- দাঁড়িয়ে কেন? বসুন।
- না, থাক স্যার।
- বসুন। বসুন। কাঁপছেন যে।
- আমার টাকাটা দিয়ে দেবেন প্লীজ?
- রেডি রেখেছি। এই এনভেলপে। এই যে...।
- ধন্যবাদ।
- আরে। গুনে দেখুন মন্টুবাবু।
- না না, কী দরকার। ঠিকই আছে।
- আমি লোকটা যে ভালো নই; সে খবর তো আর কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানাতে হবে না।
- না...তা কেন।
- যে মানুষ টাকা দিয়ে খুন করাতে পারে, সে সামান্য টাকা মেরে দিতে পারবে না? তাই বলছি অমন দুম করে বিশ্বাস করবেন না। দিনকাল বড্ড ডেঞ্জারাস। নিন বসুন। আর গুনুন। পাক্কা চল্লিশটা নোট থাকার কথা।
- আচ্ছা...তা'হলে গুনি?
- অফকোর্স।
- এক, দুই, তিন....চল্লিশ! ঠিকই আছে।
- চা খাবেন মন্টুবাবু?
- না। একটু জল বরং...গলাটা শুকিয়ে গেছে।
- এই নিন...।
- এ'টা আপনার গেলাস তো...।
- এঁটো নয়...।
- আহা, তার জন্য নয়। আচ্ছা, থ্যাঙ্ক ইউ।
- এখনও কেঁপে চলেছেন। আহা।
- আসলে...আসলে...দাসবাবু খুব ছটফট করছিলেন জানেন...খুব। কী চিৎকার! কানের মধ্যে এখনও ঝনঝন করে বাজছে। কী অসহায় ভাবে ছটফট করছিলেন। আর...।
- আর?
- আর রক্ত। ওর অফিসের মেঝে ভেসে যাচ্ছিল। একবার মনে হয়েছিল...।
- কী মনে হয়েছিল?
- যে অ্যাম্বুলেন্স ডাকি! যদি বাঁচানো যায় আর কী।
- দ্যাখো কাণ্ড! নিজে ছুরি চালিয়ে হাসপাতালে খবর দেবেন? সর্বনাশ! আপনি তো ডেঞ্জারাস লোক মশাই।
- খুনি! ডেঞ্জারাস তো বটেই।
- মন্টুবাবু, আপনি হলেন গিয়ে কীবোর্ড, আমার আঙুলগুলো টাইপ করছে। খুনি আপনি নন।
- তবু...ছুরিটা তো আমিই।
- আরে ওই দাস ভদ্রলোক অত্যন্ত ধড়িবাজ। কথায় কথায় খালি ঘুষের বায়না। ঘুষ ছাড়া কোনো কনসাইনমেন্ট দেবেই না। তা ঠিক আছে, আমি কমিশন দিয়ে যাচ্ছিলাম। ব্যাটা ইদানিং আমার ব্যাপারে একটু বেশিই জেনে গেছিল। বলে কিনা শুধু কমিশনে হবে না, আধাআধি শেয়ার চাই। রীতিমত ব্ল্যাকমেল। দিলাম সাফ করে। আরে মশাই আপনার কোনো ভূমিকাই নেই এ'খানে। হ্যাঁ, ছুরি আপনি চালিয়েছেন কিন্তু খুনের পাপ কম্পলিটলি আমার ঘাড়ে।
- দাসবাবুর টেবিলে একটা ফ্যামিলি ফটো ছিল, জানেন?
- প্রথম খুন তো। বুঝি মন্টুবাবু, বুঝি। অমন ইমোশনের ছোঁয়াছুঁয়ি একটু হবে। তবে কেটে যাবে।
- পাহাড়ে ঘুরতে গিয়ে তোলা সে ছবি। বৌ, দুই ছেলে। একেবারে ঝলমলে ছবি। দামী কাঠের ফ্রেম। ঘর আলো করে ছিল...। উনি টেবিলে যখন মুখ থুবড়ে পড়লেন তখন কয়েক ফোঁটা রক্ত সেই ফটোফ্রেমে...।
- মন্টুবাবু। এ টাকাটা না পেলে আপনার নিজের ছেলেটি বিনা চিকিৎসায়...।
- তা ঠিক৷ সে জন্যেই তো।
- দাসবাবুর ছেলেবৌদের অভিশাপ আপনার গায়ে লাগবে না।
- চিন্তাটা অভিশাপের নয় স্যার।
- তবে?
