Sunday, June 21, 2020

কচুরীয়


১। বারো কি বাহাত্তর বছর আগের ব্যাপার।

২। গল যোদ্ধা লেভেলের অদম্য বয়সের দু'জন মানুষ।

৩। ময়দান ঘেঁষা হাঁটাহাঁটি আর পার্ক স্ট্রীটের রেস্টুরেন্ট রোমাঞ্চ বাদ দিয়ে তারা দেখা করেছিল দক্ষিণেশ্বরে। 

৪। সে ডেট-য়ে তাদের টেনে নিয়ে গেছিল হিংয়ের কচুরী। 

৫। এটাসেটামিক্স গোছের কচুরী দাদার হাত থেকে ভক্তিভরে তারা গ্রহণ করেছিল কচুরীর প্লেট আর ডালের বাটি। 

৬। একজন অপরের ডালের বাটিতে নিজের কচুরীর টুকরোটি ডুবিয়ে নেওয়ায়র মনোমালিন্য যেমন ছিল, তেমনি ছিল কল্পতরু কচুরীদাদার আশ্বাস; "ডাল যত চাইবে পাবে, চিন্তা কীসের গো"। 

৭। সে হিংয়ের কচুরীর সুবাসে "আবার কবে দেখা হবে" ছিল; পরের প্রতিটি 'আবার কবে দেখা হবে"তে সে সুবাস ঘুরে ফিরে এসেছে। 

৮। প্রেমে হাবুডুবুফিকেশনের জন্য কি উত্তম-সুচিত্রা মাখানো 'এই পথ যদি না শেষ হয়' গোছের সুর জরুরী?  আদৌ নয়৷ কোয়ালিটি হিংয়ের কচুরীর স্পর্শ পেলে "সকলই তোমারই ইচ্ছে'তেই এস্পারওস্পার সম্ভব। মাইরি, সম্ভব; সেই দু'জন মানুষ প্রসেসটা টের পেয়েছিল; ওই বারো কি বাহাত্তর বছর আগে।

Thursday, June 18, 2020

ভিক্টোরিয়ার স্বপ্ন

- ভিক্টোরিয়া?

- ভিক্টোরিয়া। স্বপ্নে একেবারে জ্বলজ্বল করছিল।

- একে করোনায় গৃহবন্দী মনমেজাজ খারাপ। সবই বুঝি। কিন্তু তাই বলে স্বপ্নেও ক্লীশে ঘষবে গো?

- দ্যাখো বউ, হতে পারে ক্লীশে। তবু স্বপ্নটি জেনুইন৷

- জেনুইন?

- ছোটবেলার সুবাস নাকে এলো৷ এক্কেবারে মনকাড়া অ্যাফেয়ার।

- স্বপ্নে? সুবাস?

- তবে আর বলছি কেন। সে সুবাস রীতিমতো নাকের ভিতর সুড়সুড় করে গেল।

- তা সেই সুবাসের নেচারটা ঠিক কীরকম?

- ওই যে। বাগানের বেঞ্চিতে বসে  স্টিলের টিফিন বাক্স খুলে লুচি আলুভাজা বের করার যে মনমাতানো গন্ধ? সেইটা।

- হবে না।

- ও মা। কী হবে না?

- এ'সব স্বপ্নের বাহার আমি বুঝি না ভেবেছ? রাতে চিকেন স্টু আর ভাত। গিলতে হয় গেলো, নয়ত ভিক্টোরিয়ার বেঞ্চিতে গিয়ে ছেলেবেলার কথা মনে করে বাতাস পকোড়া খাওগে।

- অমন কড়া সুরে বলতে নেই বউ৷ আলু আমি ভাজব। ময়দাও আমিই মাখব৷ তুমি শুধু বেলে দিও। গতজন্মে কী ভয়ানক পাপই না করে এসেছি; আমার হাতে বেলা লুচি কিছুতেই ছাই ফুলতে চায় না। সে এক ট্র‍্যাভেস্টি। 

- উফফ। যত্তসব। একে লকডাউন তার ওপর যত আজেবাজে নেকু স্বপ্ন। প্রাণ ওষ্ঠাগত। 

- শোনো বউ, রিয়েল এস্টেট যে'ভাবে ক্র‍্যাশ করছে তা'তে  চার হাজার টাকা পার স্কোয়্যার ফিট দরে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের এক চিলতে বারান্দা বিক্রি হলে আশ্চর্য হব না। আর সে সু্যোগ এলেই পিএফ ভেঙে তোমার জন্য ভিক্টোরিয়ার আড়াইশো স্কোয়্যার ফিট বারান্দা কিনে নেব। প্রতি রোব্বার বিকেলে আমরা সে'খানে বসে মুড়িমাখা খেতে খেতে তাস খেলব। 

- শোনো..তুমি ময়দা মাখো গিয়ে। আমি বেলে দেব।

- অহো বউ, তোমারেই করিয়াছি জীবনের ভিক্টোরিয়া।

গর্বোদ্ধত

কলকাতা ও বাংলা নিয়ে আমাদের গর্বের শেষ নেই। আমাদের সংস্কৃতি,  আমাদের ঐতিহ্য ইত্যাদি। আবার আমাদের খবরের চ্যানেলগুলোকে চীনের আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে শহরের চায়না টাউনে ছুটে যেতে হয় সে'খানকার চীনে রেস্তোরাঁর মালিকদের প্রশ্ন করতে;
"চীনের আক্রমণ সম্বন্ধে আপনারা কী ভাবছেন"?

আমাদেরই সহনাগরিকরা যে বিদেশী আক্রমণ বরদাস্ত করছেন না; সে'টাও খবর। সে খবর আমরা কনজিউম করি। সে আশ্বাস টেলিভিশন চ্যানেলের মাধ্যমে ভেসে না এলে আমরা স্বস্তি পাইনা। 

আমাদের গর্বের শেষ নেই।

Wednesday, June 17, 2020

যুদ্ধযাত্রা


- সরাইখানায় নতুন বলে মালুম হচ্ছে?

- হুঁ।

- আমার নাম কার্লোস। বসি এ'খানে?

- আমি আন্দ্রে।

- বয়সে তো তুমি আমার খুড়োর বয়সী গো। তা, একটু না হয় আবদার নিয়েই বলি। এক গেলাস বিয়ার খাওয়াও না।

- বেশ তো..।

- বাঁচালে কার্লোস খুড়ো৷ গলা এক্কেবারে শুকিয়ে কাঠ। এই যে ভায়া, দু'টো বিয়ার এই টেবিলে।

- একটাই বলো না হয়।

- ও মা। তুমি খাবে না নাকি? 

- নাহ্।

- তা'হলে তাই হোক। তবে দু'টো বিয়ার আসছে যখন আসুক না। আমি না হয় দু'টোই...। কিন্তু ইয়ে খুড়ো...তাই বলে আমার পানপাত্রটি খালি হওয়ার আগে কেটে পড়ো না যেন। সন্ধ্যের মেজাজটি তা'তে নষ্ট হবে। 

- বেশ।

- খুড়ো, তুমি বড় অল্প কথার মানুষ দেখছি। 

- তুমি একাই তো দিব্যি আড্ডা জমিয়েছ। আমার আর বেশি কথায় কাজ কী বলো।

- শোনো খুড়ো, চুপ করে বসে থাকলে কিন্তু কিছু হবেনা। এ'বার গর্জে না উঠলেই নয়।

- গর্জন?

