- প্রাইম মিনিস্টার।
- আরে মেকশফ, ভিতরে এসো। তোমারই অপেক্ষায় ছিলাম। তা, কী হে? হাতে কোনও ফাইলপত্তর দেখছি না, অফিসটফিস তুলে দিয়েছ নাকি?
- আজকের দিনটা অন্তত...।
- মেকশফ। আমার শেষ দিন হতে পারে, কিন্তু তোমাদের পৃথিবীটা তো আর থেমে থাকবে না। কাজ না করলে চলবে কেন?
- আজ বড় ক্লান্ত লাগছে...।
- রং ডে টু আস্ক ফর আ পেপ্ টক মাই বয়। তবে পেপ টকের চেয় কফিতে কাজ দেয় বেশি।
- সে'টা থাক। অনেক জরুরী কাজ পড়ে রয়েছে। বেশ কিছু ডেলিগেশন এসেছে...।
- একটা চমৎকার ব্যাপার তোমায় জানিয়ে রাখি। আজ এই নিয়ে বত্রিশ বার হ্যারি পটার শেষ করলাম। গতকাল সন্ধে থেকেই সমস্ত কাজ বন্ধ করে পড়েছি; শেষ করতেই হত।
- থার্টি ট্যু। ইনক্রেডিবল।
- আমার বাবা চুয়াল্লিশ বার পড়েছিলেন।
- আমার তো এখনও একবারও...।
- কাজ কাজ করেই তোমরা গেলে।
- মনখারাপ প্রাইমমিনিস্টার?
- ঠিক মনখারাপ নয়। বরং মনকেমন বলতে পারো। বৃষ্টি শব্দে আর কোনোদিন ঘুম ভাঙবে না, মায়ের কথা মনে পড়ে অকারণ কান্না পাবে না, নতুন গল্পের বইয়ের পাতায় আঙুল বোলানোর আরাম আর টের পাব না, খিদে পেটে গরম ভাতের গন্ধ আর নাকে এসে ঠেকবে না...।
- মনকেমন। মনখারাপ। আলাদা, তাই না? প্রাইমমিনিস্টার?
- আলবাত। টেলিস্কোপ আর মাইক্রোস্কোপের মত আলাদা।
- উই উইল মিস ইউ।
- পার্লামেন্টের বাগানের অর্ধেক গাছ আমার হাতে লাগানো। ও'গুলোকে দেখো।
- গাছ বুঝি না। হ্যারি পটারকে চিনিনা।
- মরেই আছো দেখছি। শুধু ইনজেকশনটাই দেওয়া বাকি আছে।
- হেহ্।
- আই উইল মিস ইউ টু। তোমাদের সবাইকে। তবে তোমাদের চেয়েও বেশি মিস করব আমার ওই গাছগুলোকে...। আমার কথা ওরা যতটা মন দিয়ে শোনে, ততটা মন দিয়ে পার্লামেন্টের স্পীকারও শোনেন না।
- আজ আমি আসি।
- এসো...।
- প্রাইম মিনিস্টার...।
- কিছু বলবে?
- আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না ব্যাপারটা। এই ভাবে আপনার চলে যাওয়াটা...।
- নিয়ম। নিয়মের হেরফের আমি নিজে কোনোদিন বরদাস্ত করিনি মেকশফ। আজকেও হেরফের হওয়ার উপায় নেই।
- কিন্তু আপনার বেঁচে থাকাটা অত্যন্ত জরুরী...অন্তত গোটা পৃথিবীর স্বার্থে...।
- বুগাফৃন পার্লামেন্টের বাগানের গাছগুলোর পরিচর্যা করে। ওর জীবন আমার চেয়ে কোনও অংশে কম জরুরী নয়। এই তুলনাগুলো আমরা বহু পিছনে ফেলে এসেছি, আর সেগুলোকে তুলে এনো না।
- কিন্তু...।
- পৃথিবীর জনসংখ্যা আয়ত্তে আনার কোনও পথই সহজ নয়। কোনোদিনই ছিল না। প্রত্যেকের পছন্দসই পথ খুঁজে বের করতে হলে গোটা দুনিয়াই লোপাট হয়ে যেত। আমাদের পরম ভাগ্য যে সময় থাকতে পৃথিবীর কিছু উর্বরতম মস্তিষ্ক পৃথিবীর ভয়াবহ ভবিষ্যৎ আঁচ করতে পেরেছিল। সবচেয়ে বড় কথা অঙ্ক কষে তারা সমাধানটুকুও বাতলে দিতে পেরেছিল। আর ভাগ্যিস সেই সময় পৃথিবীর সমস্ত রাষ্ট্রনেতা গোপনে হলেও সেই সমাধান মেনে নিয়েছিলেন।
- আপনি জানেন যে অনেকেই সে'টাকে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক বিশ্বাসঘাতকতা বলে মনে করে।
- উপায় ছিল না মেকশফ! ইতিহাস দু'হাজার উনিশকে বিশ্বাসঘাতকতার বছর বলে মনে রাখতে পারে...কিন্তু আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি সেই বিশ্বাসঘাতকতাটুকু না থাকলে আজ আমি তুমি বা আমার বাগানের গাছগুলো; কারুরই থাকা হত না।
- গোটা পৃথিবীর সমস্ত দেশের গভর্নমেন্ট গোপন সম্মতিতে বাজারে ছাড়ল এমন এক অ্যাপ্লিকেশন যা মানুষের বৃদ্ধ বয়সের উৎপাদনশীলতা আর দক্ষতা যাচাই করতে পারবে। আর সে পরীক্ষার মাধ্যমে ঠিক হবে মানুষের আয়ু। উদ্দেশ্য যাই হোক, এ'টা মেনে নেওয়া উচিৎ?
