- কী ব্যাপার? আপনি জেল পর্যন্ত ছুটে এলেন আমার সঙ্গে দেখা করতে? এখন বোধ হয় কাটা ঘায়ে নুন ছড়াতে এসেছেন। তাই না বটুবাবু?
- না সামন্তবাবু।
- আমি আপনার সঙ্গে আর দেখা করতে চাইনা। আপনি আসুন।
- আমাদের আরো মিনিট পাঁচেক সময় আছে। থাকুন না, তারপর না হয়ে সেলে যাবেন। দু'টো কথা ছিল। দারোগাবাবুকে অনেক রিকুয়েস্ট করে আপনার সঙ্গে দেখা করতে হয়েছে।
- আপনি একজন অপদার্থ বটু গোয়েন্দা! আপনি একটা কাগুজে বাঘ। আপনাকে ভরসা করে যে আমি কী ভুল করেছি...।
- আই অ্যাম সরি মিস্টার সামন্ত।
- সরি? সরি বলে কী হবে? দেখুন, এই যে। আমার হাতে হাতকড়া। আমি নিজের ছেলের খুনের দায়ে জেলে এসেছি। নিজের অসহায় হুইলচেয়ারে আটক ছেলেটা চোখের সামনে মরে গেল, ট্রাকটা ওকে পিষে দিল...আর সবাই ভাবল আমিই...। ছিঃ! জেলে পচতে কষ্ট নেই, কিন্তু এ ভার নিয়ে বাঁচব কী করে বটুবাবু? আর আমার দুরাশা দেখুন। আমি আপনার ওপর ভরসা করেছিলাম।
- আমি জানি যারা আপনাকে হুইলচেয়ারকে ট্রাকের সামনে ঠেলতে দেখেছিল তাঁরা ভুল বলছিল। আমি জানি সামন্তবাবু।
- থামুন! আপনার জানায় আমার লাভটা কী হল? প্রমাণ করতে পারলেন না। অথচ আপনি নাকি ধন্বন্তরি! আপনি একটা ভণ্ড বাতেলাবাজ শুধু।
- আমি সত্যিই দুঃখিত সামন্তবাবু। ঘটনার তিনজন সাক্ষী বলেছে যে তাঁরা দেখেছে যে আপনি আপনার ছেলের হুইলচেয়ার চলন্ত ট্রাকের চাকার সামনে ঠেলে দিচ্ছেন। অথচ আপনি আদতে হুমড়ি খেয়ে পড়তে গিয়ে রিফ্লেক্সে বাবলুর হুইলচেয়ার ধরতে গিয়ে তা হাত ফস্কে তা ঠেলে দেন, দূর থেকে দেখে যাই মনে হোক; তা সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত।
- এ'টা আমি জানি। আর কেউ তা জানে না। তারা শুধু জানে আমি আমার পঙ্গু ছেলের দায়ভার থেকে মুক্তি পেতে চাওয়া একজন জানোয়ার। আপনার কাজ ছিল সে'টা ভুল প্রমাণ করার। সে'দিন আমি রাস্তার শ্যাওলায় পিছলে গেছিলাম...। বার বার বলেছি।
- অথচ আপনার সে'দিন পরা জুতোর সোলে শ্যাওলার সামান্য দাগটুকুও নেই।
- আর কতবার বলব আমি জানিনা তা কেন নেই...। তাই তো আমি আপনাকে এনগেজ করেছিলাম বটুবাবু! আমি ভুল করেছিলাম...আমি বুঝিনি যে আপনি পারবে না!
- এ'টুকু অন্তত বুঝেছি যে আপনার জুতোর তল থেকে শ্যাওলা পরিষ্কার করে সে জুতো ফের রাস্তায় ঘষে নেওয়া হয়েছিল। প্রমাণ এ'দিক ও'দিক করে আপনাকে ফাঁসানো হয়েছে।
- মানে? হোয়াট ডু ইউ মীন? এ'সব এখন কী বলছেন?
