Friday, January 25, 2019

মুঝে ইয়াদ আতি হ্যায়



"...অপনে দেশ কি মিট্টি কি খুশবু
মুঝে ইয়াদ আতি হ্যায়
মুঝে ইয়াদ আতি হ্যায়
কভি বেহলাতি হ্যায়
কভি তড়পাতি হ্যায়
মুঝে ইয়াদ আতি হ্যায়"।

মাটির টান, দেশের টান, ফেলে আসা সময়ের টান; এ'সবের মিশেলে বোধ হয় এমন সুরই তৈরি হয়। আর গানের কথায় এত সহজে কী ভাবে যে মায়ের আদর আর সোঁদা গন্ধ মিশিয়ে দেওয়া যায়; তা জাভেদবাবুই জানেন। পতাকা, পার্লামেন্ট আর সিলেবাসের ইতিহাস; এ'সবের বাইরে যে দেশটুকু; এ গান একান্তভাবে সেই দেশের।

প্রত্যেকটা মানুষ নিজের মধ্যে যত্ন করে বয়ে নিয়ে চলে একটা দেশ; 'আমি-রিপাবলিক'-
কারুর কাছে সংবিধান বলতে মায়ের সাতপুরোনো গানের খাতা, আবার কারুর কাছে আয়নার এক কোণে সাঁটা লাল টিপ।
কারুর পতাকা বলতে শিব্রাম, কারুর দেরাজে যত্নে রাখা ফেরত-না-দেওয়া রুমাল।
কারুর মুক্তিযুদ্ধ লোকাল ট্রেনের মান্থলিতে, কারুর ইতিহাস জমাট বেঁধে আছে অজস্র পোস্ট না করা চিঠিতে।

খোদ ভারতবর্ষের বুকের মধ্যে ধুকপুক করে চলেছে একশো কোটিরও বেশি দেশ। এ গান তেমন যে কোনো দেশের জাতীয় সঙ্গীত হয়ে উঠতে পারে। এই গানের মধ্যে আছে সেই অগুনতি দেশের জার্নাল। আর আছে সেই সমস্ত দেশের  কাছে ফিরতে চাওয়ার কাঙালপনা।

আমার দেশের চেহারার সঙ্গে আপনার দেশের চেহারায়
ও চরিত্রে বিস্তর ফারাক। যেমন মিনিবাসের জানালায় কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে যে মেয়েটি গা এলিয়ে বসে; তাঁর দেশে হয়ত সদ্য ভাঙা প্রেমের অনাবৃষ্টি। আবার প্রায় অনাহারে বেড়ে ওঠা যে কিশোর তেরো বছর বয়সে প্রথম পাউরুটি চুরি করেছে, তার দেশ জুড়ে তখন ফরাসী বিপ্লব মিইয়ে দেওয়া অভ্যুত্থান।

অনবরত নিজের দেশের স্মৃতি হাতড়ে চলা আর ক্রমশ  সে দেশ থেকে দূরে সরে যাওয়া; হারিয়ে যাওয়া; এই দোলাচল রয়েছে এ গানের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। 'দেশ'য়ের রেসিপি একেকজনের কাছে এক এক রকম আর সঞ্চিত স্মৃতির হাত ধরে নিজের সে দেশকে চিনে নিতে পারাটা যে কী প্রবল ভাবে কলম্বাসিও! দেশকে চিনে নিতে পারার নিবিড় ভালোবাসা মেশানো সুরটুকু সবার বুকেই ইতিউতি বাজে; এ গান সেই সুরকে বড় মোক্ষম ভাবে ধরেছে।

এ'খানে সুরে বাজিমাত নেই, জলপটি আছে।
এ গানের কথায় বিদ্যুৎ নেই, আছে মায়ের কাঁধ;  যে'খানে থুতনি রাখলে সমস্ত জমাট বাঁধা অভিমান গলে জল হতে বাধ্য।

No comments: