- এই যে অনির্বাণ। ও'দিকে কোথায় ছুটে যাচ্ছ। এ'দিকে এসো।
- বড়সাহেবের চেম্বারে দিকে যাচ্ছিলাম। জরুরী তলব।
- ব্রাদার। হিউম্যান রিসোর্সে থেকে অমন তাড়াহুড়ো করতে নেই।
- বস তাড়া দিলেও নয়?
- তা'হলে তো একেবারেই নয়। সিনিয়রদের লাই দিয়ে মাথায় না তোলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
- সান্যালদা, কী যে বলেন আপনি মাঝেমধ্যে।
- বাইশ বছর এই কোম্পানিতে আছি হে। আজ পর্যন্ত একটা প্রমোশনও মিস করিনি। কাজেই আমি যখন যাই বলি, জানবে সে'গুলো আদতে বাণী।
- একটু বুঝিয়ে বললে সুবিধে হয় সান্যালদা।
- বড়সাহেব কেন ডেকেছেন। সে'টা জানা আছে?
- কোম্পানির অবস্থা তো সবই জানেন। গতমাস থেকে ফ্যাক্টরির সমস্ত লেবারদের সবার মাইনেকড়ি আটকে আছে। সামনের হপ্তায় কিছু টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু ফিনান্স থেকে আজ জানালে আগামী মাসখানেক তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই। এ'দিকে আজ বিকেলে খেপচুরিয়াস ইউনিয়নের নেতারা আসছেন বড়সাহেবের সঙ্গে মিটিং করতে। তাঁদের কী ভাবে শান্ত করা যায়..সে'সব নিয়ে আলোচনা করতেই আমায় ডেকেছিলেন বড়সাহেব।
- আই সী। তা, কী ভাবে তাঁদের শান্ত করবে? মিটিংয়ে শিঙাড়া জিলিপি আর সল্টেড কাজুবাদাম খাইয়ে?
- সান্যালদা। সিচুয়েশনটা বেশ যাকে বলে..অগ্নিগর্ভ।
- তা, কী সলিউশন অফার করবে বড়সাহেবকে? উনি নিশ্চয়ই তোমায় কফি বিস্কুট খাওবেন বলে ডাকেননি।
- সলিউশন তো একটাই৷ বকেয়া মাইনে মেটানো৷
- কোম্পানির ফিনানশিয়াল স্টেটমেন্টগুলো দেখেছ?
- জানি, পরিস্থিতি আদৌ ভালো নয়। মনে হয় না আগামী তিনমাসের মধ্যে লেবারদের কোনওরকম কিছু দেওয়া যাবে।
- বটে। তিনিমাস মাইনে না হলে, তোমার বড়সাহেবকে টিকতে দেবে কারখানার শ্রমিকরা? আর বড়সাহেব না থাকলে আমাদের টিকিজোড়াই বা আমরা কোথায় বাঁধব?
- লেবারদের কি কোনও ভাবেই ঠাণ্ডা রাখা যায়না?
- এতগুলো মানুষের পেটের খিদেকে কী'ভাবে ঠাণ্ডা করবে বাবু হিউম্যানরিসোর্স? সেল্ফি কন্টেস্ট ঘোষণা করে না স্লোগান রাইটিং কম্পিটিশন অর্গানাইজ করে?
- জাস্ট ছিঁড়ে খাবে কিন্তু আমাদের। আফটার অল, আমাদের মিসম্যানেজমেন্টের জন্যই তো ওদের আজ এই অবস্থা। ফ্যাক্টরির প্রডাকশনে তো কোনও অসুবিধে হয়নি।দে হ্যাভ বিন কোয়াইট এফিশিয়েন্ট।
- সলিউশন ছাড়াই বড়সাহেবের ঘরে ঢুকবে অনির্বাণ?
- কিন্তু এই সিচুয়েশনে আর তো কোনও উপায়ও নেই সান্যালদা। শ্রমিকদের খাওয়া জুটছে না৷ তারা আমাদের কথা শুনবে কেন?
- শ্রমিকরা তোমার কথা শুনবে না। কিন্তু ইউনিয়ন শুনবে।
- ইউনিয়নই বা আমাদের হয়ে কথা বলবে কেন?
