Tuesday, April 28, 2020

নেকুচাঁদের বৌ



- এহ্ হে।

- আবার কী হল?

- ফের একই কেস রে বউ। দিয়েছি একখাবলা নুন বেশি। 

- ও ঠিক খেয়ে নেব'খন।

- কতবার বলি, এ লাপসি তুইই রান্না কর। আমায় বরং ঘর মুছতে দে। এ'বার খা নুনের ঝোল উইথ আ হিন্ট অফ চালডাল।

- আমার অত নোলা নেই। আমি দিব্যি সাপটে খেয়ে নেব।

- ভারী তো রোজ রাজভোগ খাচ্ছি। তায় আবার নোলা। মেনুর কী বহর; দিনের পর দিন দুপুরে খিচুড়ি, রাতে ফেনাভাত। উফ! আর উইকেন্ড রাত্রির বুফেতে আবার বোনাসঃ এক চামচ করে ঘি। 

- ঘি? তাও এ'বার ফুরোবে। 

- কী ভাইরাস ছড়ালো রে বউ, খাওয়াদাওয়াটা এক্কেরে গেঁজে গেল। তাই না রে?

- আর ক'দিন পর এই রাজভোগও জুটবে না।

- আশ্চর্য কী। একের পর এক হপ্তা যায় অথচ ভাইরাস বাবাজীর তাণ্ডব আর থামে না৷ ছ'মাস হতে চলল গোটা দেশ গৃহবন্দী। এ'দিকে বাজারে আর আলু পেঁয়াজও নেই। সরকারের রেশন আছে, তাই দু'হাতা করে খিচুরি ফেনাভাত পাতে পড়ছে৷ সত্যিই, আর ক'দিন পর হয়ত...। 

- হরিমটর। আমি আর তুই তখন ব্যালকনিতে জড়াজড়ি করে বসে বিরিয়ানির কথা ভাবব, কেমন?

- একটা টেরিফিক আইডিয়া এসেছে মাথায়! 

- আবার কী!

- বুঝলি বৌ, ওই যখন কিস্যু থাকবে না... আমরা তখন প্ল্যানচেটে বিরিয়ানির গন্ধকে টেনে নামাবো। 

- প্ল্যানচেটে বিরিয়ানি? মাইরি?

- বিশ্বব্যাপী রেশনের দুনিয়ায় সে কি আর বেঁচে আছে রে বৌ? বেঁচে থাকতে নেই৷ নেই রে নেই। আমার আত্মাটাত্মায় বিশ্বাস এদ্দিন ছিল না তবে আচমকা গজিয়েছে। ভাইরাস-খেকো এ দুনিয়া থেকে বিরিয়ানিকে চলে যেতে হল বটে, কিন্তু তাই বলে তাঁর আত্মাটুকুর প্রতিও যদি বিশ্বাস না থাকে, তা'হলে বাঁচব কি নিয়ে রে বৌ? আর তাঁর আত্মায় যেহেতু ষোলো আনা বিশ্বাস আছে, বিরিয়ানির থালা প্ল্যান করে চেটে খাওয়ার সুযোগ না থাকলেও,  সেই বাউল সুবাসকে কি প্ল্যানচেটে টেনে নামাতে পারব না রে? বল তুই, যদি মনেপ্রাণে ডাকতে পারি, তা'হলে আমরা পারব না?

- শোন। একটা কথা ভুলিস না; আনন্দ মরা নহি। আনন্দ মরতে নহি৷ 

- আহা বৌ। আহা। এই সেন্টিমেন্টগুলো বুঝিস বলেই তো রোজ একবার তোর সঙ্গে মালাবদল করতে ইচ্ছে করে।

- নেকুচাঁদ। বালতির জল পাল্টে এ'বার সামনের ঘরটা মুছে আয়। আমি দেখি খিচুড়িটাকে কোনওভাবে রিপেয়ার করতে পারি কিনা।

No comments: