Tuesday, August 4, 2020

আসলি ওস্তাদ


- মুক্তিপণের টাকাটা পাওয়া গেল না মিস্টার শাসমল।

- বলেছিলাম তো নাটুবাবু। ব্যবসার যা অবস্থা, ব্যাঙ্কে অত টাকা থাকারও কথা নয়।

- কালোটাকাও কিছু নেই বলছেন?

- সে'খানেই কাঁচা কাজ করে ফেলেছেন আপনি। আমার পরিবারের কাউকে সরিয়ে ফেলে আমার কাছে র‍্যানসম ডিমান্ড করলে আমি কিছু একটা ব্যবস্থা করলেও করতে পারতাম। আমার কালো টাকার হদিস তো অন্য কারুর জানার কথা নয়। 

- কাজটা যে কাঁচা হয়েছে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে তার মাশুল আপনাকেই গুনতে হবে।

- খুন করে লাশ পুঁতে ফেলবেন? ইয়ে, ইন দ্যাট কেস আই উড প্রেফার সায়নাইড ওভার বুলেট। তবে বন্দুক আপনার, মুলুক আপনার। তাই ডিসিশনও আপনার। আমি শুধুই রিকুয়েস্ট করতে পারি।

- খুন না করে উপায় কী বলুন।  যে লাইনে যা দস্তুর৷ মুক্তিপণ না পেয়েও যদি আপনাকে জ্যান্ত ফিরিয়ে দিই, নাটুগুণ্ডার ইজ্জৎ থাকবে ভেবেছেন? আর কোনও ব্যবসায়ী ভয়টয় পাবে? দরদাম করে মুক্তিপণ কমানোরও উপায় নেই, আমার ব্র‍্যান্ড ইকুইটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কী আর বলব মিস্টার শাসমল, কিডন্যাপিংয়ের জগতটায় আজকাল বড্ড কাটথ্রোট কম্পিটিশন। 

- কাটথ্রোট? হেহ্। ভারী চমৎকার বললেন কিন্তু।

- তবে আপনার জন্য সায়নাইডের ব্যবস্থা হয়ে যাবে। বুলেট হজম করতে হবেনা।

- ভেরি কাইন্ড অফ ইউ নাটুবাবু। তবে ইয়ে..।

- বলুন না, নিশ্চিন্তে বলুন। খুন, কিডন্যাপিংটা আমার ব্যবসা হতে পারে। কিন্তু তাই বলে ইমোশনে খামতি নেই। 

- সায়নাইডটা সার্ভ করবেন কী করে?

- ওই যে, একটা পুরিয়া। তা'তেই থাকবে ওই বিষ। সরবিট্রেটের মত মুখে পুরতেই..ফিনিশ।

- মুখে যদি পুরতেই হয় নাটুবাবু, তা'হলে আর সরবিট্রেট কেন। একটা ক্ষীরকদমে যদি..।

- বেশ তা'হলে পুরিয়াটা ক্ষীরকদমে পুরে..।

- আর তার সঙ্গে..।

- চাহিদা বেড়ে চলছে কিন্তু।

- বেশি নয় কিন্তু..মাইনর একটা ব্যাপার।

- বেশ। শুনি।

- ক্ষীরকদকম মুখে পোরার সময় ব্যাকগ্রাউন্ডে কিশোরকুমারের ওই গানটা..ওই যে..ফুলো কী রং সে। ওইটা চালিয়ে দেবেন প্লীজ। প্লীজ।

***

- আর তারপর শাসমলদা?

- তারপর আবার কী। নাটুগুণ্ডা এনে দিলে ক্ষীরকদম। তার মধ্যে মিশিয়ে দিলে ইয়াব্বড় সায়নাইডের বড়ি। আর একটা ব্লুটুথ স্পীকারে চালিয়ে দিলে কিশোরবাবুর ওই গান; ফুলো কী রং সে, দিল কী কলম সে, লা লাললা লা লা লা। 

- আর আপনি সেই সায়নাইড মেশানো ক্ষীরকদম খেলেন?

