গতবছর শুরুর দিকে পড়েছিলাম সৌরভের বায়োগ্রাফি। এ'বছরটা শুরু হল ভিভিএস লক্ষ্মণের জীবনী দিয়ে। ব্যক্তিগতভাবে এই ধরনের বই পড়ার সময় খুব মারকাটারি ভাষায় ভেসে যাওয়ার আশা আমার থাকে না। বরং থাকে দু'টো স্পষ্ট চাহিদা;
এক, কেরিয়ারের টাইমলাইন গড়গড় করে আউড়ানো হবে না। বিশেষত লক্ষ্মণ, দ্রাবিড়, শচীন বা সৌরভদের ক্রিকেট জীবন সম্বন্ধে আমারা অনেকেই বেশ কিছুটা ওয়াকিবহাল; তাঁদের ব্যাপারে বিভিন্ন খবর, সাক্ষাৎকার ও প্রতিবেদনে ইন্টারনেটও রীতিমত সমৃদ্ধ। কাজেই আমাদের আগ্রহ না শোনা গল্পগুলোর প্রতি, তাঁদের সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলোর প্রতি। গসিপ নয়, কিন্তু তাঁর আশপাশের মানুষগুলো সম্বন্ধে উপলব্ধিগুলোও জরুরী। এ'ব্যাপারে নিজের বইটা ঠিক জমিয়ে তুলতে পারেননি শচীন (বা বোরিয়াবাবু)।
দুই, লেখার টোন হবে সৎ এবং নির্মেদ। অমুকের জীবনী পড়তে গিয়ে তমুকের কণ্ঠস্বর কানে এসে ঠেকলেই মুশকিল। ভালো কি মন্দ; সে প্রশ্নে না গিয়েই স্বীকার করে নিতে পারি যে সৌরভের বইটাতে এই সমস্যাটা প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে; ও বই সৌরভের চেয়ে অনেক বেশি গৌতমবাবুর। মন খুলে গল্প বলার ব্যাপারটাই সৌরভের বইতে তেমন ভাবে পাইনি; অথচ বিভিন্ন সাক্ষাৎকার দেখে আমার মনে হয়েছে সৌরভ বেশ জমিয়ে গল্প শোনাতে পারেন।
আর এই দু'টো ব্যাপারেই লক্ষ্মণদার বায়োগ্রাফি শচীন ও সৌরভের থেকে অনেক এগিয়ে। তাছাড়া চ্যাপেল এবং জন রাইট; এই দু'জনের কোচিং নিয়েও বিভিন্ন অ্যানেকডোট চমৎকার ভাবে তুলে ধরেছেন ভদ্রলোক।
এবং সবচেয়ে বড় কথা, ভালোমানুষদের ভালোমানুষির গল্প একটানা শুনতে শুনতে মনে হতে পারে সে ভালোমানুষি কিছুটা হলেও গায়ে পড়া এবং খানিকটা কালটিভেটেড। কিন্তু ভিভিএস সে'খানেই মন জয় করে নিতে পারেন; ভদ্রলোকের হিউমিলিটি অতুলনীয়। মানুষটা সত্যিই বড় ভালো (আমার মনে হল); প্রায় সঞ্জীবেস্ক সরল চরিত্র।
বাহবা প্রাপ্য আর কৌশিকের যিনি লক্ষ্মণের সঙ্গে লিখেছেন। বাহারি ভাষা আর পোড়খাওয়া-লিখিয়ে-মার্কা কেরামতি ব্যবহার করে লক্ষ্মণের সারল্য আর স্টাইল গুলিয়ে দেননি তিনি।
No comments:
Post a Comment