- গর্জন। এক্কেবারে হালুম। দেশের ঘাড়ে যুদ্ধ এসে পড়েছে আর আমরা মিউমিউ করব; এ'টা তো মেনে নেওয়া যায়না খুড়ো। 

- তা তো বটেই।

- যাক, বিয়ার এসেছে। 

- গলা শুকিয়ে গেছে বলছিলে। চুমুক দাও।

- চিয়ার্স। আহ্। বুঝলে খুড়ো, এ'বার কিন্তু আমাদের দেশের প্রতিটি নাগরিককে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

- ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে? কাদের ওপর?

- ও মা! হাড়হারামি দেশ সিলডাভিয়া আমাদের আক্রমণ করে বসল। এ'বার আমাদের প্রত্যেককে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। পড়তে হবেই। কুত্তার বাচ্চা সিলিডাভিয়ানদের দেখলেই কচুকাটা করতে হবে।

- দেশের হয়ে বুক চিতিয়ে লড়তে পারে, এমন নাগরিকই তো  দরকার।

- দেশের ওপর এমন আক্রমণ হচ্ছে ভাবলেই চোখ ভিজে আসে গো খুড়ো। এই আমার চোখের দিকে চেয়ে দ্যাখো! দ্যাখো। বুঝছ দুঃখটা?

- আহা আন্দ্রে। সত্যিই কেঁদে ফেলবে নাকি?

- কাঁদব না কেন খুড়ো? কেঁদে ভাসাব না কেন? দেশের ওপর এমন অন্যায় আঘাত হানার আগে শুয়োরের বাচ্চা সিলডাভিয়ানগুলো আমায় গুলি করে মেরে ফেললো না কেন।

- গুলি? খেতে চাইছ?

- মরতে ভয় পাই ভেবেছ খুড়ো? দেশের জন্য অমন কয়েক হাজার গুলি খাওয়ার যন্ত্রণা আমি হেসে হজম করতে পারব। 

- বাহ্।

- বুঝলে খুড়ো। দেশের চেয়ে বড় কিছু হয়না। কবিরা কি সাধে বলেছেন যে দেশ আদতে যে নিজের মায়েরই মত। তার ওপর এমন অশ্লীল আক্রমণ..আমি সন্তান হয়ে মেনে নেব কী করে?.

- হ্যাঁ। যুদ্ধের অবস্থা বেশ ভয়াবহ।

- কিন্তু তুমি দেখো খুড়ো, আমরা জিতবই। প্রয়োজনে আমার এই লাঠিটা নিয়ে সীমানায় গিয়ে যুদ্ধে যোগ দেব। সিলডাভিয়ানদের তলোয়ারের ঘায়ে প্রাণ দিতে হলে দেব। দেশের জন্য দেব।

- দেবে বৈকি।

- জানো আমি কী চাই খুড়ো?

- কী চাও আন্দ্রে?

- আমি চাই আমাদের সৈন্যরা সীমান্তে আটক না।থেকে সিলডাভিয়ায় ঢুকে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিক। তা'হলেই হারামজাদারা বুঝুবে কত ধানে কত চাল..।

- ও'দের বোঝানো দরকার,তাই না?

- আলবাত দরকার। আর এ দেশের প্রতিটি নাগরিকের উচিৎ রাজামশাইয়ের কাছে আবেদন করা যাতে সিলডাভিয়াকে এইবেলা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়।

- যুদ্ধ তো সিলডাভিয়াও করবে।

- আমরা কি যুদ্ধকে ডরাই ভেবেছ খুড়ো? আমার রক্ত টগবগ করে ফুটছে...টগবগ করে!

- যাবে? যুদ্ধে?

- আমায় কিছু বললে নাকি খুড়ো? বড় আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলাম...ঠিক শুনতে পাইনি।

- যুদ্ধে যাবে?

- যুদ্ধে? সীমান্তে?

- কাল সকালেই আমায় সীমান্তের দিকে যেতে হবে। সে'খানকার সেনাছাউনিতে একটা জরুরী কাজ আছে। তোমার মত জোয়ান ছোকরাকে সহজেই সেনাবাহিনীতে ভর্তি করিয়ে নেবে কিন্তু আন্দ্রে। যাবে আমার সঙ্গে?

- ইয়ে, যাওয়ার তো বড় ইচ্ছে। বড় ইচ্ছে। কিন্তু..।

- কিন্তু?

- আমার একটা মুদীর দোকান আছে হে খুড়ো৷ দেশের জন্য যতই বুক ফেটে যাক; দোকানটা বন্ধ রাখা একদমই উচিৎ হবে না। তাছাড়া সবাই ড্যাংড্যাং করে যুদ্ধ করতে গেলেই তো হবে না, অর্থনীতির ব্যাপারটাও তো দেখতে হবে।

- এই অসময়ে, তোমার মত গুণী মানুষরা যদি সীমানায় গিয়ে বুক চিতিয়ে দাঁড়ায় আন্দ্রে...তবেই তো দেশের ও দশের সাহস বাড়বে।

- বটেই তো বটেই তো। তবে ইয়ে খুড়ো, আমার না আবার ছোটবেলা থেকেই একটু সর্দির ধাত আছে৷ খোলা হাওয়া বুকে লাগলেই কফ বসে সে এক একাকার কাণ্ড৷ তাছাড়া মা আচার শুকোতে দিচ্ছে রোজ দুপুরে, সেই আচারের পাত্রগুলো বিকেলবেলার দিকে ঘরে ঢোকানোর দায়িত্বও আমার। বাড়িছাড়া হলে মা যা বকুনি দেবে না খুড়ো...এক্কেবারে খতরনাক মহিলা।

- বেশ।

- তা খুড়ো, সেনাছাউনিতে আবার তোমার কী কাজ?

- আমার একমাত্র পুত্র আলেকজান্ডার। সে গতকাল আমাদের সেনাবাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে মারা যায়। খোকার দেহটাকে নিয়ে বাড়ি ফেরা দরকার, তার মা পথ চেয়ে বসে রয়েছে যে।

Tuesday, June 16, 2020

সারকাজমে বঙ্কিম


- বুঝলে দাদা, বড় মুশকিলে পড়েছি।

- মুশকিল? সিরিয়াস কিছু?

- রীতিমতো। 

- কী'রকম?

- আমি সারকাজমে বঙ্কিম; এ ধারণা নিয়ে এতদিন দিব্যি সুখে ছিলাম।

- এই কনফিডেন্সিটাই তো চাই ভায়া। এ'টাই তো চাই।

- কিন্তু কনফিডেন্সটায় সামান্য খোঁচা লাগল যে।

-  সে কী! কনফিডেন্সে খোঁচা? হাউ?

