- সরি, সরি মিস্টার মজুমদার। আপনাকে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হল। আসলে অ্যাসেম্বলি লাইনের একটা গণ্ডগোলে ঘণ্টাখানেক প্রডাকশন বন্ধ ছিল, আর প্রডাকশন বন্ধ থাকলে যে কী সমস্যা। এত ডিমান্ড চারদিকে...। তা আমার আর্দালি ভুভজু আপনাকে কফি দিয়েছে তো?
- দু'কাপ শেষ করে ফেলেছি। আমি তো ভাবলাম আজ আর আপনার সঙ্গে দেখাই হবে না।
- না না, সে কী বলছেন। আপনি কলকাতার থেকে এসেছেন, আমার অনেকদিনের ইচ্ছে ভারতবর্ষে আমাদের সাপ্লাই যাবে।
- আগ্রহ নিয়েই এসেছি, তবে কী জানেন ডক্টর মেওসজুস্ক, ব্যাপারটা বিশ্বাস করতে পারছি না ঠিক। যদিও অনেকেই আপনার এই কারখানার প্রশংসা করেছেন। আর যে জিনিস যদি জেনুইন হয় তা'হলে আর পাঁচটা জায়গার মত ভারতবর্ষেও এর চাহিদা তুঙ্গে থাকবে। কিন্তু..তবু কোথাও যেন একটা..।
- খটকা...তাই তো? স্বাভাবিক। সরকারের হাজাররকম ত্যান্ডাইম্যান্ডাই আর অবিশ্বাস। কাজেই কালোবাজার ছাড়া এ জিনিস বাজারে ছাড়া গেল না। আর সে কারণে মাস-অ্যাওয়ারনেসের জন্য কিছুই করতেও পারলাম না। রিয়েলি স্যাড।
- তাই বলে ডক্টর মেওসজুস্ক, ভূতের কারখানা? সত্যি সম্ভব?
- রীতিমত সম্ভব। আর তার প্রমাণ এ'বারে আপনি হাতেনাতে নিয়ে যাবেন। এতদিনের এত রূপকথা, এত হাড়হিম করা গল্প; এ'বার সমস্তই রিয়ালিটি মিস্টার মজুমদার। আপনাকে ফ্র্যাঞ্চাইজি দেওয়ার জন্য এমনি এমনি ডাকিনি, রীতিমত স্যাম্পেল দিয়ে ফেরত পাঠাবো।
- কিন্তু ব্যাপারটা হয় কী করে? আত্মাটাত্মার ব্যাপার তো শুনেছি..।
- বুজরুকি। পুরোপুরি বুজরুকি, বুঝলেন। আত্মাটাত্মা বলে কিছুই হয় না মশাই। সবই দেহ। আর ডিএনএ। পুরো ফর্মুলাটা আপনাকে বলে দেওয়া যাবে না। সে'টা আমার নিজের পেটে লাথি মারা হবে। কিন্তু গোটা ব্যাপারটাই বায়োটেকনোলজি আর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের কামাল। কারুর ডিএনএ সংগ্রহ করে,তার চারিত্রিক প্রোফাইল তৈরি করে একটা স্পেসিফিক অ্যালগোরিদমে ক্লোন করা৷ ক্লোন, কিন্তু অশরীরিরূপে। ব্যাস, ভূত রেডি।
- জেনুইন ভূত?
- জেনুইন। এক ধরণের অমরত্ব বলতে পারেন। সে ভূত অবশ্যই চিপ আর ব্যাটারির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু সে'সোলার ব্যাটারি দিনের বেলা আপনা থেকে চার্জ সংগ্রহ করে। তাদের বিনাশ নেই। এই ফ্যাক্টরিতে আমি একের পর এক অবিনশ্বর আত্মা তৈরি করে চলেছি মিস্টার মজুমদার। কড়ি ফেলে তেল মাখতে পারলে আর কাউকে এ দুনিয়া থেকে বিদেয় নিতে হবে না, অন্তত তাদের আত্মাটুকু থেকে যাবেই৷ তাদের ভূত তাদের অসম্পূর্ণ কাজগুলো শেষ করার চেষ্টা করবে, বদলা নেবে, ভালোবাসবে, ভয় দেখাবে।
- থ্রিলিং। থ্রিলিং। কিন্তু কে জানে ডক্টর মেওসজুস্ক, তবু ঠিক নিশ্চিন্ত হতে পারছি না। আসলে ফ্র্যাঞ্চাইজি নেওয়া তো চাট্টিখানি ব্যাপার নয়...হাতেনাতে ডেমোন্সট্রেশন না দেখলে...।
- প্রমাণ?
- প্রমাণ, আছে?
- আমার আর্দালি ভুভজু কেমন ভেসে ভেসে কফি দিয়ে গেল, সে'টা বোধ হয় খেয়াল করেননি, তাই না?
- না মানে খবরের কাগজ পড়ছিলাম হয়ত, তাই ও কফি দেওয়ার সময় ঠিক...। তবে মুখটা দেখেছিলাম...সাদাটে ছিল বটে..কিন্তু...।
- এক মিনিট, এই দেরাজটা খুলে দেখাই..।
- এ'টা কী?
- এ'টা সুবিশাল ডিপফ্রিজ৷ দেখুন। ভিতরে অজস্র মমি। ডেডবডি না দেখলে ভূতকে ভূত বলে মনে না হওয়াটাই স্বাভাবিক। ওই ডানদিকের বডিটা দেখুন...।
- ভু..ভু..।
- ও'ই আদত ভুভজু। ওর ভূতই আপনাকে কফি দিয়ে গেছে। এই কারখানায় তৈরি ভূত। আমার কারখানার সমস্ত কর্মচারীর দেহই এ'খানে আছে। মানুষ পোষার অনেক হ্যাপা, খরচও বেশি। কস্ট-কাটিংয়ের যুগ, বুঝতেই পারছেন।
- আর ভু..ভুভজুর পাশের... ও...ও..।
- আজ্ঞে হ্যাঁ মজুমদারবাবু, ও'টা আপনারই দেহ৷ প্রথম কফির কাপ থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করেছিলাম, আর পরের কাপে বিষ ছিল। স্যাম্পেল নিয়ে না ফিরলে আপনি ভূত বিক্রি করবেন কী করে বলুন তো?
No comments:
Post a Comment