Tuesday, October 13, 2020

মামা ও বিরিয়ানি রহস্য


- কী হল মামা! বিরিয়ানিতে কবজি না ডুবিয়ে অমন গুম মেরে বসে রইলে যে?

- ক্যালামিটি!

- সে কী।

- ক্যাটাক্লিজম।

- আরে হয়েছেটা কী?

- রাহাজানি। 

- উফ! বিরিয়ানির খুশবুতে গড়বড়? 

- না। পার্ফেক্ট সৌরভ নাকে বুকে কভারড্রাইভ চালাচ্ছে৷ সমস্যা অন্য জায়গায়৷ 

- কোথায়?

- আমি নিজে দু'প্লেট বিরিয়ানি প্যাক করিয়ে এনেছি ভাগ্নে। নিজের হাতে করে বয়ে এনেছি সেই দু'প্যাকেট।

- তবে?

- তোর প্লেটে পরিমাণ ঠিক আছে৷ কিন্তু আমার প্লেটে..।

- কম? 

- কম।

- কিন্তু আমার চোখে তো..।

- শুধু চোখ দিয়ে বিরিয়ানির তল পাবি নাকি রে রাস্কেল?

- স্পষ্ট দেখছি তো, সেম কোয়ান্টিটি। 

- কাঁচকলা। আমার প্লেটে কম।

- কতটা কম?

- এককণা চাল কম। 

- তুমি আমার সঙ্গে ইয়ার্কি করছ মামা?

- ডেড সিরিয়াস। বিরিয়ানি নিয়ে ফচকেমো আমি বরদাস্ত করতে পারিনা।  

- তোমার সামনেই তো প্যাকেট থেকে প্লেটে ঢাললাম। এই দেখো বাক্স। এক কণাও চাল এখানে পড়ে আছে কি? নেই। শেষ কণাটুকু  প্যাকেট থেকে থালায় ট্রান্সফার করেছি। আর টেবিলেও ভালো করে দেখো। এক কণাও কোথাও পড়ে নেই। উফ, আমি এই আজগুবি অভিযোগের উত্তরই বা কেন দিচ্ছি কে জানে।

- একসময় পৃথিবীর রোটেশন আর রিভোলউশন ব্যাপারটাও মানুষ আজগুবি বলে মনে করত। যাকগে। নাহ্, বিরিয়ানি ঢালতে গিয়ে তুই কোনও রকম অযত্ন করিসনি। কিন্তু তবু, একদানা অমৃত চাল যে কোথায় গায়েব হল রে ভাগ্নে...।

- যত্তসব পাগলামো। এক কণা চাল নাকি পাতে কম পড়েছে। তোমার মাথাটা সত্যিই গেছে মাম,  মামী ঠিকই বলে। তুমি বিরিয়ানির প্লেট থেকে হারিয়ে যাওয়া এককণা হারানো চাল নিয়ে শোকসভা বসাওগে যাও৷ আমি বরং  খাওয়া শুরু করছি।

- হাই-ক্লাস বিরিয়ানির থালা থেকে হাপিস হওয়া এক কণা চালের দাম বোঝার বয়স তোর হয়নি ভাগ্নে। হয়নি। 


*****

- এই যে কেষ্টা! পাঞ্চালী কতক্ষণ ধরে টেলিপ্যাথেটিকালি তোমায় ডেকে ডেকে হন্য হচ্ছে৷ আর এতক্ষণে তোমার আসার সময় হল?

- যুধিদা। তোমার সবেতেই টেনশন। কেসটা কী?

- আরে ফরেস্ট ক্যাম্পের লাঞ্চমেনুতে আজ খিচুরি মামলেট ছিল। খেয়েদেয়ে আয়েস করে সবে লম্বা হওয়ার তাল করছি- এমন সময় বিনা মেঘে বজ্রপাত। দুর্বাসা স্যার হাজির। এক্কেবারে সদলবলে।

- এই সেরেছে। খিটখিট বুড়ো আবার এই ভরদুপুরে জঙ্গলে কেন? দু'দিন আগেই তো তাঁকে দুর্যোধনের বাড়িতে ফুর্তি করতে দেখলাম। 

- ওই রাস্কেল দুর্যোরই কারসাজি এ'টা। খেপচুরিয়াস দুর্বাসাকে অসময়ে এ'খানে লাঞ্চে করতে পাঠিয়েছে যাতে আমরা খাওয়াতে না পেরে অপদস্থ হই। আর তারপর একটা অভিশাপ-টভিশাপ দিলেই চিত্তির। 

- তা দুর্বাসা আর তাঁর দলবল এখন কই?

- নদীতে নাইতে গেছে। তবে ফিরে এলো বলে। এ'দিকে হেঁসেল খালি। পাঞ্চালী গোঁ ধরে বসে আছে - কিছুতেই সে এই অসময়ে গেস্টদেরর জন্য নতুন করে রান্না চাপাতে পারবে না। 

- কেসটা সিরিয়াস। তবে চাপ নিওনা যুধিদা। ম্যায় হুঁ না। খিচুড়ির হাঁড়িটা আমার কাছে  নিয়ে এসো দেখি।

- তা'তে কী হবে? সে হাঁড়ি খালি পড়ে আছে।

- ও একদানা চাল পড়ে থাকলেও হবে।

- ভীম ওই হাঁড়ি থেকে ডাইরেক্টলি খায় কেষ্টা। এককণাও পড়ে থাকার চান্স নেই। হাঁড়িখানা পড়ে আছে তাই বাপের ভাগ্যি।

- আরে আনো না হাঁড়িটা। আমি না হয় মন্ত্রবলে এক কণা চাল সে'খানে নিয়ে আসব'খন। যে সে চালের কণা নয়- এক্কেবারে সুপার ইস্পেশ্যাল ভাতের কণা। সেই এক দানা চাল আমি নিজের মুখে চালান করলেই জগৎসংসারের খিদে গায়েব হবে। দুর্বাসা আর তাঁর চ্যালাচামুণ্ডারাও ঢেঁকুর তুলতে তুলতে কেটে পড়বে, পাতপেড়ে খাওয়ার সাহস আর তাঁদের থাকবে না।

- বাহ্। তুকতাক ভালোই শিখেছ কিন্তু কেষ্টা। তা, এই ইস্পেশাল ভাতের কণাটা আসবে কোথা থেকে?

- বিরিয়ানি নামের একটি পদ থেকে তুলে আনতে হবে যুধিদা। স্ট্রেট ফ্রম দ্য ভবিষ্যৎ। যাও, এ'বার ফাঁকা হাড়িটা নিয়ে এসো দেখি।

No comments: