- আপনি? আপনিই?
- আজ্ঞে।
- বিশ্বাস হয় না...আপনি আদতে...এত ম্যাড়ম্যাড়ে?
- ওই। দূর থেকে যে চকমক দেখা যায়, তা কি কাছে এলে থাকে।
- তার চেয়েও বড় কথা, আপনার সঙ্গে যে সত্যিই দেখা হবে..তা ভাবাই যায় না। আপনি তিনিই তো?
- আজ্ঞে, বাঁ হাতে চটের ব্যাগটা তো দেখতেই পাচ্ছে। ভারি আর বেঢপ চেহারা। আর এই আমার ডান-পা খানা হঠাৎ লাফিয়ে উঠে ফুটবোর্ডে।
- বিলক্ষণ! বিলক্ষণ। ডেসক্রিপশন একদম মিলে যাচ্ছে। বাস যত জোরে ছুটছিল..।
- আমিও তত জোরে..। ডান হাত দিয়ে আছি পিছনের হাতলটা ধরে।
- কিন্তু সব থেমে আছে কেন? বাস, লোকজন। সব স্ট্যান্ড স্টিল কেন?
- আপনি ভাবছেন, হাত বাড়াবেন কিনা। সেই মুহূর্তের ভগ্নাংশে আমরা আটকে আছি।
- সর্বনাশ, এক পা ফুটবোর্ডে রেখে ভাবছেন কেউ হাত ধরবে কিনা? আপনি তো খতরনাক লোক মশাই।
- উপায় নেই স্যার। মরার সময় কি আছে যে অত সুবিধে অসুবিধে নিয়ে ভাবব? আপনি হাত বাড়ালে ভালো, নয়ত অন্য কারুর হাত। মোট কথা আমার থলিটা দূরে দূরে পৌঁছতে হবেই। যা করবেন তাড়াতাড়ি করুন, বাসের গতি এ'বারে বাড়বে।
- ডানপিটেই বটে আপনি। এই যে বাড়িয়ে দিলাম, কষে ধরুন দেখি হাতখানা।
***
তন্দ্রা যখন ভাঙলো তখন ডানপিটে ভদ্রলোক আর তার ঢাউস থলে হাওয়া, বাস কন্ডাক্টর মুখ ঝামটা দিচ্ছেন দরজায় দাঁড়িয়ে ঝিমোনোর জন্য। হাতের মুঠোয় চিরকুটটা পেয়ে দিবাকর মিত্র অবাক;
"দিবাকরবাবু, হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ'বার পিছু হঠলে চলবে না। অম্লান দাস নামে একজনের ঠিকানা দিলাম। অম্লানবাবুর তেমন কেউ নেই, চায়ের দোকানে বাসন মেজে চলে যায়। তিন নম্বর মতিলাল ঘোষ লেন ঘেঁষা সে দোকান। সে'খানেই তাঁর বাস। দাসবাবুর বড় পেস্ট্রি খাওয়ার শখ৷ এক বাক্স ভালো পেস্ট্রি তাঁকে পৌঁছে দেবেন? প্লীজ? চুপিচুপি? আমার বোধ হয় থলি হাতে ও পাড়ায় যাওয়া হবে না এ'বার। প্লীজ, এ কাজটা করে দেবেন? অম্লানবাবু খুব খুশি হবেন, বছর দশেকের খোকারা যেমন খুশি আর কী; বেনামি কেক-প্যাস্ট্রির বাক্স পেলে। প্লীজ, কেমন?
ইতি ডানপিটে"।
ফ্লুরিস থেকে একবাক্স প্যাস্ট্রি কিনে যখন মিত্রবাবু বেরিয়ে এলেন, ততক্ষণে পার্ক স্ট্রিটে সন্ধ্যে নেমেছে। চারদিকে আলো; টুনি বাল্বের স্যান্টা ক্লজ ঝলমল করছে। আলোর স্যান্টার দিকে তাকিয়ে মিচকি হাসলেন মিত্রবাবু;
"স্যান্টাদা, আপনাকে সাক্ষাতে দেখতে পেলে টুনি দিয়ে আপনার এমন এলেবেলে ছবি কেউ আঁকত না"।
No comments:
Post a Comment