দুম-দড়াম করে পড়ে গেলে চট করে সিরিজটা খতম হয়ে যাবে। কাজেই রয়েসয়ে পড়াটাই যুক্তিযুক্ত। তবু তর সয় না।
উজান বলেছে টিনটিনের ঘোরা জায়গাগুলোর একটা ফর্দ তৈরি করতে, দু'একটা জায়গায় যদি একসঙ্গে যাওয়াটাওয়া যায়। 'সিগারস অফ ফেরো' পড়ে ঠাহর হল এই প্ল্যানে একটা সমস্যা রয়েছে বটে; টিনটিনের অ্যাডভেঞ্চারগুলোয় রয়েছে প্রচুর কাল্পনিক সব জায়গার উল্লেখ। এই বইতে যেমন রয়েছে আরবের আবুদিন আর ভারতের সেথ্রু-জামজা রেলপথ বা গাইপাজামা নামের প্রিন্সলি-স্টেটের কথা।
তবে আদত শহরটহরের কথাও আছে; টিনটিন ইন আমেরিকায় শিকাগো বা এই বইতে পোর্ট সৈয়দ, কায়রো ইত্যাদি। সবচেয়ে বড় কথা হল; এই বইতে রয়েছে কলার খোসা ছড়ানো ভারতীয় রেল স্টেশনের ছবি; অমন 'রিয়েল', এবং গভীরভাবে 'নন-ফিকশনাল' জায়গার অভাব আমাদের দেশে আজও নেই। প্ল্যাটফর্মে কলার খোসা টিনটিন ছড়িয়েছিল দুশমনদের কাত করতে, আমরা ছড়াই যাতে ডাস্টবিনগুলো অকারণে ময়লা না হয়; ফারাক এ'টুকুই।
টিনটিনের ক্যামিও-চরিত্রগুলোর মধ্যে আমার অন্যতম প্রিয় মানুষ; সেনর অলিভেইরা ডা ফিগুয়েউরা, এই বইতেই তাঁর প্রথম আত্মপ্রকাশ। 'আমাজন গ্রেট ইন্ডিয়ান সেল' তাঁর কাছে হপ্তায় দু'দিন টিউশনি পড়তে যায় আর 'ফ্লিপকার্ট বিগ বিলিয়ন ডে' তাঁর সামনে সহজ অঙ্ক ভুল করার জন্য নিয়মিত ওঠ-বস করে। প্রথম সাক্ষাতেই আড়াই গুদাম মাল টিনটিনের কাঁধে চাপিয়ে দিলেন ভদ্রলোক। শুধু তাই নয়, টিনটিনও নিশ্চিন্ত হলে যে 'ভাগ্যিস এ'সব বাতেলায় চমকে গিয়ে বেশি কিছু কিনে ফেলিনি'; অথচ টিনটিনের শপিং কার্ট তখন অজস্র অদরকারী জিনিসপত্রে উপচে পড়ছে। আমাজন ফ্লিপকার্ট গত একমাসের মধ্যে তিনটে 'সেল' অফার করেছে, আমিও নিশ্চিত যে আমি এদের বাতেলায় চমকে গিয়ে বেশি কিছু কিনে ফেলিনি; ট্র্যু পোয়েট্রি।
পুনশ্চঃ
আজকাল মুজতবার পঞ্চতন্ত্র মাঝেমধ্যে র্যান্ডমলি পড়ে মন ফুরফুরে রাখছি। সে'খানেই রয়েছে; পোর্ট সৈয়দে জাহাজ থামলে কী ভাবে টুক করে কায়োরর কাছের পিরামিড দেখে ফের সেই জাহাজেই ফেরত আসা যায়। অ্যাডভেঞ্চারের টানে টিনটিনও জাহাজ থেকে নেমে ছুটে গেছিল কায়রোয় কাছাকাছি কিছু পিরামিডের আশেপাশে। মুজতবা সাহেব অবশ্য পিরামিড দেখে আপ্লুত হওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। টু কোট দ্য গ্রেট ম্যানঃ "এক গাদা পাথর দেখায় যে কী তত্ত্ব তা আমি পিরামিড দেখার আগে এবং পরে কোনো অবস্থাতেই ঠিক ঠাহর করে উঠতে পারিনি”।
No comments:
Post a Comment