ঘোর কাটতে আধঘণ্টা মত লাগল। তখনও অবশ্য চারপাশে চাপ চাপ অন্ধকার দেখছি। যদিও এখন বেলা দশটা, রোদ ঝলমলে দিন, তবু আমার খোলা জানালা ছাপিয়েও এই অন্ধকার। মাথার মধ্যে ঝিমঝিম ভাব, গা হাত পায়ে টনটন ব্যথা।
খানিকক্ষণ পর চোখের অন্ধকার কমে আসতে টের পেলাম আমি মেঝেতে উপুড় হয়ে শুয়ে। মুখে বিশ্রী তেতো স্বাদ; রঙের। ওরা রীতিমত অত্যাচার করে গেছে যা মনে হচ্ছে। কপালে চোট লেগেছে; তবে রক্ত চুঁইয়ে পড়ছে না রঙ তা বোঝার উপায় নেই। চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম ঘরের সমস্ত আসবাব ওলটপালট হয়ে পড়ে আছে। মেঝে দেওয়াল সমস্ত রঙে কাদায় লেপটে আছে। বিশল্যকরণী মেডিকেল স্টোর থেকে পাওয়া বাংলা ক্যালেন্ডারের রবীন্দ্রনাথ ছিঁড়েখুঁড়ে মাটিতে লুটোপুটি। কাচের ফুলদানিটা চুরমার হয়ে মেঝেতে ছড়িয়ে; পায়ে কাচ ইতিমধ্যেই না ঢুকে থাকলে বাঁচোয়া। কোনোরকমে উঠতে গিয়ে দেখলাম ডান হাঁটুতে প্রচণ্ড ব্যথা; নির্ঘাত খুব বিশ্রীভাবে গুঁতো লেগেছে। আর লাগবে নাই বা কেন?
যে'ভাবে জনা দশেক পেল্লায় আধগুণ্ডা মানুষজন ঘরের মধ্যে জোর করে ঢুকে পড়লে রঙ মাখানোর অছিলায়। আজকের দিনে নাকি এমনটা হওয়াটাই স্বাভাবিক ; এ'টাই রীতি। কোনো মানে হয়? যাদের আমি আদৌ ভালো করে চিনি না, যাদের সঙ্গে গোটা বছর কোনো যোগাযোগ থাকে না; তারা ঘরে ঢুকে রঙ মাখানোর নামে অত্যাচার করবে আর এ'টাই নাকি রীতি। যত্তসব! ওদের মধ্যে যে সবচেয়ে লম্বা চওড়া আর বিটকেল; সে আবার ঠণ্ডই খাওয়ানোর নাম করে বিশ্রী একটা কী জোর করে গিলিয়ে গেল। আমি নিশ্চিত সে'টা চোলাই কারণ গলা বেয়ে বমি উঠে আসছে মনে হচ্ছে। মিনিট কুড়ির চেষ্টায় কোনো রকমে উঠে দাঁড়ানোর পর টের পেলাম গায়ের ফতুয়াটা ছিঁড়ে ফালাফালা অবস্থা।
কান্না পাচ্ছিল খুব। এ'টা তো রীতিমত অন্যায়, অথচ আমার কিছুই করার নেই। টেনেহিঁচড়ে কোনোক্রমে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম; নিজেকে চেনা দায়। ক্যাটকেটে সবুজ, কটমটে লাল, কুটকুটে গেরুয়া আর আরো হাজার রকমের বিশ্রী বাঁদুরে রঙে আমার চেহারা ভূতের মত হয়ে গেছে। কপালে আর ঠোঁটে চোট; বাঁদুরে রঙের ওপর তাজা রক্তের স্পষ্ট দাগ।
বুকের ভিতরটা টনটন করে উঠল। জোর করে রঙ মাখাতে আসা লোকগুলোর বিশ্রী হুঙ্কার আমার মাথার মধ্যে বারবার ঘুরপাক খাচ্ছিল;
"গণতন্ত্রবাবু, আজকের দিনে অমন একটু হয়। মাইন্ড করতে নেই। এ দিনটায় অন্তত আমরা পার্টিরা একটু ফুর্তি করব না আপনার সঙ্গে? তা কি হয়? এই একটাই তো দিন। বুরা না মানো গণতন্ত্রবাবু, ইলেকশন হ্যায়"।
No comments:
Post a Comment