- আজ থেকে তিরিশ বছর আগে একটা অ্যালগোরিদম বলে দিতে পেরেছিল কোন বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কার উৎপাদনশীলতা কেমন ভাবে কমবে। আর প্রত্যেকটা দেশের সরকার এ'টা স্বীকার করে নিয়েছিল যে দু'তিন দশকের মধ্যেই এ গ্রহের অবস্থা এমন দাঁড়াবে যে উৎপাদনশীলতার বেঞ্চমার্কে পাশ করতে না পারা সমস্ত ষাটোর্ধ মানুষকে সরে যেতে হবেই। জমির জন্য, জলের জন্য, খাদ্যের জন্য; মানবসভ্যতার বেঁচে থাকার জন্য - এ ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। মনে রেখো মেকশফ; লজিকের সামনে ইমোশন পরাজিত না হলে সর্বনাশ অবশ্যম্ভাবী।
- শুধু উৎপাদনশীলতার বিচারেই কি হল সমস্ত কিছু? বহু মানুষ সেই অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করল, তার মধ্যে যাদের ষাটোর্ধ উৎপাদনশীলতা বেঞ্চমার্কের উপরে তারা বেঁচে থাকার লাইসেন্স পেলো সত্তর পর্যন্ত। বাকিদের ষাটেই ইতি। আর যারা সেই অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারই করল না? বা এড়িয়ে গেছিল ? সেই দু'হাজার উনিশে? তাঁদের তো পরীক্ষা নেওয়াই হল না। কিন্তু একটা চোরাগোপ্তা পলিটিকাল ডিসিশন ঠিক করে নিলো যে বিনা বিচারে সেই মানুষগুলোকে নিকেশ হতে হবে ষাট পেরোলেই। এ'টা লটারি নয়? অবিচার নয়?
- নো সিস্টেম ইস পার্ফেক্ট। আর সেই ইম্পার্ফেকশনটাকে অবিচার বলাটা অনুচিত। মানব সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখাটা জরুরী ছিল মেকশফ। ভুলচুক হতই, কিন্তু নিখুঁত হওয়ার আশায় গ্যালারিতে বসে নিজেদেরকে ধ্বংস হতে দেখাটা খুব একটা যুক্তিযুক্ত হত না।
- আচ্ছা মিস্টার প্রাইম মিনিস্টার, দু'হাজার উনিশে আপনি তো দিব্যি অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করতেন। তা, আপনি সেই প্রক্সি অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করেননি কেন?
- তখন বয়স কম, হুজুগ যে ছিল না তা নয়। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে তখন হাজার হাজার জোয়ান মুখের বুড়িয়ে যাওয়ার ছবি। কিন্তু সে বয়সে যা হয়; হুজুগে গা না ভাসানোটাকেও এক ধরনের হুজুগ বলে মন হত। তাছাড়া...সেই ফেসঅ্যাপ অ্যাপ্লিকেশনটা যে সামান্য গোলমেলে...সে সন্দেহটা তখনই মনের মধ্যে দানা বেঁধেছিল। নিজের বুড়ো বয়সের ছবি দেখার আগ্রহের বশে সেই অ্যাপে নিজের জোয়ান মুখ স্ক্যান করালে যে আদতে বুড়ো হওয়ার একটা সুযোগ পাওয়া গেলেও যেতে পারে; সে'টা কিছুতেই আঁচ করতে পারিনি। কিছুতেই না।
(ছবিঃ শ্বেতা। বারোট, হিমাচল)
No comments:
Post a Comment