-  এইত্তো। গতকাল ভোরের দিকের স্বপ্নে খোশমেজাজে অন্যের নিন্দেমন্দ করছিলাম। এমন সময় স্বপ্নের ফ্লো নষ্ট করে বঙ্কিমবাবু এসে বলললেন; আমার সারকাজম বাকি কীবোর্ডের মাধ্যমে অনবরত ইটপাটকেল ছোঁড়ার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।

- এ'কথা বঙ্কিম বললে?

- নিজের কানে শুনেছি। আর মাইন্ড ইউ, স্বপ্নটা কিন্তু ভোরের..।

- বঙ্কিমটা একটা ইডিয়ট।

- আস্ত ইডিয়ট, তাই না? তাই হবে। ঠিক বলেছ৷

Monday, June 15, 2020

ভ্যাক্সিন

- ভাই হবস। বুকের ভিতরটা কেমন...।

- কেমন?

- হ্যাঁচোড়প্যাঁচোড়।

- অ।

- কেমন যেন..অস্বস্তি।

- মনখারাপ ভাই ক্যালভিন?

- ঠিক তা নয়।

- মনকেমন?

- হবে হয়ত।

- বলো স্পেসম্যান স্পিফ। বলো।

-  তুমি আছো তাই বাঁচোয়া।

- আমি তো শুধু শুনি। কিছুই তো করিনা।

- সেটুকুই তো ভ্যাক্সিন। 

Sunday, June 14, 2020

স্যুপ


- নুনের ডিবেটা এগিয়ে দেবেন প্লীজ?

- হুঁ।

- থ্যাঙ্ক ইউ। এ'খানে খাবারদাবার এত ব্ল্যান্ড..।

- হুঁ।

- অবশ্য, হসপিটালের ক্যাফেটেরিয়াতে এর চেয়ে বেশি কিছু আর আশা করিই বা কী করে বলুন।

- হুঁ।

- ইয়ে, আপনার স্যুপটা কিন্তু ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে..।

- হুঁ।

- শুনুন...এই যে...শুনছেন?

- হুঁ? আমায় বলছেন?

- অবভিয়াসলি।  বলছি, আপনার স্যুপটা সেই তখন থেকে নিয়ে বসে আছেন কিন্তু এক চামচও মুখে তোলেননি। ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে তো।

- ও। না, ঠিক আছে।

- সে কী। ঠিক আছে মানেটা কী। স্যুপের স্বাদের অর্ধেক তো টেম্পারেচারে। 

- ইচ্ছে নেই। থাক।

- তা'হলে নিলেন কেন? এ'দের ক্যাফেটেরিয়ায় জিনিসপত্রের যা দামটাম, দামী কফিশপকে হার মানায়।

- প্লীজ। আপনি আমার চেয়ে বয়সে অনেক বড়। তবু বলছি। ডোন্ট মাইন্ড, আমার মনমেজাজটা ভালো নেই। কথাবার্তা বলতে চাইছিনা।

- আপনার পেশেন্টের সিচুয়েশন বুঝি..।

- আমি বরং পাশের টেবিলে গিয়ে বসছি।

- প্লীজ না, তারপর স্যুপের বাটি ফেলে একটা একাকার কাণ্ড হোক আর কী। 

- দেখুন মিস্টার...।

- দত্ত। অমিত দত্ত। আর আপনি?

- দেবজ্যোতি সিনহা। অমিতবাবু, প্লীজ স্পেয়ার মী।

- শিওর। শিওর।

- থ্যাঙ্ক ইউ।

- স্যুপটা?

- ওকে। খাচ্ছি। 

- নুনের ডিবেটা। এই যে। একটু ছড়িয়ে নিতে পারেন। যদি দরকার মনে হয় আর কী।

- না।

- আপনার ফ্যামিলির কেউ? ভর্তি? 

- বাবা। ক্রিটিকাল।

- আপনি..এক ছেলে?

- দাদা ক্যালিফোর্নিয়ায়। আসতে পারবে বলে মনে হয়না।

- স্যুপটা?

- খাচ্ছি তো।

- না মানে, মাইন্ড করবেন না। অমন মুখ ভেটকে খাচ্ছেন। গায়ে লাগবে বলে মনে হয়না।

- দিন নুনের ডিবেটা। সত্যিই বড্ড ব্ল্যান্ড।

- একটা স্যান্ডউইচ বলি? না না, এ বাবা। আমি কিন্তু ইন্ট্রুড করতে চাইনি।

- আসলে, ছোটবেলাতেই মাকে হারিয়েছি। বাবা আমাদের দুই ভাইকে যে কী'ভাবে আগলে বড় করেছেন...। ওকে এইভাবে কষ্ট পেতে দেখে খুব..। 

- উনি কি...আইসিইউতে?

- হ্যাঁ। ডাক্তাররাও তেমন ভরসা দিতে পারছেন না..।

- আপনার স্যুপটা ঠাণ্ডাই হয়ে গেছে। একটা স্যান্ডউইচ হলে বরং..।

- স্যান্ডউইচ আমার গলা দিয়ে নামবে না। স্যুপটাই খেয়ে নিচ্ছি বরং।

- আচ্ছা।

- দাদাটা থাকলে অন্তত..। ওকে এত মিস করছি...।

- স্যান্ডউইচটা? বলি? আমি শেয়ার করে নেব না হয় একটু। ডোন্ট মাইন্ড, গায়ে পড়াটা আমার স্বভাব। আপনি স্যুপটাকে জাস্টিফাই করতে পারছেন না।

- আপনি নিননা স্যান্ডউইচ। 

- বয়স হয়েছে তো। ইচ্ছে থাকলেও এ'দের ডাবল ডেকার নিজে পুরোটা ম্যানেজ করতে পারব বলে মনে হয় না। আপনি যদি একটা স্লাইস অন্তত..।

- আপনি আমার চেয়ে বয়সে অনেক বড়। আমায় তুমি বলতে পারেন। আর স্যান্ডউইচ বলুন না। আমি নেব না হয় এক স্লাইস। তবে..আমি পে করব।

- সে তো ভালো কথা।

- আপনার পেশেন্ট?

- আইসিইউতে নেই।

- যাক। আপনার বাড়ির কেউ?

- আমার পেশেন্ট তুমি।

- এক্সকিউজ মী?

- সকালে হসপিটালের বাইরে চায়ের দোকানে তোমায় দেখলাম চা টোস্ট নিলে। খেলে না। লাঞ্চের সময় দেখলাম এ'খানে এসে রুটি সবজি নিলে এবং নষ্ট করলে। নিশ্চিত ছিলাম সন্ধ্যের ভিজিটিং আওয়ার শুরু হওয়ার আগে ফের আসবে এ'খানে। যাক, স্যুপখুনটা অন্তত রুখতে পারলাম।

- আপনি আমায় ফলো করছেন?

- রোজই করি। কাউকে না কাউকে। আমার সংসারে কেউ নেই। রিটায়ার করেছি। এখন হাসপাতাল টু হাসপাতাল ঘুরে রোজ তোমার মত কারুর পিছনে পড়ে যাই। তাকে খাইয়ে তবে স্বস্তি। স্যুপটা খেয়ে খানিকটা নিশ্চিন্ত করেছ। স্যান্ডউইচের একটা স্লাইস নিলে পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হই। আরে! পেশেন্টের হয়ে হাসপাতালে দাঁড়িয়ে লড়াই করতে স্ট্রেন্থ লাগে তো। না খেলে চলবে কেন!

- আপনি কি পাগল?

- পাগল? হতে পারি। নিজের সন্তানকে এক সময় এই হাসপাতালেরই আইসিইউতে দেখেছি। সেই সন্তানের শোকে পাথর হয়ে পড়া স্ত্রীকে খাওয়াদাওয়া ছেড়ে শেষ হয়ে যেতে দেখেছি। নিজেকে সুস্থ বলে আর কী'ভাবে দাবী করতে পারি বলো। তবে এই হাসপাতালের সামনের চায়ের দোকান বা এই ক্যান্টিনে এসে মাঝেমধ্যে বিমর্ষ মানুষের মুখে দু'এক গ্রাস খাবার তুলে দিতে পারি বইকি। কেউ নরম সুরে বললে শোনে, কাউকে ধমক দিতে হয় আর তোমার মত টেঁটিয়াকে মহাভারত শুনিয়ে পথে আনতে হয়। যত অন্ধকারই হোক, কান ধরে খাইয়ে দেওয়া গার্জেনের দরকার সবারই পড়ে। আমারও পড়বে কোনওদিন। সে'দিন আমি কোনও পাগলের দেখা পাব কিনা কে জানে।

- দু'টো স্যান্ডউইচ বলি বরং। একটা নিয়ে ভাগাভাগি করে খাওয়ার কোনও মানে হয়না।

Friday, June 12, 2020

গোল্লায়

- আমায় ডেকেছিলেন স্যার?

- এসো শ্যামল। এসো। বসো।

- জরুরী কিছু কী?

- ব্যাপারটা সিরিয়াস।

- বিট্টু স্কুলে কোনও গোলমাল করেছে?

- না। স্কুলে বা ক্লাসে কোনওরকমের গোলমাল করার ছেলে সে একেবারেই নয়। হি ইজ ভেরি ওয়েল বিহেভড। কথাবার্তায় নম্র। ইন ফ্যাক্ট, ওকে দেখে আমার তোমার কথা মনে পড়ে। ক্লাসে তুমিও ততটাই শান্তশিষ্টই ছিলে। সে'দিক থেকে স্বভাবগুলো সেও বাপের মতই পেয়েছে।

- তা'হলে কী ব্যাপার স্যার। আপনাকে দেখে বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছে।

- ব্যাপারটা দুশ্চিন্তার তো বটেই শ্যামল।

- নেশাটেশা কিছু করছে নাকি বিট্টু? বিড়ি খেতে গিয়ে ধরা পড়েছে স্কুলে? ক্লাস ইলেভেনে উঠে শেষ পর্যন্ত এইসব শুরু করেছে?

- দু'টো বিড়ি ফুঁকলে লাংসের ক্ষতিটতি হয় বটে। বিড়ির চেয়ে ভালো কোয়ালিটির চানাচুরের নেশা বরং অনেক বেশি প্রগ্রেসিভ। কিন্তু না হে শ্যামল, সে'সব লঘু ব্যাপারে আমি গার্জেন কল করিনা। 

- তবে স্যার? একটু খুলে বলুন প্লীজ। ওই একটি মাত্র ছেলে। যা যুগ পড়েছে, আমি আর ওর মা মাঝেমধ্যেই নার্ভাস হয়ে পড়ি৷ গোল্লায় যাওয়ার এত কল চারদিকে..।

- এখনই সামাল না দিলে সে গোল্লায় যেতে পারে বটে। ব্যাপারটা খুব ক্রিটিকাল জায়গায় পৌঁছে গেছে দেখছি।

- ক্রিটিকাল?

- খুলেই বলি। তুমি নিশ্চয়ই জানো যে আমার নাতনী ঝিমলিও তোমার ছেলের সঙ্গে একই ক্লাসে পড়ে। ঝিমিলির মা আজ সকালে এই চিঠিগুলো ওর স্কুলের ব্যাগ থেকে উদ্ধার করেছে।

- চিঠি?

- তোমার পুত্রের লেখা। 

- ঝিমলিকে লিখেছে?

- প্রেমপত্র। 

- রাস্কেল বিট্টে। স্কাউন্ড্রেল কোথাকার। মা ঠাকুমার আদরে একটা আস্ত বাঁদর তৈরী হয়েছে। ওকে যদি আমি চাবকে সিধে না করি তা'হলে আমার নাম শ্যামল চ্যাটার্জী নয়। ক্যালকুলাস প্র‍্যাক্টিস না করে ইডিয়টটা প্রেম শুরু করেছে? তাও আপনার নাতনীর সঙ্গে? ওর কান কেটে যদি মাদুলি করে ওর গলায় আজ না ঝুলিয়ে দিয়েছি..।

- শ্যামল, তোমার কান কেটে নেওয়া উচিৎ। 

- আজ্ঞে?  স্যার?

- প্রেমের চিঠি লিখেছে বেশ করেছে। 

- না মানে...ক্লাস ইলেভেনে...।

- ক্লাস ইলেভেনে ও প্রেমের চিঠি লিখবে না তো কি এই বয়সে আমি লিখব? এই তোমার শিক্ষা? প্রেম করছে বলে পেটাবে? তোমার শিক্ষক হিসেবে আমার আধঘণ্টা কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকা উচিৎ। 

- না মানে আমি তা বলতে চাইনি স্যার। কিন্তু এই যে আপনি বললেন ব্যাপারটা সিরিয়াস। বিট্টু গোল্লায় যেতে বসেছে..।

- গোল্লায় যেতে পারে। তবে আটকানোর সময় আছে। ছেলেটা যেহেতু প্রেমে সিনসিয়ার, ওকে পথে আনা সহজ।

- ব্যাপারটা যদি..স্যার...একটু খোলতাই করে...।

- ঝিমলিকে তোমার ছেলে বারোটা চিঠি লিখেছে। টোটাল সাতাশটা বানান ভুল, পার চিঠি ট্যু পয়েন্ট টু ফাইভ। গ্রামারে ভুলচুক আরও খান সতেরো। সবচেয়ে বড় কথা, গদগদ সব লাইন কোট করবি কর; তাই বলে ইলিয়ট আর টেনিসন গুলিয়ে ফেলবি? তোমার এবং তোমার ছেলের ইংরেজি মাস্টার হিসেবে বলছি; ছেলেকে সামলাও, ও ছেলে ভেসে যেতে পারে। তবে হ্যাঁ, পুরো দায়িত্ব তোমার কাঁধেই বা চাপাই কী করে। আমি যেহেতু ওকে পড়াই, এ লজ্জা আমারই সবচেয়ে বেশি। সে অর্থে ওর প্রেমপত্রের প্রতিটি ভুলের জন্য আমারও তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিৎ।

- ছিঃ ছিঃ স্যার। এ আপনি কী বলছেন...।

- শোনো শ্যামল, আবারও বলি। প্রেমটা যেহেতু সিনসিয়ারলি করছে, ভাষার ভালোবাসাটা ও বুঝবে। 

- আজ্ঞে।

- যাক। এ'বার তুমি এসো। আর তোমার ছেলেকে একবার আমার কাছে পাঠিয়ে দিও। স্কুলে নয়, বাড়িতেই যেন আলাদা করে দেখা করে যায়।

- হ্যাঁ, সেই ভালো। আপনিই না হয় বিট্টুকে একটু ধমকেটমকে দেবেন'খন।

- ধমকানোর কাজটা আমি স্কুলেই সেরে নেব। ওকে বাড়িতে ডাকছি তোমার ব্যাপারে ওয়ার্ন করতে। যেমন তোমায় ডেকে আমি ওর ব্যাপারে সাবাধনা করে দিলাম।

- আমার ব্যাপারে ওকে...?

- সাবধান করে দেব। প্রেমের মত একটা জরুরী ব্যাপার সম্বন্ধে ওর বাপের ধ্যানধারণা কতটা রিগ্রেসিভ সে'টা ওর জানা দরকার। তবে কোনওদিন তোমার লেখায় বানান বা ব্যাকরণে ভুল দেখিনি। কবিতার লাইনও কোনওদিন ভুল কোট করেছ বলে মনে নেই। ভাষার প্রতি যেহেতু তোমার সিনসিয়ারিটি আছে, প্রেম ব্যাপারটাও একদিন তুমি নিশ্চয়ই বুঝবে। তবে এইবেলা তোমার ছেলেকে  সাবধান করে দিতেই হবে; যাতে প্রেমট্রেম না বুঝে তুমি গোল্লায় না যাও।

Thursday, June 11, 2020

মিস্টার সেনের থেরাপিস্ট


- এক্সকিউজ মী?

- বিলীভ মী। বানিয়ে বলছি না।

- আমি আপনার থেরাপিস্ট। ডেফিনিটলি আপনাকে অবিশ্বাস করছি না মিস্টার সেন। তবে...।

- তবে? ডাক্তার?

- না মানে...ব্যাপারটা বিষম খাওয়ার মতই।

- শুনেই আপনাকে বিষম খেতে হচ্ছে৷ তাহলে আমার কী অবস্থা সে'টা ভাবুন।

- আর একবার আমায় নিশ্চিত হতে দিন মিস্টার সেন৷ আপনি বলছেন আপনি আজ রাত্রে ঘুমোতে গেলেন। কিন্তু যেই সকালে আপনার ঘুম ভাঙবে সে'টা আগামীকালের সকাল নয়, গতকালের।

- এগজ্যাক্টলি। সঠিক বুঝেছেন। 

- আর এমনটা হচ্ছে গত মাসখানেক ধরে?

- রাইট ডাক্তার। আমি রোজ একদিন করে পিছিয়ে চলেছি। আমি আজ থেকে গতকালে পিছিয়ে যাচ্ছি। রোজ।

- কী সাংঘাতিক।

- আজ জুন মাসের নয় তারিখ, তাই তো? একমাস আগে আমি জুলাইয়ের নয়ে ছিলাম।

- অ।

- আপনি অবিশ্বাস করতে পারেন। আমি মাইন্ড করব না।

- বিপুলা এ পৃথিবী। এটসেটেরা এটসেটেরা। বিশ্বাস অবিশ্বাসের দায় আমার নয়। 

- আজকে ইন্ডিয়া জিম্বাবুয়ের ওয়েনডে হচ্ছে তো? 

- হচ্ছে।

- মোবাইলে লাইভ স্কোর চেক করুন দেখি ডাক্তার।

- গোটা সেশনের টাকা দিয়েছেন। যা বলবেন শুনব। যা করতে বলবে করব। এই যে...টসে জিতে ইন্ডিয়া ব্যাট করছে। বাইশ নম্বর ওভারে একশো বেয়াল্লিশ এক উইকেটে। কোহলি চালিয়ে খেলছে।

- বাইশ নম্বর ওভার তো। তেইশ নম্বর ওভারের প্রথম বল। একটা বিমার কোহলির কনুইয়ে লাগবে। রিটায়ার্ড হার্ট। 

- বলেন কী।

*মিনিট পাঁচেক পর*

- তুকতাক নাকি মিস্টার সেন? কোহলি বোধ হয় গোটা সিরিজের জন্য গেল।

- কোহলিকে নিয়ে ভাববেন না ডাক্তার। হালকা চোট। হাড় ভাঙেনি। পরের ম্যাচ খেলবে। সেঞ্চুরিও করবে।

- একটা খটকা লাগছে মিস্টার সেন। জুন মাসের নয় তারিখ তো আপনি ইতিমধ্যেই দেখেশুনে ফেলেছেন। এ চেম্বারের ঘটনাটাও তো..।

- ইয়েস। এ দিনটাও আমার দেখা।

- মিস্টার সেন। আপনাকে কাউন্সেল করা আমার কম্ম নয় যা বুঝছি।

- হাল ছাড়ছেন ডাক্তার?

- একটা কাজ করা যাক। আগামীকাল সকালে বরং আমি আপনাকে একটা ফোন করি। বা দেখাও করতে পারি। ব্যাপারটা ভীষণ ইন্ট্রিগিং। 

- আপনার আগামীকাল ডাক্তার? অর্থাৎ দশই জুন?

- ইয়েস।

- হ্যাঁ। দেখা করতেই পারেন। কিন্তু আপনি আজ ঘুমিয়ে কাল সকালবেলা দশই জুনে পৌঁছবেন অথচ আমি ফিরে যাব ন'তারিখে। অতএব  আপনার সঙ্গে আমার কথা হবে ভবিষ্যতের আমির সঙ্গে। দশই জুন আমার দেখা ও চাখা হয়ে গেছে। আমাদের দেখা হবে ওয়াইজ আউল কফি শপে।

- ওহ। সে'টাও আপনার জানা?

- ইয়েস ডাক্তার। আর এ'টাও জানা যে আপনার সঙ্গে আমার আগামী পরশু,  তরশু এবং তারপর একটানা প্রায় রোজ দেখা হবে। ওই একই কফিশপে।

- আপনি নিশ্চিত? আমাদের দেখা হবে?

- ডাক্তার ডাকটা বিরক্তিকর লাগছে। অনুপমা বলেই ডাকি?

- অ্যাস ইউ উইশ মিস্টার সেন।

- আমরা তুমিতে শিফট করব ঠিক সাত দিন পরে।

- হোয়াট?

- তুমিতে শিফট করব। ষোলোই জুন।

- মিস্টার সেন, ব্যাপারটা অস্বস্তিকর জায়গায় যাচ্ছে।

- প্রেম নিবেদনটা আমিই করব। বাইশে জুন। হুট করে বিয়ের জেদটা অবশ্য আপনার দিক থেকেই আসবে অনুপমা। 

- বাড়াবাড়ি হচ্ছে নাকি?

- আমার সিচুয়েশনটা আজ আপনার গোলমেলে ঠেকছে৷ কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই বুঝবেন কী গভীর সমস্যার আমি রয়েছি তেইশে জুন আপনি আমার হাত টেনে নিজের মুঠোর মধ্যে নেবেন অনুপমা। ওই, ওয়াইজ আউল কফি শপেই।

- মিস্টার সেন...!

