Thursday, November 14, 2019

শানুবাবু


দিন কয়েক আগে শানুবাবুর জন্মদিন গেল। স্বাভাবিক ভাবেই তা নিয়ে বিশেষ হইচই নেই; অবশ্য এই ভালো। পশম-নরম স্মৃতি নিয়ে বেশি চিৎকারচ্যাঁচামেচি টানাহ্যাঁচড়া না হওয়াই ভালো।

নব্বুইয়ের হাওয়ায় বড় হয়েছি। বহুদিন পর্যন্ত ধারনা ছিল যে প্রেমের প্রকাশ শানুবাবুর কণ্ঠ ছুঁয়েই হওয়া উচিৎ; বীরেন ভদ্র ছুঁয়ে যেমন আগমনী। রবীন্দ্রনাথ, সুমন, হেমন্ত নিয়ে যতই "আহা-উঁহু" করে জ্যেঠু-অ্যাপ্রুভড পথে রিফাইনমেন্টের দিকে ঘেঁষার চেষ্টা করি, স্কুলের সেই বান্ধবী একবার ফিরে তাকালে বুকের মধ্যে ঢিপঢিপের সঙ্গে বেজে উঠত কুমার শানুর মন্ত্রপাঠ; "ধীরে ধীরে পেয়ার কো বড়ানা হ্যায়, হদ সে গুজর যা না হ্যায়" ফিলিপ্সের স্টিরিও ক্যাসেট প্লেয়ারটা পূর্ণতা লাভ করত শানুদার গমগমে কণ্ঠে; " সাঁওলি সলোনি তেরি ঝিলসি আঁখে, উনমে না জানে কঁহা খো গয়া হ্যায় মেরা দিল"

নিজের প্রেমট্রেমগুলো তেমন দাঁড়াতে পারেনি কোনোদিন, কাজেই ট্র‍্যাজেডি ব্যাপারটা অনুভব করতে হয়েছে বন্ধুদের প্রেম ভাঙার দুঃখ ধার নিয়ে। প্রাণের বন্ধুর সাত মাসের প্রেম যখন আড়াই দিনের ঝগড়ায় ভেসে গেল, তখন সেই বন্ধুর দুঃখ ভাগ করে নিতে তার সঙ্গে আমিও ঝাঁপ দিয়েছিলাম অজস্র শিঙাড়া আর 'অ্যায় কাশ কে হম হোশ মে অব আনে না পায়ে' সুরে। সেই সন্ধের 'নগমে তেরে পেয়ারকে' মনে পড়লে আজও মনে হয় ভেসে যাব। আজও প্লেলিস্টের 'চিকেন স্যুপ ফর সোল' সেকশনটি জুড়ে রয়েছে স্মৃতি শানু৷ প্রেম নিয়ে লিখতে গিয়ে যতই পূর্ণেন্দু পত্রী বা সঞ্জীব কোট করি না কেন; প্রেম প্রসঙ্গে মনে মনে আজও আউড়ে চলি "রুঠ না যানা তুম সে কঁহু তো, ম্যায় ইন আঁখো নে যো রঁহু তো"
শানু চিরঅমলিন থাকবেন আরও একটা গভীর ভালোবাসার জায়গায়। এখনও পাড়ার সেলুনে যখন নবরত্ন শীতল স্পর্শে মাথা-মালিশ চলে, তখন কানে যদি কুমার শানুর 'তু মিলে দিল খিলে' বা 'মেরা চাঁদ মুঝে আয়া হ্যায় নজর' ভেসে না আসে; তা'হলে সমস্তটাকেই মনে হয় মাটি।

এই প্রেমে ভেসে যাওয়ার অস্বস্তিকর ভালোলাগাটুকু যদ্দিন, শানু-বোধও তদ্দিন।

(ছবিঃ @FilmHistoryPic ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে সংগৃহীত)

No comments: