Wednesday, July 1, 2020

বাইশের দুই বিনোদ দত্ত লেন

- কাকে চাই?

- ম্যাডাম, এ'টা কি অমলেশ সমাদ্দারের বাড়ি?

- ওই ঢাউস নেমপ্লেটটা চোখে পড়েনি? ও'টায় কি অমলেশ সমাদ্দার লেখা আছে?

- এইচ দত্ত। ওহ, সরি। সরি। আসলে..।

- বাড়ির নম্বর কিছু আছে?

- বাইশের দুই বিনোদ দত্ত লেন।

- গুলিয়েছেন।

- গুলিয়েছি?

- এক্কেবারে।

- আসলে গুগল ম্যাপ ধরে..।

- ম্যাপকানা হয়ে অলিগলিতে ঢুকলে ওই হয়। ঝাড়া আড়াইশো মিটার পিছিয়ে গিয়ে শনিমন্দির পড়বে। সে'টার বাঁদিকের গলিতে ঢুকে ডান হাতের চার নম্বর বাড়ি।

- থ্যাঙ্কিউ।

- ও মা! কড়াইয়ের মাছ পোড়া লাগল বোধ হয়...।

**

ঘাটে এসে গা এলিয়ে দিতে ইচ্ছে করল নির্মলের। শেষ বিকেলের রোদ্দুর নরম হয়ে এসেছে। ঘাটের সিঁড়ি বেয়ে নেমে এসে পছন্দসই একটা জায়গা দেখে জলে গোড়ালি ডুবিয়ে বসল সে। প্যান্টে শ্যাওলার দাগ বসে যাবে, যাক গে। আজ গায়ে বুকে বড় নিবিড় ভালোলাগা লেগে আছে। 

পকেট থেকে বাদামের প্যাকেটটা বের করে ডান হাতের মুঠোয় কয়েকটা নুনমাখানো বাদাম ঢেলে নিয়ে সামান্য গুনগুন শুরু করল নির্মল। 

বুকের ভিতরটা কেমন তিরতির করছিল, ওই ভালোলাগায়। সুমির সংসার; সে এক জমকালো ব্যাপার।
সুমির রান্নাঘরের কড়াইতে মাছ।
সুমির কোমরে গোঁজা শাড়ির আঁচল।
সুমির থুতনিতে ঘামের দানা।

দেখে প্রাণ ভরবে না কেন?  আর কেউ না জানুক, নির্মল তো জানে; তাঁর বুকে হিংসের একটা ফোঁটাও নেই৷ মাকালীর দিব্যি কেটে সে বলতে পারে। 

কী বিচ্ছিরি পাগলামি যে আজ হঠাৎ মাথায় চেপে বসল! যাক, সে পাগলামীর বশে এদ্দিন পর দেখা তো হল। ক্ষণিকের কথাবার্তা, এ দাড়িগোঁফে ঢাকা বাউণ্ডুলে চেহারা সুমি চিনতে পারবেনা; এ'টুকু ভরসা ছিল। নাহ্, সুমিকে কোনওভাবেই বিরক্ত করা চলবে না।

সুমি যে কী ভালো। কী ভালো। এই যে গায়ে মুখে লাগা শেষ বিকেলের আলো আর পা ভেজানো নদীর জলের মিঠে শিরশির; আর দু'টো মিলেমিশে এই যে মনঅবশ করা ভালোলাগা - সুমি তার চেয়েও ভালো। 

চারদিকে কতশত মনকেমন করা ভালো; সঞ্জীবের বইতে রাখা ভোরের শিউলি ভালো, জলপটিতে মায়ের হাতের ওমটুকু ভালো, খিদেপেটে গরম ভাতের গন্ধ ভালো ।  আর সে'সমস্ত ভালো মিশলে যে কান্না; সুমি সে'খানে।

বাইশের দুই বিনোদ দত্ত লেন; নির্মলের অল্প হাসি পায়। 

**

বাইশের দুই বিনোদ দত্ত লেন; যত্তসব!

সাজানো ঠিকানার অছিলায় দেখা করতে আসায় দোষ নেই, আর কড়াইতে মাছের মিথ্যেটুকুতেই যত পাপ? মোটেই না। সুমি জানে, পাপ নেই তাতে। 

এদ্দিন পর যে লুকিয়ে দেখা করতে আসে, তার সামনে ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলা যায় নাকি? সুমি জানে, যায় না।

নির্মলের সাহস না থাক, এক ফোঁটা হিংসুটেপনাও কি থাকতে নেই? 

**

(পুনশ্চঃ হটস্টারে "আরিয়া" ওয়েবসিরিজটি দেখলাম। এ লেখার সঙ্গে অবশ্য সে সিরিজের কোনও যোগাযোগ নেই। তবে 'বড়ে অচ্ছে লগতে হ্যায়' গানটা মনের মধ্যে নতুন করে দাগ কেটে গেল। এই আর কী)

No comments: