- এই যে।
- উঁ।
- আরে ও মশাই।
- কী..কী?
- চোখটা খুলুন না একবার। আরে ও মশাই। আর কত ঘুমোবেন।
- কে? কে? এই! কে রে ব্যাটা তুই?
-আমি বরং তুমি করেই বলি। আর তোমায় বরংনাম ধরেই ডাকি, কেমন? শোনো বাবা নিধু, গুরুজনদের তুইতোকারি করতে নেই।
- এই বিদঘুটে সাজপোশাক পরে ঘোরাঘুরি করার মানেটা কী? আর আমি তো দোকানের দাওয়ায় বসে ঝিমোচ্ছিলাম। এ'টা আবার কোথায়? ঘুটঘুটে অন্ধকার। জঙ্গল। কে রে ব্যাটা তুই? আমায় গুমখুন করার ধান্দা করছিস নাকি? সাবধান! জমিদার মশাইয়ের যে বাজারসরকার..ওই যে জীবন মল্লিক। সেই জীবন মল্লিকের প্রতিবেশী নিমাই সর্দারের সঙ্গে আমার পিসেমশাইয়ের খুব দহরম। রাতের মধ্যে যদি আমি গাঁয়ে না ফিরি তা'হলে হুলস্থুল কাণ্ড ঘটবে।
- আরে ধুর রে বাবা। আমি ভালোমানুষের পো৷ কপালফেরে মরে স্বর্গে না গিয়ে ভূত হয়ে ঘুরছি৷ তা বলে আমি গুমখুন করতে যাব কোন দুঃখে?
- ভূ..ভূ...ধেৎ। বহুরূপীর আবার বাতেলা কত।
- মাইরি ভাই নিধু। আমি এক্কেবারে গোটা একখানা ভূত।
- ধেৎ।
- গা ছুঁয়ে বলব?
- থাক থাক। অত মাখামাখিতে কাজ নেই। এ'বার কাজের কথা বলে ফেলো দেখি। বৌ রাতে লুচি ভাজবে। ভেবেই ভিতরটা আনচান করছে। আমার কিন্তু বাজে গল্পের সময় নেই। তা তুমি ভূতই হও আর ডাকাতই হও।
- না না। তোমায় আর আটকে রাখব না ভাই। যা নেওয়ার ছিল তা নিয়ে নিয়েছি।
- এই দ্যাখো। ট্যাঁক থেক পয়সা সরালে নাকি! আচ্ছা জোচ্চোর তো হে তুমি।
- আরে না না। ভূতের আবার পয়সায় কী কাজ৷ আর নিজের জন্য তো আমি কিছুই নিই না। কার কীসে উপকার হয়, সে ভেবেই..।
- ওরে আমার দাতাকর্ণ এলেন হে। এই দ্যাখো, ভালোয় ভালোয় বলে দাও কী সরিয়েছ।
- যা সরিয়েছি তা তোমার কোনও কাজেই লাগবে না নিধু৷ টেকো মানুষের দেরাজ থেকে কলপের শিশি সরানোয় পাপ নেই।
- এই যে। ভূত বাবাজী। বাড়াবাড়ি ভালো নয়। সিধে ভাবে বলো দেখি কী হাতালে?
- তোমার গান।
- ক..কী?
- গান। অমন মিঠে সুর তোমার গলায়৷ যে শুনবে তাঁর প্রাণ জুড়োবেই, সে স্তব্ধ হয়ে শুনবেই। অথচ মুদীর দোকান তদারকি করতে করতেই ক্ষয়ে গেলে তুমি নিধু। আগে তাও নাইতে গিয়ে গুনগুন করতে। বছরখানেক হল তাও গিয়েছে৷ তোমার গলায় ও গান ফেলে রাখা অন্যায়। দোকানের হিসেবের খাতার বাইরে পা দেওয়ার সাহস তোমার নেই। আর সে সাহসটুকু না থাকলে যে সব মাটি ভাই।
- তুমি কে গো খুড়ো? মনটা বড় হেঁচড়ে দিলে যে।
- আমি সত্যিই ভূত হে নিধু। আর যে সে ভূত নই৷ রীতিমত ভূতের রাজা। আর আমার কাজই হলো অব্যবহারের জিনিসকে কাজের কাজের জায়গায় রেখে আসা। তোমার সুর আছে অথচ শখ নেই, সাহস নেই। আবার এই মাত্র একজনের খোঁজ পেলাম যে কিনা গানের শখ আর সাহসের গুঁতোয় গাঁছাড়া হয়েছে অথচ গলায় একবিন্দু সুর নেই। ভাবছি, তোমার সুর আমি তাকেই দেব..।
- অ। হুম।
- মনখারাপ? নিধু?
- সামান্য। তবে কী ভূতখুড়ো, ওই যা বললেন আপনি। আমার মাথাভর্তি টাক, কলপের শিশিতে আমার কাজ কী। এই বরং ভালো।
- বাহ্ বাহ্ নিধু। তোমার সুর আর তোমার রইল না বটে৷ কিন্তু এমন দরাজ মনটুকু হাতানোর ক্ষমতা যে আমারও নেই। আজ আসি বরং। আর একটা কথা বাবা নিধু, এমন কাউকে চেনো যে চমৎকার ঢোল বাজাতে জানে অথচ বহুদিন ঢোল ছুঁয়েও দেখেনি? চেনো এমন কাউকে?
1 comment:
ভারি সুন্দর লেখেন আপনি।
Post a Comment