- পটা। অ্যাই পটা। আরে অ্যাই পটা!
- গুরু, অত চেঁচিও না। যোগব্যায়ামের ফোকাস নষ্ট হচ্ছে।
- নেকুচন্দর খাসনবীশ, যোগব্যায়ামের ফোকাস নষ্ট। বলি মান্থ এন্ডের রেভিনিউ স্টেটমেন্ট কই।
- কী হবে ও'সব দিয়ে বলো গুরু৷ তার চেয়ে বরং চলো; স্টকের আমতেল দিয়ে কষে মুড়ি মাখি। দু'জনে মিলে চিবুতে চিবুতে গপ্পগুজব করব, চারটে ইলিশ শ্যামল মিত্তিরের গান গাইব; ব্যাস, আজকের সন্ধ্যেটা আলগোছে কেটে যাবে।
- তোকে পিটিয়ে তক্তা করে দিতে পারলে তবে আমার শান্তি হয়। মাসের শেষ, ব্যবসার হিসেবকিতেব না করে হারমোনিয়াম বাজাব? মা লক্ষ্মী জুতোপেটা করবে যে।
- লকডাউন চলছে গুরু। খামোখা চাপ নিতে যেও না, এ করোনার বাজারে মা লক্ষ্মীও স্যাটাস্যাট নেমে আসতে পারবেন না৷ তা বলছিলাম, মুড়িতে কিন্তু অল্প কাঁচালঙ্কা কুচি না দিলে আমার চলবে না।
- শাটাপ পটা। শাটাপ। আমরা এ'দিকে মুড়িমাখা গিলি আর ও'দিকে দয়ালগুণ্ডার সিন্ডিকেট আমার মার্কেট ক্যাপচার করে নিক আর কী।
- আরে ধ্যাত্তেরি। কীসের মার্কেট ক্যাপচার করবে? কিডন্যাপিংয়ের বাজারে ঘুঘু চড়ছে। কেউ ছাই বাড়ি থেকেই বেরোচ্ছে না তায় তাদের কিডন্যাপিং। আবার ছেলেরাও কিডন্যাপফিডন্যাপ করতে চাইছে না, কোন মাল কী বিষ ভাইরাস নিয়ে ঘুরছে তা বোঝা মুশকিল। বাজারে লোকজন মাঝেমধ্যে জমছে বটে তবে এই এক মিটারের তফাতে দাঁড়িয়ে পকেটকাটা যে অসম্ভব গুরু; কাজেই সেখান থেকেও রেভিনিউ কাঁচকলা। আর অন্যদিকে পলিটিক্সের ঝিঙ্কু দাদারা আর কালাটাকা ওড়ানো বিজনেসম্যান জ্যেঠুরাও সবাই নেতিয়ে পড়েছে; কাজেই ক্যালানির অর্ডারও তেমন আসছে না। মার্কেটফার্কেটই কিছু নেই; তা'তে কীসের কম্পিটিশন আর কীসের মান্থ এন্ড স্টেটমেন্ট।
- অমন কড়া কথা মুখের ওপর বলতে নেই পটা।
- কড়া। কিন্তু খাঁটি গুরু।
- টাকাপয়সা নিয়ে ভাবিনা রে পটা। টাকাপয়সা নিয়ে ভাবিনা। আমি নির্লোভ নির্লিপ্ত মানুষ। আজ বিরিয়ানি খাওয়াচ্ছিস; তোফা তোফা করে খাব। কাল সাবু মেখে খাওয়াবি, তাও সোনামুখ করে খেয়ে নেব। পরশু বলবি লুঙ্গি আর স্যান্ডো গেঞ্জি গায়ে হিমালয়ের দিকে চলে যেতে, হাসিমুখে কেটে পড়ব। চিন্তা শুধু একটাই; প্র্যাক্টিসের অভাবে এই হাইক্লাস স্কিলগুলো যেন হারিয়ে না যায়।
- সে' চিন্তা অবিশ্যি নেহাৎ ফেলনা নয় গুরু। হাঁটুর হাড় কীরকম গুঁতো মেরে ভাঙলে মানুষ সহজে সারেন্ডার করে সম্পত্তির কাগজে সই করে দেবে, ব্লেড কোন অ্যাঙ্গেলে চালালে হিপপকেটের মানিব্যাগ টুসটুসে আমের মত খসে পড়বে; এ'সব স্কিল তো আর ঘরে বসে পালিশ করা যায় না।
- আমাদের কী হবে বল তো পটা?
- ছাতুর যা স্টক আছে, আরও মাস দেড়েক চলে যাবে। তারপর হিমালয়টিমালয় নিয়ে ভাবব'খন৷
- আমাদের ব্যাঙ্কে কত আছে রে পটা?
- ব্যাঙ্কে? হোয়াইট মানি? সাতশো চুয়ান্ন টাকা। গতমাসেই পাসবই আপডেট করিয়ে এনেছিলাম।
- আর ওই সোফার নীচে আমাদের ওই গোপন গর্তে লুকোনো টাকা?
- ক্যাপিটাল? বত্রিশ লাখ বাহাত্তর হাজার তিনশো উনিশ টাকা। পরশুই গুনলাম তো। তা, তোমার মতলবটা কী বলো তো গুরু?
- টাকাটা থলেতে ভরে নিয়ে আয়।
- সে কী!
- যা বলছি তাই কর পটা। ক্যুইক।
- কিন্তু করবেটা কী?
- কারা যেন কমিউনিটি কিচেন খুলেছে। শহরজুড়ে, অনেকগুলো। কত মানুষের স্টকে নাকি আমতেল নেই, মুড়ি নেই, এমন কি ছাতুও ফুরিয়েছে। মধুমাস্টারই বলল আমায়। ওই বত্রিশ লাখ বাহাত্তর হাজার তিনশো উনিশ ওদের হাতে তুলে দিলেই বরং...।
- তুমি খেপেছ গুরু? ওই মধুমাস্টার এক খ্যাপা আর তার পাল্লায় পড়ে তোমারও মাথাটা গেছে। শুরুতেই বুঝেছিলাম তোমার কোনও মতলব আছে। শুনে রাখো, ও টাকা প্রাণ থাকতে আমি তোমায় নিতে দেব না।
- শাটাপ পটা। তোর এত বড় সাহস? গুরুর মুখে মুখে তর্ক? তুই না আমার চ্যালা?
- দলে নেওয়ার সময় তুমি ব্লেড দিয়ে আঙুলের ডগা চিরে রক্ত নিয়ে শপথ করিয়েছিলে গুরু। কিডন্যাপিং, পকেটমারি আর গুণ্ডমি ছাড়া আমাদের কোনও ধর্ম নেই, ট্রান্স্যাকশনও নেই। থাকতে পারে না। তোমার লজ্জা হওয়া উচিৎ গুরু। ছিঃ ছিঃ, মধু মাস্টারের পাল্লায় পড়ে শেষে কিনা তুমি দানধ্যান করবে? এই তোমার এথিক্স গুরু? চ্যারিটি? ধর্মে সইবে? ছিঃ, তোমার সমস্ত শিক্ষা মিথ্যে।
- আহ, কতবার বলব পটা। অমন কড়া কথা মুখের ওপর বলতে নেই। নেই।
- কড়া কিন্তু খাঁটি।
- মধুমাস্টার বারবার বলছিল রে, মানুষের বড় কষ্ট৷ ওই টাকাগুলো যদি মাস্টারের হাতে তুলে দেওয়া যেত তা'হলে..।
- তার আগে তুমি আমার মরা মুখ দেখবে গুরু৷ বিজনেসের টাকা বিজেনেসেই লস খেয়ে গোল্লায় যাক, তা'তে ক্ষতি নেই। কিন্তু এ টাকা দানধ্যানের জন্য বিলিয়ে দিলে আমি গলায় দড়ি দেব।
- গলায় দড়ি? ভর সন্ধ্যেবেলা অমন কথা তুই বলতে পারলি পটা? ছেলেবেলা তোকে কোলেপিঠে মানুষ করেছি। নিজের হাতে পকেটকাটা শিখিয়েছি, নাকে ক্লোরোফর্ম মাখানো রুমাল চেপে ধরা শিখিয়েছি, বন্দুক বাগিয়ে চমকানো প্র্যাক্টিস করিয়েছি; আর আমায় শেষে কিনা তোর মরা মুখ দেখতে হবে! চুলোয় যাক মধুমাস্টার। দিস না তুই ওই টাকা। তার চেয়ে বরং মুড়িই মাখ। আর আন দেখি হারমোনিয়াম, আসর বসাই।
- যাক। বাঁচালে। তুমিই তো বলো গুরু, সবার আগে নিয়ম। নিয়ম ফেল করলেই দল ডুববে। গুরু হয়ে তুমি নিজেই নিয়ম ভাঙবে তা আমি কী করে হতে দিই বলো। যাকগে, তুমি মিনিটখানেক বসো। আচমকা মনে পড়ল মুড়ির টিন ফাঁকা পড়ে আছে। আমি হৃদয়দার দোকান থেকে দু'প্যাকেট মুড়ি নিয়ে আসি৷ চিন্তা নেই, মুখে মাস্ক পরে বেরোব, করোনাকাকার নজর আমার ওপর পড়বে না।
***
- কী বলছ তুমি মধু মাস্টার! তুমি পটাকে দেখেছ?
