- ধুর শালা প্যান্ডেমিক! উফ!
- যা বলেছ ভায়া। প্রাণ ওষ্ঠাগত এক্কেবারে।
- কী খতরনাক ভাইরাসের পাল্লায় যে পড়লাম..।
- এক্কেবারে হুলুস্থুল অবস্থা। তাই না?
- গোড়ার দিকে কিছুতেই ঠাহর করতে পারিনি যে জল এদ্দূর গড়াবে।
- গভর্নমেন্টই ঘোল খেয়ে গেল হে। আমরা তো টোটাল আতিপাতি আর আলটিমেট এলেবেলে।
- গভর্নমেন্টকে দোষই বা দিই কী করে বলো। এমন ক্যালামিটি এই সেঞ্চুরিতে আগে কেউ কি দেখেছে? বিলেত আমেরিকা টলে গেল, আমরা কোথাকার কোন হরিদাস পাল। তা ভায়া, ভ্যাক্সিনের খবর কিছু শুনেছ? আশার আলো আছে কিছু?
- কানাঘুষো যা শুনছি..তা খুব একটা কনফিডেন্স ইন্সপায়্যারিং নয়৷ অন্তত বছর দুয়েকের আগে তো তেমন কোনও আশা দেখছি না...।
- দু'বছর? দু'বছর ফেসমাস্ক না পরে থাকতে হবে?
- যে দেবতা যাতে তুষ্ট। মাস্ক পরলেই এই ভাইরাস এসে ক্যাঁক করে ধরবে। এমন খতরনাক ব্যাপার যে হতে পারে তা কেউ কোনওদিন ভাবতে পেরেছিল?
- সত্যিই, একটানা মাস্ক না পরে থাকা, সে যে কী অস্বস্তিকর। মনে হয় যেন উলঙ্গ হয়ে ঘোরাঘুরি করছি৷ রাত্রে তো ঘুমই আসতে চায়না। মাঝেমধ্যে পাশবালিশ দিয়ে মুখ নাক ঢাকি বটে কিন্তু দুধের স্বাদ কি ঘোল চেটে মেটানো যায় বলো।
- গিন্নীকে দু'টো কাঞ্জিভরমের মাস্ক দিয়েছিলাম, জলে গেল। তবে শুধু তো সে'টুকুই নয়৷ মাস্ক ইন্ডাস্ট্রি যে পথে বসেছে। ইকোনমি গেঁজে যেতে বসেছে৷ চারদিকে হাহাকার। এ যে কী দুর্যোগ!
- সত্যিই৷ রোজ সকালে উঠে মনে হয় যেন কোনও দুঃস্বপ্ন দেখছি। এই দেখ, চারপাশের সবকিছু রিয়েল কিনা ভেরিফাই করতে গিয়ে নিজের গায়ে এমন রাম-চিমিটি কেটেছি যে কালশিটে পড়ে গেছে।
- আহা রে।
- আর সবচেয়ে বড় যন্ত্রণা শুরু হয়েছে এই রোজ রোজ বাজার যাওয়া। ব্যাটাচ্ছেলে প্যান্ডেমিকের পাল্লায় পড়লাম সমস্ত হোমডেলিভারি বন্ধ। বাপের জন্মে ভাবিনি যে এমন এক থার্ডক্লাস ভাইরাসের পাল্লায় পড়তে হবে যাকে আটকানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে মানুষের গিজগিজে ভীড়ে গিয়ে মেশা। উফ! ডিসগাস্টিং টু দি পাওয়ার ইনফিনিটি।
- সত্যিই ভাবা যায়না। কী ডেঞ্জারাস ব্যাপার। রাস্তায় বেরোলেই বুক কাঁপছে। প্রতিবেশী টু হাফ-চেনা পুলিশদাদাটি; যে কেউ গায়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে কোলাকুলি করার জন্য। আহ্, ভাবলেই গা শিউরে উঠছে,গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।
- সত্যিই। এ যন্ত্রণা আর নেওয়া যাচ্ছে না ভাই। তিন মাস ধরে মেগা সাইজের সব প্যান্ডেল দাঁড় করিয়ে পুজো হচ্ছে স্রেফ ভীড় জেনারেট করতে। বিজয়া আদৌ আসবে কিনা, আসলে কবে আসবে; কেউই জানে না।আর আজকাল তো লকডাউন ব্যাপারটাকেই অবাস্তব এক ইতিহাসের মত মনে হয়।
- এই একটানা পুজো হল আর একটা মেনেস! কী গা ঘিনঘিনে ব্যাপার। মোবাইলে পুজো অ্যাপের বোতাম ফিঙ্গারপ্রিন্টে অ্যাক্টিভেট না করে বারোয়ারী প্যান্ডেলে, হাতে ফুল চটকে, ভীড়ে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে কম্পালসরি অঞ্জলি দেওয়ার এই যে ন্যাকাপনা; তা কহাতক বরদাস্ত করা যায়? আর তার ওপর গোঁদের ওপর বিষফোঁড়া হয়েছে এই ওয়ার্ক ফ্রম অফিস।
- তা আর বলো কেন। ভাবতে পারো...ওয়ার্ক ফ্রম অফিসের জ্বালায় উইকডেতেও রাস্তাঘাটে রীতিমতো ট্র্যাফিক জ্যাম হচ্ছে? দিনে দিনে আর কত দেখব?
- নাহ্। মনখারাপ ক্রমশ গভীর হচ্ছে ভায়া। শুধু আমার একার নয়, চারদিকেই এক অবস্থা। দেখো কপালে আর কত কী আছে। কবে শুনব ডিজিটাল বুকক্রিকেট-টুকুও ব্যান করে দেওয়া হবে। শুনেছ তো, নতুন স্টেডিয়াম তৈরি হচ্ছে দেশের প্রতিটি শহরে।
- স্টে...স্টেডিয়াম? এ কোন মান্ধাতা আমালে আমরা ফিরে যাচ্ছি? শেষে কি আমরা ডার্ক-এজের মত কাঠের ব্যাট আর চামড়ার বল দিয়ে ক্রিকেট খেলা শুরু করব?
- করব। এবং জোর করে ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কেলে মানুষকে স্টেডিয়ামে নিয়ে যাওয়া হবে সে'খেলা দেখার জন্য। আর সে'খানেই শেষ নয়। তোমার পেয়ারের নেটফ্লিক্সও জলে গেল বলে। নেটফ্লিক্সের জন্য মানুষ বাড়ি থেকে বেরোচ্ছে না, তাই রাস্তায় ভীড় তৈরি হচ্ছে না আর তার ফলে বেড়ে চলেছে ভাইরাসের অত্যাচার।
- নাহ্। এ অসহ্য৷ আর কয়েকমাসের মধ্যে বাজারে ভ্যাক্সিন না এলে...।
- না এলে?
- রিভোল্ট করব! সরকারি নির্দেশ অমান্য করব। অন্তত একটা টোকেন প্রটেস্ট করবই।
- প্রতীকী প্রতিবাদ? কী'রকম?
- হপ্তায় তিনদিন বাধ্যতামূলক ফুচকা খাওয়া? ভীড়ে দাঁড়িয়ে? লাইন দিয়ে? মানছি না! মানব না! আর দু'মাস অন্তর পুরী বা দার্জিলিং গিয়ে লাফালাফি? নেভার। কভি নহি!
No comments:
Post a Comment