- কী চাই?
- কই৷ কিছু না তো।
- অমন সাসপিশাস হাসি নিয়ে ঘরের মধ্যে পায়চারী করছিস কেন বোচা?
- তা'তে তোর কী? আজেবাজে বইয়েই মাথা গুঁজে থাক৷ দুনিয়ার খবরে তোর কাজটা কী।
- স্ট্যাটিস্টিক্স আজেবাজে কিছু নয়।
- ওয়েদার দেখেছিস ফুলু? মেঘলা বিকেল, মিষ্টি হাওয়া। চারদিকে বাহারো ফুল বরসাও ব্যাপার আর তুই মেসে বসে ওইসব হাড়জ্বালানো বই পড়ছিস। পাপ হবে যে।
- কী বলতে এসেছিস বলে ফেল।
- ফুলু৷ তুই দিনদিন কাঠকাঠ হয়ে পড়ছিস।
- সামনের সেমিস্টারে আগের মত গোল্লা পেলে তোর বাবা তোকে পিটিয়ে তক্তা করবেন৷ মার্ক মাই ওয়ার্ডস।
- বাবার কথা ভেবে বড় খারাপ লাগে রে। ভদ্রলোক কোর্ট আর মক্কেল ছাড়া এ জীবনে কিছুই চিনলেন না৷ যদ্দিন বাড়িতে ছিলাম, বাবা প্রায়ই রাতের দিকে আমার কবিতার খাতা বাজেয়াপ্ত করে টপ টু বটম স্পেলচেক গ্রামারচেক করতেন? কবিতার খাতা জুড়ে লাল কালি দিয়ে গোল্লা গোল্লা দাগ। উফ। বিভৎস। সে ভয়েই তো কবিতা লেখা ছাড়লাম। নাহ্। বাবার ভয়ে এই মনোরম মেঘলা বিকেলে বই নিয়ে আটকে থাকলে আমিও তোর মত রুথলেস যন্ত্রে পরিণত হব। তার চেয়ে বাবার চাবকানি ভালো।
- কাজের কথাটা বলে ফেল।
- কাজের কথা আবার কী ফুলু? আমি কি শুধু মতলবের মানুষ? এমন সুন্দর বিকেল। ভাবলাম তোকে ঝন্টুদার ফিশকাটলেট খাইয়ে আনি। সিম্পল। চ'দেখি, বেরোই।
- নাহ্। এখন আমার বেরোনোর ইচ্ছে নেই।
- উম..আমিই না হয় নিয়ে আসি? কাটলেটের সঙ্গে কোল্ডড্রিঙ্কসও আনব নাকি?
- নাহ্৷ সিম্পটম ভালো না। তোর কোনও জটিল মতলব আছে।
- তোর মনটাই জটিল।
- মতলব নেই যখন ভালো কথা৷ জানালাটা বন্ধ করে ছাতে চলে যা। মেঘলা বিকেলের মিষ্টি হাওয়া গায়ে মুখে লাগবে, সুস্থ বোধ করবি।
- মতলব আদৌ নেই। শুধু ওই..।
- শুনি। শুনি।
- উর্মির জন্য একটা কবিতা লিখেছি বুঝলি।
- উর্মি?
- বটানি। সেকেন্ড ইয়ার। ওই যে রে। গত পরশুর নীল সালোয়ার।
- ওই, যার সঙ্গে বাজে গল্প ফাঁদার চক্করে তুই যাদবপুরের বদলে বারাসাতের বাস ধরেছিলিস?
- উর্মি বড় ভালো রে ফুলু। সেনসিটিভ অথচ শার্প। আর হাসলে ইচ্ছে হয় উনুনে রাখা চকোলেট বারের মত গলে পড়ি৷ মাইরি।
- আবার প্রেমে পড়বি বোচা?
