- এই যে মিস্টার মুকর্জি।
- আরে আপনি...।
- অবাক হচ্ছেন? বিদেয় করতে পারলে বাঁচেন?
- ও মা। না না। বসুন। ইয়ে, চা খাবেন?
- চিনি ছাড়া।
- শ্যিওর। তবে ফ্লাস্কের কিন্তু।
- চলবে।
- এই যে ।
- থ্যাঙ্ক ইউ মিস্টার মুকর্জি।
- কেমন লাগছে?
- চলে যেতে কেমন লাগছে?
- রিফ্রেজ করি। এতদিন ছিলেন, কেমন লাগল।
- ইউ হ্যাভ লেট মি ডাউন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে।
- সরি।
- কিন্তু সেগুলোই শেষ কথা নয় মুকর্জি। ইউ হ্যাভ অলসো সারপ্রাইজড মি অ্যাট টাইমস। ইন আ গুড ওয়ে।
- তাহলে আপনাকে আগাগোড়া হতাশ করিনি বলছেন?
- আমায় আপনি হতাশ করবেন মিস্টার মুকর্জি? ছাপোষা চাকুরে, ইন্টারেস্ট রেট কমে যাওয়ায় কেঁপে ওঠা মানুষ আমায় হতাশ করবে? যাক গে, আমার কথা বাদ দিন। আমি আজ আছি কাল নেই। ফর আ চেঞ্জ আপনার কথা শুনি। কেমন দেখলেন? আমায়?
- ইউ হ্যাভ লেট মি ডাউন । কিছু কিছু ক্ষেত্রে।
- হেহ হেহ।
- তবে আগাগোড়াই হতাশ করেননি।
- আমার আবার ওই হতাশাগুলো জানার দিকেই বেশি ইন্টারেস্ট। কারণ ওতেই গল্প জমে ভালো।
- বটে?
- ডেফিনিটলি। কই বলুন, হতাশাগুলোর ব্যাপারে ঝেড়ে কাশুন।
- কত কিছু পড়া হল না।
- এসব ইনিয়েবিনিয়ে কথা বলে আর কদ্দিন চালাবেন মিস্টার মুকর্জি। এ'সব পলিটিকাল উত্তর ট্যুইটারে মানায়। ওসব আদত হতাশা নয়।
- আমার হতাশা আপনি সঠিক বুঝবেন?
- পাঁয়তারাগুলো বুঝি। যথেষ্ট বই পড়া হল না, জিমে যাওয়া হল না, নতুন ভাষা শেখা হল না, নতুন কোথাও ঘুরে আসা হল না...। ধুর মশাই। ওসব হল ফেসবুকের হতাশা।
- ইউ ক্যান বি রুড।
- দ্যাট ইজ মাই জব মিস্টার মুকর্জি।
- বেশ...ইন দ্যাট কেস...আপনিই বলুন না; আমি আপনাকে ঠিক কী কী ভাবে আপনাকে হতাশ করেছি।
- কোদালকে কোদাল বললে কোদাল মালিকের গায়ে ফোস্কা পড়ে মুকর্জি।
- বলেই ফেলুন। কতক্ষণ আর আছেন বলুন। তার আগে আসুন, আর এক কাপ চা।
- থ্যাঙ্ক ইউ।
- আমি আপনাক ঠিক কী কী ভাবে হতাশ করেছি?
- আজেবাজে টার্গেট নিয়েই পড়ে রইলেন মুকর্জি। ভালোবাসার কথা প্রাণ খুলে বললেন না, অভিমানগুলো স্পষ্ট ভাবে জানালেন না, ভুলগুলো স্বীকার করার সৎসাহস জড়ো করতে পারলেন না। মাঝেমধ্যেই ভাবেন নিজের ইগোর মধ্যে নিজেকে বেঁধে রাখবেন না। কিন্তু সেই ভাবনাতেই আটকে থাকলেন। আরও কতগুলো দিন কেটে গেল। ণ্ঠে করেননি। না না, গা বাঁচিয়ে গর্তে লুকিয়েছিলেন তা বলব না। নিজেকে পলিটিকল সান্ত্বনা দিতে কসুর করেননি। কিন্তু ভয়গুলোকে আগলে রেখেছে। আপ্রাণ। ভবিষ্যতের ভয়, সমাজের ভয়, চাকরীর ভয়...। সে'সব ভয়ের ফর্দ করতে বসলে আমার সময় ফুরিয়ে যাবে মিস্টার মুকর্জি। কিন্তু মোদ্দা কথা হল, নিয়মিত হেঁটে সামান্য মেদ ঝরানো বা এসআইপিতে দু'পয়সা রেখে নিজের ভালোমন্দ মেপে পার পাবেন ভেবেছেন? লৌকিকতা, সামাজিকতা আর আখেরের ভয় আপনার থেকে প্রতিবাদের ভাষা কেড়ে নিয়েছে মিস্টার মুকর্জি, এর চেয়ে বড় হতাশা আর কী হবে? সেই হতাশাটুকু তাও না হয় পাশ কাটিয়ে যেতে পারতাম...প্রতিবাদ ইজ নট রামশ্যামযদুমদু'জ কাপ অফ টী। আপনাকে নিয়ে আমার গ্রেটেস্ট ডিস্যাপয়েন্ট কোথায় জানেন মিস্টার মুকর্জি?
- বলে ফেলুন। রোডরোলারটা চালিয়েই দিন।
- আজেবাজে টার্গেট নিয়েই পড়ে রইলেন মুকর্জি। ভালোবাসার কথা প্রাণ খুলে বললেন না, অভিমানগুলো স্পষ্ট ভাবে জানালেন না, ভুলগুলো স্বীকার করার সৎসাহস জড়ো করতে পারলেন না। মাঝেমধ্যেই ভাবেন, কিন্তু শেষে ওই নিজের ইগোর মধ্যে নিজেকে বেঁধে রাখেন। নিজের ভাবনাতেই আটকে থাকলেন মুকর্জি। আরও কতগুলো দিন কেটে গেল, নষ্ট হল।
- বটে।
- এতশত হতাশা মিস্টার মুকর্জি, অথচ আপনার যত চিন্তা যথেষ্ট বই পড়া হল না বলে।
- একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
- শুট।
- আপনি বললেন, আমি আগাগোড়া আপনাকে হতাশ করিনি। কিন্তু আপনার কথা শুনে তো মনে হচ্ছে...।
- করেননি। আগাগোড়া হতাশ করেননি মিস্টার মুকর্জি।
- কেন?
- ওই। ভয়। যে ভয়ের জন্যে হতাশা, সেই ভয়ের সবটুকুই অন্ধকারের নয় মিস্টার মুকার্জি। নিজের জন্য যেটুকু ভয় পুষে রেখেছেন, আসছে বছরের রিজোলিউশনে সেসবের ভার খানিকটা অন্তত কমানোর চেষ্টা করবেন না হয়। কেমন? কিন্তু মিস্টার মুকর্জি, যে ভয়টুকু অন্যদের নিয়ে; খোকার দুধেভাতে থাকা না থাকা নিয়ে দুশ্চিন্তা, ভালোবাসার মানুষের আওড়ানো হা থেকে হাওড়া বুঝে নিতে না পারার আশঙ্কা, ছোটোবেলার স্মৃতি আর দাদুদিদার সুবাস ফিকে হতে না দেওয়ার এলোপাথাড়ি চেষ্টা, বন্ধুদের দূরে যাওয়ার ভয়ে অকারণে কেঁপে ওঠা; এই ভয়গুলো যদ্দিন রয়েছে মিস্টার মুকর্জি, আপনাকে নিয়ে আগাগোড়া হতাশ হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
- কোনও মানুষকে নিয়েই আগাগোড়া হতাশ হওয়ার সুযোগ নেই বোধ হয়। যাক গে, আর এক কাপ চা চলবে নাকি?
- ফ্লাস্কের চা দিয়ে আতিথেয়তা আর কদ্দিন মিস্টার মুকর্জি। নতুন বছরে বরং ভালো কোয়ালিটির চা অ্যাপ্রিশিয়েট করতে শিখুন। কেমন?
- এটা কি ওই পলিটিকিকালি গা বাঁচানো রিজোলিউশন নয়?
- অমন দু'একটা না থাকলে কি চলে মিস্টার মুকর্জি? যাক গে, এবার আমায় যেতে হবে। সময় নেই।
- ওহ হ্যাঁ। আসুন। আর ইয়ে, থ্যাঙ্ক ইউ, মিস্টার টু-থাউজ্যান্ড-নাইনটিন। আপনি যদ্দিন ছিলেন অন্ধকার কম ছিল না, তবে গোটাটাই হতাশায় মোড়া নয়।
- মিস্টার টুয়েন্টি টুয়েন্টি এলেন বলে, তাঁকে আর ফ্লাস্কের চা না দিয়ে ফ্রেশ দার্জিলিং অফার করবেন। কেমন? চলি। ভালো থাকুন মিস্টার মুকর্জি।
- গুডবাই মিস্টার টু-থাউজ্যান্ড-নাইনটিন। থ্যাঙ্ক ইউ ফর এভ্রিথিং।
No comments:
Post a Comment