- আসলে এ টাকায় খোকার চিকিৎসার শুরু করা যাবে বটে...কিন্তু...এর পরেও প্রচুর টাকার দরকার হবে।
- বেশ তো। আরো দেব!
- আরো?
- আরে আমার ব্যবসা তো ঠিক সোজা পথে চলে না। শত্তুরেরও অভাব নেই। মাসে খানতিনেক কাজ পেয়েই যাবেন। আর আপনার নার্ভ বেশ স্টেডি। ছেলের চিকিৎসা আটকাবে না। ডোন্ট ওরি। আপনি ওর চিকিৎসা শুরু করিয়ে ফেলুন।
- নাহ্!
- না?
- স্যর, আমি না...আমি দাসবাবুর টেবিল থেকে ওই দামী কাঠের পালিশ করা ফ্রেমটা তুলে এনেছি।
- কেন? সে কী!
- ছবিটা বোধ হয় দার্জিলিংয়ের। মানে, আমি ঠিক জানি না। তবে মনে হল। দাসবাবু, তার স্ত্রী আর দু'ছেলে; সবার মুখে উপচে পড়ছে হাসি আর রোদ্দুর। কী ভালো। হাজারখানেক খুনেও ওই ফ্রেম নষ্ট হবে না।
- আর এক গ্লাস জল খাবেন?
- না স্যার, এই দেখুন। আমার গা কাঁপুনি কমে গেছে। আমি ঠিক করে নিয়েছি..।
- কী? ছেলের চিকিৎসা করাবেন না?
- নাহ্, আমি পারব না জানেন। অতগুলো খুন করে...নাহ্। খোকা সেইভাবে...। বরং এই নতুন আইডিয়াটাই ভালো। চিকিৎসা আপাতত বন্ধ থাক।
- আইডিয়াটা কী?
- আমি আর খোকা দার্জিলিং যাব। ওই ফ্রেমের ছবির জায়গাটা খুঁজে বের করে ছবি তুলব, আর সে ছবি এই ফ্রেমেই..।
- দার্জিলিং গেলে ছেলেটা বাঁঁচবে?
- হয়ত না। শুধু এই ফটোফ্রেমটা থাকবে। সে ফটোফ্রেমে খোকার মুখ আলো করা হাসি। যে হাসিতে ওর খুনি বাপের কালোছায়া নেই। ওর অসহায় বাপের অনটন নেই।
- মন্টুবাবু। ছবিটা দেখি।
- এই যে।
- হুঁ।
- অপূর্ব, না স্যর?
- হুঁ।
- বিউটিফুল না?
- তা বটে। আর দার্জিলিংই মনে হচ্ছে। এ জায়গা আমি চিনি সম্ভবত।
- আমি দার্জিলিংই যাই স্যর। বাকি খুনটুনগুলো বাদ থাক। কালকেই জোড়া টিকিট কাটছি।
- মন্টুবাবু, আপনি বড় ভয়ঙ্কর মানুষ।
- খুনি বলে কথা স্যার।
- আমার একটা নতুন প্ল্যান আছে। না করবেন না।
- প্ল্যান?
- তিনটে টিকিট কাটুন।
- তিনটে?
- আপনার খোকা ছাড়া কেউ নেই। আমার ব্যবসা ছাড়া কেউ নেই। এ'দিকে এই ফটোফ্রেমে থাকার লোভ হচ্ছে। দাসবাবু লোক মন্দ ছিলেন, কিন্তু স্রেফ এই ফ্রেমে সেঁধিয়ে অমরত্ব লাভ করেছেন দেখছি। দার্জিলিংয়েই চলুন। ফিরে এসে খোকার চিকিৎসা শুরু। তা বলে ভাববেন না আরো খুন করতে বলব। আর খোকার হাসপাতালের বেডের পাশে এ ফটোফ্রেম রেখে দেব, কেমন? দার্জিলিংয়ের রোদ্দুর সমেত।
- চা খেতে ঠিক ইচ্ছে করছে না। কফি খাওয়াবেন স্যর?
No comments:
Post a Comment