- ষোলোই জুন থেকে তুমি বলার পাশাপাশি আমার নাম ধরে ডাকাও শুরু করবেন আপনি। মিস্টার সেনের বদলে অভিরূপ। 

- ব্যাপারটা পাগলামোর পাশাপাশি খুব আপত্তির জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছে মিস্টার সেন। 

- অনুপমা। কোহলির ওই চোটের মতই হয়ত আমাদের সম্পর্কটাও ঠেকানো যাবেনা। জানি৷ তবু, ফিরে আসার সুযোগ পেয়ে একটা শেষ চেষ্টা করতে এলাম, যদি আপনাকে ঠেকানো যায়। আমি আপনাকে সত্যিই ভালোবেসেছি অনুপমা। আর সেই ভালোবাসার জন্যই বলতে এলাম, আমার সঙ্গে আর দেখা করবেন না। প্লীজ না। জানি না এই ভাবে আমাদের তেসরা জুলাইয়ের হুটহাট করে সেরে ফেলা বিয়েটা আটকানো যাবে কিনা। কিন্তু নয়ই জুলাইয়ের পর থেকে আমি আর এগিয়ে দশই জুলাইয়ে যেতে পারিনি; এ'টা ভেবে একটা প্রবল অস্বস্তি হচ্ছে৷ ব্যাপারটা সুবিধের ঠেকছে না। অনুপমা, প্লীজ অ্যাভয়েড মী। প্লীজ।

- দেখুন মিস্টার সেন। আমি আপনার থেরাপিস্ট না হলে এখুনি আপনাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতাম। কিন্তু আপনার কথাগুলো মন দিয়ে শোনা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, তা যতই গোলমেলে হোক না কেন। আর হ্যাঁ, আগামীকাল আমি আপনার সঙ্গে দেখা করব এবং সে'টা করব পিওরলি অ্যাকাডেমিক ইন্টারেস্টে। না হয় সেই ওয়াইজ আউলের কফি শপেই দেখা করব কারণ আপনার বিটকেল ডিলিউসনগুলো ধুয়েমুছে সাফ করার দরকার আছে।

- ভুল করছেন অনুপমা। একটা বিরাট ভুল করছেন।

- কাল সন্ধ্যে সাতটায়।  ওয়াইজ আউল কফি শপ। আর এখন আপনি আসতে পারেন৷ আপনার সঙ্গে এখন আর বাড়তি কথা বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

***

- অনুপমা।

- ইয়েস ডক্টর মিত্র? অভিরূপ কেমন আছে...?

- সরি। চেষ্টা করেও কিছু করতে পারলাম না। ইট ওয়াজ আ ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক।  ইওর হাসব্যান্ড ইজ নো মোর।

- আজ জুলাইয়ের দশ তারিখ। অভিরূপ ঠিক এই ভয়টাই পেয়েছিল ডাক্তার। আমায় সাবধানও করেছিল। কিন্তু আমিই...।

- আর ইউ ওকে অনুপমা? আমি জানি এ'টা কত বড় একটা শক...।

- অভিরূপ আমায় সাবধান করেছিল। বারবার। অথচ ওকে বিশ্বাস করতে চেয়েও পারিনি। আই ফেল ইন লাভ ডক্টর, আমি ভালোবেসেছিলাম।

Wednesday, June 10, 2020

দিবাকর মুন্সীর ফর্মুলা


*
ব্যাপারটা তেমন কঠিন নয়৷ হোমিওপ্যাথির চারটে বড়ি এক  গেলাস জলে মিশিয়ে দেওয়া। ব্যাস, কাজ শেষ। কাচের গেলাসটা শৌখিন কাঠের টেবিলের ওপর রাখা থাকবে, সকালের দিকটায় এ' ঘরে কেউ থাকবেও না। গেলাসের জলে সে বড়ি মিশিয়েই মনোহরের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ার কথা। ঘরটা আদতে স্বনামধন্য লেখক অমল চৌধুরীর অফিসঘর। মনোহর বেরিয়ে যাওয়ার আধঘণ্টা পর অমলবাবু  সেই ঘরে ঢুকবেন, নিজের টেবিলে বসবেন আর কিছুক্ষণের মাথায় নিশ্চয়ই সেই গেলাসে চুমুক দেবেন৷ 

সেক্রেটারি হিসেবে কাজটা করতে একদমই মন সরছিল না মনোহরের। কিন্তু এই সামান্য কাজের জন্য দিবাকর মুন্সীর আড়াই লাখটাকার অফারটা ফিরিয়ে দেওয়া গেলনা। অমল চৌধুরীর সেক্রেটারি হিসেবে দেড় বছর চাকরী করেও এত টাকা আয় করতে পারেনি সে। দিবাকর মুন্সী প্রকাশক, অমলবাবুর বেশির ভাগ বই উনিই ছাপেন। সম্প্রতি কী একটা ব্যাপার নিয়ে দু'জনের মধ্যে মন কষাকষি শুরু হয়েছিল বটে। কিন্তু দিবাকরবাবু যে আড়ালে ডেকে এমন একটা অফার দিয়ে বসবেন, সে'টা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি মনোহর।

অবশ্য অমলবাবু মানুষ হিসেবে তেমন সুবিধের নন, পয়সাকড়ির ব্যাপারে বেশ চশমখোরই বলা চলে। কিন্তু তবু এমন গোলমেলে একটা কাজ করতে যে সে রাজী হবে সে'টা মনোহর আগে ভাবেনি। নিজের মধ্যে যে এত লোভ জমে আছে, সে'টা সে এর আগে টের পায়নি। দিবাকর মুন্সী অবশ্য বারবার আশ্বাস দিয়েছে যে অমল চৌধুরীকে প্রাণে মারবার কোনও ইচ্ছে তার নেই। তাছাড়া এই অমলবাবুর সেক্রেটারির চাকরীটাও দিবাকর মুন্সীই পাইয়ে দিয়েছিলেন।  তাছাড়া দিবাকরবাবু ঘোর ব্যবসায়ী মানুষ, তাঁর কথায় বিশ্বাস করারও কোনও কারণ নেই৷ তবে আগাম হাতে পাওয়া আড়াই লাখটাকার জন্য এ সামান্য কাজটুকু না করার মানে হয়।


**

- হ্যালো।

- হ্যালো। দিবাকর? নাহ্ হে। ক'দিন ধরে অনেক ঝগড়াঝাটি করলাম বটে তোমার সঙ্গে। কিন্তু আজ হঠাৎ মনে হচ্ছে তোমার কথাই ঠিক৷ আমি আর প্রেমের গল্প লিখব না। বড্ড বেশি রিপিটেটিভ হয়ে যাচ্ছিল। এ'বারে পুজোয় আমি বরং একটা ভৌতিক উপন্যাস জমা দেব। প্রেমের দু'টো লেখা পড়েছিল। নিজেই সে লেখায় চোখ বুলিয়ে দেখে বুঝলাম; সেই একঘেয়ে বিরক্তিকর খাড়া বড়ি থোড। ফর্মুলায় পেয়ে বসলে যা হয় আর কী। কিন্তু আমার ঘোর কেটেছে৷ পাণ্ডুলিপি দু'টো পুড়িয়ে ফেলেছি। ভূতের উপন্যাসের একটা প্লটও মাথায় দানা বেঁধেছে। আজই লেখা শুরু করব।

- অমলদা, যখনই আপনি নতুন স্টাইল ধরেছেন, ফাটিয়ে দিয়েছেন। এ'বারেও তাই হবে। আমি নিশ্চিত।

- কিন্তু তোমার একটা সাহায্য লাগবে যে দিবাকর।

- এনিথিং ফর ইউ অমলদা। বলুন না।

- কোনও সেক্রেটারিই আমার অফিসে বছর দেড়েকের বেশি টিকছে না হে। আর সেক্রেটারি ছাড়া যে আমি অচল।

- সে কী, ওই যে ছেলেটি। কী নাম যেন.. মনোহর। বেশ চটপটে করিৎকর্মা ছোকরা বলে মনে হয়েছিল তো। সেও কেটে পড়েছে নাকি?

- এই নিয়ে টানা সাত নম্বর সেক্রেটারি না বলে কয়ে ডুব দিল হে। স্ট্রেঞ্জ ব্যাপারস্যাপার।  আর তুমি ছাড়া তো আমার গতি নেই। দাও দেখি একটা নতুন কাউকে খুঁজেপেতে।  

- ও নিয়ে আপনি ভাববেন না অমলদা। ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

***

- এসো দিবাকর। এসো। 

- কেমন আছ ডাক্তার?

- যেমন দেখছ৷ দিব্যি।

- তোমার জন্য নিয়ে এলাম। এই দ্যাখো।

- নতুন পাণ্ডুলিপি? 

- অমল চৌধুরীর নতুন নভেল। পুজোর আগেই ছেপে বেরোবে। এই প্রথম ভদ্রলোল ভৌতিক প্লট নিয়ে লিখল। পড়ে দ্যাখো ডাক্তার, এক্কেবারে হাইক্লাস। কে বলবে কয়েকমাস আগেই গেঁজে যাওয়া প্রেমের প্লটে দিস্তে দিস্তে লিখে পাঠকের হাড় জ্বালাচ্ছিল। 

- বেশ পড়ে দেখব। তবে সেই তো ভিশিয়াস সাইকেল। এই ভূতের নভেল বেস্টসেলার হবে। তারপর একটানা যাই লিখবে শুধু ভূত। ততক্ষণ লিখে যাবে যতক্ষণ না পাঠক বমি করতে শুরু করেছে৷ 

- তা আর বলতে। গোয়েন্দা গল্প পাঠক খেলো মানে একটানা শুধু ডিটেকটিভ নভেল চালাবে। ঐতিহাসিক শুরু হলো তো বছরখানেক শুধু ঐতিহাসিক।  একবার প্রেমের প্লটে আটকা পড়ল তো শুধু গদগদ। আবার নামী লেখকের ইগোর ওজনও কম নয়৷ বিন্দুমাত্র নেগেটিভ ফীডব্যাক পেলেই বাবুর গোঁসা হয়ে যায়। 

- ফর্মুলা যে সাহিত্যের কী ক্ষতি করে। অথচ ফর্মুলা ফর্মুলা করেই অমলবাবুরা নষ্ট হয়ে যান, আর পাঠকদের প্রতিও অবিচার করেন।

- অগত্যা। ফর্মুলা ভাঙার দায় নিতে হয় আমার মত প্রকাশকদের৷ নেহাত তোমার ওই সাহিত্য ফর্মুলা ভাঙার জাদুবড়ি ছিল ডাক্তার। ওটির গুণেই তো বারবার এই অমল চৌধুরীকে খাদের ধার থেকে টেনে আনতে পারি। তবে যাদের দিয়ে অমলদাকে এ বড়ি গেলানো, সেই সেক্রেটারিগুলোর খাই বড় বেড়ে গেছে আজকাল।

- স্টাইলভাঙা লেখকের বই বেচে মুনাফাও তো কম হয়না তোমার দিবাকর। না হয় মাঝেমধ্যে অভাবী ছেলেমেয়েগুলোকে কিছু কিছু দিলে। যাকগে, শোনো। অমল চৌধুরী আগামী কিছুদিন ভূতের গল্প নিয়েই থাক। পরের বছর ওর স্টাইল ভাঙার জন্য নতুন বড়ি তৈরি করছি, এ'বার ওঁর ভাঁড়ার থেকে রম্যরচনা টেনে বের করব ভাবছি। 

- ব্রাভো ডাক্তার। ব্রাভো। এমনিতে অমলদার ভাষার জোর আছে৷ শুধু তোমার ওই স্টাইলভাঙার সাহস দেওয়া বড়ির সাপ্লাই থাকলেই, ভদ্রলোক অসাধ্যসাধন করতে পারবেন। 

-  আমার কমিশনটা ভুলো না যেন দিবাকর। 

Tuesday, June 9, 2020

নন্দর তন্ত্রসাধনা

ব্যাপারটা যে আগাগোড়াই গোলমেলে তা নিয়ে আর নন্দর কোনও সন্দেহ রইলনা। বারুইপুর স্টেশনের কাছে চটিবইয়ের দোকান থেকে বাইশ টাকায় ১০১ তন্ত্র টোটকার মেডইজি গাইডবইটা কিনেছিল সে; নেহাত শখেরই বশে। এমন শিক্ষামূলক বইপত্র সে মাঝেমধ্যেই কিনে থাকে। ম্যাজিকের সহজপাঠ, জার্মান পদ্ধতিতে বাঙালি মাংস রান্না অথবা চটজলদি হোমিওপ্যাথি; এমন চিত্তাকর্ষক বই সে মাঝেমধ্যেই কিনে আনে। আর সে'সব বই পড়ে পড়েই তো পাড়ার ক্লাবের সান্ধ্য আড্ডায় নন্দর সবসময় একটা দাপুটে উপস্থিতি থাকে। 

পোস্টঅফিসের ক্লার্কের চাকরীটায় থিতু হওয়া সত্ত্বেও এখনও বিয়েটা সেরে ফেলা হল না। আজ নন্দর বাপ-মা বেঁচে থাকলে হয়ত একটা সম্বন্ধ দেখেশুনে একটা হিল্লে করে ফেলতেন; বত্রিশ বছর বয়সে তাঁকে এমন একা থাকতে হত না৷ 

যা হোক, একা থাকায় বিস্তর সুবিধেও আছে৷ এই যেমন তন্ত্রসাধনার বইয়ের খানচারেক পাতা পড়ার পরেই কেমন একটা নেশা ধরে গেল। গত তিনদিন সিকলীভ নিয়ে বাড়িতে বসে দিব্যি এ বই থেকে বিভিন্ন মন্ত্রতন্ত্র প্র‍্যাক্টিস করে যাচ্ছে সে। মনের মধ্যে বেশ কেমন একটা চনমনে ভাবও তৈরি হচ্ছে৷ একশো বারো পাতার বই, প্রথম দিন ঝড়ের গতিতে পড়ে শেষ করে ফেলেছিল সে। তারপর থেকে প্রতিটি শব্দ ধরে ধরে পড়ছে, জটিল জায়গাগুলো বারবার আবৃত্তি করছে। বাড়িতে গেরুয়া বসন বলতে তেমন কিছু ছিলনা তাই একটা পুরনো গেরুয়া গামছা জড়িয়েই তন্ত্র অধ্যয়ন চালিয়ে যাচ্ছে নন্দ; টিশার্ট আর বার্মুডা পরে এমন গভীর কেতাব আত্মস্থ করা যায়না৷  

