- বস!
- বলে ফেলো দত্ত।
- বলছি, সেলসটীম খুব রেস্টলেস হয়ে উঠছে, মেমোটা এবার ইস্যু না করলেই নয়।
- কীসের মেমো?
- ওই যে। সামনের কোয়ার্টারের সেলস টীমের টার্গেট। ছেলেরা হপ্তাখানেক ধরে ঘ্যানঘ্যান করছে কিনা...।
- সেলসের ছেলেপিলে; প্রয়োজনে লোহাকুচির চচ্চড়ি দিয়ে ভাত মেখে খাবে, মনুমেন্টের মাথায় মশারি টাঙ্গাবে, জিরাফের গলায় নেকটাই পরাবে। মেমোটেমোর মত নেকু জিনিসে তাদের কাজ কী।
- বস, যাই বলুন। এত হাই টার্গেট সেট করা হচ্ছে আজকাল। আগাম টার্গেট মেমোটা পেলে ছেলেমেয়েগুলো একটু আগেভাগে প্ল্যান করে নিতে পারত। একটু প্রস্তুত হতে পারত। তাছাড়া এই মেমোতে শুধু যে টার্গেট আছে তা তো নয়। ইনসেন্টিভ পাল্টে যাচ্ছে। অনেকের চাকরীবাকরী নিয়েও টানাটানি হতে পারে, অন্তত মেমোর ড্রাফট পড়ে আমি তেমনই বুঝছি।
- দত্ত, তোমার চাকরী নিয়ে তো টানাটানি পড়বে না। তুমি খামোখা অত মাথা ঘামাতে যাচ্ছ কেন?
- কিন্তু এই লুকোছাপাতে সেলসটীমের মনবল একটু...একটু...।
- সেলসটীমের মনোবল দিয়ে কোন কাঁচকলাটা হবে দত্ত? ইয়ার এন্ড রিভিউতে বাহাত্তর খানা স্লাইড জুড়ে দলের মনোবলের বাহার দেখাব?
- বস। আপনি গুরু, আমিই গরু। তবে পারমিশন দিলে সামান্য হাম্বা করি।
- বলে ফেলো।
- সেলস টীমের মনোবল ইস ডাইরেক্টলি প্রপোরশনাল টু সেলস নাম্বার, তাই না?
- উইথ ডিউ রেস্পেক্ট টু ইয়োর হাম্বা, মাই ডিয়ার দত্ত। মনোবল মানেই পার্ফরমেন্স; ওই টেম্পারামেন্ট নিয়ে এইচআরে গিয়ে বাতেলা ঝাড়ো গিয়ে। সেলসটীম সামলানো তোমার কর্ম নয়।
- মনোবলের সঙ্গে পার্ফরমেন্সের যোগাযোগ নেই বস ?
- মনোবল দিয়ে টেডটক হয়, লাল নীল হাবিজাবি পোস্টার হয়। পার্ফরমেন্সের জন্য দরকারি হল ভয়।
- ভয়?
- ইয়েস দত্ত। ফিয়ার জেনারেটস ফায়্যার। আর ওই আগুনটুকু না থাকলে সেলসটীম মাধুকরী করে বেড়াবে, বেচতে পারবে না।
- কথামৃত লেভেল বস। কিন্তু তবু... একটিবার ভেবে দেখুন...আগামীকাল থেকে নতুন কোয়ার্টার শুরু...এখনও যদি মেমোটা রিলিজ না করা হয়...।
- আগামীকাল। আগামীকাল শুরু হবে রাত বারোটার পর। আর আজ এখন সবে বেলা আড়াইটে। এখনও সাড়ে নয় ঘণ্টা হাতে।
- হ্যাঁ...মানে ইয়ে...বস...মেমোটা তো তৈরি...।
- তাতে কী হয়েছে? তৈরি হলেই বিলি করতে হবে? দাঁড়াও। আগে ব্যাটাচ্ছেলেদের তড়পাও সামান্য। পারফর্মেন্সের জন্য দরকার ভয়, ভয়ের জন্য কী দরকার?
- কী বস?
- মিস্ট্রি। অন্ধকার। ওরা যত অন্ধকারে থাকবে, তত ভয়ে ছটফট করবে। আর তত সহজে ওদের নাচানো যাবে। এবং ছটফটের অনুপাতে বাড়বে পারফর্মেন্স। শোনো দত্ত...ওই মেমো যেন রাত আটটার আগে সেলসটীমের কাছে না পৌঁছয়।
- কিন্তু মেমো এক্কেবারে তৈরি, আপনিও অ্যাপ্রুভ করেছেন। টীমের ছেলেমেয়েদের যে কী বলি...।
- ওদের বলে দাও মেমো নিয়ে এখনও ম্যানেজমেন্ট ধন্দে আছে। বিকেলবেলা ডিরেক্টররা মিটিং-য়ে বসবে। রাত আটটা নাগাদ ওই মেমো রিলিজ করে দিলেই হল। অকারণ প্ল্যানিংয়ে অনেক সমস্যা হে। তাছাড়া আজকালকার ছেলেছোকরাদের প্রশ্নের আর শেষ নেই । সব কথাতেই এটা কে'ন, ও'টা কেন; অসহ্য। শেষ মুহূর্তে মেমো পাবে, আজেবাজে প্রশ্নের সময় সুযোগ কোনোটাই থাকবে না। এ মেমো দিব্যি বেরিয়ে যাবে। হেহ হেহ।
- তা আপনি বলছেন যখন...কিন্তু বস...মেমো পড়ে যা বুঝেছি, অনেকের চাকরী নিয়ে টানাটানি পড়তে পারে।
- সে জন্যেই তো সাস্পেন্সটা খুব কাজের জিনিস ভাই দত্ত। বাবাবাছা বলে কি কাউকে ডারউইন শেখানো যায়? ও মহামন্ত্র ঠেকে না শিখে উপায় নেই।
- বেশ। তা'হলে রাত আটটা নাগাদই না হয় মেমোটা সেলস টীমের কাছে পাঠাব।
- গুডবয়। আর দত্ত, আমার হয়ে একটা মনোবলে সুড়সুড়ি দেওয়া মেসেজ তৈরি করো দেখি। এমন একটা কিছু যা পড়েই মনে হবে যাই এখুনি আড়াই কিলোমিটার দৌড়ে আসি। তোমার মেমোর সঙ্গে না হয় সেই মোটিভেশনাল মেসেজটাও বিলি করে দিও? উইথ লাভ ফ্রম ডিয়ার বস বলে? কেমন?
- ইয়েস বস।
1 comment:
কবিগুরু বলে গেছিলেন না, - সঙ্কোচের বিহ্বলতা নিজেরই অপমান। সংকোচ ঝেড়ে ফেলে বেচো, শালা। দুহাতের আঙ্গুল গুলো কিনতে পারো, আপোসে'ও নেই আপত্তি নেই আমারও।
সেলস-এর মতন প্রফেশন নেই মশাই - দারুন, দারুন। তুমি'ই রাজা, তুমি'ই প্রজা। স্বয়ম্ভূ
Post a Comment