- পুজো আসছে বিপিনদা। পুজো আসছে।
- পুজোর পাঁচটা দিন বাদ দিলে গোটা বছরই তো বাঙালির "পুজো আসছে পুজো আসছে" করে কেটে যায়।
- ধ্যাত। আপনি বড় রুখাসুখা। ওই ফাইলবোঝাই টেবিল ছেড়ে একটু বারান্দায় এসে দেখুন না। আকাশের দিকে তাকালেই মনে হবে এই হল রিয়েল পুজোবার্ষিকী।
- পুজো আসছে৷ করোনা থাকছে।
- তা বটে। তবু এমন আকাশ দেখলে..।
- এ'বছর জুমে প্যান্ডেল হপ করতে হবে।
- না। প্যান্ডেল হপার আমি নই।
- তবে কী? রেস্টুরেন্টে ঘণ্টা পাঁচেক লাইন দিয়ে পুজোসস্পেশাল বাসি বিরিয়ানি?
- পুজোয় রেস্টুরেন্টের খপ্পরে পড়িনা। বড়জোর স্টলের রোল। পুজোর আদত হইহইরইরই তো নিজেদের হেঁসেলে।
- করোনাই তো, এমন আর কী। পুজোর পাঁচদিনই বরং ভীড় ঠেলে মাছ মাংস মুর্গি কিনুন। গিলুন যতখুশি। কী আর হবে, প্রাণটাই না হয় যাবে। এ বাজারে প্রাণ ধরে রাখাও বড় জ্বালা।
- না না। কোভিডিয়ট আমি নই। তাছাড়া জানেনই তো। মাইনেতেও কোপ পড়েছে৷ এ'বেলা ও'বেলা চর্ব্যচোষ্য হয়ত ম্যানেজ হবে না।
- কিছুই যখন হবে না, তখন পুজো আসছে পুজো আসছে করে লাফানোর কী আছে?
- যদ্দিন মা বেঁচে ছিল, পুজোয় প্রতিবার বাড়ি ফিরতাম জানেন। প্রতিবার। অগস্ট পড়লেই ফেরার টিকিট কাটতাম। মা নেই, পৈতৃক বাড়িও বেচে সাফ। কাজেই সেই ফেরাটুকুও বাদ গেছে বেশ কয়েক বছর হল। কিন্তু এই হাই কোয়ালিটির পুজো-আসছে-মার্কা আকাশ দেখলে এখনও মনের মধ্যে "এ'বার বাড়ি ফেরা" মার্কা গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। মাইরি বিপিনদা। জানি পুজোর দেরী আছে তবু..। আর এই প্যান্ডেমিকের বাজারে এই গন্ধটা যেন আরও জরুরী। বেশ বুকে বল পাচ্ছি কিন্তু।
- কবিতা লিখুন গুপ্তবাবু। কবিতা৷ অফিসের খাজা সব ফাইলটাইল ঘেঁটে কী হবে। রবিনসন ইলেক্ট্রিকালসের ফাইলটা বড়সাহেব চাইলে বলে দেব, পুজো আসছে তো। গুপ্তবাবু ফাইল ক্লিয়ার না করে কবিতা লিখছিলেন।
- কবিতার খোঁটা দিলেন বিপিনদা? তা দিন, ও আমার গায়ে লাগে না। আপনি যদি ভেবে থাকেন যে কবিতা শুধু খাতায় কলমে লেখা হয় তা'হলে সে ভাবনা পাল্টে ফেলুন। এই করোনায় রগড়ানো সময়ে পুজো-আসছে-মার্কা অকারণ ফুর্তি ইজ পোয়েট্রি ইনডীড। আর ক্রসওয়ার্ড পাজলে মুখ গুঁজে সময় নষ্ট না করলে আপনি ঠিক টের পেতেন যে রবিনসনের ফাইলটা ক্লীয়ার করে আধঘণ্টা আগেই আপনার টেবিলে রেখে এসেছি।
No comments:
Post a Comment