- যুক্তির ভরসায় থাকলে চলবে না। উহাদেরকে ওপিয়াম জোগান দিতে হইবে।
- ওপিয়াম? ঘুষটুষ দিতে বলছেন নাকি?
- ঘুষ খুব পাতি ব্যাপার অনির্বাণ। ও'দিয়ে এক'দুজন ধান্দাবাজকে কেনা যায়। জনতার আগুন মেজাজকে বশে আনা যায়না।
- তা'হলে ওপিয়ামটা কি?
- বসন্ত ভৌমিক। ওই যে, এই ইউনিয়নের উঠতি নেতা। গত মাসে ফ্যাক্টরিতে নাইটশিফট করে ফেরার পথে কিছু লুম্পেনদের খপ্পরে পড়ে৷ মারধোর খায়। মোটোরবাইক, রিস্টওয়াচ আর মানিব্যাগ খোয়ায়।
- তার সঙ্গে আমাদের সমস্যার কী সম্পর্ক?
- পেশেন্স অনির্বাণ। পেশেন্স।
- বেশ। বলুন।
-মাসখানেক পরেও পুলিশ সেই লুম্পেনদের পাকড়াও করতে পারেনি। লোকাল থানার ওসি সুবিমলবাবু ভারী মাইডিয়ার। আমার সঙ্গে পুরনো যোগাযোগ। বড়সাহেবের তরফ থেকে সামান্য নজরানা প্রায়ই যায় তার কাছে। তিনি আমাদের সাহায্য করবেন। আমি তার সঙ্গে একপ্রকার সমস্ত কথাবার্তা বলে রেখেছি।
- কী কথা সান্যালদা?
- পুলিশ আজ দুপুরে রাইভাল ইউনিয়নের অমল সমাদ্দারকে অ্যারেস্ট করবে।
- অমল সমাদ্দারকে অ্যারেস্ট করবে? কেন? সে বসন্ত ভৌমিকের রাইভাল নেতা হতে পারে৷ সমাদ্দার লোকটা যে বিশেষ সুবিধের তাও নয়। কিন্তু তাই বলে সে বসন্তবাবুকে মারধোর করার বান্দা নয়৷ আর চোর তো নয়ই।
- আমি নিশ্চিত অমল সমাদ্দার এ কাজ করেনি৷ তবে তা বিচার করার দায় তোমার আমার নয়৷ পুলিশ দুপুরে তাকে তুলে নিয়ে যাবে। দুই ইউনিয়নের মধ্যে খামচাখামচি শুরু হবে। একে অপরকে সন্দেহ করবে। গসিপ করবে। গুজব ছড়াবে। লোকাল নেতারা সে হল্লায় সামিল হবে। আজ বিকেলে যখন আমাদের ইউনিয়নের নেতারা আসবে, তখন মাইনের চেয়েও বেশি আলোচনা হবে অমল সমাদ্দারের শয়তানি নিয়ে। বড়সাহেব বলবেন যে তিনি আমাদের শ্রমিকদের ইউনিয়নের নেতা বসন্ত ভৌমিকের এমন হেনস্থা কিছুতেই বরদাস্ত করবেন না। উই উইল অফার এভ্রি কাইন্ড অফ হেল্প টু আওয়ার ফ্রেন্ডস ফ্রম দি ইউনিয়ন। আমরা উকিল দেব, পুলিশ লাগাব।
- মাইনে নিয়ে আলোচনাটা তা'হলে এ যাত্রা বোধ হয় থামানো যাবে। তাই না সান্যালদা?
- আমাদের তিনমাস দরকার অনির্বাণ। তিনমাস পর খালিপেট থেকে আধপেট হলেই তারা বর্তে যাবে। তারপর কে আসল লুম্পেন সে'টা জানা যাবে কি যাবে না, তা নিয়ে ভেবে আমাদের কাজ নেই।
- আপনি জিনিয়াস সান্যালদা।
- যুক্তির চেয়ে নেশায় কাজ দেয় বেশি। এই বেদবাক্যটা চিরকাল মনে রেখ হে। এ'বার পা চালোও, বড়সাহেব অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছেন।
No comments:
Post a Comment