Sunday, August 2, 2020

হরনাথের কাণ্ড


- উফ৷ হাড় জ্বালিয়ে খেলে দেখছি হরনাথ।

- রাগ করলেন কত্তা?

- রাগ করব না? মাসে দশবার তোমার আপিসে এসে হাজিরা দিতে হবে? ওঝা হয়ে কি মাথা কিনে ফেলেছ নাকি?

- আজ্ঞে। চাইলেই বা আপনার মাথা কিনতে পারছি কোথায় বলুন।

- অ। আমি স্কন্ধকাটা বলে এ'বার আমায় বডিশেম করবে?

- কত্তা।  একটু বসুন না৷ ওই যে, ঘরের কোণে টাটকা আঁশ জমিয়ে রেখেছি। আতিথিয়েতায় কোনও খামতি পাবেন না। এই  আমি কথা দিলাম।

- রুই না কাতলা?

- কত্তার যে কাতলা পছন্দ, তা কি আর জানিনা?

- চালানি না লোকাল মাছের আঁশ?

- আজ্ঞে, বাজারে কিপটে বলে আমার একটা বদনাম আছে বটে। তবে আপনার মত হাইক্লাস আত্মাকে ডাকার আগে ও'সব টুপাইস নিয়ে ভাবিনা।  কাছারিপাড়ার পুকুর থেকে তোলা, মাইরি কত্তা। 

- উম। গন্ধটায় টান আছে বটে।

- কত্তা। একটা জরুরী কথা বলার ছিল।

- তুমি যে পয়লা নম্বরের ধান্দাবাজ তা আমি জানি। বলেই ফেলো।
 
- বলছিলাম যে, গিন্নীমার অবস্থা তেমন সুবিধের দেখছিনা। 

- সে এখনও তোমার কাছে আসে? আমি পইপই করে বারণ করা সত্ত্বেও? 

- আজ্ঞে, অমন মাথাগরম করবেন না প্লীজ।

- মাথাই নেই ছাই তায় মাথাগরম। ফের যদি স্কন্ধকাটাকে মাথার খোঁটা দিয়েছ হরনাথ...।

- চটবেন না কত্তা। চটবেন না।

- তা, কী বললে গিন্নী?

- ওই। প্রত্যেকবার যা বলেন। আপনার ভুল ভাঙাতে পেরেছি কিনা জানতে চাইলেন।

- কী আশ্চর্য। মরে ভূত হয়েও এমন পাগলামোর কোনও মানে হয় হরনাথ? আজ সাত বছর হল আমরা দু'জনে এক সঙ্গে মোটরদুর্ঘটনায় নিকেশ হলাম। সাত বছর৷ আমার তো মাথাটাই ভেঙেচুরে এক্কেবারে...৷ সে যাকগে। কিন্তু সাতবছর পরেও গিন্নী এখনও ভাববে আমরা দু'জনেই বেঁচে আছি? কোনও মানে হয়? কী বিশ্রী গোঁয়ার্তুমি।

- আজ্ঞে, আমি নিজেও তো তার বিশ্বাস অর্জন করার চেষ্টা কম করিনি। মাসে অন্তত চারবার আমি নিজে গিন্নীমার সঙ্গে দেখা করি মনের ডাক্তার সেজে। তাঁকে আশ্বাস দিই যে আমি আপনার চিকিৎসা করছি। বারবার গিন্নীমাকে বলি যে একদিন আমি কত্তাকে ঠিক বোঝাব যে তিনি বেঁচে আছেন৷ অথচ তলে তলে আমার চেষ্টা হল কোনও ভাবে যদি গিন্নীমাকে বোঝানোর..যে আদতে তিনিও বেঁচে নেই।

- মন বড় খারাপ হয়ে যায় হে হরনাথ৷ গিন্নী এখনও সে বাড়ির মায়াও ত্যাগ করতে পারল না। তবে, ও'সব ঘুরপথে আর হবে না৷ 

- মানে? কত্তা? 

- এ'বার সোজাসুজি নিজের পরিচয়টা তোমার গিন্নীমাকে দাও। ওকে বলো সে আদতে একটা আস্ত ভূত আর তুমি আদতে ওঝা..।

- ঘুরপথে হবে না, তাই না কত্তা? 

- নাহ্। সোজাসুজিই বলতে হবে।

- সোজাসুজি যদি আপনাকে দু'টো কথা বলি কত্তা? যদি বলি যে আমি সত্যিই মনের ডাক্তার? আর আপনাদের মৃত্যু হয়নি? সত্যিই আপনি বেঁচে আছেন? আমি একটানা আপনার মনের ব্যামো সারানোর চেষ্টা করে চলেছি দিনের পর দিন?

**

- আজ ওকে দেখেছ ডাক্তার?

- দেখলাম গিন্নীমা।

- কেমন বুঝলে?

- ওই৷ একই বুলি। উনি নাকি স্কন্ধকাটা৷ আপনিও নাকি ছ'বছর ধরে ভূত হয়ে এই বাড়ির মধ্যে বসে।

- হর ডাক্তার৷ আমার বুক ফেটে যায় গো৷ লোকটা গোটাদিন পাগলের মত ঘুরে বেড়ায়৷ আর এক তুমি ছাড়া কিছুতেই কারুর সঙ্গে কথা বলে না। আর আমার সঙ্গে কখনও দেখা হলে এমন হাবভাব করে যে আমারই ভয়ে বুক কাঁপে।

- গিন্নীমা। আমার সঙ্গে উনি কথা বলেন কারণ ওঁর ধারণা আমি ওঝা। ওঁর আশা আমি সত্যিই আপনাকে একদিন বোঝাতে পারব যে আপনিও আদতে মৃত। 

- কুড়িটি বছর ওর সঙ্গে সংসার করেছি৷ ও যে কী বিশ্রী রকমের গোঁয়ারগোবিন্দ তা আমি বেশি জানি।  নরম কথায় তো অনেক চেষ্টা করলে ডাক্তার৷ এ'বার না হয় ওঁকে সোজাসুজি মুখের ওপর বলেই দাও না সত্যিটা৷ বলে দাও না যে তুমি আদতে মনের ডাক্তার।

- সোজাসুজি বলে দেব? মুখের ওপর?

- আর উপায় নেউ ডাক্তার। উপায় নেই।

- সোজাসুজিই যদি আপনাকে বলি গিন্নীমা? 

- আমায়? আমায় কী বলবে?

- যদি বলি, আমি সত্যিই একজন ওঝা? সে জন্যেই আমি আপনার সামনে নিয়মিত হাজির হতে পারি? যদি বলি, কত্তার চিন্তা অমূলক নয়?

No comments: