Wednesday, February 24, 2021

হাবুডুবু


- ইয়ে...।

- তুমি অসময়ে ইয়ে বললেই আমার বুক কাঁপে..।

- তুমি না! বড্ড পেসিমিস্ট।

- নয় নয় করে কুড়ি বছর সংসার করছি৷ তোমার এই ধান্দাবাজি "ইয়ে" আমি খুব চিনি।

- শোনো না, বউ..।

- মিউমিউ গলায় "ইয়ে"। কুঁইকুঁই সুরে "শোনো না"। তোমার মতিগতি আমার মোটেও ভালো ঠেকছে না৷

- বলছিলাম যে..ডিনার তো হলো..তবু কোথাও যেন ফাঁক থেকে গেছে..।

- মাছের ঝোল দিয়ে দিব্যি সাবড়ে খেলে, তবু ফাঁক রয়ে গেল? পেট না ট্যাঙ্কি?

- আহ, তা নয়৷ পেট ভরেছে৷ ফাঁকটা মনে৷ বুকে একটু মাইল্ড হুহু রয়ে গেছে।

- ফ্রিজে মিষ্টি নেই স্যার৷ 

- হুহুটা মিষ্টির জন্যে নয়৷ বলছিলাম যে, বড় সাধ আমার- একটু আলু ভেজে খাবো। কুচুরমুচুর করে আলুভাজা খাবো আর মান্নাদের গান শুনব৷

- সে তো ভালো কথা৷ আলু ভেজে নাও,  তার জন্য অত ঘ্যানঘ্যানানি কেন।

- তোমার একটু কুঅপারেশন চাই যে৷ আলুটা কুচিয়ে দাও প্লীজ।

- নোলার ছোঁকছোঁক আমার নেই৷ আলু পটল স্নোলেপার্ড যা খুশি কুচিয়ে নিয়ে ভাজোগে৷ এই রাতবিরেতে আমি আলু  কাটতে পারব না৷

- ভাজব তো আমি।

- কুচোবেও তুমি।

- কিন্তু রামকৃষ্ণ যে বলেছেন বৌ, এক্সেলেন্স শিকেয় তুলে কোনো কাজ করবে না৷ আলু ভাজায় আমার এলেম আছে বটে৷ কিন্তু আলু কাটার সাবজেক্টে আমি ভীষণ ইনকনসিস্টেন্ট৷ আর আলু এবড়োখেবড়ো হলে ভাজার ম্যাজিকটাই মাটি৷

- রবীন্দ্রনাথ বলেছেন যার আলু কুচোনোর মুরোদ নেই,  অসময়ে আলুভাজা খাওয়ার শখ উথলে উঠলে তার উচিৎ নিজেকে ঝ্যাঁটাপেটা করা৷ 

- এক সময় পূর্ণেন্দু পত্রী মার্কা প্রেম ছিল আমাদের গিন্নী৷ আর এখন? এখন শুধু পার্লামেন্ট মার্কা গুঁতোগুঁতি৷ 

- উফ!

- এক সময় ছিল "তুমি যে আমার ওগো তুমি যে আমার" লেভেলের সোহাগ৷ আর এখন স্রেফ "বাগিয়ে কালী লোক হাসালি"।

- এই শুরু হল।

- বিয়ের পর পর ছিলাম উত্তম সুচিত্রা৷ এখন হয়েছি হ্যাডক আর ক্যালকুলাস।

- থামবে এ'বার?

- কলেজ প্রেমের সময় হপ্তায় মিনিমাম এক ডজন চিঠির আদানপ্রদান হত৷ আর এখন মাসে একবার মাসকাবারির লিস্টি। 

- অসহ্য!

- একসময়ে আমি তোমার বুকের পাশবালিশ, মনের মাইডিয়ার। আজ কালের ফেরে তোমার চোখে আমি মিটমিটে গাম্বাট৷ 

- এই শোনো৷ আলু আমি কুচিয়ে দিচ্ছি৷ আলুভেজে ওভেন পরিষ্কার করে, কড়াই মেজে তারপর বেরোবে রান্নাঘর থেকে৷ নয়তো তোমারই একদিন কি আমারই একদিন। 

- আমি তোমার পিএইচডি জানো। ইন আদার ওয়ার্ডস, আমি তোমার প্রেমে হাবুডুবু।

- যত্তসব!

Monday, February 1, 2021

বাজেটের ব্যাপারস্যাপার


- শোনো বউ!

- বলে ফেলো।

- শুনতেই হবে কিন্তু।

- কান তো আর বন্ধ করে রাখার উপায় নেই৷ 

- একটা প্রপোজাল ছিল।

- শুনি৷

- প্রপোজালটা এক্সেপ্ট করতেই হবে কিন্ত।

- ঈশ্বর তো নই যে ডিসপোজ করব।

- আজ তোমারও স্যালারি ঢুকল৷ আমারও। 

- তা'তে কী?

- মাইনে পাওয়ার দিন আমরা মাসকাবারি সেরে বাড়ি ফিরি৷ সে'টাই ট্র‍্যাডিশন৷ তাই না?

- বীটিং আরাউন্ড দ্য বুশ? বলো প্রপোজালটা কী।

- বলছিলাম যে, আজ মাসকাবারিটা ড্রপ করে যদি..।

- যদি?

- অমন টেঁটিয়া সুরে 'যদি' বললেই আমি নার্ভাস হয়ে যাই বউ৷ 

- মাসকাবারি ড্রপ করে? কী?

- একট ট্যাক্সি নিয়ে সোজা পার্ক স্ট্রিট৷ সে'খানে মোকাম্বোয় বসে কবজি ডুবিয়ে দেব৷ পাশাপাশি একটু গলা ভিজিয়ে নেওয়া, সামান্য ঢুলুঢুলু৷ বুঝছ তো।

- খুব বুঝছি৷ ডেভিলড ক্র‍্যাব৷ স্টেক৷ সিজলার৷ টুটিফ্রুটি। স্ক্রুড্রাইভার৷ মোহিতো।

- তোমার তুলনা নেই বউ। মেনুটা তা'হলে ফাইনাল৷ আর তারপর মোকাম্বো টু বাড়ি ফেরাও তা'হলে ট্যাক্সিতেই৷ 

- বেশ৷ দু'রাউন্ড ট্যাক্সি, হাইক্লাস খাবারদাবার, ককটেল। সব মিলে অন্তত তিন হাজার।

- তিন?

- মিনিমাম। এ'দিক এ'মাসে ইন্স্যুরেন্সের প্রিমিয়াম দিতে হবে।

- মাইল্ড কেলো।

- বাবার টেস্টগুলোও এ'মাসে না করালেই নয়..।

- স্লাইটলি মেজর কেলো।

- গত মাসে মাইক্রোওয়েভ কেনা হল৷ বাড়ল আর একটা ইএমআই।

- সিগনিফিক্যান্টলি মেজর কেলো৷

- অতএব?

- শালার বাজেট না তেলের বাঁশ৷ দু'পা রেভিনিউতে উঠি, সাত পা এক্সপেন্সে নামি৷ 

- তা বর, ট্যাক্সি ডাকি?

- ট্যাক্সি, মোকম্বো৷ তারপর বাজেট ডেফিসিটে অক্কা যাই আর কী৷

- অতএব? 

- ওই৷ আমাদের ডেস্টিনি৷ বাবুঘাট মিনি৷ তারপর লঞ্চ৷ তারপর ট্রেন৷ আর তারপর মুদীর দোকনে ফর্দ সাবমিশন। 

- শোনো৷ মাসকাবারি ফর্দে আজ কয়েকটা আইটেম যোগ করি বরং৷ তবে সে'সব আইটেম তুমি মুদীর দোকানে পাবে না৷

- কী জিনিস বউ?

- ভডকা। অরেঞ্জ জুস৷ ককটেল হম বানায়েগা। মুর্গিটা বরং তুমি ভেজো। আর টুটিফ্রুটির বদলে বাড়িতে পাটালি আছে৷ ফ্রেশ।

- ভডকা? আর এ মাসের বাজেট ডেফিসিট?

- ইকনমিক সার্ভে বলছে ভডকায় ঝিমুতে ঝিমুতে শীতের রাতে টোনাটুনির ঢলাঢলি করে ছাতে ওঠাটা হল জরুরী ইনসেন্টিভ প্যাকেজ৷

- তোমার তুলনা নেই বউ৷  

- বলছ?

- কলেজে আমার সঙ্গে প্রেম করে বখে না গেলে তুমি ধুরন্ধর পলিটিশিয়ান হতে৷ নির্ঘাৎ৷