- এইত্তো, খানিক আগেই। বিশুর চায়ের দোকানের পিছন দিকটায়। পটাই তো সেধে এসে কথা বললে তো। আর ওই তো আমায় তোমার কাছে পাঠালে।
- দ্যাখো কাণ্ড মাস্টার। দ্যাখো কাণ্ড। এদিকে আমি ভয়ে কাঠ। ভর সন্ধ্যেবেলা বেরোল মুড়ি আনতে আর তারপর টানা তিনদিন দেখাসাক্ষাৎ নেই। এক্কেরে গায়েব। এ'দিকে চিন্তায় আমি মরি আর কী। আসুক শালা এদিকে, ওর চামড়া তুলে যদি আমি গামছা না বানিয়েছি তো...।
- যাকগে, আমায় বলল এ চিঠিটা তোমায় দিতে। তাই তোমার কাছে এলাম কেষ্ট।
- চিঠি? মাস্টার?
- এই সেই চিঠি।।
***
গুরু,
আপনার স্যাঙাৎ শ্রীমান পটাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। বত্রিশ লাখ বাহাত্তর হাজার তিনশো উনিশ টাকা মুক্তিপণ না দিলে তার লাশ আপনার বাড়ির সদর দরজার কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। পুলিশে খবর দেবেন না, তাতে গোলমাল বাড়বে বই কমবে না।
মুক্তিপণের টাকাটা যেন অবিলম্বে মধুমাস্টারের হাতে নগদে তুলে দেওয়া হয়। আবারও বলছি, ওপরচালাকির ফল ভালো হবে না।
ইতি,
শ্রীপটা ওরফে নেকুচন্দর খাসনবীশ।
পুনশ্চ ১ঃ
তুমিই তো বলো গুরু; আমাদের ব্যবসা কালো কিন্তু হিসেবকিতেব পাকা। কিডন্যাপিং পকেটমারি গুণ্ডামির আয় ওই টাকা; আমাদের কালো ব্যবসার মূলধন। সৎকাজে ব্যয় করলে লোক হাসানো হবে যে। তার চেয়ে এই ভালো, উৎপাতের ধন চিতপাতে গেল। তাছাড়া তিনদিন আড়ালে থেকে ফলো করেছি মধুমাস্টারকে, লোকটা সত্যিই ভালো। ওর দলের লোকজনও মন্দ না। খেটে কাজ করে, লোকের উপকারই করে বেড়ায়। টাকাটা মুক্তিপণ হিসেবে দিলে বরং মধুমাস্টারের কাজেও লাগবে আবার তোমার গায়ে পুণ্যের কালোদাগ লাগবে না।
পুনশ্চ ২ঃ
মধুমাস্টারের দলে লোক দরকার গুরু। কত কাজ। বিশেষ দরকার রাঁধুনির। তোমার খিচুড়ি রান্নার হাতটা তোফা। আর নিজের মুখে আমার রান্না লাবড়ার গুণগান করতে বাঁধছে৷ কী বলো?
হিমালয় তো সবার কপালে থাকে না, এদের সঙ্গেই ঝুলে পড়বে নাকি?
No comments:
Post a Comment