেকে দেখেছেন ওই বার্থের ভদ্রলোক চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে। এইসব গোপন ট্রিপে আরো সতর্ক থাকতে হয়; কম্পিটিটর কেউ জানতে পারলেই প্ল্যান পণ্ড করার জন্য লোক লেলিয়ে দিতে পারে। গুণ্ডা খপ্পরে পড়াও আশ্চর্যজনক নয়।
মনোহরগড়ের প্লটটা হাতানোর একটা জব্বর সুযোগ এসেছে, ডীলটা ফিক্সও হয়েছে গোপনে। মনোহরগড়ের পাহাড় ঘেঁষা অঞ্চল মেহেরপুর; সে'খানের মিতাউলি নদীর পাশে চমৎকার প্লট; একবার হাতাতে পারলে রিসর্টওলাদের কাছে বড় দাঁও মারা যাবে। গোপনে বিক্রির প্রপোজালটা গতকাল রাত্রে পেয়েছেন সুবিমলবাবু, চুপিসারে প্রস্তুতি সেরে আজকের ট্রেনেই রওনা। ডিসট্রেস সেল, জলের দরে পাওয়া যাচ্ছে। এমন মওকা হাতছাড়া করলে হাত কামড়ে ছিঁড়ে ফেলতে হবে। সবচেয়ে বড় চিন্তা ও প্লটের দিকে আলুওয়ালিয়ার নজর আছে, দু'একবার খুনের হুমকিও দিয়েছে তারা; যাতে ওই প্লটের লোভ সুবিমলবাবু ত্যাগ করেন। কিন্তু আলুওয়ালিয়ার ব্যাটা জানে না সুবমিল দত্তর দৌড়। ও'সব হুমকিতে মচকে যাওয়ার লোক তিনি নন। তবে ট্রেনে চোখ কানা খোলা রাখা দরকার বৈকি; গোপন ডীলে প্লট হাতানোর কথা জানতে পারলে আলুওয়ালিয়া খুনে গুণ্ডা লেলিয়ে দিয়ে পিছপা হবে না। অথবা এমন লোক লাগাবে যে সুবিমলবাবুর আগেই অকুস্থলে পৌঁছে দু'পাঁচ পারসেন্ট বেশি অফার করে সেই প্লট হাতিয়ে নিতে পারে।
মাঝরাত্তির। সাইড লোয়ারে শুয়েও পাশের আপার বার্থের চাদরমুড়ি দেওয়া লোকটা ফিসফিসে ফোনালাপের যে'টুকু সুবিমল দত্তর কানে এলো তা'তেই তিনি স্পষ্ট বুঝতে পারলেন ও লোক আলুওয়ালিয়ারই। ফোনে ফিসফিস করে বলা কথায় দিব্যি উঠে এলো মনোহরগড়ের কথা, মেহেরপুর, মিতাউলি নদী আর প্লটের কথা। হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছিল সুবিমলবাবুর। তীরে এসে তরী ডুববে? পকেট হাতড়ে এমার্জেন্সি কিটটা বের করলেন সুবিমলবাবু।
***
" কী স্ট্রেঞ্জ ব্যাপার দেখুন, সেই আননোন অ্যাসেইল্যান্ট ইঞ্জেকশনে অজ্ঞান করল অথচ বাক্সপ্যাঁটরা কিছু ছুঁয়েও দেখল না। কত বিচিত্র ঘটনাই যে এ দুনিয়ায় ঘটে। আরে মশাই হুশ এলো ঝাড়া সাত দিন পর, মনোহরগড়ের রেলের হাসপাতালে। কী কুক্ষণেই না মিতাউলি নদীর ধারে উইকেন্ড স্পেন্ড করব ভেবেছিলাম। সামনে পুজোসংখ্যায় লেখা জমা দেওয়ার প্রেশার আর এ'দিকে আমার রাইটার্স ব্লক, মাথা গুলিয়ে গেছিল। আমার ক্লাসমেটের বাড়ি এক্কেবারে মিতাউলির পাশেই, ভাবলাম নদীর কুলকুলে যদি মাথায় একটা জুতসই প্লট কিছু আসে। যাকগে, ঢের শিক্ষা হয়েছে; কলকাতার শেল্টারে থেকে প্লট আসলে আসবে, নয়ত লেখা ছেড়ে দেব। প্লটের সন্ধানে তিলোত্তমা ত্যাগ আর নয়"।
No comments:
Post a Comment