১।
হপ্তায় এই নিয়ে তিন নম্বর বেনামি চিঠি।
তিনটেই ইনল্যান্ড লেটারে। একই বয়ান, "বেঁচে থেকে কী হবে শুভময়বাবু"?
এ'টা কি হুমকি? না মাথায় হাত বুলোনো নিহিলিজম? পুলিশে যাওয়া ঠিক হবে?
২।
বাহাত্তর নম্বর বেনামি ইনল্যান্ড লেটার যখন পেলেন তদ্দিনে ভয়ডর কেটে গেছে। ব্যাচেলর জীবনের এক সঙ্গী হয় উঠেছে প্রতি হপ্তার খান তিনেক ইনল্যান্ড লেটার।
সেই একই বয়ান;
"বেঁচে থেকে কী হবে শুভময়বাবু"?
অপূর্ব হাতের লেখা, মায়া পড়ে গেছে। কোনো হপ্তায় তিনটের কম চিঠি এলে মন খারাপ হয়। সামান্য অভিমানও যে হয় না তা নয়। একটা ইনল্যান্ড লেটারের গায়ে একটা মাত্র লাইন, তা'তে অত গড়িমসির কী আছে?
সমস্ত চিঠিগুলোকে আলমারির এক কোণে যত্নে জমিয়ে রাখছিলেন শুভময়বাবু।
৩।
দার্জিলিংয়ের প্ল্যানটা একরকম দুম করেই করে ফেলেছিলেন। একাই কয়েকদিন ঘুরে আসা। বাড়ি থেকে বেরোবার মুখে এক হাজার দু'শো সাঁইত্রিশতম ইনল্যান্ড লেটারটা পেলেন। সদর দরজায় তালা দেওয়া হয়ে গেছে, কাজেই চিঠিটা আর আলমারিতে রাখা হল না।
ট্রেনের সময় হয়ে আসছিল, চিঠিটা চটজলদি পকেটে গুঁজে ট্যাক্সির দিকে এগোলেন শুভময়বাবু।
৪।
কাঞ্চনজঙ্ঘার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কেমন ঘোর লেগে যায়। দু'দিন যাবৎ দার্জিলিংয়ের আকাশ একদম সাফ, নিরিবিলি রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় মাঝেমধ্যেই দাঁড়িয়ে পড়ছেন শুভময়বাবু। কাঞ্চনজঙ্ঘার বেশ একটা মায়া আছে। মায়ার প্রসঙ্গে নিজের ট্রাউজারের পকেটে রাখা চিঠিটার কথা মনে পড়ল। এসে থেকে ট্রাউজার পাল্টানোর সঙ্গে সঙ্গে মানিব্যাগের সঙ্গে চিঠিটাও এ পকেট থেকে ও পকেট চালান করে চলেছেন তিনি। তবু এ'বারের ইনল্যান্ড লেটারটা আলাদা করে পড়া হয়নি। প্রতি চিঠিতেই যদিও সেই একই লাইন, তবু বারবার পড়তে ইচ্ছে হয়। এমনই টান রয়েছে সে হাতের লেখায়।
ইনল্যান্ডলেটারের জন্য পকেট হাতড়ালেন শুভময়বাবু।
৫।
কী অদ্ভুত ব্যাপার। এই এক হাজার দু'শো সাঁইত্রিশতম চিঠিতে হাতের লেখা এক হলেও বয়ান উলটে গেছে।
"পৃথিবীটা বড্ড সুন্দর, তাই না শুভময়বাবু? এত ভালোবাসার সমস্ত কিছু ছেড়ে দুম করে চলে গেলেই হল নাকি? বেঁচে থাকাই নির্বাণ। তাই না"?
কেমন বিহ্বল লাগছিল শুভময়বাবুর। কেমন মন কেমন। নাকে হঠাৎ বয়ে আসা অস্বস্তিকর গন্ধটাই কি ভালোবাসা?
ইনল্যান্ড লেটারটা পকেটে ফেরত রাখতেই পিঠে বেপরোয়া ধাক্কাটা অনুভব করলেন শুভময়বাবু। বেসামাল হয়ে খাসের অতলে হারিয়ে যাওয়ার সময় দেড় সেকেন্ড সময় পেয়েছিলেন ভদ্রলোক, দেড় সেকেন্ডের মনখারাপ;
একহাজার দু'শো আটত্রিশতম চিঠিটার জন্য।
No comments:
Post a Comment