দিব্যি চলছিল সবকিছু।  রাতের কোন সময়ে সধবা মড়ার সিঁথি থেকে সিঁদুর নিয়ে তা'তে বাদুড়ের রক্ত আর জবাফুল পোড়ানো ছাই মিশিয়ে পুরিয়া বানিয়ে খেলে আড়াই বছর আয়ুবৃদ্ধি হবে, অমাবস্যার রাতে শ্মশানের মাটিতে গজানো কলমিশাক তুলে কুচনো বেগুন দিয়ে কীভাবে রান্না করে খেলে অন্তরাত্মার তেজ বাড়বে; এমন সব রসালো টোটকা তো ছিলই। পাশাপাশি ছিল বেশ কিছু ঘরোয়া টোটকার হদিশও। ঝাঁটা, কাটারি, কড়ি, হরতকি, সৈন্ধবলবণ, শাড়ির আঁচল থেকে কেটে নেওয়া টুকরো আর এমন শ'খানেক ঘরোয়া জিনিসপত্র দিয়ে যে কী অসাধ্যসাধন করা যায়; তন্ত্রের গভীরে না ঢুকলে তা বোঝা সম্ভব নয়।

বিভিন্ন গূঢ় মন্ত্রটন্ত্র আউড়ে বেশ চমৎকার দু'টো দিন কেটেছিল নন্দর। এত সহজে যে তন্ত্রশক্তি আয়ত্ত্ব করা যায় তা সে ভাবতেও পারেনি। তন্ত্রবলে দিব্যি ঘর ঝাড় দেওয়া, ঘর মোছা বা রান্নাবান্নার কাজ চালিয়ে নেওয়া যায়। এমন মহামূল্যবান সব বই কেন যে অমন সস্তা চটিবইয়ের দোকানে পড়ে থাকে। এই বইয়ের থেকেই এক দু'টো মন্ত্র আউড়ে নন্দ মনে এমন বল পেলো যে দিব্যিদৃষ্টিতে স্পষ্ট দেখতে পেল যে দক্ষিণপাড়ার সলিল দত্তর ছোটমেয়ে নির্মলার সঙ্গেই তাঁর বিয়ে হবে৷ তন্ত্রের সত্যকে তো আর মিথ্যে হতে দেওয়া যায়না, তাই নন্দ স্থির করলে যে সে নিজেই নিজের সম্বন্ধ নিয়ে সলিল দত্তর বাড়িতে হাজির হবে। তন্ত্রে পাওয়া আশ্বাস তো আর মিথ্যে হতে পারেনা৷ কিন্তু পরক্ষণেই মনে হল সংসারে বাঁধা পড়ে আর কী হবে। তন্ত্রের স্বাদ একবার যে পেয়েছে, তাঁর মুক্তি তো শ্মশানে স্তব্ধতা আর অমাবস্যার অন্ধকারে। নির্মম গেরস্থালীতে আটকা পড়লে তাঁর চলবে কেন?

কিন্তু এই সাতপাঁচ ভাবনার মধ্যেই ঘটল সেই বিশ্রী গোলমেলে ব্যাপারটা। ঘরের কোণে পড়ে থাকা ঝাঁটাটা উড়ে এসে নন্দকে পেটাতে আরম্ভ করল। পেটাতে শুরু করল অথচ থামার নাম নেই।  এ'দিকে সে বইতে উড়ন্ত ঝাঁটার পিটুনি আটকানোর কোনও টোটকাও বাতলে দেওয়া নেই৷ 

আধঘণ্টা এক তরফা উড়ন্ত ঝাঁটার হাতে বেধড়ক পিটুনি খাওয়ার পর  রাগের চোটে নন্দ সেই তন্ত্র টোটকার বইটাকে ছিঁড়ে কুচিকুচি করে ওয়েস্টপেপার বাস্কেটে ফেলে দিল। ব্যাস, অমনি ঝাঁটা বাবাজীও ঠাণ্ডা। কী অদ্ভুতুড়ে কাণ্ড। 

নাহ্, নন্দ ঠিক করলে যে তান্ত্রিক হওয়ার ব্যাপারটা আপাতত মুলতবি রাখতে হবে। যত্তসব বিটকেল ব্যাপার। তার চেয়ে বরং দক্ষিণপাড়ার দত্তবাড়ির ছোটমেয়েটির ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে বিয়েথার ব্যাপারটা সেরে ফেললে একটা কাজের কাজ হবে৷ 

***

- গিন্নী, ছেলেটাকে এ'বার ছাড়ো। 

- সে আহাম্মককে একলা ছাড়ার উপায় আছে? নিজের কোনও ব্যাপার তাঁর বিন্দুমাত্র খেয়াল থাকে?

- আদরে যেমন বাঁদর করেছ, তেমনটাই তো ভুগতে হবে। 

- নন্দ তোমার ছেলে নয় যেন?

- আমি ওর বাপ। ওকে আলবাত ভালোবাসি। কিন্তু তা'বলে মরার পরেও চটিবইয়ের ভূত হয়ে ওর দেখভাল করাটা বাড়াবাড়ি।  অন্যান্য ভূতেরাও এ'সব বাড়াবাড়ি শুনলে ছি ছি করবে।

- বাড়াবাড়ি এ'টা?

- বাড়াবাড়ি নয়? নন্দর মনখারাপ হলে ম্যাজিকের চটি বই সেজে ওর পিছু নেওয়া। শরীর খারাপ হলে হোমিওপ্যাথির বই হয়ে ওকে টোটকা বাতলে দেওয়া। তন্ত্রের বইয়ের চেপে ওর বাড়ির কাজ করে দেওয়া, এগুলো বাড়াবাড়ি নয়?

- নন্দটা যে বড় একা গো। মা হয়ে আমি কী করে...।

- এ'বার অন্তর ওকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে দাও গিন্নী।

- সে ব্যবস্থাই তো করে এলাম এ'বারে। দত্তবাড়ির ছোটমেয়েটা বড় মিষ্টি। আর ও মনে মনে নন্দকে বেশ পছন্দও করে। নেহাত নন্দটা হাবলা তাই এদ্দিন টের পাইনি। ওই তন্ত্রের অছিলায় সে বুদ্ধি নন্দর মাথায় রেখে এসেছি।

- সে তো বুঝলাম, কিন্তু ওকে হঠাৎ ঝেঁটাপেটা করতে গেলে কেন?

- গবেট ছেলে ভাবছিল সংসার ছেড়ে তান্ত্রিক হবে৷ আমি দেখলাম এ তো উল্টোবুঝলিরাম। ব্যাস, ঝ্যাঁটা তুলে দিলাম আচ্ছা করে। ঘা-কতক পিঠে পড়তেই সব পাগলামি ঠাণ্ডা আর কী।