Thursday, July 9, 2020

তিব্বতি মাদুলি


- মনখারাপ?

- আজ্ঞে। প্রচণ্ড। টেরিফিক লেভেলে মনখারাপ।

- সে তো বুঝলাম। কিন্তু কেন? জয়েন্টে ফেল? মিনিবাসের পকেটমারিতে সত্তর টাকা জলে? 

- কই। না তো।

- তোমার বয়সে তো এ'সবই হয় খোকা...।

- খোকা? অমল বলে ডাকলেই হয় তো। ফার্স্ট ইয়ারে রয়েছি স্যার।

- স্যার? সাতাশ বছর হল তিব্বত থেকে ফিরে তন্ত্রসাধনা করছি। তাবিজমাদুলি দিচ্ছি। স্যারট্যার আবার কী। এ কি ডালহৌসির প্রাইভেট ফার্ম নাকি। গদগদ সুরে বাবাজী বলে ডাকো।  

- বাবাজী। আমার যে বড্ড মনখারাপ। সুপার-গভীর মনখারাপ। জিভে ফুচকাও তিতকুটে হয়ে ঠেকছে; এমন মনখারাপ। 

- কেস সিরিয়াস, সে না হয় বুঝলাম। কিন্তু মনখারাপের সোর্স না জানলে মাদুলিটা দেব কী করে?

- আমিও কী ছাই জানি? বড় আশা করে এসেছিলাম তিব্বতি মন্ত্রতন্ত্র ঝেড়ে আপনি যদি ট্র‍্যাক করতে পারেন। 

- নাহ্। অমন আনতাবড়ি মাদুলি আমি দিতে পারিনা৷ আমি ফচকে ব্যবসায়ী নই, সাধক। 

- ঝড়ে বক ছাড়ুন না কিছু একটা। এমন ওজনদার মনখারাপ দিনের পর দিন বয়ে বেড়ালে শোল্ডার ডিসলোকেট করে ফেলব তো। 

- ছাড়ব? ঝড়ে বক?

- নয়ত আর তন্ত্র কীসে?

- দাঁড়াও, কনসেন্ট্রেট করি।

- আমার মনখারাপের সোর্স...কন্সেন্ট্রেট করলে খুঁজে পাবেন? বাবাজী? 

- কনসেন্ট্রেট করে ডাকলে মাতারা জ্বরের রাতে কপালে জলপটি রেখে যান। ফোকাস ঠিক থাকলে স্বয়ং মহাদেব এসে বিড়িতে আগুন দিয়ে যান৷ তোমার মনখারাপের সোর্স তো অতি পাতি ব্যাপার হে।

- হোক বাবাজী হোক। কন্সেন্ট্রেট করে আমার মনখারাপের সোর্স খুঁজে বের করা হোক।

- তিব্বতের লামাদের মাংসের শিঙাড়া খাইয়ে এমন ইম্প্রেস করেছিলাম যে তাঁরা সাধনার প্রচুর শর্টকাট শিখিয়ে দিয়েছিলেন। এই যেমন এখুনি; এখন এক লহমায় পৌঁছে গেলাম তোর মনখারাপের গোড়ায়। 

- তা, কী বুঝছেন?

- কাল সকালেই সে গায়েব। ফুসমন্তর এক্কেবারে।

- ফুসমন্তর? 

- ফুসমন্তর। মিছে কথা কইতে নেই খোকা। মনখারাপের কারণ তো বেশ স্পষ্ট জানা আছে দেখছি।

- মোটেও না। কে গায়েব হল, কে ফুসমন্তর তাতে আমার কী?

- কিচ্ছুটি নয়?

- নয়ই তো। আপনি বড় বাড়তি কথা বলেন বাবাজী।

- কাল সোয়া দশটার ট্রেন।

- ট্রেন হোক। প্লেন হোক। স্পেসশিপ হোক। আমার কিছুই এসে যায়না। মাদুলির ব্যবস্থা করুন, আমার তাড়া আছে?

- তাড়া আছে?

- এ...এ কী..আমার হাত খামচে ধরছেন কেন বাবাজী?

- পালস না মেপে মাদুলি দেব?

- আপনি তান্ত্রিক না হোমিওপ্যাথি জ্যেঠু?

- ফার্স্ট ইয়ারে চোখ ছলছল কাজের কথা নয় অমলবাবু।

- ও কিছু না। থাক মাদুলি।

- সোয়া দশটার ট্রেন। ফুসমন্তর।

- হাত ছাড়।

- আপনি আজ্ঞে থেকে তুই?

- বাবাজীটি টেরিফিক লেভেলের ভণ্ড।

- ডায়াগনোসিসটা টেরিফিক লেভেলের খাঁটি।

- মনখারাপটাও। যাসনা। 

- বাবার ট্রান্সফার। 

- তোর বাবাকে পুলিশে দেওয়া উচিৎ। 

- খুব মনখারাপ?

- ওই যে। টেরিফিক লেভেলে।

- মাদুলিটাদুলিতে কাজ হবে? তিব্বতি টোটকা?

- দিবি?

- ওই যে। লামাদের মাংসের শিঙাড়া খাইয়ে আদায় করা মন্ত্রের গুণে তৈরি মাদুলি। তোর কাছে রেখে যাব। যদ্দিন না ফিরি, মনখারাপের ইন্স্যুরেন্স। 

- বটে? টেরিফিক লেভেলের মাদুলি তো! সালোয়ারকামিজ পরা বিনুনি দোলানো বাবাজীর এলেম আছে। 

- এলেম? তা আছে। আর আছে কাল সোয়া দশটার ট্রেনের টিকিট। 


***

- অমলবাবু?

- ইয়েস?

- হ্যাপি বার্থডে।

- হেহ্। থ্যাঙ্কিউ ডক্টর।

- কত হল বাইশ না তেইশ?

- তিরানব্বুইটাকে সত্যিই তেইশ বলে বোধ হচ্ছে ডাক্তার।

- প্রেশারটাও বেশ কন্ট্রোলে আনা গেছে। আর এই রিপোর্টগুলোও; পার্ফেক্ট। আপনার সেঞ্চুরি আটকায় কার সাধ্যি। 

- হোপ সো ডক্টর।

- আপনার মনটকে শুধু এমনই চনমনে রাখুন। তা'হলে সেঞ্চুরির পরেও চালিয়ে খেলতে পারবেন।

- মনখারাপ যে আমায় ছুঁতে পারেনা ডাক্তার।  

- বটে?

- সবই একটা তিব্বতি মাদুলির গুণ। 

- তিব্বতি মাদুলি? আমি তো জানতাম আপনি এথেইস্ট।

- কচু। আমার চেয়ে বড় থেইস্ট এ দুনিয়ায় নেই হে ডাক্তার। বাবাজী ফিরে আসবে, সে আশায় তিব্বতি মাদুলি বুকে আঁকড়ে কী প্রবল আনন্দে বেঁচে আছি। সেঞ্চুরিটা যে আমায় পেরোতেই হবে। আমি কেটে পড়ার পর বাবাজীর ওয়াপসি হলে একটা যাতা কাণ্ড ববে।

- তিব্বতি মাদুলিটা কিন্তু আমায় খুবই ইন্ট্রিগ করছে।

- সে হল গিয়ে তন্ত্রের মিরাকেল ডাক্তার। 

- সেই তিব্বতি মাদুলি? মিরাকেল?

- ইয়েস। অবিশ্যি, সেই তিব্বতি মাদুলিকে অবশ্য তোমরা বেরসিকরা চুমু বলে জানো। 

No comments: