Friday, August 14, 2020

পতাকা আর চীফগেস্ট


- এই যে। দত্তবাবু। কাল সোয়া সাতটার মধ্যে আসছেন কিন্তু। পৌনে আটটায় বড়সাহেব এসে পৌঁছবেন৷ ফ্ল্যাগ হয়েস্টিং আটটায়।

- ধুস। পনেরোই অগস্টটাও ছাই পড়ল শনিবারে।

- নিজের মধ্যে মশাই একটু দেশাত্মবোধক ইয়ে জেনারেট করুন না।

- দেখুন গাঙ্গুলিদা, দেশাত্মবোধ নিয়ে অকারণ খোঁটা দেবেন না। মনে রাখবেন, আ ম্যানস হোম ইজ হিস ক্যাসেল। রিয়েল পেট্রিয়ট হিসেবে কাল আমার উচিৎ নিজের বাড়ির ছাতে তেরঙ্গা উত্তলন করা। বুল্টি জনগণমন গাইবে, বুল্টির মা স্পীচ দেবে। অফিসে বড়সাহেবকে চীফগেস্ট করে তেল দেওয়াটা আর‍ যাই হোক পেট্রিয়টিজম নয়। 

- স্বাধীনতা দিবস সন্তোষীমার ব্রত উদযাপন নয় যে ঘরের কোণে বসে কাজ সারবেন। দশজনের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে তেরঙ্গাকে সেলুট না করলে বুকের মধ্যে হুহুটা ফীল করবেন কী করে।

- পতাকার প্রতি রেস্পেক্ট তো ভালো কথা। কিন্তু আমাদের মূল দায়িত্ব তো বড়সাহেবের প্রতি নুয়ে পড়া।

- ও'টা নুয়ে পড়া নয় দত্তবাবু৷ ও'টা ডিসিপ্লিন।

- নেতারা, বড়বাবুরা; সবাই এই স্বপ্নই দেখেন। এলেবেলে আমজনতা বুটলিকিংকে ডিসিপ্লিন হিসেবে চিনবে, সে'টাই তাঁদের কাছে আইডিয়াল স্টেট। 

- উফ। আপনি বড্ড ঘ্যাঁতা। 

- ব্রুটাল অনেস্টিকেও দণ্ডমুণ্ডের কর্তারা ঘ্যাঁতামো বলেই মনে করেন।

- দত্তবাবু, কাল আপনি আসছেন তো? চীফগেস্টকে আপনিই এসকর্ট করে আনবেন৷ প্ল্যানিংয়ে সে'টাই আছে।

- না এসে আর উপায় কী বলুন।

- বুটলিক তা'হলে আপনাকেও করতে হয়।

- অর্ধেক মাইনে তো তাই করেই পাই গাঙ্গুলিদা।

- শুনুন। আপনার ওয়েল উইশার হিসেবে বলছি৷ অমন কাঠকাঠ কথা সব জায়গায় চলেনা। 

- যাকগে। আচ্ছা, গাঙ্গুলিদা। অফিসের অনুষ্ঠান তো ন'টার মধ্যে শেষ৷ তাই না?

- লেট মি সী। ফ্ল্যাগ হয়েস্টিং, জাতীয় সঙ্গীত, বড়সাহেবের স্পীচ। বাই দি ওয়ে, স্পীচটা আমি ড্রাফট করেছি, ট্যু থাজ্যান্ড থ্রি হান্ড্রেড ওয়ার্ডস। তারপরে অফিস কয়্যারের চারটে দেশাত্মবোধক গান। দু'টো ফেলিসিটেশন৷ মিষ্টির বাক্স ডিস্ট্রিবিউশন। হ্যাঁ, ন'টার মধ্যে শেষ। তারপর আপনি আপনার ক্যাসেলে গিয়ে পতাকা তুলুন, কামান দাগুন। ইউ আর ফ্রী। 

- ন'টা নাগাদ আমার সঙ্গে নতুনপাড়ায় যাবেন? 

- নতুনপাড়া? অফিসের পাশের ওই বস্তিতে?

- অনিল মাস্টার আমার সুপরিচিত। প্রতি পনেরোই অগস্ট নতুনপাড়ার কিছু চালচুলোহীন মানুষের জন্য রান্নাবান্না করেন। সামান্য ডাল, ভাজা, মাছের ঝোল৷ কিন্তু শ'তিনেক মানুষের জন্য রান্না, একটু অ্যাসিস্টেন্স পেলে ওর উপকার হয়। একটা পতাকা সে'খানেও পতপত করে ওড়ে কিন্তু। কথা দিচ্ছি গাঙ্গুলিদা, অফিসের ফ্ল্যাগহয়েস্টিং চেয়ে অনেক উঁচু লেভেলের হুহু জেনারেট হবে বুকের মধ্যে।

- আই উড হ্যাভ লাভড টু অ্যাকম্পানি ইউ৷ কিন্তু ইয়ে দত্তবাবু, বড়সাহেব স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সমস্ত কর্মীদের একটা ইমেল পাঠাতে চান। বেলার দিকেই যাবে সে'টা৷ একটু ইমোশনে সুড়সুড়ি দিয়ে আর কী। একটা খসড়া তৈরি করে রেখেছি। কালকের সকালের ইভেন্টের পর সেইটা ওঁকে দিয়ে চেক করিয়ে তারপর সবাইকে ইমেল করতে হবে। সে'টা যে বেশ সময় সাপেক্ষ।

- স্বাধীনতা দিবসের আগাম শুভেচ্ছা রইল গাঙ্গুলিদা। কাল কা ইভেন্ট মুবারক হো। এখন আসি। কাল ঠিক সাতটায় হাজির হচ্ছি বড়সাহেবকে বরণ করতে।

No comments: