এগরোলের আস্বাদনের প্রসেস নিতান্ত সরল নয়; চিবিয়ে খাওয়াটুকু তো সে প্রসেসের আইসবার্গের মুণ্ডু মাত্র। খামচে ধরে ইয়াব্বড় কামড় বসালাম; তেমন মনোভাব নিয়ে হীরক রাজের মূর্তি বানানো চলে, চরণদাসের গান বাঁধা যায়না।
এগরোলের স্বাদ স্পর্শ করতে হলে এগরোল দাদার চাটুর ও'পাশে ভীরু প্রেমিকের মত দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। সদ্য বেলে নেওয়া পরোটা যখন চাটুর তেলে বসবে তখন এক মৃদু আরামদায়ক কাঁপুনি ঝর্ণার জলের মত শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে আসবে। সেই কাঁপুনির সুরকে চিনতে না পারলে এগরোল মিথ্যে। চাটুর তেলের ওপর সে পরোটা নেচে বেড়াবে আর তার বুকে থইথই করবে ডিম। সেই পরোটা ভাজার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে সে ভীরু প্রেমিক কখন যে অঙ্কভুলের ভয় কাটিয়ে শ্যামল মিত্রের সুর আঁকড়ে ধরবে; তা সে নিজেও টের পাবে না।
সম্বিৎ ফিরবে চাটু থেকে পরোটা নামানোর 'থ্যাপ' শব্দে। আরামদায়ক কাঁপুনি কেটে গিয়ে তখন বুকের মধ্যে মৃদু আনচান; মনে ঘোরাঘুরি করবে ওল্ড মঙ্কের সুবাস আর ময়দানে শীতের বিকেল মেশানো বেপরোয়া স্নেহ। পেঁয়াজকুচি, নুন, লেবু মিলেমিশে পূর্ণ হবে আয়োজন; সুমনের সস্নেহ ফিসফিস মনের ছাতে মাদুর পেতে বলবে "হে আমার আগুন, তুমি এ'বার ওঠো জ্বলে"।
এগরোল আস্বাদনের মূলে তো এই সাধনাটুকুই। চিবিয়ে খাওয়ার ব্যাপারটুকু তো স্রেফ নজরুলের গানের খাতা মলাট দেওয়া; তার বেশি কিছু নয়।
No comments:
Post a Comment