- আবার মানে কী? আবার মানে কী? এ'বারেই আদত প্রেম।
- আগেরগুলো তবে..।
- আরে আগের ও'সব কমিক্স ছিল। এইবারে..এইবারে রীতিমতো নভেল।
- উফ বোচা। আবার মেসজুড়ে শুরু হবে অসহ্য ন্যাকাপনা। আবার নাকানিচোবানি খাবি।
- না রে। নাকানিচোবানি নেই। ওই যে বললাম, এ আর কমিক্স নয়। উপন্যাস। উর্মিরও আমার প্রতি প্রবল ইয়ে আছে..।
- বটে? সে নিজে তোকে বলেছে?
- স্ট্যাটিস্টিক্সের বই পড়ে পড়ে তুই একটা আস্ত গবেট তৈরি হচ্ছিস ফুলু। মেয়েরা অমন ভাবে ডাইরেক্টলি বলে কখনও?
- বলে না?
- না। হাবেভাবে আকারে-ইঙ্গিতে ওরা কথা ভাসিয়ে দেবে। আমরা লুফে নেব।
- বটে?
- শুনে রাখ। উর্মি আমায় ভালোবাসে।
- আর উর্মির সে ইঙ্গিত বোচাবাবু কীভাবে লুফে নিল?
- কাল রাত্রে, বুঝলি। উর্মি গোবিন্দার সিনেমা দেখতে দেখতে, বিরিয়ানি খেতে খেতে; আমায় ফোন করেছিল। ফোন করেছিল শুধু এ'টাই বলতে যে গোবিন্দার সিনেমা আর বিরিয়ানির কম্বিনেশন ওকে আমার কথা ভাবিয়েছে। ইন্টিমেসির লেভেলটা ভাবতে পারছিস?
- ইন্টিমেসি? তুই শিওর?
- গভীর। যাকে বলে, প্যাশনেট।
- হবে হয়ত৷ তোর আদত মতলবটা বললি না এখনও।
- আহ। মতলব নয় ফুলু৷ সামান্য গাইডেন্স৷ শোন না, আমি উর্মির জন্য কয়েকটা কবিতা লিখেছি।
- আমি তো জানতাম কাকুর স্পেলচেক গ্রামারচেকের তাড়নাতে তুই স্কুলে থাকতেই কবিতা লেখা ছেড়েছিস।
- উর্মির মত একটা গোবিন্দা-বিরিয়ানি লেভেলের ইন্সপিরেশনের অপেক্ষায় আটকে ছিলাম রে৷ কাল রাত থেকে সাতটা কবিতা লিখেছি৷ কবিতা জাস্ট ফ্লো করছে, আটকাতে পারছি না।
- সে তো ভালো কথা৷
- কিন্তু গ্রামারচেক আর স্পেলচেকের লাল দাগ ছাড়া কবিতাগুলোকে ঠিক সার্টিফাই করতে পারছি না৷ বানান ব্যাকরণের বাতিক তোর আছে। এই আমার নতুন কবিতার ডায়েরি আর এই রইল লাল কালির পেন। দেখে দে না ভাই। তোর চেক করা হয়ে গেলে না আমি মোবাইলে টাইপ করে উর্মিকে পাঠাব। দে না রে ভাই।
- শুধু চেক করলে হবে না, লাল কালিতে দাগিয়েও দিতে হবে? রিয়েলি?
- বাবার কন্ডিশনিং। ওই লাল কালিতে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় না দেখলে নিজের কবিতাকে কবিতা বলে মনে করতে পারিনা।
- দে দেখি। চেক করে দিই। অ্যাস রুথলেসলি পসিবল।
- ফুলু! তোর জবাব নেই। জোড়া কাটলেট, প্রমিস।
- একটা কথা বলব বোচা?
- হাজারটা বলবি।
- উর্মির জন্য কবিতা লিখছিস৷ সাবাশ। কিন্তু বাবার কথা ভেবে মনখারাপ হচ্ছে, সে'টা বোধ হয় কাকুকে ডাইরেক্টলি জানানো যায় না। তাই না?
No comments:
Post a Comment