- আপনার জুতো থেকে শ্যাওলার দাগ তুলে ফেলে রাস্তার পিচে ফের ঘষে নিয়েছেন কেউ। দুর্ঘটনা ঘটে বিনোদ দত্ত স্ট্রিটে; সেখানে সদ্য সারাইয়ের কাজ হয়েছে, সে রাস্তার বিটুমেন এখনও সামান্য তাজা। দুর্ঘটনার পর সেই স্পট থেকেই আপনি সোজা অ্যাম্বুলেন্সে করে আপনার বাড়ির বাঁধানো উঠোনে এসে নামেন। ফেরার পর থেকে আর সে জুতো পরেননি। অথচ আপনার জুতো সোলে শ্যাওলার দাগ তো নেই বরং বিনোদ দত্ত স্ট্রিটের তাজা বিটুমেনের ওপর বহু পুরনো বিটুমেনের ছোঁয়া। অর্থাৎ কেউ সাবধানে আপনার জুতোর তল থেকে শ্যাওলা সাফ করে তা রাস্তায় ঘষে নিয়েছে, যাতে মনে হয় আপনি শ্যাওলায় পা ফেলেননি আদৌ।
- মাই গড বটুবাবু! এ'সব আপনি এখন কেন বলছেন? আপনি জানেন কে এমন করেছে? আমার এমন সর্বনাশ কে চাইতে পারে?
- সামন্তবাবু, বাবলুর রক্তাক্ত দেহটা আপনি তার মায়ের কোলে তুলে দিয়েছিলেন। বাবলুর রক্ত মাখা সে শাড়ি মিসেস সামন্ত যত্নে তুলে রেখেছেন। কিন্তু সে শাড়ি আপাতত কিছুদিন আমি নিজের হেপাজতে রেখেছি।
- আপনি কী পাগলের প্রলাপ বকছেন আমি কিছুই...।
- সে শাড়ির পরিষ্কার দিক দিয়েই দিয়েই মিসেস সামন্ত আপনার জুতোর সোল থেকে শ্যাওলা মুছেছেন। সে দাগ আমার নজরে পড়েছে, আর পুলিশ যাতে সে শাড়ি নিয়ে গবেষণা শুরু না করে তার জন্যই তা আমি সরিয়ে নিজের কাছে রেখেছি কিছুদিন। জুতোর তলার বিটুমেন আর ধুলো দিয়েও আমি প্রমাণ করে দিতে পারতাম মিসেস সামন্তর অপরাধ।
- মিনু! শেষ পর্যন্ত মিনু...।
- সরি সামন্তবাবু, মক্কেলের বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে না পারা আমার কাছে যন্ত্রণার। কিন্তু বাবলুকে আপনি ট্রাকের তলে ঠেলে না দিলেও খুন আপনি করেছেন। আপনার শাস্তিটা দরকারি ছিল, অন্তত মিসেস সামন্ত তা'তে খানিকটা শান্তি পাবেন।
- এ'সব কী? কেন? মিনু এমন কেন করতে গেল?
- আমেরিকায় বারো বছর কাটিয়ে ফিরেছিলেন আপনি মিস্টার সামন্ত। সে'খানেই আপনি ভিড়ে যান অ্যান্টি-ভ্যাক্স ব্রিগেডে। মিসেস সামন্তর কাকুতিমিনতি সত্ত্বেও আপনি বাবলুকে পোলিওর টীকা নিতে দেননি। বাবলুর তো সে'দিন হুইলচেয়ারে থাকারই কথা নয় মিস্টার সামন্ত। তাকে ঠেলে ট্রাকের তলে আপনি পাঠাননি, কিন্তু বাবলুর খুনের দায় যে আপনাকে নিতেই হবে মিস্টার সামন্ত। আই অ্যাম সরি, কিন্তু এ'টা আমায় করতেই হত।
- বটুবাবু...প্লীজ...।
- আমি আজ আসি।
No comments:
Post a Comment