- চারপিস ভায়া। চারপিস। নাটুর তো চক্ষু চড়কগাছ।

- সায়নাইড মেশানো ক্ষীরকদম?  চারপিস? তবু মরলেন না?

- পাঁচনম্বর চাইতেই তো নাটুগুণ্ডা আমার পা জড়িয়ে কাঁদতে আরম্ভ করলে। বললে; "ওস্তাদ, ক্ষমা করো। তোমায় চিনতে পারিনি"। তারপর যত্ন করে নিজের মারুতি ভ্যানে চাপিয়ে নাটু আমায় বাড়ি পৌঁছে দিয়ে গেল। ইনফ্যাক্ট সে'দিন থেকে সে নিয়মিত আমার বাজার করে দিয়ে যায়।

- নাটুগুণ্ডা আপনার বাজার করে? 

- নয়তো আর তোমায় বলবো কেন বলো। বাজার করে শুধু তাই নয়। সন্ধ্যেবেলা বৃষ্টি পড়লেই নাটু হাজির হবে এক ঠোঙা চপ আর দু'বাক্স ক্ষীরকদম নিয়ে। কত বলি আরে এ'সবের দরকার নেই রে নাটু৷ কিন্তু কে শোনে কার কথা। শাসমল ওস্তাদ বলতে নাটু এক্কেবারে অজ্ঞান৷ সে পাগলা বলে কী জানো? "আপনার থেকে যদি কেউ টাকা ধার নিয়ে শোধ করতে গড়িমসি করে ওস্তাদ, তবে তার চামড়া তুলে গায়ে বিছুটি ঘষব"। বড় বেয়াড়া মেজাজ আমার নাটুর।

- আহ শাসমলদা, আমায় আবার নাটুর ভয় দেখানোর কী দরকার। আপনার ধারের টাকা সুদ সমেত সময়ের আগেই পেয়ে যাবেন। কথার নড়চড় হবে না।

- এই দ্যাখো কাণ্ড। তুমি কি ভাবলে আমি থ্রেট করছি? না হে। আমি পাতি ব্যবসায়ী। মাসে একবার তারাপীঠ যাই হে।  তোমার দরকারে না হয় দু'পয়সা দিয়ে সাহায্য করেছি, তা নিয়ে তো আর আমার ঘুম নষ্ট হচ্ছে না। ওই, নাটুই শুধু মাঝেমধ্যে খোঁজখবর নেয়, কোথাও টাকা বাকি পড়ল কিনা। এই আর কী। ও'সব টাকাপয়সার মায়া আমার নেই হে। নেই।

- ইয়ে, শাসমলদা। অতগুলো সায়নাইড ক্ষীরকদম আপনি হজম করলেন কী করে?

- গোপন কথাটা বলেই দিই। শোনো হে, প্রাণে কিশোরকণ্ঠ গ্রহন করতে পারলে সায়নাইড বিকল হয়ে যায় যে।

- কী?

- ওই যে। নাটুর ব্লুটুথ স্পীকারে কিশোরের 'ফুলো কী রং সে' শুনতে শুনতে ক্ষীরকদমে কামড় দিচ্ছিলাম! ব্যাস, গুরুর কণ্ঠ কান বেয়ে প্রাণে নামতেই জিভের সায়নাইড বাবাজী হয়ে গেল গ্লুকোজের গুঁড়ো। বুঝলে হে,আসলি ওস্তাদ একজনই; কিশোর!

- এ তো রীতিমতো গুল!

- আমি গুলবাজ? আমার থেকে এতগুলো টাকা ধার নিয়ে আমায় গুলবাজ বলা? আমি নরম মানুষ, আমি না হয় চেপে যাব। কিন্তু নাটু এ'সব গুলতানি সহ্য করেনা কিন্তু দিবাকর।

- চটবেন না শাসমলদা। চটবেন না।

- টাকা ফেরত দেওয়ায় গড়িমসি আর কিশোরে সন্দেহ, মোটে ভালো কথা নয়। কেমন?

No comments: