- এসেছো সমরদা? উফ, কদ্দিন পর দেখা বলো তো৷ অন্তত তিনমাস তো বটেই?
- আরে অনন্ত৷ কদ্দিন পর তোমায় বাড়ি এলাম ভায়া৷ কদ্দিন পর।
- বিধুকে বলি আগে দু'কাপ চা দিতে৷ কেমন? আপনার পছন্দের আর্লগ্রে আনিয়ে রেখেছি৷
- বিধুকে বরং দু'কাপ চা দিতে বলো৷ আর্লগ্রে আছে?
- ওহে বিধু দু'কাপ চা দিয়ে যা৷ ওই কাবার্ডে একটা নতুন চায়ের প্যাকেট রাখা আছে৷ সে'খান থেকে পাতা নিয়ে নে৷ তারপর সমরদা! খবরটবর সব ভালো?
- আমি তো অনেকদিন থেকেই বলছি ভায়া৷ তোমার এ বসার ঘরে আলো বড় কম৷ টিউবদু'টো চেঞ্জ না করলেই নয়।
- আপনি দিল্লী গেলেন ছেলের কাছে কিছুদিন কাটাতে৷ এ'দিকে আমি এক্কেবারে একাবোকা৷ গোটাদিন অফিসের খ্যাচম্যাচ, আর ফিরে এসে বিধুর গজরগজর৷ আমাদের উইকলি আড্ডার অক্সিজেন ছাড়া নাভিশ্বাস উঠছিল যে।
- তা অবশ্য ঠিক৷ আজকাল নিউজচ্যানেলগুলো দেখলেই বদহজম হয়৷
- এদ্দিন পর আপনি আসায় যেন বুকে বল পেলাম। কী ভালো যে লাগছে৷ ফ্রিজে মৌরলা আছে, বিধুকে মুচমুচে করে ভাজতে বলি?
- সে'টা অবশ্য ভুল বলোনি অনন্ত৷ যত নষ্টের গোড়া এই পলিটিক্স৷
- অ্যাই বিধু, ফ্রিজ থেকে মৌরলাটা বের করে রাখ৷ ভাজা খাব। তা সমরদা, দিল্লী শহরটা বৌদির কেমন লাগল?
- চিকেন চিলিটা বাড়াবাড়ি হবে৷ তুমি বরং বিধুকে ভাতেভাত করে দিতে বলো৷ রাতের খাওয়াটা না হয় তোমার এখানেই সেরে নেব।
- বৌদির জন্যও না হয় একটা টিফিন বাক্সে খাবার দিয়ে দেব'খন।
- হ্যাঁ, তোমার বৌদিও তাই বলে৷ দুষ্ট গরুর চেয়ে ভ্যাকেন্ট গোয়াল ইজ বেটার৷
- সমরদা৷ আপনাকে পেয়ে যে কী ভালো লাগছে৷
- শীত শীত ভাব যে একটা আছে সে'টা ডিনাই করছি না৷ তবে বাতাসে এখনও শীতের কামড় নেই।
- জানেন সমরদা৷ মিতা আর ফিরবে না৷ ডিভোর্সের কাগজপত্র তৈরি করছে ওর উকিল।
- হুঁ। সে শীতও নেই, পিকনিকের সে আমেজও নেই৷
- অবশ্য আমি মিতার দোষ দেখিনা৷ আমিই ঠিক ওর বন্ধু হয়ে উঠতে পারিনি৷ কিন্তু আপনি তো জানেন সমরদা, আমার ভালোবাসায় কোনও খাদ ছিল না। এখনও নেই।
- বেশ তো৷ বিষ্ণুপুরেই যাওয়া যাক একদিন৷ তোমার বৌদিও বলছিল..। নাকি পুরুলিয়া যাবে?
- বছরখানেক আগে একবার আমি আর মিতা দিনদুয়েকের জন্য পুরুলিয়া গেছিলাম৷ শীতকালেই৷ বিউটিফুল৷ বড় মনখারাপ হয় আজকাল সে'সব ভেবে জানেন৷ আর নিজের কান মলতেও ইচ্ছে করে খুব৷ একটু ভালো পার্টনার যদি হতে পারতাম...৷ মিতা বড় ভালো মেয়ে, জানে? বড় ভালো৷ আমিই শালা একটা আস্ত রাস্কেল৷
- আরে ধুর ধুর। ভালো মিষ্টি খেতে চাইলে বরং চন্দননগর চলো৷ তোমাদের কলকাতার মিষ্টিতে কেত আছে, কিন্তু সেনসিটিভিটিতে চন্দননগরকে টেক্কা দিতে পারবে না৷
- মিতা আমায় সুযোগ কম দেয়নি৷ আমিই ওর যোগ্য নই৷ কিন্তু বিশ্বাস করুন সমরদা, আমি মনেপ্রাণে চাই ও ভালো থাকুক৷
- সত্যিই তো৷ সত্যিই তো৷ টপ-কোয়ালিটি বোঁদে দিয়ে মুড়ি মাখা..আহা, সে যে অমৃত।
***
- মালটা গেছে?
- কতবার বলেছি বিধু৷ সমরদার সম্বন্ধে তুই ওই ভাষায় কথা বলবি না৷
- ঘাট হয়েছে৷ তবে ওই বদ্ধ কালার সঙ্গে যে কী'ভাবে আপনি অত খোশ গল্প জোড়েন তা মা তারাই জানেন!
- তা'তে তোর কী? শোন৷ আগামী শনিবার সমরদা ফের আসবেন৷ ভালো বোয়াল রেঁধে খাওয়াস দেখি সে'দিন৷ সমরদা বেশ পছন্দ করে বোয়াল৷
***
- কাজটা কিন্তু মোটেও ঠিক করোনি তুমি।
- তুমি ব্যাপারটা বুঝছ না গিন্নী..।
- অনন্ত কিন্তু তোমায় সত্যিই ভালোবাসে৷ তুমি ওর বাড়িতে গেলে কত খুশি হয়৷ আর ওর কাছে এত বড় খবরটা তুমি চেপে গেলে?
- ভেবেছিলাম সারপ্রাইজ দেব৷ ভেবেছিলাম কথার মাঝখানে দুম করে জানাব যে খোকা দিল্লীতে আমার কানে অপারেশন করিয়েছে৷ এখন আমি মোটামুটি শুনতে পারি৷ অনন্ত খুব খুশিও হত৷ কিন্তু..।
- কিন্তু বললে না কেন?
- অনন্ত তো বয়সে আমার চেয়ে অনেক ছোট। অথচ আমাদের সাপ্তাহিক আড্ডা সে এত ভালোবাসে৷ কেন জান? কারণ এদ্দিন আমি শুনতে না পেলেও অনন্তর কাছে আমিই ছিলাম আদত শ্রোতা। গল্পগুজবের মানুষ আকচার জুটে যায়, কিন্তু মনের কথা প্রাণখুলে নিশ্চিন্তে বলতে পারার আশ্রয় সহজে জোটেনা৷ আজ বুঝলাম আমি অনন্তর সেই আশ্রয়, আমি তাঁর কনফেশন বক্সও বটে৷ আমি এমন একজন শ্রোতা যে শুধু শুনে যায় অথচ তাঁকে পালটা জ্ঞান দিয়ে পর্যুদস্ত করে না, মর্যালিটির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে এফোঁড়ওফোঁড় করে ফেলে না৷ এদ্দিন বদ্ধ কালা ছিলাম বলেই হয়ত I was the best listener that অনন্ত ever had। আর আজ যখন সে'টা টের পেলাম, কিছুতেই অনন্তর সেই কনফেশন বক্সটুকু কেড়ে নিতে মন সরল না৷
- তুমি অনন্তকে কোনওদিনই জানাবে না যে তুমি শুনতে পাও?
- এই ভালো গিন্নী। এই ভালো।
No comments:
Post a Comment