- ফুলু রে।
- নভেলের গুরুতর জায়গায় রয়েছি। ডু নট ডিস্টার্ব।
- তাই বলে বন্ধুর হাহাকারটা অনুভব করবিনা?
- বোচা, তুই আমার রুমমেট৷ এই মেস ছাড়া আমাদের আর কোনও যোগসূত্র নেই। যে মানুষ গল্পের বই পড়ার কনসেন্ট্রেশনে ব্যাঘাত ঘটায়, সে আর যাই হোক বন্ধু নয়।
- ও তোর মনের কথা নয় ফুলু৷ শোন না।
- উফ। কী হয়েছে?
- কদ্দিন ঘুরতে যাই না রে।
- প্রায়ই তো দেখি ঘুরতে বেরোচ্ছিস। ইলিয়ট পার্ক, মিলেনিয়াম পার্ক..।
- ধুর ধুর। সে'সব নয়৷ কদ্দিন পাহাড়ে যাইনা।
- ঘুরে এলেই পারিস।
- ছুটি পাচ্ছি কই? আর যা রেজাল্ট করেছি, ছুটি পেলেও বাবা ঘুরতে যাওয়ার টাকা দেবে ভেবেছিস? ধুস৷ কলকাতায় বসে বসে মনটন এক্কেবারে হেচড়ে গেছে। পাহাড়ের একটু হাওয়া যদি গায়ে লাগাতে পারতাম রে৷ মনমেজাজ চনমনে হয়ে উঠত।
- পাহাড়ের হাওয়া গায়ে লাগানোর জন্য পাহাড়ে যাওয়ার দরকারটা কী?
- হুম?
- তোর মত ট্র্যাভেলারের একটাই অসুবিধে৷ ট্রেনে-বাসে ধাক্কাধাক্কি, ব্যাগ-সুটকেসের ওয়েটলিফটিং আর ট্র্যাভেল এজেন্টের ধাতানি ছাড়া তোরা ভ্রমণের অভিজ্ঞতাটুকু স্পর্শ করতে পারিসনা।
- ট্রেনে বাস ব্যাগ সুটকেস ছাড়া পাহাড়ে ঘুরতে যাব?
- এক্সপ্লোর করার শর্টকাটগুলো জানলে স্কটসাহেবকে অমন ফাঁপরে পড়তে হত না।
- শর্টকাট? পাহাড়ে যাওয়ার?
- কাল প্রেম করতে রবীন্দ্রসদন যাবি বলছিলিস না? ফেরার পথে দু'বাক্স মোমো নিয়ে ফিরিস। আর অল্প রাম। তারপর মেসের ছাতে গিয়ে মাদুর পেতে গা এলিয়ে বসিস। কেমন? ল্যাপটপটা নিয়ে যাস। মিউট করে ইউটউবে হিমালয়ের কোনও হাইডেফিনিশন ভিডিও চালিয়ে দিস। পাশাপাশি কানে ইয়ারফোন গুঁজে কোমলগান্ধারের আকাশভরা শুনতে থাক। দু'বাক্স মোমো খেতে খেতে ওই গানটা লূপে শুনে যা। মোমো শেষ হলে গান পাল্টে অঞ্জন দত্তর দার্জিলিং প্লেলিস্ট চালিয়ে দে। আর তার সঙ্গে দু'পেগ রাম। পলিউশন বোঝাই কলকাতার বাতাসের অ-পাহাড় ব্যাপারটা শুধু অঞ্জনে কাটবে না, সামান্য ইনটক্সিকেশন ইজ নেসেসারি৷ ব্যাস, তারপর দেখিস তোর চারপাশ থেকে কলকাতার মেসের ছাত উবে গিয়ে পড়ে রইবে পাহাড়। স্মুদ অ্যান্ড ইজি৷ তোর পাহাড়ে যাওয়াও হল, আবার তোর বাবার টাকাও বাঁচল খানিকটা। টোটাল উইন উইন।
- ফুলু৷ তুই গল্পের বই পড়। আমি ঘুমোই৷ আর আমি তোকে ডিস্টার্ব করব না।
No comments:
Post a Comment