- আমায় ডেকেছিলেন স্যার?
- এসো শ্যামল। এসো। বসো।
- জরুরী কিছু কী?
- ব্যাপারটা সিরিয়াস।
- বিট্টু স্কুলে কোনও গোলমাল করেছে?
- না। স্কুলে বা ক্লাসে কোনওরকমের গোলমাল করার ছেলে সে একেবারেই নয়। হি ইজ ভেরি ওয়েল বিহেভড। কথাবার্তায় নম্র। ইন ফ্যাক্ট, ওকে দেখে আমার তোমার কথা মনে পড়ে। ক্লাসে তুমিও ততটাই শান্তশিষ্টই ছিলে। সে'দিক থেকে স্বভাবগুলো সেও বাপের মতই পেয়েছে।
- তা'হলে কী ব্যাপার স্যার। আপনাকে দেখে বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছে।
- ব্যাপারটা দুশ্চিন্তার তো বটেই শ্যামল।
- নেশাটেশা কিছু করছে নাকি বিট্টু? বিড়ি খেতে গিয়ে ধরা পড়েছে স্কুলে? ক্লাস ইলেভেনে উঠে শেষ পর্যন্ত এইসব শুরু করেছে?
- দু'টো বিড়ি ফুঁকলে লাংসের ক্ষতিটতি হয় বটে। বিড়ির চেয়ে ভালো কোয়ালিটির চানাচুরের নেশা বরং অনেক বেশি প্রগ্রেসিভ। কিন্তু না হে শ্যামল, সে'সব লঘু ব্যাপারে আমি গার্জেন কল করিনা।
- তবে স্যার? একটু খুলে বলুন প্লীজ। ওই একটি মাত্র ছেলে। যা যুগ পড়েছে, আমি আর ওর মা মাঝেমধ্যেই নার্ভাস হয়ে পড়ি৷ গোল্লায় যাওয়ার এত কল চারদিকে..।
- এখনই সামাল না দিলে সে গোল্লায় যেতে পারে বটে। ব্যাপারটা খুব ক্রিটিকাল জায়গায় পৌঁছে গেছে দেখছি।
- ক্রিটিকাল?
- খুলেই বলি। তুমি নিশ্চয়ই জানো যে আমার নাতনী ঝিমলিও তোমার ছেলের সঙ্গে একই ক্লাসে পড়ে। ঝিমিলির মা আজ সকালে এই চিঠিগুলো ওর স্কুলের ব্যাগ থেকে উদ্ধার করেছে।
- চিঠি?
- তোমার পুত্রের লেখা।
- ঝিমলিকে লিখেছে?
- প্রেমপত্র।
- রাস্কেল বিট্টে। স্কাউন্ড্রেল কোথাকার। মা ঠাকুমার আদরে একটা আস্ত বাঁদর তৈরী হয়েছে। ওকে যদি আমি চাবকে সিধে না করি তা'হলে আমার নাম শ্যামল চ্যাটার্জী নয়। ক্যালকুলাস প্র্যাক্টিস না করে ইডিয়টটা প্রেম শুরু করেছে? তাও আপনার নাতনীর সঙ্গে? ওর কান কেটে যদি মাদুলি করে ওর গলায় আজ না ঝুলিয়ে দিয়েছি..।
- শ্যামল, তোমার কান কেটে নেওয়া উচিৎ।
- আজ্ঞে? স্যার?
- প্রেমের চিঠি লিখেছে বেশ করেছে।
- না মানে...ক্লাস ইলেভেনে...।
- ক্লাস ইলেভেনে ও প্রেমের চিঠি লিখবে না তো কি এই বয়সে আমি লিখব? এই তোমার শিক্ষা? প্রেম করছে বলে পেটাবে? তোমার শিক্ষক হিসেবে আমার আধঘণ্টা কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকা উচিৎ।
- না মানে আমি তা বলতে চাইনি স্যার। কিন্তু এই যে আপনি বললেন ব্যাপারটা সিরিয়াস। বিট্টু গোল্লায় যেতে বসেছে..।
- গোল্লায় যেতে পারে। তবে আটকানোর সময় আছে। ছেলেটা যেহেতু প্রেমে সিনসিয়ার, ওকে পথে আনা সহজ।
- ব্যাপারটা যদি..স্যার...একটু খোলতাই করে...।
- ঝিমলিকে তোমার ছেলে বারোটা চিঠি লিখেছে। টোটাল সাতাশটা বানান ভুল, পার চিঠি ট্যু পয়েন্ট টু ফাইভ। গ্রামারে ভুলচুক আরও খান সতেরো। সবচেয়ে বড় কথা, গদগদ সব লাইন কোট করবি কর; তাই বলে ইলিয়ট আর টেনিসন গুলিয়ে ফেলবি? তোমার এবং তোমার ছেলের ইংরেজি মাস্টার হিসেবে বলছি; ছেলেকে সামলাও, ও ছেলে ভেসে যেতে পারে। তবে হ্যাঁ, পুরো দায়িত্ব তোমার কাঁধেই বা চাপাই কী করে। আমি যেহেতু ওকে পড়াই, এ লজ্জা আমারই সবচেয়ে বেশি। সে অর্থে ওর প্রেমপত্রের প্রতিটি ভুলের জন্য আমারও তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিৎ।
- ছিঃ ছিঃ স্যার। এ আপনি কী বলছেন...।
- শোনো শ্যামল, আবারও বলি। প্রেমটা যেহেতু সিনসিয়ারলি করছে, ভাষার ভালোবাসাটা ও বুঝবে।
- আজ্ঞে।
- যাক। এ'বার তুমি এসো। আর তোমার ছেলেকে একবার আমার কাছে পাঠিয়ে দিও। স্কুলে নয়, বাড়িতেই যেন আলাদা করে দেখা করে যায়।
- হ্যাঁ, সেই ভালো। আপনিই না হয় বিট্টুকে একটু ধমকেটমকে দেবেন'খন।
- ধমকানোর কাজটা আমি স্কুলেই সেরে নেব। ওকে বাড়িতে ডাকছি তোমার ব্যাপারে ওয়ার্ন করতে। যেমন তোমায় ডেকে আমি ওর ব্যাপারে সাবাধনা করে দিলাম।
- আমার ব্যাপারে ওকে...?
- সাবধান করে দেব। প্রেমের মত একটা জরুরী ব্যাপার সম্বন্ধে ওর বাপের ধ্যানধারণা কতটা রিগ্রেসিভ সে'টা ওর জানা দরকার। তবে কোনওদিন তোমার লেখায় বানান বা ব্যাকরণে ভুল দেখিনি। কবিতার লাইনও কোনওদিন ভুল কোট করেছ বলে মনে নেই। ভাষার প্রতি যেহেতু তোমার সিনসিয়ারিটি আছে, প্রেম ব্যাপারটাও একদিন তুমি নিশ্চয়ই বুঝবে। তবে এইবেলা তোমার ছেলেকে সাবধান করে দিতেই হবে; যাতে প্রেমট্রেম না বুঝে তুমি গোল্লায় না যাও।
1 comment:
চমৎকার !
Post a Comment