- নুনের ডিবেটা এগিয়ে দেবেন প্লীজ?
- হুঁ।
- থ্যাঙ্ক ইউ। এ'খানে খাবারদাবার এত ব্ল্যান্ড..।
- হুঁ।
- অবশ্য, হসপিটালের ক্যাফেটেরিয়াতে এর চেয়ে বেশি কিছু আর আশা করিই বা কী করে বলুন।
- হুঁ।
- ইয়ে, আপনার স্যুপটা কিন্তু ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে..।
- হুঁ।
- শুনুন...এই যে...শুনছেন?
- হুঁ? আমায় বলছেন?
- অবভিয়াসলি। বলছি, আপনার স্যুপটা সেই তখন থেকে নিয়ে বসে আছেন কিন্তু এক চামচও মুখে তোলেননি। ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে তো।
- ও। না, ঠিক আছে।
- সে কী। ঠিক আছে মানেটা কী। স্যুপের স্বাদের অর্ধেক তো টেম্পারেচারে।
- ইচ্ছে নেই। থাক।
- তা'হলে নিলেন কেন? এ'দের ক্যাফেটেরিয়ায় জিনিসপত্রের যা দামটাম, দামী কফিশপকে হার মানায়।
- প্লীজ। আপনি আমার চেয়ে বয়সে অনেক বড়। তবু বলছি। ডোন্ট মাইন্ড, আমার মনমেজাজটা ভালো নেই। কথাবার্তা বলতে চাইছিনা।
- আপনার পেশেন্টের সিচুয়েশন বুঝি..।
- আমি বরং পাশের টেবিলে গিয়ে বসছি।
- প্লীজ না, তারপর স্যুপের বাটি ফেলে একটা একাকার কাণ্ড হোক আর কী।
- দেখুন মিস্টার...।
- দত্ত। অমিত দত্ত। আর আপনি?
- দেবজ্যোতি সিনহা। অমিতবাবু, প্লীজ স্পেয়ার মী।
- শিওর। শিওর।
- থ্যাঙ্ক ইউ।
- স্যুপটা?
- ওকে। খাচ্ছি।
- নুনের ডিবেটা। এই যে। একটু ছড়িয়ে নিতে পারেন। যদি দরকার মনে হয় আর কী।
- না।
- আপনার ফ্যামিলির কেউ? ভর্তি?
- বাবা। ক্রিটিকাল।
- আপনি..এক ছেলে?
- দাদা ক্যালিফোর্নিয়ায়। আসতে পারবে বলে মনে হয়না।
- স্যুপটা?
- খাচ্ছি তো।
- না মানে, মাইন্ড করবেন না। অমন মুখ ভেটকে খাচ্ছেন। গায়ে লাগবে বলে মনে হয়না।
- দিন নুনের ডিবেটা। সত্যিই বড্ড ব্ল্যান্ড।
- একটা স্যান্ডউইচ বলি? না না, এ বাবা। আমি কিন্তু ইন্ট্রুড করতে চাইনি।
- আসলে, ছোটবেলাতেই মাকে হারিয়েছি। বাবা আমাদের দুই ভাইকে যে কী'ভাবে আগলে বড় করেছেন...। ওকে এইভাবে কষ্ট পেতে দেখে খুব..।
- উনি কি...আইসিইউতে?
- হ্যাঁ। ডাক্তাররাও তেমন ভরসা দিতে পারছেন না..।
- আপনার স্যুপটা ঠাণ্ডাই হয়ে গেছে। একটা স্যান্ডউইচ হলে বরং..।
- স্যান্ডউইচ আমার গলা দিয়ে নামবে না। স্যুপটাই খেয়ে নিচ্ছি বরং।
- আচ্ছা।
- দাদাটা থাকলে অন্তত..। ওকে এত মিস করছি...।
- স্যান্ডউইচটা? বলি? আমি শেয়ার করে নেব না হয় একটু। ডোন্ট মাইন্ড, গায়ে পড়াটা আমার স্বভাব। আপনি স্যুপটাকে জাস্টিফাই করতে পারছেন না।
- আপনি নিননা স্যান্ডউইচ।
- বয়স হয়েছে তো। ইচ্ছে থাকলেও এ'দের ডাবল ডেকার নিজে পুরোটা ম্যানেজ করতে পারব বলে মনে হয় না। আপনি যদি একটা স্লাইস অন্তত..।
- আপনি আমার চেয়ে বয়সে অনেক বড়। আমায় তুমি বলতে পারেন। আর স্যান্ডউইচ বলুন না। আমি নেব না হয় এক স্লাইস। তবে..আমি পে করব।
- সে তো ভালো কথা।
- আপনার পেশেন্ট?
- আইসিইউতে নেই।
- যাক। আপনার বাড়ির কেউ?
- আমার পেশেন্ট তুমি।
- এক্সকিউজ মী?
- সকালে হসপিটালের বাইরে চায়ের দোকানে তোমায় দেখলাম চা টোস্ট নিলে। খেলে না। লাঞ্চের সময় দেখলাম এ'খানে এসে রুটি সবজি নিলে এবং নষ্ট করলে। নিশ্চিত ছিলাম সন্ধ্যের ভিজিটিং আওয়ার শুরু হওয়ার আগে ফের আসবে এ'খানে। যাক, স্যুপখুনটা অন্তত রুখতে পারলাম।
- আপনি আমায় ফলো করছেন?
- রোজই করি। কাউকে না কাউকে। আমার সংসারে কেউ নেই। রিটায়ার করেছি। এখন হাসপাতাল টু হাসপাতাল ঘুরে রোজ তোমার মত কারুর পিছনে পড়ে যাই। তাকে খাইয়ে তবে স্বস্তি। স্যুপটা খেয়ে খানিকটা নিশ্চিন্ত করেছ। স্যান্ডউইচের একটা স্লাইস নিলে পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হই। আরে! পেশেন্টের হয়ে হাসপাতালে দাঁড়িয়ে লড়াই করতে স্ট্রেন্থ লাগে তো। না খেলে চলবে কেন!
- আপনি কি পাগল?
- পাগল? হতে পারি। নিজের সন্তানকে এক সময় এই হাসপাতালেরই আইসিইউতে দেখেছি। সেই সন্তানের শোকে পাথর হয়ে পড়া স্ত্রীকে খাওয়াদাওয়া ছেড়ে শেষ হয়ে যেতে দেখেছি। নিজেকে সুস্থ বলে আর কী'ভাবে দাবী করতে পারি বলো। তবে এই হাসপাতালের সামনের চায়ের দোকান বা এই ক্যান্টিনে এসে মাঝেমধ্যে বিমর্ষ মানুষের মুখে দু'এক গ্রাস খাবার তুলে দিতে পারি বইকি। কেউ নরম সুরে বললে শোনে, কাউকে ধমক দিতে হয় আর তোমার মত টেঁটিয়াকে মহাভারত শুনিয়ে পথে আনতে হয়। যত অন্ধকারই হোক, কান ধরে খাইয়ে দেওয়া গার্জেনের দরকার সবারই পড়ে। আমারও পড়বে কোনওদিন। সে'দিন আমি কোনও পাগলের দেখা পাব কিনা কে জানে।
- দু'টো স্যান্ডউইচ বলি বরং। একটা নিয়ে ভাগাভাগি করে খাওয়ার কোনও মানে হয়না।
2 comments:
ভাল লাগল।
অনেককিছু লিখব ভাবলাম কিন্তু চোখটা এমন ঝাপসা হয়ে এল.....ডুব দিতেই হল মনকেমনের সাগরে
Post a Comment