- হরিহর সামন্ত।
- হরিহর। ও লেখেন না এ?
- আজ্ঞে?
- নামের ইংরেজি বানানে, দুটোই ও না দুটোই এ না কম্বিনেশন?
- মার্কশিটে দুটোই এ। সামন্ততেও দুটোই এ।
- বয়স?
- একশো বত্রিশ।
- একশো বত্রিশ? অনলি?
- অনলি বলবেন না স্যর। মনের দিক থেকে কিন্তু আমি জেনুইনলি বুড়িয়ে গেছি। বিশ্বাস করুন।
- দেখুন, আপনার মৃত্যুর আবেদন নাকচ হবেই। গোটা শহরে মাত্র দুটো সরকারি ডেথ মেশিন। অন্তত আড়াই হাজার মানুষ ওয়েটলিস্টে আছেন। আর যারা ওয়েটলিস্টে আছেন তাঁদের প্রত্যেকের বয়সই অন্তত দেড়শো। কাজেরই আপনার আবেদন…নাহ, চান্সই নেই।
- অমন বলবেন না স্যর। আমার বড় ইচ্ছে আমি মারা যাব। তাছাড়া একশো বত্রিশ নেহাত কম কিসে। আমার পিসতুতো দাদা একশো চল্লিশে ভলেন্টারি রিটায়ারমেন্টের জন্য আবেদন করেছিল, দিব্যি মঞ্জুর হয়ে গেছিল। তাছাড়া ভাবুন, এককালে তো মানুষ আশিতেই বুড়িয়ে যেত। যেত না কি?
- ও মা। সে তো কয়েকশো বছর আগে মানুষের জ্বরও হত। ক্যান্সারট্যান্সার গোছের কিছু হলেই দিব্যি টক্ করে মরে যেত। সেসময় তো দেশে দেশে ইলেকশনও হত শুনেছি। আর তার কিছুদিন আগে মানুষ গুহার দেওয়ালে ছবি আঁকত। কবে কোন মান্ধাতা আমলে কী হত, তাই দিয়ে কি এখনকার হিসেব চলে হরিহরবাবু? সেসময় এ যুগের মত জন্মের পরেই ইম্মর্টালিটি ভ্যাক্সিনেশন ছিল? সরকারি কন্ট্রোল রুম থেকে বার্থ কন্ট্রোল করা যেত সে সময়? সে সময় পপুলেশন কন্ট্রোল একটা বিশাল হ্যাপা ছিল, টুকটাক মানুষ মরলেই বরং সুবিধে ছিল। কিন্তু এখন পপুলেশন মেন্টেন করাটাই চ্যালেঞ্জ। অমন কচি বয়সে যদি দুমদাম মানুষে মরার আবদার করে, সরকারকে রোবট প্রডাকশন বাড়াতে হবে কাজকর্ম চালাতে। সে তো আর এক ঝামেলা।
- বুঝি বুঝি। রোবটের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তাতে মানুষের হাত থেকে কোনদিন পার্লামেন্টটাই বেরিয়ে যাবে।
- যেতেই পারে। অথচ এত কিছু বুঝে আপনি মরার আবেদন করতে এসেছেন? ভারী স্বার্থপর তো মশাই আপনি।
- বিশ্বাস করুন স্যর, আমার বড় সাধ মারা যাওয়ার। আমার একদম বাঁচতে গা করে না। প্লীজ স্যর, আবেদনটা অন্তত করতে দিন।
- মাফ করবেন, অকারণ আবেদন লিখিয়ে নেওয়ার কোনও মানেই হয়না। সার্ভারে আপনার মেডিকাল রিপোর্ট যা দেখছি তাতে আপনাকে দিয়ে অনায়াসে আরও অন্তত আশি বছর কাজ করানো যেতে পারে। এই লেবার-লস সরকার মেনে নেবে না।
- কোনও উপায় কি নেই?
- উপায়?
- উপায়। নেই কি?
- আপনি আন্ডার দ্য টেবিল কিছু ছাড়তে পারলে…।
- সে চিন্তা করবেন না স্যর। আপনি শুধু আমায় উপায় বাতলে দিন…।
আমায় হাফ কিলো ইলিশ কিনে দিতে হবে।
- হাফ কিলো?
- আচ্ছা, চারশো গ্রাম চলবে।
- সে তো খান তিনেক প্রমাণ সাইজের হীরে কেনার সমান।
- তবে থাকুন আরও আড়াইশো বছর বেঁচে। খামোখা আমায় জ্বালানো কেন।
- চটবেন না প্লীজ। চটবেন না। ওই চারশো গ্রাম ইলিশের কথাটাই ফাইনাল রইল। এবার উপায়টা যদি দয়া করে বাতলে দেন…।
- বেশ। হরিহরবাবু, মৃত্যুর আবেদন মঞ্জুর করার একটাই উপায়। আপনার নিজের মনকে বুড়িয়ে নিতে হবে। এমন গাঁট্টাগোঁট্টা জোয়ান মন নিয়ে সরকারবাহাদুর আপনাকে মরতে দেবে না।
- কিন্তু স্যর, মনকে বুড়োনোর উপায়টা কী?
- উপায় আমার কাছে আছে। ইলিশটা নিয়ে আসুন, আমি আপনাকে উপায় হাতে ধরিয়ে দেব’খন।
- আমি এখুনি নিয়ে আসছি স্যর। এখুনি…কিন্তু…জিনিসটা কী?
- দশঘণ্টার ভিডিও। সাড়ে তিনশো বছরের গোপন আর্কাইভ থেকে চুরি করা। মৃত্যুকামীদের ব্ল্যাকে বিক্রি করে আমি একটু ফুর্তি করি। এই আর কী।
- কীসের ভিডিও?
- একুশ শতকে নিউজ চ্যানেল বলে একটা ব্যাপার ছিল জানেন তো? ইতিহাসের সে গা কাঁপানো চ্যাপ্টারটা ভুলে যাননি আশা করি। সেইসব নিউজ চ্যানেলের বিভিন্ন পলিটিকাল ডিবেটের রেকর্ডিং; দশ ঘণ্টা শুনলেই মনের বয়স ডবল হয়ে যাবেই। গ্যারেন্টি।
- মার দিয়া কেল্লা।
- এবার চটপট ইলিশ নিয়ে আসুন দেখি হরিহরবাবু। দেখবেন, যা দিনকাল পড়েছে, কোল্ডস্টোরেজের মাল যেন না গছিয়ে দেয়।
1 comment:
দওওওশ ঘন্টা!? তারচে রোদ্দুর রায়ের গান ঘন্টা খানেক শুনিয়ে দিলেই সেম রেজাল্ট।
Post a Comment