- এই যে ব্রাদার অরূপ, ঘুম আসছে না?
- এই প্রশ্নের যে কোনো উত্তরই সেল্ফ-ডিফীটিং, তাই না অজয়দা?
- সর্বনাশ। মেসবাড়িতে ফিলোসফিক উত্তর। ব্যাপারটা কী?
- আসছে না। ঘুম। অবভিয়াসলি।
- কী নাম যেন মেয়েটার? কুন্তলা?
- ধুস।
- কুন্তলা নয় ওর নাম?
- আহা, ওর নাম কুন্তলাই। কিন্তু ও আবার এলো কোথা থেকে। গরমে গলদঘর্ম, তাই..।
- লেটস সী। চিঠি দিয়েছে?
- ধ্যার।
- চিঠি এক্সপেক্ট করছিলিস অথচ দেয়নি?
- উফ, অজয়দা।
- প্রেমের কচু চেনার ব্যাপারে আমি রীতিমত শুয়োর, বুঝলি? বিকেলে চাউমিনে ডিম দিতে বললি না, ছাদে গেলি রেডিও ছাড়া; এ'সমস্তই শিওর শট সিম্পটম।
- কলকাতায় এসেছে। সে।
- কুন্তলা কলকাতায়?এই সময়? তোর না সামনে ফার্স্ট ইয়ারের এগজ্যাম? গেল পাঁচ পারসেন্ট।
- যত বাজে কথা। এ কী, আলো জ্বাললে কেন?
- হবে না, তোর এখন ঘুম আসবে না। গজার ডিবেটা এ'দিকে দে। আর খুলে বল। পটাটা থাকলে ভালো হত, প্রেমট্রেমের ব্যাপারে ওর মাথা বেশ খোলতাই।
- প্রেম কেন হতে যাবে?
- ওহ হো। তোর তো আবার সেমান্টিক অ্যালার্জি আছে। যাক গে, মাসীমা কিন্তু গজাগুলো বড় ভালো বানান।
- কুন্তলা এক হপ্তা হল এসেছে।
- থাকে তো দিল্লীতে, তাই না?
- জয়পুরে।
- ওই হল। তা, তুই জানলি কী করে? এসেছে?
- চিঠি।
- দেখা?
- করবে বলেছিল। ফোন নাম্বারও দিয়েছিল। বুথ থেকে ফোন করেছিলাম। বলল সোমবার দেখা করবে। সন্ধেবেলা।
- মানে...কালকে?
- হুঁ।
- ও, আনন্দে ঘুম আসছে না, তাই বল।
- অজয়দা, ওর গলা যেন কেমন শোনালো। দেখা করতে চায় না যেন, নেহাৎ বাধ্য হয়ে...।
- পেসিমিজম।
- গাট ফীলিং। ভাবছি দেখাটেখা করব না।
- তোর মাথায় গাঁট্টা মারলে তবে তোর বদফীলিংগুলো শায়েস্তা হবে। কোথায় দেখা করছিস? সেই আগের বারের মত? কমলা ক্যাফে?
- কথা তেমনই, কিন্তু আমি ভাবছিলাম...মানে মনে হচ্ছিল...কুন্তলা ঠিক দেখা করতে চায় না।
- রাবিশ। গজা শেষ। আর কাল দেখা করে আসিস। অবশ্যই। তারপর অ্যাসেস করব।
***
কমলা ক্যাফেতে অজয়দাও এসেছিল, অরূপের পিছুপিছু। প্রতিবার যেমন বিরক্ত করতে আসে, আচমকা উদয় হয়। কাটলেটে ভাগ বসায়, বাজে জ্ঞান দেয়। গতবার কুন্তলা বেশ বিরক্ত হয়েছিল। তবে অজয়দা ও'সব বিরক্তিকে পাত্তা দেয় না।
এ'বারে অবশ্য তেমন সমস্যা হয়নি। কুন্তলা আসেনি। অরূপের কাছে ব্যক্তিগত কোনো ফোন নেই, তাই হয়ত জানাতে পারেনি।
দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা অপেক্ষা করেছিল অরূপ। অজয়দা তারপর পাশের কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে।
"কুন্তলা খুব ভালো মেয়ে অজয়দা। আসলে, আমি ঠিক..." বেকুবের মত বলে ফেলেছিল অরূপ। তবে এ'বার দুম করে অজয়দাকে দেখতে পেয়ে বড় ভালো লেগেছিল।
স্পেশ্যাল মোগলাই দু'টো অজয়দাই অর্ডার করেছিল। টিউশনারি টাকাগুলো ওর কাছে বড় দামী, একদম বাজে খরচ করে না অজয়দা। ওর বাড়ির অবস্থা তেমন সুবিধের নয় কিনা। মোগলাইয়ের পর যখন দু'টো থামস আপ অর্ডার করল অজয়দা, তখন অরূপেরই গা কড়কড় করছিল। কিন্তু বারণ শুনল না। কমলা ক্যাফে থেকে বেরিয়ে এসে কলেজ স্ট্রীটের দে বুক স্টলে নিয়ে গিয়ে অরূপকে একটা বই কিনে দিয়েছিল অজয়দা, এ'বারও বারণ শোনেনি। শিব্রামের 'ঈশ্বর পৃথিবী ভালোবাসা'।
মেসে ঢোকার মুখে অজয়দা অরূপের কাঁধে হাত রেখেছিল;
"অরূপ, কুন্তলা সত্যিই ভালো মেয়ে। এ বিশ্বাস কোনোদিন নষ্ট হতে দিবি না, কেমন"?
মেসের 'বেড'টাই ক্রমশ অরূপের 'বাড়ি' হয়ে উঠছিল।
(চলছে, চলবে)
No comments:
Post a Comment